বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যে দলটি

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৭ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:৫১:৫৭ সকাল

সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক দলটিক হাসিনা সরকারের হাতে সবচেয়ে বেশী নাজেহাল, দমন- নির্যাতন, জিঘাংসা, সহিংসতা ও হিংস্রতার শিকার হতে হয়েছে সেই দলটি হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র উইং ছাত্রশিবির। কিভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ও শিবির এই দমন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার একটু সংক্ষিপ্ত খতিয়ান নেয়া যাক:

ক) শহীদ : বিভিন্ন আন্দোলন, ও দাবী আদায়ের লক্ষ্যে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের মিছিলে পুলিশ ও লীগের গুন্ডাদের দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তলের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন ৫০০ শতেরও ও উপরে নেতা কর্মী। একমাত্র মাওঃ দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবের উপর হতে অন্যায় মৃত্যুদন্ড রহিত করার দাবীতে যেই আন্দোলন হয়, তাতেই ২০০ শতের মতো নেতা কর্মী শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর কোন সরকারের আমলে আম ছাত্র জনতা হতে শহীদ হওয়ার সংখ্যা এবারেই সবচাইতে বেশী।

খ) প্রথম সারির নেতাদের দল বেঁধে কারাগারে প্রেরণ এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডদানঃ চলমান সময়ে বিশ্বের দ্বিতীয় এমন কোন দেশ আমার জানা নেই যে দেশে তাদের সবচেয়ে সৎ ও চরিত্রবান নেতাদের ধরে এমন মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসি দিয়ে দলটিকে নেতৃত্বহীন করে দেয়ার জঘন্য ষড়যন্ত্র হয়েছে। বাংলাদেশই একমাত্র ব্যতিক্রম এবং এটা যে বিশ্বমোড়ল আমেরিকা এবং প্রতিবেশী ভারতের নীল নকশারই প্রতিফলন, তা ইসলামপ্রেমীদের বুঝতে হবে।

গ) জেলে বন্দী : বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হওয়া নেতা কর্মীর সংখ্যা ছিল বেহিসাবী। সঠিক করে কেউ বলতে পারবেনা মোট কতোজন জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের কারাগারে দিনের পর দিন বিনা বিচারে আটক রয়েছে। তবে একটি আনুমানিক হিসাব মতে এই সংখ্য দশ হাজারের কাছাকাছি। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে কোন একটি একক রাজনৈতিক দলের মধ্য হতে বন্দীর সংখ্যা এবারই রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

ঘ) পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্যের শিকারঃ অতীতের বিভিন্ন সরকারের আমলে পুলিশের গ্রেফতার বানিজ্য তেমন প্রসিদ্ধি লাভ করে নি, যতোটা না বর্তমান হাসিনা সরকারের আমলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আমার জানাশোনার মধ্যে এমন অনেক আছেন, যারা এই গ্রেফতার বানিজ্যের শিকার হয়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে জেল হাজত হতে মুক্তি পেয়েছেন। আবার অনেকে আছে, একাধিকবার এই গ্রেফতার বানিজ্যের যাঁতায় পিষ্ট হয়েছেন। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে পালিয়ে পালিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে বাসায় তাদের বৌ ঝিরা প্রতিটি মূহুর্ত কোন এক অজানা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। ঢাকার রায়েরবাজারের আমার আপন চাচাতো শালীর পরিবার বর্তমানে এই পরিস্থিতির শিকার।

ঙ) আহতদের সংখ্যা ঃ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে কতো যে জামায়াত শিবির কর্মী আওয়ামী গুন্ডা ও তাদের লেলিয়ে দেয়া পুলিশের হাতে মার খেয়ে আহত হয়েছেন তারো কোন লেখাজোকা নেই। অনেকে চির জনমের জন্যই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। (আল্লাহ্ তুমি ওদের সহায়)।

চ) রিমান্ডের নামে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন ঃ এই চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের আর এক নির্যাতনের নাম রিমান্ড। 'রিমান্ড' নামক এই ভয়াল শব্দের সাথে যেমন জামায়াত শিবিরের কর্মীদের এবারে সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটেছে, তেমনি বিএনপি সহ তার সহযোগী অন্য দলেরও পরিচয় ঘটেছে। তাছাড়া দেশবাসীর ৯০ শতাংশ মানুষ রিমান্ড জিনিষটা কি তার সাথে পরিচয় হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলেই। রিমান্ডে নিয়ে একজন নিরপরাধীকে কিভাবে জঘন্যতম উপায়ে নির্যাতন করে তার থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিতে হয়ে তা হয়তঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের বন্দী শিবিরের বন্দীদের সাথে তূল্য এমনকি বর্তমানের বিশ্বমোড়ল আমেরিকার তৈরী আবু গারিব বন্দীদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল, তার চাইতেও ভয়ংকর আচরণ করা হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের জিন্দান খানাগুলোতে। শিবিরের তরুন নেতা ও সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে একনাগাড়ে ৫৫ দিনের রিমান্ড (হয়তঃ এই পরিসংখ্যানটি সহজেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিবে) নিয়ে যেই নির্যাতন করা হয়েছিল এবং নির্যাতনের পর কোর্টে হাজির করতে তাকে দুই পুলিশ কোলে করে নিয়ে গিয়েছিল, সেই চিত্র থেকেই এদের অমানুষিক নির্যাতনের ছবির সাথে দেশবাসীর পরিচয় হয়।

ছ) খুন ও গুম ঃ আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন শেখ মুজিবের আমল। তখন একটি শ্লোগান সবার কাছে পরিচিত ছিল "এই সরকারের আমলে সবচেয়ে সস্তা হলো দুটি বস্তু ঃ নুন আর খুন।" বর্তমানে শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার আমলের দু'টি সস্তা জিনিষ হলো, খুন আর গুম। বস্তুতঃ এই হত্যা/খুন ও গুম হতে কোন দলই রেহাই পায় নি। এমনকি যেই হেফাজতে ইসলাম রাজনীতির ধারে কাছেও নেই সেই হেফাজতে ইসলামের নিরীহ কর্মীদের উপর রাতের আঁধারে যেই হায়েনাসম আঘাত হানা হয় ও ঘুমন্ত মানুষদের উপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে হত্যা ও লাশ গুম করা হয়, তাও বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এবং তাও হয় এই শেখ হাসিনার নির্দেশে। এছাড়া অনেক প্রভাবশালী নেতাদেরকেও রাতের আঁধারে গাড়িশুদ্ধ গুম করে ফেলা হয়, যার হদিস বিগত ২/৩ বছরেও কেউ করতে পারেনি।

জ) নারী নির্যাতন ঃ হাসিনা সরকারকে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা আরো একটি কারণে গোল্ড মেডেল দিয়ে সম্মানিত করতে পারে আর তা হলো, দুই তিন দফায় বিরোধী দলের মহিলা কর্মীদের মিথ্যা অজুহাতে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন কারাগারে বন্দী করে রাখা। এবং নানাপ্রকার শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা। এবং এক্ষেত্রেও জামায়াত ও ছাত্রী সংস্থার কর্মীরাই ছিল প্র্রধান টার্গেট। এমনকি সন্তান সম্ভবা এক কর্মীকে কিভাবে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তার বিবরণ ও মিড়িয়ার কল্যাণে দেশবাসী জানতে পারে।

আমাদের এক ব্লগার ভাইয়ের একটি লিখায় গত পরশু দেখলাম জামায়াত শিবিরের কর্মীদেরকে মাথাগরম সহ আরো কি কি বিশেষণে ভূষিত করে খালেদা জিয়ার স্ট্যান্ডকে সমর্থন জানানোয় তাদের ব্যর্থতাকে তিনি নেগেটিভ ওয়েতে বিচার করেছেন।

ভাইটিকে বলি, আপনি, একবার ঠান্ডা মাথায় উপরের চিত্রটির প্র্রতি খেয়াল করুন তো এবং ভেবে আবার বলুন তো, এমন অবস্থার শিকার হলে অন্য এমন কোন দল আছে যারা লেজ গুটিয়ে চুপচাপ এক কোনে গিয়ে বসে থাকতো? জামায়াত শিবিরের থেকে এমনটি আশা করা তো আরো অর্থহীন, কারণ তারা তো দুনিয়ার কোন লোভে আন্দোলন করছে না, তাদের আন্দোলনের একটিই লক্ষ্য, আল্লাহর জমীন হতে মানুষের তৈরী মতবাদ (সংবিধান) সরিয়ে সেখানে আল্লাহর সংবিধান (কোরআনের শাসন) চালু করা। আর এজন্য তারা এ দুনিয়ায় নয়, আখেরাতে আল্লাহর নিকট হতে ফল পেতে আগ্রহী।

আল্লাহ, দেশের এই দুর্দিনে তুমি সব ইসলামপ্রেমীদের এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়ে দাও, যাতে সবাই মিলে জালিম সরকারের হাত হতে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারে। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File