ফরজ, ওয়াজিবের পর যে কাজটি জানা ও মানা ভীষণ জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৪০:১২ সকাল
(ফেসবুক থেকে: অপু আহমেদ)
ইসলামী আন্দোলনের ভাইরা একটু খেয়াল করে পড়ুন।
আমাদের মধ্যে কতক বন্ধুরা বলেন, ইসলামী আন্দোলণ করা ফরজ তাই এটা আগে করতে হবে অর্থাৎ ফরজ, ওয়াজিব আগে, সুন্নাত নফল এগুলো আপেক্ষিক, না করলেও চলে বা পরে করলেও চলবে। আমিও বলি যে, হ্যাঁ ভাই, কাউকে অবশ্যই প্রথমে ফরজ ওয়াজিবের দিকে উদ্ধুদ্ধ করা দরকার। ফরজ ওয়াজিবের বিষয়ে নুন্যতম গাফলতি সহ্য করার মতো নয়। ফরজ নিয়ে আলোচনা বেশি বেশি হওয়া দরকার। কিন্তু এটা কেবল মাত্র তাদের ক্ষেত্রে বলা যুক্তি সংগত হবে যাদের ফরজ বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই বা তারা ফরজের ব্যাপারে গাফেল হয়ে গেছে। কিন্তু যিনি ফরজ ওয়াজিব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছেন তাঁর জন্য জরুরী হচ্ছে ফরজ ওয়াজিবের পরেই সুন্নাত সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করে তাকে আমলে নেওয়া । কেননা ফরজের সাথে সুন্নাতকে আমলে না নিলে তিনি ফরজের রুহানী নির্যাস থেকে মাহরুম হবেন এবং তাঁর ফরজ কবুলের বিষয়ে এক ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে যাবে। তিনি ফরজের কারনে যে ধরনের নৈতিক, আধ্যাত্মিক ফায়দামান্দ হওয়ার কথা ছিলো সেটি থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে ফরজ ওয়াজিব সমুহ যে বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে কষ্ট করে আদায় করলেন সেটি বাতিল হয়ে গেলো। বিষয়টি পরিস্কার করে দেওয়ার জন্য একটি উদাহারণ দেই।
ধরুন আপনি নামাজে দাঁড়ালেন। নামাজের কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে ফরজ বলে। আপনি ফরজগুলো ঠিক মতো আদায় করলেন কিন্তু সুন্নাতগুলোকে ছেড়ে দিলেন এই ভেবে যে, সুন্নাত তো আর জরুরী নয়। ফরজ পালন করেছি সেটাই যথেস্ট। আপনার দাবি মতো নামাজ তো আদায় হয়ে গেলো। আপনি ফরজ আদায়ের জিম্মা থেকে মুক্ত। কিন্তু নামাজ যে উদ্দেশ্যে পড়লেন সেটা পুরণ হলো কিনা তা ভেবে দেখার বিষয় বটে। নামাজের ভিতর ফরজগুলো আদায় করলে নামাজের হক আদায় হয় আর সুন্নাতগুলো আদায় করলে নামাজের ভিতর দিয়ে আল্লাহ পাকের সাথে সম্পর্ক গভীর হয়। নামাজ যদি কবুলের যোগ্য না হলো, তাহলে পড়ে কি ফায়দা পেলেন ?
নামাজের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। মরহুম মাওলানা মওদূদীর (রঃ) নামাজ রোজার হাকিকত বইটি পড়লে বিষয়টি ক্লিয়ার হওয়ার কথা। নামাজ মানুষকে এমন শক্তি জোগায় যা তাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর গোলামী করার কাজে সাহায্য করে। এই কারণে নামাজের ভিতরে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কিছু বর্ধিত কাজ করে গেছেন যেগুলো আল্লাহ পাকের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে। এখন আপনি যদি সেগুলো ছেড়ে দিয়ে কেবল ফরজ আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি হুজুগের বশে ফরজ নামাজ আদায় করছেন, এর পেছনে মৌলিক কোন কারণ নেই। অথচ নামাজের পুর্ণতার জন্য এর মধ্যকার সুন্নাতগুলোও অত্যান্ত জরুরী বিষয় হিসেবে নেওয়ার কথা ছিলো। কারণ যে ব্যক্তি সুন্নাতকে যত বেশি মহব্বাত করে তার সাথে আল্লাহ পাকের সম্পর্ক তত বেশি থাকে। আর এটা তো জানা কথা যে, আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক ছাড়া কোন ব্যক্তি বা সংগঠণ সফল হতে পারবে না।
পুর্বেকার যে সকল মনিষীদের জীবনী পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের প্রত্যেকের অবস্থা এমন ছিলো যে, তাঁরা খুঁজে খুঁজে সুন্নাতের ওপর আমল করতেন। তাঁদের কাছে সুন্নাত বিষয়ে আমার আপনার চাইতেও জ্ঞান অনেক বেশি ছিলো। তাঁরা সুন্নাতকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার সিঁড়ি হিসেবে নিয়েছেন। আল্লাহ পাক বলেন, বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তাহলে আমার সুন্নাতের অনুসরণ করো। আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের গুনাহ খাতা ক্ষমা করে দিবেন।
অথচ আমরা আল্লাহর সাহায্য চাচ্ছি কিন্তু সুন্নাত বিষয়ে সীমাহীন গাফলতির ভিতর অবস্থান করছি। এসব থেকে বের হয়ে আসা দরকার। ঘর থেকে শুরু করে পথে ঘাটে বাজারে যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন, খুঁজে খুঁজে সুন্নাতকে যতদিন আকড়ে না ধরবো, ততদিন আমাদের সাথে আল্লাহ পাকের সম্পর্ক মজবুত হবে না। সোজা কথা হলো, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত না হলে আখেরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আখেরাত বরবাদ হলে কোন দলের সনদ বা সদস্য পদ আপনাকে উদ্ধার করতে পারবে না।
সর্বশেষ মাওলানা মওদূদী রহ এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) প্রদত্ত সীমারেখা চুর্ণ করে দুনিয়াবী কোন তরক্কি অর্জন করার চাইতে আমি নিজে সমূলে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার ওপর খুশি থাকবো। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাথে আমার সম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে ইক্বামাতে দ্বীনের কাজ নয় নিজেকে আগুন থেকে বাঁচানোই জরুরী(তরজুমানুল কোরআন-1949, সেপ্টেম্বর সংখ্যা)।
আমিও বলতে চাচ্ছি যে, আমরা জামায়াতবদ্ধ হয়েছি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুমের পাবন্দী করার জন্য, কোন খেল তামাশা বা সাময়িক কোন চাক্যচিক্য দেখিয়ে মজমা করার জন্য নয়। জামায়াত বদ্ধ জিন্দেগীতে আমরা পা দিয়েছে আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) হুকুম গুলোকে পুর্নাঙ্গরুপে বাস্তবায়ন করার জন্য। যাদের নফস আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) সুন্নাহকে পরিপুর্ণ ভাবে মেনে নেওয়ার জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি, মনে করতে হবে তারা জাহেলীয়াতের দরজা থেকে ইক্বামাতের দ্বীনের দরজার দিকে উঁকি দিয়েছেন মাত্র। এই উঁকিতে কোন কাজ হবে না, পুরিপুর্ণরুপে প্রবেশ করতে হবে ভাইরা।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন