ইসলামিক মুভমেন্ট -সেইদিন ও এইদিন।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:৪৩:৩১ সকাল
শ্রদ্ধেয় নঈম সিদ্দিকী প্রণীত 'মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা.' বইখানি পাঠ করছিলাম.., মানে পাতা উল্টাচ্ছিলাম। হঠাৎ বইটির ১৪৭ নং পৃষ্ঠায় এসে চক্ষুজোড়া স্থির হয়ে গেল। একটি প্যারা থেকে দৃষ্টিকে কিছুতেই আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিনা। ঘুরেফিরে একই স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে থাকতে চাইছে আর মনে মনে ভাবছি ঠিক এধরণের দলটিই তো এখন আমাদের দেশ ও সমাজে বেশ ভাব নিয়ে চলে বেড়াচ্ছে, ইসলামের নামে হালুয়া রুটি সবই খাচ্ছে। যাক আর রহস্য নয়, সরাসরি আপনারাই পড়ে নিন সেই প্যারাটুকু ঃ
(যখন কোরায়েশরা দেখলো যে রাসূলুল্লাহর ইসলামী আন্দোলনকে কিছুতেই দমানো যাচ্ছেনা, সব রকমের ষড়যন্ত্র আর প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট এক নুতন প্রস্তাব নিয়ে আসলো। কি ছিল সেই প্রস্তাব?)
" উদাহরণস্বরূপ, তাদের একটা আপোষ প্রস্তাব এই ছিল যে, রাসূল সা. তাদের দেবদেবী ও দেবমূর্তিগুলোর নিন্দা সমালোচনা করবেন না, এবং তাদের ধর্মে হস্তক্ষেপ করবেন না। এছাড়া আর যত ইচ্ছা ওয়ায নসীহত ও নৈতিক উপদেশ দিতে চান, দেবেন, তাতে কোন আপত্তি করা হবেনা। অর্থাৎ তিনি তাঁর মূল দাওয়াতী কলেমা থেকে বাতিলকে প্রত্যাখ্যানজনিত বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। অন্য কথায় এর অর্থ দাঁড়[য়, আল্লাহর নাম নেয়ার অবকাশ থাকবে, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ (মনগড়া সব মতবাদ) নেই এ কথা বলা যাবেনা। যে বাতিল ধ্যানধারনার ওপর প্রচলিত সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। সমাজে খারাপ পরিবেশ ও খারাপ উপাদান যেটুকু যেভাবে আছে, তাকে ঐভাবেই বহাল থাকতে দিতে হবে। সত্য ও ন্যায়কে এমন আকারে পেশ করতে হবে, যেন তা বিপ্লবের পথ উম্মুক্ত না করে এবং তা থেকে বৈপ্লবিক প্রেরণা নির্মূল করে দিতে হবে। ইসলামের রাজনৈতিক সংলাপ নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে। সমাজ ব্যবস্থাকে যথারীতি বহাল রেখে তার অধীনে আধ্যাত্মিক ধরনের সমাজ সংস্কারের কাজ করে যেতে হবে। ভাবখানা যেন এই, কোরায়েশদের শ্রেণীগত শ্রেষ্ঠত্ব ও আভিজাত্য, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, ধর্মীয় নেতৃত্ব কৌলিণ্য, কায়েমী স্বার্থ ও অর্জিত পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা বহাল রাখতে হবে। এরপর তুমি যা কিছু করতে চাও কর। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন যদি এ শর্ত সেদিন মেনে নিত, তবে তা আপনা থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। "
এ অংশটুকু পাঠের পরই আমার অবচেতন মনে যে ভাবনার উদয় হলো ঃ আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আভ্যন্তরীন যাবতীয় পরিস্থিতির সাথে রাসূলুল্লাহ সা. এর ইসলামী আন্দোলনের সেই প্রাথমিক যুগের সাথে কোথায় যেন বিশেষ কিছু সামঞ্জস্যতা বিরাজ করছে। আমাদের দেশের বাতিল শাসকগোষ্ঠীর নিকট ইসলামী আন্দোলনই হলো প্রধান শত্রু। ইসলামী আন্দোলনকে সমূলে উৎপাটিত করতে তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। তবে সেদিনের ইসলামী আন্দোলন আর এদিনের ইসলামী আন্দোলনের মাঝে এসে গেছে বিরাট পার্থক্য। সেদিন রাসূলুল্লাহর সা. নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন ছিল একটিই, কিন্তু বর্তমানে ইসলামী শক্তিসমূহ তথা ইসলামী আন্দোলন বহুধাবিভক্ত। যেখানে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে ইসলামী শক্তিকে বুনইয়ানুম মারসুস এর মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে আজ ইসলামের নামে হয়ে গেছে বহু দল আর মত। আর সবচাইতে বড় কথা হলো, উদ্বৃতাংশে বর্ণিত বাতিল শক্তির বশ্যতা স্বীকার করে তাদের ছত্রছায়ায় এবং তাদের সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে তাদেরই বেঁধে দেয়া সীমিত গন্ডীতে থেকে (মানে ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়াবলীকে বাদ দিয়ে) একটি দল জনগনের কাছে ইসলামের কথা বলে বেড়ান। এমনকি এমন দূর্বোধ্য কথাও তাঁরা বলেন যে ইসলামে রাজনীতি বলে কিছু নেই, ঈমান ঠিক থাকলে সব কিছু এম্নি এম্নি হয়ে যাবে। আশা করি ব্লগের সুবিজ্ঞ পাঠক পাঠিকাদেরকে এমন দলটি কোন দল তা আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে না।
আল্লাহ পাকের নিকট আমরা এমন জিল্লতি ও বাতিলের তাবেদারী করা দ্বীন হতে পানাহ চাই, আর যাঁরা সমাজে এমন অদ্ভূত ও বোবা ইসলাম প্রচারের কাজে নিযুক্ত তাদেরকে আল্লাহ সঠিক ইসলামের দিকে ফিরে আসার তৌফিক দিন এই কামনা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা তো অন্তধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি, সহমর্মিতা সহঅবস্থান বজায় রাখার একটি সুন্দর মার্জিত এবং শান্তিপুর্ণ প্রস্তাব। এখানে দোষের কি পেলেন ভাই?
এ এই প্রস্তাব যদি আপনার নবীর কাছে এতই খারাপ হয়ে থাকে তা হলে অমুসলিমদের উচিত হবে- এই মুহুত্বে ইউরোপ, এ্যামেরিকা, আফ্রিকা, চীন, ভারত, মায়ানমার.......... এসব অঞ্চলে মুসলিমদের সব ধর্মীয় স্থাপনা, মসজিদ, মাদ্রাসা.... ভেংগে গুড়িয়ে দেয়া। আপনি একমত কিনা? উত্তর দিন।
কথাটা শুনতে যতো সরল আসলে কি তাই? ধর্ম সম্পর্কে আপনার জ্ঞান সীমিত বলেই মনে হয়। আর আপনার ব্লগ ঘুরে এসে বুঝলাম আপনি আসলে জানতে নয়, অন্ধ সমালোচনা করতে এসেছেন। তাই আপনার সাথে কথা বলা অর্থহীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন