মাননীয় মেয়রকে পত্র ( নং-১)
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৭ আগস্ট, ২০১৫, ০৮:১৪:৪৪ সকাল
মাননীয় মেয়র মহোদয়
ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটি (উত্তর/দক্ষিণ)
ঢাকা।
মান্যবরেষু,
আশা করি মহামহিমের কৃপায় কুশলে আছেন এবং বীর বিক্রমে মেয়রের সদ্যপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের পথ ক্লিয়ার করে চলছেন।
অনেকদিন দেশের বাহিরে ছিলাম, অল্প কিছুদিন হয় মাত্র দেশমাতৃকার কোলে ফিরে এসেছি। দেশের বাহিরে থাকাকালে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার যে চিত্র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পেতাম, তা ছিল বেশ হৃদয়বিদারক ও হতাশাব্যাঞ্জক। তবে, তখন সেসবে তেমন গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন বোধ করিনি। ভাবতাম, নিজ চোখে দেখে আর নিজ কানে শুনে পর, এসবে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের ভিত রচনা করা যাবে। সাংবাদিকরা তো কত কিছুই বলে, লেখে, ওরা তো আর নিজেদের করে কিছু লিখতে পারেনা, ওপরের পছন্দ মোতাবেক তাদের স্টোরি তৈরী হয়ে থাকে জানি। এজন্যই তো বিদগ্ধজনেরা আজকের সাংবাদিকদের ব্যঙ্গ করে বলেন, ওরা "সাংঘাতিক"।
তবে দেশে আসার পরে, নিজ কানে যা শুনছি আর নিজ চোখে যা দেখছি, তা যেন সাংবাদিকের স্টোরির চাইতেও মানে ও ওজনে অনেক ভারি। যেদিকে তাকাই দেখি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলতা আর অরাজক অবস্থার ছড়াছড়ি। ফুটপাতে হাটতে গেলে পায়ের নীচের এবড়ো থেবড়ো ইট/পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে পায়ের আঙ্গুল বা হাটু মচকানো অতি সাধারণ ব্যাপার, অাবার ফুটপাতে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পুলিশ কর্তৃক ইজারা দেয়া হকারদের সারি সারি দোকানের পশরার ভীড়ে ফুটপাতটা শহরের সিংহভাগ স্থানেই যেন নাই হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে রসিকতা করে কেউ কেউ ফুটপাতকে নূতন নামে ডাকতে শুরু করেছেন, বলছেন ফুটপাত বলে আর ওটাকে অপমান করোনা, বরং ওটাকে বলো, 'হকারপাত'।
রাস্তার কথা আর কি বলবো, বলতে গেলে নিজেকেই আবার আবালদের কাতারে ফেলে দেই কিনা সেই আশংকাও কম না। মেট্রোপলিটান ঢাকা শহরের এমন কোন রাস্তাটি তার বক্ষে স্থানে স্থানে ক্যান্সার আর আগুনে ৬০/৭০ ভাগ ঝলসে যাওয়া বার্ণ ইউনিটের রোগীর ন্যায় তার দেহকে উম্মোচিত করে পথচারীদের ভেংচী কাটছেনা, কিংবা ভয় দেখাচ্ছেনা এমন কোন স্থান কি আমাকে কেউ দেখিয়ে দিতে পারবেন? আর বাদল দিনে সামান্য বারিবর্ষণে যে সমগ্র রোডঘাট এর যে করুণ দশা হয়, হাঁটু পানিতে ডুবে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার জুড়ে দেয় আর পথচারীদের গায়ে গতরে ময়লা কাদাপানি ছিটিয়ে দিয়ে তাদের নির্বিকারত্বের আর দায়িত্বহীনতার প্রতিবাদে যৎকিঞ্চিৎ প্রতিশোধ নিয়ে নেয়, এর পরেও যদি শহরটাকে 'মেট্রোপলিটান' নাম দিয়ে মোড়ানো হয়, তাহলে এ জাতিকে অন্যরা পাগল বলা ছাড়া আর কোন অভিধায় সিক্ত করতে পারে সেটাও ভাববার বিষয়। তবে মাঝে মাঝে দেখা যায় যে রাস্তার মাঝখানে বৃহৎ কর্মযজ্ঞের আয়োজন নিয়ে বিশাল বিশাল পিলার খাড়া করে আর লোহার পাতের বিশালাকার কাঠামো তৈরী করে ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ চলছে, সেটা দেখলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা যে একটা মজার(?) শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে সেই স্বপ্নও দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু এ কাজের যারা ঠিকাদার, তারা কাজ করতে গিয়ে সিস্টেমেটিক ওয়ে ফলো না করার ফলে, পথচারীদের জন্য যে হাজারো সমস্যার সৃষ্টি করে চলছে, যেমন কাজে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে ট্রাফিক জ্যামের কঠিন সমস্যা তৈরী, নির্মান সামগ্রীর যত্রতত্র ফেলে রাখায় পথচারীর পথ চলায় বিঘ্ন, পানি নিষ্কাশনের নালা মাটির নীচে দাবিয়ে দেয়ায় বৃষ্টির পানি কাদায় মেখে দীর্ঘ্য এলাকা জুড়ে লম্বা সময় রাস্তা ডুবে থাকায় আর বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হবার ফলে গাড়ি চলাচলে জাঁনকান্দানী অবস্থা, এসব দেখলে সরকারের ভিশন-২১ কে কেবল একটা তামাশা ছাড়া অন্য কিছু মনে হয়না।
জনাব মেয়র সাহেব,
ঢাকার রোড়ে চলাচলকারী পাবলিক বাস সম্পর্কে কিছু না লিখলে লিখাটা একপেশে হয়ে যাবে বলে বাধ্য হয়ে কিছু বলতে হচ্ছে। সেদিন গিন্নি সহ যাত্রাবড়িতে এক আত্মীয়ের বাসা যাবো বলে গুলশান থেকে একটি তুরাগ কোং বাসে উঠে বসি। কিন্তু বাসে উঠার পর আমার শুচিবাইগ্রস্ত বেগমকে সিট এ বসাতে গিয়ে পড়লাম মহা ফাঁপড়ে। বাসটি বাইরে থেকে দেখতে তেমন একটা সুবিধার না হলেও ভিতরে হয়তঃ তেমন খারাপ হবে না (যেমন অনেক বড় বড় ফ্ল্যাট এর বাহ্যিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও ভিতরে বেশ সুন্দর এবং আলীশান হয়ে থাকে) ভেবে উঠে পড়েছিলাম। কিন্তু বাসটির ভেতরে তার প্রতিটা সীটের গদি আপাদমস্তক এমন কালো তেলচিটচিটে অবস্থা যে মনে হয় এটা দিয়ে কেউ তার গাড়ির গ্যারাজের ময়লা সাফ করে অতঃপর এখানে যত্ন করে বসিয়ে দিয়েছে, তাও বহুবছর আগে, যাত্রীদের সেবা করণার্থে(?) উঠে যখন পড়েছি, তো আর কি করা, কোন রকমে গিন্নিকে ম্যানেজ করে শেষ পর্যন্ত পথ পাড়ি দিয়েছিলাম, যদিও পুরোটা রাস্তাতেই তিনি এমন ভাবে কমেন্ট করে যাচ্ছিলেন যেন গাড়ির মালিক আমি এই অধম। এবড়ো থেবড়ো বড়ির এবং এমন ঘৃণ্য তেলচিটচিটে সীটওয়ালা এসব বাস যেন এখন শহরের শোভাবর্ধণ করে চলছে। কেমন করে, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন রহস্যঘেরা কারণে আরো দশ বছর আগেই বাতিল হয়ে যাওয়া এসব পরিবহণযন্ত্র লাইসেন্স পেয়ে যায় তা জানার জন্য মনে হয় আমেরিকা থেকে বিশেষজ্ঞ হায়ার করে আনা লাগবে সরকারের।
ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য শহরের মোড়ে মোড়ে যে পুলিশ দেখা যায়, তারা কি রোবট না অন্য কিছু তাও ভাবতে হিমশিম খেতে হয়। যানবাহনগুলো যেভাবে চলাচল করে যেভাবে ট্রাফিক জ্যাম হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িগুলো একস্থানে ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকে, তাতে মনে হয় সরকারের এসব রোবটগুলো বেতন দিয়ে রাখার কোন মানে হয়না। আজ থেকে আরো বিশ বছর আগে দশ/বিশ টনী ট্রাকের পিছনে লিখা থাকতো, 'দশ হাত দূরে থাকুন' কিন্তু বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে এমন বেড়ে গেছে যে ঐসব লিখা তো আর দেখা যায়ই না, বরং বড় বড় বাসগুলো যখন রাস্তা ফাঁকা পেয়ে দৌড়ানোর কসরত করার সুযোগ পায় তো দেখা যায় পাশাপাশি দু'টি বাস এমনভাবে দৌড়িয়ে যায় যে ওদের শরীরে এখন ঘর্ষণ হয় তো তখন ঘর্ষণ হয়। আর ঘর্ষণের বিকট শব্দে বাসের অভ্যন্তরের যাত্রীসকলের ভয়ে হৃৎপিন্ডটি যেন গলায় উঠে আসার উপক্রম। আর যখন গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে তো এমন ভাবে আগাপাছা জোড়া লাগিয়ে থাকে যে পথচারীদের রাস্তা পার হতে হয় সাপের মতো এঁকেবেঁকে। জেব্রা ক্রসিং বলে যে রাস্তা পারাপারের একটা সেফ জোন আছে, সেই ব্যাপারটা এই ঢাকার নিরীহ লোকজন যে কবে ভূলে গিয়েছে সেটা না বলাই উত্তম।
রিক্সাঅলাদের রিক্সা চালানোর জন্য যে রাস্তার পাশে আলাদা লেন থাকতে হবে, বা অপেক্ষাকৃত ছোটা গাড়িগুলোর জন্য যে আলাদা লেন থাকতে হয় এ ব্যাপারটিও মনে হয় সড়ক পরিবহন বিভাগের লোকজন ভূলে বসে আছে। তাইতো দেখি রিক্সাঅলারা বীরদর্পে রাস্তার মাঝখান দিয়ে যান্ত্রিক পরিবহনগুলোকে কলা দেখিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। আর রিক্সাগুলোর প্রজনন যে কি হারে বেড়েছে তার কি কোন পরিসংখ্যান আছে এর লাইসেন্সদাতাদের কাছে? দুর্মূখেরা বলে থাকে শহরের রাস্তায় চলাচলকারী ৭০ ভাগ রিক্সারই নাকি বৈধ লাইসেন্স নেই। এও কি সম্ভব?
না, পত্রটি বেশ লম্বা হয়ে গেল, আপনি তো আবার খুব ব্যস্ত মানুষ, এত সময় নিয়ে কি পড়তে পারবেন অধমের এই চিঠি? বাকিটা না হয় পরবর্তীতে কোন এক সময় লিখে জানাবো।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এবং যে অভিযোগগুলো এখানে জানালাম সেগুলোর প্রতিবিধানে যত্নবান হবেন এই কামনান্তে,
আপনারই একান্ত, একজন ট্যাক্সপ্রদানকারী নাগরিক।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভোট চাইবার সময় অনেক কথা তো বলে প্রার্থীরা , প্রতিশ্রুতি দেয় ।সেগুলো কি পূরণ করতে হবেই ?
বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সেগুলো পূরণ না করাই একজন সফল রাজনীতিবিদের বৈশিষ্ঠ্য ।
আপনার মেয়রদের একজনের ২২ টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও তার নিজের কোন প্রাইভেট কার নেই - এসব কথাও আমরা এখন বিশ্বাস করা শুরু করেছি ।
সামনে যদি এমন বলা হয় যে - নির্বাচিত হলে দেশের প্রতিটি মানুষকে ১০ টা করে ডুপ্লেক্স বাড়ি , ১০ টা করে বিএমডাব্লিও গাড়ি , হাত খরচের জন্য প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা করে ক্যাশ দেওয়া হবে - বাংলাদেশের মানুষ এটাও বিশ্বাস করবে । যেমনটা বিশ্বাস করেছিল ১০ টাকায় চাল খাবে শুনে ।
০ আপনি না প্রবাসী ? তাহলে স্ত্রীকে এসব বাসে টাসে নেন কেন ? হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব নিতে পারতেন না ?
আসছেন কিসে ? সেই তুরাগেই , না ?
আমনে প্রবাস থেইকা আইছেন, তাই পানির সাথে লড়াই কইরা বাইচ্যা থাকার বুদ্ধিটা শিইখ্যা লন।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন