ফেসবুক ব্যক্তিগত ডায়েরী কিংবা পারিবারিক এ্যালবাম নয়।
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:১৮:৩৬ সকাল
ফেসবুক ব্যক্তিগত ডায়েরী কিংবা পারিবারিক এ্যালবাম নয়।
একটা ব্যক্তিগত ডায়েরীকে সযত্নে ড্রয়ারে তালাচাবি দিয়ে কত সাবধানে রাখতে হয়। কারো ব্যক্তিগত ডায়েরী ঘরের অ্ন্য কোন সদস্য, তিনি যদি ঐ ব্যক্তির মাতা-পিতাও হন, অসতর্কতার কারনে হাতে পেলেও তা খুলে দেখাটাকে অনৈতিক ভাবেন্। তবে ব্যক্তির অগোচরে তার অন্য দূরন্ত ভাই/বোন যদি তা খুলে পড়ে এবং তাতে তেমন গোপনীয় কিছু নাও থাকে, তবু দুইজনের মধ্যে মন কষাকষি এমন কি তা ঝগড়াতেও গড়ায়। সেখানে কোন বন্ধুর তার বন্ধুর ডায়েরী খুলে দেখার প্রশ্নই আসেনা।
ডায়েরী সম্পর্কে সামান্য এ ভূমিকাটুকুর পরে আসছি মূল বক্তব্যটিতে। এখন ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল এ যুগের সাথে ২০/৩০ বছর পূর্বের সময়কার তূলনা করা অনেক ক্ষেত্রেই বেমানান। চাকুরী করছি আজ প্রায় ৩৫ বছর হতে চল্লো। এর মধ্যে সামান্য বিরতি দিয়ে প্রায় ২৫ বছরই বিদেশে আছি। তবে মনে পড়ে বাবাকে পাঠানো সর্বশেষ চিঠিটি মনে হয় লিখেছিলাম আজ থেকে ১০ বছর আগে। সেটাই আমার কাউকে শেষ পত্র লিখা। এরপর এলো ই-মেইল, মোবাইল এবং স্কাইপির যুগ। তাছাড়া আছে ফেসবুক, টুইটার আরো কত কি।পত্র লিখার ব্যাপারটি কিছুদিন পরে যে যাদুঘরে গিয়ে দেখার মত বিষয় হয়ে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। তবে ডিজিটাল যুগের যে ব্যাপারটি আমার সবচাইতে বেশী মর্মবেদনা এবং শিরঃপীড়ার কারণ, তা হলো ইয়ং জেনারেশনের ফেসবুক/মোবাইল ব্যবহারে ক্রম আসক্তি এবং এর ভালোমন্দ দিকসমূহ বিবেচনা না করে যখন তখন, যত্রতত্র এবং যা মনে চায় সব কিছুই বমি করে উগরে দেয়া। দেখা যায় এমন অনেক ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা তথ্যও সেখানে দেয়া হয় যা একসময় একমাত্র ব্যক্তিগত ডায়েরীর ভেতরের পাতাতেই স্থান পাওয়ার যোগ্য ভাবা হতো। পাঠকরা অবশ্যই জানেন এগুলো কেমন প্রকৃতির, তবু কযেকটা উদাহরণ তুলে ধরছি:
কোন ব্যক্তির সকালের স্টেটাসঃ ‘ইস্, কি ঘুমটাই না হলো, কাজের বুয়াটা ডেকে না তুললে আরো কিছু সময় ধুমায়া ঘুমান যাইতো’;
পরবর্তী স্টেটাসঃ ‘আজকে বউয়ের হাতে তৈরী পরোটা আর ডিম দিয়ে নাস্তা করলাম; থ্যাঙ্ক ইউ ডার্লিং’;
বিকেলের স্টেটাসঃ ‘ঐ শালা, তোকে আজ অমুক জায়গায় দেখেছিলাম, দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং মারছিলা; ভাবীসাবের নাম্বারটা না কতো,দাঁড়াও এখুনি ফোন করছি’।
সন্ধ্যায়ঃ ‘আচ্ছা, বলতো, চাঁদ কেন হাসে? তোমার মূখটা সবসময় অমন করে রাখো কেন ডার্লিং?’
রাতেঃ ‘আই লাভ ইউ জান; ইউ আর সো সুইট…’
ঘুমুবার আগেঃ ‘আজ রাতের ঘুমটা যেন খুব ডিপ হয়, প্রিয়ে……।’
সামান্য কয়েকটা উদাহরণ দিলাম শুধুমা্ত্র অনুমাণের জন্য। এর চাইতেও এগ্রেসিভ এবং লজ্জাজনক স্টেটাসও যে আছে এবং পারিবারিক বেমক্কা/অপ্রয়োজনীয়, এবং বেপর্দা ছবিও যে আপলোড হয়ে চলে হরদম, সে কথার সাক্ষী ফেসবুক ইউজার সবাই। এসব ইয়ঙ জেনারেশন এর বিবেকবোধহীন, চাল চুলোহীন স্টেটাস দান এবং হাবিজাবি ছবি আপলোড করার সময় তাদের এ কথা অন্ততঃ ভাবা উচিত যে, এটাতো ব্যক্তিগত ডায়েরী কিংবা পারিবারিক এলবাম নয়।এটা একটা পাবলিক প্লেস। জাস্ট বাজারের মতো। আর রাসূলের (সাঃ) এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি একবার শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করুন, “মোমিনের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান হলো মসজিদসমূহ এবং সবচাইতে খারাপ স্থান হলো বাজারসমূহ”। তাই বাজারের দেয়ালে এভাবে সব কিছু ওপেন করে দেয়া তাদের নিজেদের জন্যই হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে করে তার পারিবারিক ঐতিহ্যর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠি প্রদর্শন তো হয়ই, অনেক সময় তাদের শ্রদ্ধেয় বাবা-মাকেও এসবের জন্য সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়, গালমন্দ শুনতে হয়। ধর্মীয় অণুশাসনের কথা না হয় এখানে নাই আনলাম।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, যে জেনারেশনকে বড়রা ডায়েরী রাখার জন্য উপদেশ দিতে দিতে ক্লান্ত হযে পড়েন, তবু তারা সেটাকে উটকো ঝামেলা মনে করে ডায়েরীতে এক লাইন লেখার কষ্ট স্বীকার করতে চায়না, সেই তারাই দেখা যায় ডিজিটাল যুগে দিনের বেশীর ভাগ সময় ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে আর প্রসব করতে থাকে উপরে দেয়া টাইপের ভোদাই মার্কা সব স্টেটাস। আচ্ছা বলুন তো, স্বামী-স্ত্রী একই ঘরে থাকেন, আবার একই খাটে ঘুমান। সেই স্বামী বা স্ত্রী যদি রাত বারোটায় ফেসবুক অন করে তার প্রিয় স্পাউজকে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ উইশ করে, সাথে আরো কিছু প্রাইভেট কথা দিয়ে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হলো বলুন তো? নিজের মূখ নিঃসৃত বাণীর চাইতে বুঝি ফেসবুকে লিখা স্টেটাস (তাও একান্ত ব্যক্তিগত কথারমালা দিয়ে) মূল্যবান হয়ে গেল? এসব কাপলদের ঘটে বুদ্ধি যে কবে গিয়ে ল্যান্ড করবে তাই ভাবি বসে বসে।
সেদিন ফেসবুক খুলে দেখি এক ভাই পরিবারসহ কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছেন, তার বেশ কিছু ছবি আপলোড করে দিয়েছেন। একেবারে পর্দাহীন সবাই তা নয়, তবু যে স্ট্যান্ডার্ড এর হওয়া উচিত, তা ছিল না। এবং কক্সবাজারের সী-বীচে বেড়াতে গিয়ে সেই স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখা সবখানে সম্ভব হয়না। বয়স্ক নারীরা হিজাব ব্যবহার করছেন শুধু এই বিবেচনায় বিনা বিচারে ছবি আপলোড করাটাও কোনক্রমেই দ্বীনি আন্দোলনের সাথী হিসেবে আমাদের নৈতিক যে অবস্থান, তার সাথে যায়না। আর একটু ব্যাখ্যা দিলে আশা করি সবার নিকট ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। মনে করি আমাদের মাঝে কোন বোন এবং তার পরিবার হিজাব মেনে চলেন। নিম্নের চার রকমের অকেশনে তাঁর পরিবারের ছবি তোলা চার রকমের আবহ এবং সীন ক্রিয়েট করবেঃ
১) কোন সী-বীচে ভ্রমনে গিয়ে এক হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা;
২) কোন রেস্তরাঁতে গিয়ে বার্থ-ডে/বিয়ে-বার্ষিকীর পার্টিতে বসে কেক কাটা/খাওয়া;
৩) কোন বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াতে গিয়ে ড্রইং রূমে বসে গ্রুপ ছবি; অথবা
৪) কোন ইসলামী জলসায় বসে একজন বক্তার কথা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করছেন, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের বসার ব্যবস্থা আছে, আলাদা দুটো সারিতে, সেই ছবি।
উপরে দেয়া চারটি ভিন্ন পরিবেশে তোলা ছবিগুলোর আবেদন দর্শকের কাছে ভিন্ন ভিন্ন হবে, দর্শকের মনে তা ভিন্ন মাত্রায় ভিন্নভাবে দোলা দিবে; যেমন – ১ নং ছবিটা দর্শকের মনে যতটুকু জৈবিক আবেদন নিয়ে আসবে, ৪ নং ছবিটার আবেদন হবে ঠিক তার বিপরীত, এখানে আবেদনটা হবে একটা পবিত্র, ভাবগম্ভীরতাপূর্ণ এবং শ্রদ্ধামিশ্রিত।আরো একটু সুক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, চার নং ছবিতে দেখা যাওয়া একই হিজাবধারীর হিজাব পরার ধরণ আর একইজনের দেয়া এক নং ছবির হিজাবধারণের মাঝে রয়েছে বেশ কিছু ফারাক, যদিও তিনি উভয় স্থানে একই হিজাব/আবায়া দিয়ে হিজাব পালন করেছেন। তাই আবারো সবার কাছে বিনীত আবেদন রাখছি, যদি রোজ কিয়ামতে এ ব্যাপারে আপনার অন্তরে জবাবদিহীতার সামান্যতম ভাবনা থাকে, তাহলে আপনারা অযথা আপনাদের অন্তঃপূরবাসিনীদের ছবি ফেসবুকে আপলোড করবেন না। ঐ ছবিগুলো আপনার পারিবারিক এ্যালবামেই শোভা পাক।।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৬ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফেসবুক আসার পর ছবি তোলার পরিমান ১০০০ গুন বেড়ে গেছে এবং এটাকে সহজ করে দিয়েছে মোবাইলের ক্যামেরা ।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 9368
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
@হারি,
মন্তব্য করতে লগইন করুন