রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৬:৫০:৫৭ সকাল

বাংলার আনাচে কানাচে আজ সিক্ত হয়ে উঠেছে দুই তিন বছরের শিশু হতে নিয়ে ১৪/১৫ বছরের স্কুল ছাত্র, কলেজ ছাত্র সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এবঙ অবলা নারীদের তরতাজা রক্তে। খুনী ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় একদল নরখাদক পাখীর মত গুলী করে নারী, পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে নরহত্যার এক উৎসবে মেতে উঠেছে। ওদের অপরাধ ওরা এদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা, তথা ধর্মহীন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে, বাংলায় ওরা হযরত শাহজালালের প্রচারিত ইসলামী শাসনব্যাবস্থা কায়েমের কথা বলে, অফিস আদালত, কলে কারখানায়, শিক্ষালয় এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ইসলামী আইন প্রণয়নের দাবী করে, ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া হতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার কথা বলে, সেখানে ইসলামের পবিত্র সংস্কৃতি চালু করার দাবী তোলে, ওদের আরো অপরাধ ওরা টেন্ডারবাজী করেনা, ঘুষ খায়না, চাঁদাবাজীকে ঘৃণা করে, নাচ-গান আর সিনেমা নাটক নিয়ে সময়ক্ষেপন করেনা, নামাজের সময় হলে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে, দাড়ি-টুপি আর হিজাবকে শ্রদ্ধা করে, স্কুল কলেজ পালিয়ে রমনা আর সরোয়ার্দী উদ্যানে জোড়ায় জোড়ায় বসে প্রেমের আগুনে নিজের পবিত্রতাকে জ্বালিয়ে দেয় না, কিংবা জা.বি-র মাণিকের মত ধর্ষনের সেঞ্চুরী উদযাপন দূরে থাক, যুবতী নারীর প্রতি চোখ তুলে তাকানোকেও ভয় করে পরকালের শাস্তির কথা ভেবে; নারীর ইজ্জত হরণের বদলে তা রক্ষায় জীবন বাজি রেখে এগিয়ে যায়।

বিগত মাস খানেকের মধ্যে সরকার এসব নিরীহ শান্ত শিষ্ট ছাত্র জনতার প্রায় ১৫০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে, প্রায় ৪/৫ হাজার কে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে, হাজারে হাজার ছাত্র জনতাকে জেলে ভরেছে, তবু ওদের রক্ত পিপাসা মিটছে না, প্রতিদিন কোন না কোন মায়ের বুক খালি করেই চলছে তারা। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী ৪২ বছরে বাংলার সাধারণ মানুষ ও বিশ্ববাসী এদেশে রক্তের এমন হোলি খেলা আর দেখেনি।

যুদ্ধাপরাধ আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নাটক সাজিয়ে ওরা দেশ হতে ইসলামী নেতাদের নাম ধাম মুছে ফেলতে চায়। ওরা যে এই বিচারের নামে কত বড় নাটক করছে, তা সম্প্রতি স্কাইপির মাধ্যমে ট্রাইবুনালের পদত্যাগী বিচারপতির সংলাপ ফাঁসের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জেনে গিয়েছে। সুতরাং এই বিচার যে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের বিচার, তা জানতে আর কারো বাকী নেই। বিচারপতির ভাষায়, 'সরকার গেছে পাগল হইয়া, ওরা শুধু একটা রায় চায়", "এইটাতো একটা গ্রাম্য সালিশের মত" এমনসব মন্তব্যের পরেও কিভাবে সরকার নাটকটি এখনো চালিয়ে যেতে চায়, তা আমাদের কিছুতেই বুঝে আসে না। ওদিকে নিজেদের জারিজুরি সব ফাঁস হয়ে যাবার পর, যখন বুঝতে পারলো এভাবে এই নাটকের যবনিকা টানা যাবেনা, তখন নাটকে রক্ত সঞ্চালন করতে কিছু নাস্তিক, খোদাদ্রোহীদের গোপন ব্যবস্থাপনায় শাহবাগে এনে বসিয়ে ওদের দ্বারা শ্লোগান দেয়াচ্ছে, ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই। অর্থাৎ, 'বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা' আমার বাংলা এ প্রবাদ বাক্যটিকে গায়ের জোরে প্রতিষ্ঠিত করতে আদালতের উপর নির্দেশনা জারির ব্যবস্থা করে।

এরা কি বদ্ধ উম্মাদ নয়? এরা নিজেদের হাতে গড়া বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজেরাই এখন মাঠে নেমেছে। হাসিনার উক্তি, " বিচারক মশাই, শুধু আইনের কিতাব দেখলে চলবেনা, শাহবাগের তরুন প্রজম্ম কি চাইছে সেদিকেও নজর দিবেন" এ কথা বলে দেশের বিচার ব্যবস্থার মূলে তিনি নিজেই কি কুঠার চালান নি? এরাই আবার গণতন্ত্র আর স্বাধীন বিচারব্যব্সথার বড় বড় বুলি আউড়ে চলে রাত্রদিন।

শাহবাগের এ দিগভ্রান্ত প্রজম্মের 'ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই', একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর' জাতীয় প্রাগৈতিহাসিক শ্লোগান দিয়ে কার্যত ওরা দেশের জনমানুষকে পরস্পর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, দেশে গৃহযুদ্ধের উস্কানি দিয়ে আবার চোরের মায়ের বড় গলা করে বলছে, জামাত শিবির দেশে গৃহযুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি করছে। আজই কথা হলো ফোনে ঢাকায় এক ভাতিজার সাথে। বললো, বাইরে বেরুতে পারছেনা ঘর থেকে। লালমাটিয়ায় তার বাসার সামনে দিয়ে লীগের গুন্ডারা মিছিল করছে, শ্লোগান দিচ্ছে একটা দুইটা শিবির ধর, জবাই কর, জবাই করা'। আবার জামায়াতের সাপোর্টার এক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত স্কুলের সামনে দিয়ে যাবার সময় ককটেল ফাটিয়ে কিছুদুর গিয়ে ধুয়া তুলে, শিবিরের ছেলেরা এই কান্ড করেছে। ভাতিজা বললো, ছয়তালা হতে দাঁড়িয়ে এ তামাশা অবলোকন করেছে সে এবং অনেকে। আমি ভাবছি, একটা মহল্লার দুই পয়সার গুন্ডারা যদি দুচারশত টাকা পকেটে পুরে দেশে এমন অরাজকতা সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের গুরু, জামায়াত শিবিরকে জড়িয়ে সংসদে, এবং অফিস আদালতে কতই না কাহিনীর জম্ম দিতে পারে। তারই বৃহৎ উদাহরণ বিশ্বনন্দিত তাফসীরবিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে খুনী এক দেইল্যা শিকদারের সব অপকর্মের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে তাঁকে ফাঁসির আদেশ শোনানো। ফলে গ্রামে গঞ্জের সাধারণ মানুষ এমনকি অবলা নারীরাও আজ প্রতিবাদে মাঠে নেমে এসেছে, অকাতরে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শহীদী কাফেলায় নিজেদের নাম অন্তর্ভূক্ত করছে।

কলম আর এগুচ্ছে না। আমার দ্বীনি ভাইদের বলবো, আপনারা শুধু রাস্তায় বিক্ষোভের মধ্যে আপনাদের কর্মসূচী সীমাবদ্ধ রাখবেন না। অনেক রক্ত ঝরেছে। এবার এই রক্তের প্রতিশোধ নিতে হবে। প্রতিটি রক্ত কণাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রতিটি শহীদের নাম লিস্টে তুলে দেশে দেশে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে, ডিপ্লোম্যসির কাজে দেশে দেশে দূত পাঠাতে হবে, নিজেরা না যেতে পারলে বিদেশে স্বজন ও বন্ধুদের মাধ্যমে এই কাজের আঞ্জাম দিতে হবে। বিদেশে অবস্থিত বন্ধুরা তাঁদের সঞ্চয়ের সিংহভাগ এখন দেশের এই মুজাহিদদের কল্যাণে ব্যায় করতে হবে। জাতিসংঘ, ও আই সি এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দরজায় কড়া নেড়ে তাদেরকে এ ব্যাপারে ব্রিফিং দিতে হবে, এই নাটকের জম্মদাতা এবং এর পেছনে কলকাঠি নাড়ায় ব্যস্ত প্রতিবেশী ভারতের মূখোশ উম্মোচন করতে হবে সফলভাবে।

আসুন, আমরা আমাদের ভাইদের এই সংগ্রামের সাফল্যের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা জানাই। হে আল্লাহ তোমার ও তোমার প্রিয় হাবিবের মর্যাদা নিয়ে যারা মিথ্যে ও জিঘাংসামূলক প্রচারণা চালায় তুমি তাদের কন্ঠনালী চেপে ধর, তাদের ষড়যন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দাও আর তোমার দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরতদের তুমি তোমার অদৃশ্য বাহিনী দ্বারা সাহায্য কর, ইয়া রাহমানুর রহীম, শহীদদের তুমি উপযুক্ত স্থান দাও, তাদের পরিজনকে ধৈর্য্য ও সাহস দাও, আর দেশবাসীকে সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, একই প্লাটফর্মে একত্র হয়ে সংগ্রাম করে যাবার বুদ্ধি ও সাহস দাও। এ লড়াইয়ে তাদেরকে এগিয়ে যাবার সব হেকমতে মালামাল করে দাও। ইয়া রাব্বুল আলামীন।.

বিষয়: বিবিধ

১২৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File