মতিয়া নাকি আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে 'পাক' করার ঘোষণা দিয়েছে
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৩ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:০৫:৩৩ রাত
আমার শ্বশুর বাড়ির কাছে ছিল অনেক হিন্দু বাড়ি। বর্তমানে সেই পরিমানে না থাকলেও এখনো ঐ অঞ্চলে হিন্দু বাড়ির সংখ্যা আমাদের এলাকা থেকে বেশী আছে।
বউয়ের কাছে তার ছোটবেলাকার গল্প শোনার সময় ছোট ছোট শিশুরা তাদের সহপাঠিনী হিন্দু শিশুদের সাথে তাদের বাড়িতে গেলে পরবর্তীতে কিভাবে ঘরের উঠান, পানি খাবার গ্লাস কিংবা বাটি ধুয়ে পাক করতো, উঠানে গোবর পানি দিয়ে লেপে উঠান পাক করতো, যেই বাটিতে শিশুদের আপ্যায়ন করা হতো, সেই বাটিতে খাবার কিছু বাকি থাকলে তা ফেলে দেয়া হতো, এসব কাহিনী প্রায়ই উঠে আসে। কারণ, তখনকার হিন্দুরা জ্ঞানের অভাবে মুসলমানদের ম্লেস বা অচ্ছুত হিসেবে গন্য করতো। তাই ওদের বাড়ির উঠানে পা দিলেই অনেক বয়স্ক হিন্দু মহিলারা যে শিশুদের তেড়ে আসতো, সেসব ঘটনাও বেশীদিন পুরনো নয়। তবে বউ এখন বলে, বর্তমানে সেই অবস্থার নাকি পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো তারা প্রতিবেশী মুসলমানদের ছেলেমেয়েরা গেলে তেড়ে আসে না বা শিশুদের এঁটো বাটি ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য সোনারূপার পানি ব্যবহার করে না, বাকি খাবারটুকু ফেলেও দেয় না ।
আওয়ামী সরকারের কৃষি মন্ত্রী, মুতিয়া চৌধুরী নাকি গত পরশু বলেছে, তারা ৩ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে সেটাকে 'পাক' করবে? কারণ এর আগে বিরোধী দল সভা করে সেই স্থান নাপাক করে দিয়েছে। তার সেই বয়ান শুনে আমার টাস্কি খাওয়ার জোগাড়। তার এই পাক করার ঘোষনায় তিনি কি সরকার বিরোধীদের সবাইকে ঐ পুরান দিনের হিন্দুদের মতো অচ্ছুৎ জাতি বলে বুঝাতে চেয়েছেন? আজীবন কম্যুনিস্ট রাজনীতির সাথে জড়িত, প্রস্রাব করলে পানি দিয়ে পবিত্র হতে হয় এই জ্ঞানটাও যাদের নেই (কারণ ওদের তো নামায কালামের প্রয়োজন হয় না), সেই অধম জনরা যদি আজ তাদের মূখ দিয়ে পাক পবিত্রতার কথা বলে তখন তা যে জনমানুষের হাসির খোরাক ছাড়া অন্য কিছু হয় না, ক্ষমতা হতে সত্ত্বর নির্বাসনের আলামত দেখে এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও যেন তারা হারিয়ে ফেলেছে।
এই কম্যুনিষ্ট প্রজাতির মন্ত্রী, যার চেহারা দেখলে হিন্দু হিন্দু ভাবটাই ফুটে উঠে, সেই মন্ত্রী আজ কিভাবে সোহরায়ার্দী উদ্যানকে পাক করবেন, সেই কথাটি কিন্তু বলেন নি এখনো। সেটা তার ব্যাপার। তবে এই যে তিনি বিরোধী দল কর্তৃক উদ্যানটি নাপাক হবার কথা বলেছেন, সেই কথা দিয়ে যে তিনি শুধুমাত্র তাদের বলয়ের ধর্মবিরোধী রাজনীতিক ছাড়া বাকি বাংলার গণমানুষকে অতি নিকৃষ্ট শ্রেণীর মানুষ বলে প্রকারান্তে বিশেষায়িত করেছেন, এ বিষয়টির প্রতি কেউ খেয়াল করেছেন বলে মনে হলোনা। করে থাকলে এই মুতিয়া চৌধুরীর গালে কেউ জুতা দিয়ে বাড়ি দিয়েছে এমন সংবাদ তো অন্ততঃ শুনতে পেতাম তার ঐ নিকৃষ্ট কথনের প্রায় ৪৮ ঘন্টা পার হয়ে যাবার পরে।
ইসলামী রাজনীতির ধারক বাহকদের কথায় কথায় তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অপবাদ দিয়ে থাকে । মানে ইসলামী রাজনীতিকরা ইসলামী রাজনীতি করে তেনাদের পরাণের প্রতিবেশী বন্ধুদের মনে আঘাত দেন, এমন একটি ভাব তাদের এই অপবাদ দেয়া হতে ফুটে উঠে। তাহলে এই মুতিয়া বেগমকে আমার প্রশ্ন, আপনি আপনার ঐ অপবিত্র মূখ দিয়ে যে দেশের ডানপন্হী রাজনীতির ধারকদের নাপাক বললেন, তার মানে কি? এর দ্বারা কি আপনারা আপনাদের নিজেদের আবিষ্কৃত এবং ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ সেই ''সাম্প্রদায়িক'' মানসিকতারই পরিচয় দেন নি? আমার শ্বশুর বাড়ির পাশের হিন্দু প্রতিবেশীদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হলেও, আপনার মতো তথাকথিত নেতাদের নোংরা ও সংকীর্ণ মন মানসিকতার যে আদৌ কোন পরিবর্তন হয়নি এতদিনেও তারই প্রমাণ আপনার এই বক্তব্যে ফুটে ওঠে।
যারা নিজ মুসলিম বংশোদ্ভূত ভাই বোনদেরকে নাপাক বলতে পারে(যারা দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে), সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে সভা করে উদ্যানটিকে নাপাক করে ফেলেছে এমন জঘন্য মানসিকতার উক্তি মন্ত্রী হয়েও করতে পারে, তারা আবার কোন মূখে শুধুমাত্র মতাদর্শের পার্থক্যের কারণে ইসলামপন্থীদের সাম্প্রদায়িক বলে গালাগাল করে, এ কথা আমার বুঝে আসছেনা।
এতোদিন ইসলামপন্থীরা ছিল সাম্প্রদায়িক, এবার দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে নাপাক প্রমাণের ধৃষ্টতা, এর পরে আরো যে কি শুনবো আর দেখবো এই হতভাগা কান আর চোখ দিয়ে, তা আল্লাহ্ই মালুম।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন