হালাল উপার্জন বনাম হারাম উপার্জন

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:৫২:২৭ বিকাল

প্রথমেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদীসে কুদসী দিয়ে শুরু করছিঃ

জিবরাঈল ফেরেশতা আমার অন্তরে একথা ঢেলে দিলেন যে, "কোন প্রাণ সে পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করবেনা, যে পর্যন্ত তার ভাগ্যে যতটুকু খাদ্যের বরাদ্দ রয়েছে তা পুরোপুরি গ্রহণ না করবে। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জীবিকা অন্বেষণের জন্য ভালো পথ অবলম্বন কর। জীবিকা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ার কারণে তোমরা আল্লাহর অসন্তোষের পথ অন্বেষণে যেন উদ্বুদ্ধ না হও। কারণ, আল্লাহর নিকট যা কিছু আছে, তা তাঁর আনুগত্য ছাড়া পাওয়া মুশকিল।" (শাঈখ সফিউর রহমান মোবারকপুরী কৃত 'আর-রাহীকূল মাখতুম' গ্রন্থ থেকে)।

বস্তুতঃ হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য এবং সৎপথে থেকে জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে রাসূলের (সাঃ) উপরোক্ত বাণীর মতো এমন হৃদয়গ্রাহী এবং শক্তিশালী হাদীস অদ্যাবধি আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। এ হাদিসটি আমার চিন্তাজগতে এক বিরাট প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বে তো হালাল উপার্জনের ব্যাপারে সতর্ক ছিলামই, কিন্তু এই হাদীসের মর্মবাণী উপলব্ধি করার পর থেকে এ ব্যাপারে আলহামদুলিল্লাহ আমি আরো বেশী সতর্ক হয়েছি। কিন্তু একই সাথে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুদ, ঘুষ এবং দূর্নীতির মহামারী দর্শনে অত্যন্ত কাতর ও হই। বর্তমানে ঘুষ/দূর্নীতির কালো হাত এমন অষ্টেপৃষ্টে আমাদের সমাজকে আঁকড়ে আছে যে, এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি হবে ভেবে ভেবে হয়রান হই। যাহা হউক, আমার আজকের স্টেটাসটি যদি কোন ভাইর মনে সামান্যও দোলা দিতে পারে, তাহলেই আজকের পরিশ্রম সার্থক ভাববো।

যাক যা বলছিলাম, যার অন্তরে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) এই বাণীটি স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো গেঁথে যাবে, পৃথিবীর কোন প্রকারের লোভ লালসাই তাকে তার জীবিকা উপার্জনে অন্যায় বা অসৎ পথ অবলম্বনে বাধ্য করতে পারবেনা। পথের ধারে লাখ টাকার সোনাদানা পড়ে থাকলেও সে তার প্রতি ফিরে তাকাবেনা, কিংবা সামান্য এক,দুই শব্দ মিথ্যা বলে যদি তার কোটি টাকার উপকার হয়, তবু সে সেই অন্যায় পথে যেতে রাজী হবে না। সে তো এমন শক্ত ঈমানের পরশ লাভ করবে যে, অভাবে তাড়নায় দিনের পর দিন না খেয়ে থাকবে তবু সে ঐ অন্যায় পথে খাদ্য/সম্পদ লাভের কথা তার মনেও উদয় হতে দিবেনা, এমনকি যদি এভাবে তার মৃত্যুও উপস্থিত হয় তবুও নয়। কারণ সেতো পরিষ্কার বুঝে গেছে যে, মহান আল্লাহ্, যিনি তাকে এ দুনিয়ার ক্ষনিক সময়ের কারাগারে পাঠিয়েছেন, তার প্রয়োজনমাফিক খাদ্যসম্ভারের বা রিজিকের ব্যবস্থা সহকারেই এবং উপরোক্ত হাদীসের মর্ম অনুযায়ী সে একথাও হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারে যে, যতোদিন আল্লাহ প্রদত্ত রিযিকের পুরোটা সে গ্রহণ না করছে, ততোদিন সে যে অবস্থাতেই থাকুক, তার মৃত্যু হবেনা। ঐ বেঁধে দেয়া সময়ের এক মিনিট আগেও যেমন তার মৃত্যু হবে না, তেমনি এক মিনিট বেশী বেঁচে থাকার তার কোন উপায় নেই। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ব্যবস্থাপণা এতোই কঠিন এবং সুস্পষ্ট। এটা জেনেও তাহলে কেন সে শুধু শুধু মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ অমান্য করে, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, ধোঁকা দিয়ে বা জোর জবরদস্তি করে অপরের সম্পদে অন্যায়ভাবে ভাগ বসাতে যাবে, কিংবা রাতারাতি ধনী হবার নেশায় সুদ বা ঘুষের আশ্রয় নেবে? এতে তো তার একূল ওকূল দুই কূলই হারাবার ১০০ ভাগ সম্ভাবনা। একদিকে মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ অমান্য করার কারণে রোজ কিয়ামতে দোযখের আগুনের ইন্ধন হবে, অন্যদিকে এ দুনিয়াতেও পদে পদে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা (প্রতারক, ধোাঁকাবাজ, সুদখোর, ঘুষখোর ইত্যাদি অভিধায় অভিষিক্ত হয়ে) আর মরণব্যাধির শিকার হয়ে তিলে তিলে কঠিন মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্য দিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ হবে।

আহা! ঐ সকল মিথ্যাবাদী, ধোঁকাবাজ, টেন্ডারবাজ, ঘুষখোর, সুদখোরদের জন্য আমার করুণাই হয় কেবল। তারা একদিকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে নিজেদের জন্য পরকালের জাহান্নাম ক্রয় করছে, আর দুনিয়াতেও নিজেদের আয়ু নিজেরাই কল্পনাতীতভাবে কমিয়ে আনছে! আশ্চর্য্য হচ্ছেন তা কিভাবে?? আশ্চর্য্য হবার এতে কিছুই নেই। দুয়ে দুয়ে যেমন চার হয়, তেমনি এটিও সেই সহজ ফর্মূলার মতোই খুবই সোজা ব্যাপার। ধরুন, আল্লাহর বেঁধে দেয়া জীবন জীবিকার ছকে যদি কেউ ৮০ বছর হায়াৎ পান, এবং ভালো বা হালাল পন্থায় জীবিকা অর্জন করে তিনি সেই ৮০ বছর হায়াৎ পুরো করেন, (যদিও হয়তঃ এতে জীবনের বাঁকে বাঁকে তাঁকে হয়তঃ কখনো উপোষ করতে হয়, বা অতি সাধারণ জীবন যাপনে বাধ্য হতে হয়), তবু তিনি সফল হয়ে গেলেন আল্লাহর দৃষ্টিতে। কিন্তু যদি তিনি লোভ লালসায় পড়ে ঘুষ, দূর্নীতি আর টেন্ডারবাজি করে সেই ৮০ বছর মেয়াদে যেই রিজিক পেতেন, তার সবটুকুই ৬০ বছর বয়সেই জোরপূর্বক অর্জন করে ফেলেন, তাহলে তো তিনি নিজ হাতেই নিজের কবর খুঁড়লেন, মানে রিজিকের সবটুকু ৬০ বছরেই গ্রহণ করার পর তাঁর তো দুনিয়ার আলো বাতাস গ্রহনের বা রিযিকের উপর আর কোন হক্ব রইলোনা। তাই মৃত্যুদূত আযরাঈল এসে যাবেন তার জান ক্ববজ করতে তার জীবনের অরিজিনাল মেয়াদ ৮০ বছর পুরো হবার আরো ২০ বছর আগে।

... পরবর্তী কিস্তিতে সমাপ্য।

বিষয়: বিবিধ

১২১৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258455
২৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৮
জীবন রাহমান লিখেছেন : হারাম উপার্জনের কথা আসলেই কেবল ঘুষ আর দূর্ণীতির কথা আসে। হ্যা অবস্যই এগুলো হারাম। কিন্তু কারো পিতাকে "জান্নাতে নেওয়ার দোয়া" করে যে হুযুররা হাদিয়া হিসাবে টুপাইস কামাচ্ছে তার কি হবে???????এই যেমন দরুন আমার হাতে ক্ষমতা আছে আমি কারো সাময়িক বরখাস্ত অাদেশ এক সপ্তাহ পড়ে অথবা আগে অব্যাহতির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্তাপন করতে পারি। এখন আমি তার সাময়িক আদেশ প্রত্যাহার করার বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিছু নিলে সেটা হবে ঘুষ! মানে হারাম। অতচ তাতে ঐ লোকে অনেক টাকা উপার্জন হলো।
আর অন্য দিকে একজন হুযুর মিথ্যা দোয়া করে একজনের কাছ থেকে হাদিয়া নিল, যাতে তার কোন উপকার হলো না কিন্তু তার উপার্জন হালাল। বর্তমানে হযুরদের দোয়া কবুল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। কারন তাদের আমল ঠিক নাই।
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:০৮
202296
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ঠিক! যারা এরকম দুয়া করে (হাদিয়ার লোভে) তাদের উপার্জন হালাল নয়। এবং এভাবে উপার্জন ও কিন্তু দূর্নীতির এবং মিথ্যাবাদীর সঙ্ঘার মধ্যে পড়ে। অন্য যে উদাহরণটি এনেছেন, সেটার ব্যাপারে কথা হলো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপনি অল্প কিছু নেন আর বেশী নেন ঘুষ হিসেবে সেটার সবটাই হারাম, আর যার জন্য এই কাজটা করলেন, তিনি যদি তা পাবার হক্বদার না হয়ে থাকেন তবে সেটাও হারাম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ, প্রথম মন্তব্যকারী হবার জন্য সাথে রইলোGood Luck বাদ
২৭ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫০
202516
জীবন রাহমান লিখেছেন : Applause Applause Applause Good Luck
258459
২৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আল্লাহুন্নারযুক্বনা রিযক্বান ওয়াসিয়ান হালালান ত্বাই্য়্যিবান...
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:০৯
202297
ইবনে হাসেম লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান।
258461
২৬ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
আফরা লিখেছেন : খুবই ভাল লাগল আপনার লেখা । নির্ধারিত রিজিক শেষ না করে কেউ মরবে না ।

[q]৮০ বছর মেয়াদে যেই রিজিক পেতেন, তার সবটুকুই ৬০ বছর বয়সেই জোরপূর্বক অর্জন করে ফেলেন, তাহলে তো তিনি নিজ হাতেই নিজের কবর খুঁড়লেন, মানে রিজিকের সবটুকু ৬০ বছরেই গ্রহণ করার পর তাঁর তো দুনিয়ার আলো বাতাস গ্রহনের বা রিযিকের উপর আর কোন হক্ব রইলোনা। তাই মৃত্যুদূত আযরাঈল এসে যাবেন তার জান ক্ববজ করতে তার জীবনের অরিজিনাল মেয়াদ ৮০ বছর পুরো হবার আরো ২০ বছর আগ
ে। [/q]

অনেক ভাল লাগল ।
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:১২
202298
ইবনে হাসেম লিখেছেন : কোটকৃত অংশের উপর কোন মন্তব্য নেই? কথাটি একশত ভাগ সঠিক কিনা বুঝছিনা। আমার বিবেক থেকে কথাটুকু লিখেছি।
258673
২৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:৩৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Jajakallah vaiya for your valuable writing. I hope people will be benefited from it.
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
202368
ইবনে হাসেম লিখেছেন : Apu, thanks for your comment. But it would have been more beneficial if you could have given some in-put to this valuable write up.
258787
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : আমিও পড়তেছি ..... কিন্তু শেষ কর্তে পার্ছি না কেনু? Crying Crying Frustrated Frustrated Crying Crying
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:৪০
202773
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ধূর, ঘটনা কি? কেন শেষ হচ্ছে না? ওঃ মনে হয় পরকালের চিন্তায় চোখে পানি এসে সব ঝাপসা হয়ে গেছে, তাই-ই হবে...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File