'পিনয়'দের একটি ভালো গুন

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৫৩:০৯ সকাল

গত রোববার সকালে বাজারে গিয়েছিলাম। আমাদের বাসা হতে বেশ দূরে বাজারটি। গাড়িতে করে গেলে ২০/২৫ মিনিট সময় নেয়। তবে কথা হলো ওখানে একটু কম খরচে সব ধরণের বাজার সদাই মনমত করা যায়। মাসে তাই ২/৩ বার সেখানে বাজার করতে যাওয়া হয়।

টুকটাক বাজার করতে করতে দুহাত ভরে গিয়েছিল। ছোট ছোট প্যাকেটের বাজারগুলো একসময় বড় একটি ব্যাগে ভরে নেবার প্রয়োজন হলো, তাই সুবিধা মতো একস্থানে দাঁড়িয়ে কাজটুকু সেরে নিলাম। অতঃপর আরো প্রয়োজনীয় কিছু সদাই করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। প্রায় আধা ঘন্টা পর যখন বাসায় প্রবেশ করছি, তখন হঠাৎ করে খেয়াল হলো আমার মাছ আর মুরগীর প্যাকেট দুটো সাথে নেই। বেগমকে জিজ্ঞেস করলাম তার ব্যাগে আছে কিনা দেখতে। না, তাঁর সাথেও নেই। গেল কোথায়? তখন মনে পড়লো, যখন আমি ছোট ছোট প্যাকেটগুলো বড় ব্যাগে রাখছি, সে সময় হয়তঃ মনের ভূলে ঐ প্যাকেট দুটো ঢোকানো হয়নি। আমার বেগম সাহেবা তো আমাকে তখুনি বেরিয়ে যেতে তাগাদা দিলেন, পুনঃ গিয়ে ঐ প্যাকেট দুটো খোঁজ করে আনতে। আমি ভাবছিলাম অন্য কথা।

বাংলাদেশের মানুষ, তাই আমার দেশীয় অভিজ্ঞতার আলোকে ভাবছিলাম, তখন গিয়ে কোন লাভ হবে কিনা, নিশ্চয়ই কোন না কোন ব্যক্তি ফ্রিতে পেয়ে তা ভাগ্য মনে করে নিয়ে গিয়েছে। ওনাকে মনের সেই ভাবনাটুকু শেয়ার করাতে উনি জবাব দিলেন, পিনয়রা আমাদের মতো চোর নয়, তারা অন্যের জিনিষ সহজে নেয় না। সুতরাং আমি গিয়ে ট্রাই করতে পারি। প্রসঙ্গতঃ উনি তাঁর সাথে ঘটা ছোট্ট একটি ঘটনাও শেয়ার করলেন। জানালেন, আরো কিছুদিন আগে কন্যাসহ একবার বাজার করতে গিয়ে পিনয়দের সম্পর্কে তাঁর ঐ ভালো ধারণা জম্মেছে। জানালেন, এক দোকানী থেকে সদাই করার পর তাকে বড় নোট দিয়ে ভাংতি টাকা না নিয়েই অন্যত্র চলে যান। ১৫/২০ মিনিট পর ব্যাপারটি মনে হতেই আবার ঐ দোকানীর নিকট গিয়ে ভাঙতি টাকা দাবী করতেই, মহিলা একপাশে আলাদা করে রাখা পাওনা টাকাটি তাঁর হাতে তুলে দেন।

গিন্নীর ঐ ভরসামূলক কথা শোনার পর বিসমিল্লাহ বলে রওনা দিলাম আবার বাজারের উদ্দেশ্যে। প্রায় ২৫ মিনিট সফরশেষে উদ্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। অনুমান করে প্রথম এক দোকানীর নিকট গিয়ে জানতে চাইলাম তিনি মাছ-মুরগীর কোন প্যাকেট পেয়েছেন কিনা। তাঁর না-জবাব পেয়ে দ্বিতীয় আর এক দোকানীকেও একই কথা শুধালাম। তিনিও একটু খোঁজাখুঁজি করে দেখে বললেন না নেই। মনে মনে কোন কিছু হারিয়ে যাওয়ার পর পঠিতব্য 'ইন্নালিল্লাহ' দোয়া পাঠ চলছে। অতঃপর অনুমান করে ফল বিক্রেতা তৃত্বীয় দোকানীর নিকট গিয়ে ব্যাপারটি বললাম। আমার মন বলছিল এবার অবশ্যই পাবো। আলহামদুলিল্লাহ। ঐ দোকানী আমাকে দু একটা প্রশ্ন করার পর সন্তোষজনক জবাব পেয়ে দোকানের ভিতরের দিকে লটকিয়ে রাখা প্যাকটে দুটো আমাকে বের করে দিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবার খুশীমনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় গিন্নিকেও এসএমএস করে সংবাদটুকু জানাতে ভূল করলাম না। বার বার ভূল করলে কি চলে??

পিনয়দের অনেক দোষের মাঝে এই ভালো গুনটুকু অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। অন্যের টাকাপয়সা বা সম্পদকে তার অগোচরে নিজের মনে করে হজম করে ফেলার বদ অভ্যাস, যা আমাদের দেশীয়দের মাঝে সচরাচর দেখা যায়, এদের মাঝে এমনটি খুব কম। বিগত এক বছরের বেশী সময় এদেশে বাস করে ব্যাপারটি আমার নিকট স্পষ্ট হয়েছে। আরো একটা উদাহরণ এ প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ করছি।

আমাদের দেশের টেম্পোর মতো একটি পরিবহন যান এখানে আছে, যেটাকে এখানে জিপনী বলে। বেশ লম্বা - ১৫ থেকে ২০ জনের একসাথে বসার ব্যবস্থা আছে। তবে ভাড়া উঠানোর জন্য কোন হেলপার এই যানে থাকেনা। ড্রাইভার সাহেব গাড়ী চালানো অবস্থাতেই তাঁর ডান হাত পেছনে যাত্রীদের নিকট বাড়িয়ে দিয়ে ভাড়া সংগ্রহ করেন। যাত্রীরা যার যার ভাড়া তাঁর হাতে তুলে দেন। গাড়ীর দূরবর্তী অংশে বসা যাত্রীরা কিভাবে ড্রাইভারের হাতে ভাড়া তুলে দিবেন? চিন্তার বিষয় তাই না? কোন চিন্তার বিষয় নয় আসলে। দূরবর্তী যাত্রীরা তাঁর ভাড়া কাছের দিকে বসা যাত্রীর হাতে দিয়ে দেন, তিনি আরো কাছের যাত্রীর (ড্রাইভারের নিকটবর্তী) হাতে দেন, সবশেষে তিনি ড্রাইভারের বাড়িয়ে দেয়া হাতে তা তুলে দেন। কি সুন্দর বিনিময় সিস্টেম। আর ড্রাইভার মশাইকে যদি কাউকে চেঞ্জ দিতে হয় তিনি একই কায়দায় কাছের যাত্রীর মাধ্যমে দূরবর্তী যাত্রীর হাতে সেই চেঞ্জ এর অর্থ পৌঁছিয়ে দেন। ধারণা করুন, আমাদের দেশে এই সিস্টেম কি এক দিনের জন্যও চালু করা যাবে? ড্রাইভার কিন্তু সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালান, আর তাঁর হাতটি উল্টো করে পেছনে দিয়ে ভাড়া সংগ্রহ করেন। মাঝে মাঝে সামনে টানানো আয়নায় তাকিয়ে যাত্রীদের অবস্থা অবলোকন করেন, মানে গাড়ী ভরেছে কিনা। আমার দেশের খুব চালাক যাত্রীরা এ সুযোগের সদ্ব্যব্যবহার করে শতকরা কতজন ভাড়া দিবেন তা সবাই অনুমান করে নিন। বিগত এক বছরে আমার অভিজ্ঞতায় আমি এমন কখনো দেখিনি যে কেউ ভাড়া না দিয়ে চম্পট দিয়েছে।

(পিনয় শব্দটি ফিলিপিনো-দের বোঝাতে বলা হয়)

বিষয়: বিবিধ

১০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File