রোজনামচা-৬, ৩১শে আগস্ট ২০১৩
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:২৩:০৯ সকাল
মিনার রশীদ, আমার প্রিয় কলামিস্টদের একজন।
সর্বপ্রথম কখন এই কলামিস্টের কলাম কোন পত্রিকায় পাঠ করেছিলাম তা এখন স্মরণ করতে পাছিনা। যতদূর মনে পড়ে তা সম্ভবতঃ বছর ৭/৮ আগে। কোন জাতীয় পত্রিকার ওয়েব সংস্করণ হবে হয়তঃ। সেই প্রথম লিখাটি পাঠেই তাঁর প্রতি আমার আকর্ষণ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং তাঁর লিখার প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যদিও এখন সেই লিখাটি কোন বিষয়কে নিয়ে আবর্তন করেছিল, তাও স্মরণে আনতে পারছিনা। কোন একটি কলাম বা লিখার কি কি গুন থাকলে তা পাঠকের হৃদয়ে দাগ কাটতে পারে, তা পাঠকের রুচিবোধের উপর কিছুটা নির্ভর করলেও, বেশীর ভাগই তা লিখকের লিখার বিষয়বস্তু নির্বাচন, উপমা প্রয়োগ, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মন-মানসিকতার সাথে সম্পর্ক রাখে এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয়াবলীর আলোচনা থাকার উপর নির্ভরশীল। এদিক দিয়ে মিনার রশীদের প্রায় প্রতিটি লিখা মানোর্ত্তীন্য এবং সংবেদনশীল।
মিনার রশীদের কলামের বিষয়বস্তুর একটি বিশেষ গুন হলো তিনি তাতে যখন উপমা প্রয়োগ করেন, কিংবা ঘটনাপ্রবাহের সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন সমাজের উদাহরণ টেনে আনেন তখন তা অতীব দক্ষতা ও নিপূণতার সাথে সম্পন্ন করেন। তা এমন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন যে, পাঠ করে যাবার অনেক্ষণ পরেও তা পাঠকের হৃদয়ে স্পন্দিত হতে থাকে। আর উপমাগুলো এমন অধিকহারে সমগ্র লিখাতে ছড়িয়ে থাকে যে, পাঠক একবার পাঠ শুরু করলে, অন্য কিছু না হলেও, একমাত্র নূতন নূতন উপমার স্বাদ নিতে, পাঠকের মনোযোগ তাঁর কলামের শেষাবধি পর্যন্ত ধরে রাখতে সমর্থ হয়। তাই কখনো অস্বাভাবিক বড় কোন কলাম পাঠ করতে হলেও, পাঠক সেই লিখাটি শেষ না করে উঠবেন না। তাঁর আজকের কলাম থেকেই একটি ছোট্ট উদাহরণ এপ্রসঙ্গে এখানে কোট করার লোভ সামলাতে পারছিনা। পশ্চিমা অনৈতিকতাকে কি হারে আমাদের সমাজ অনুকরণ করে থাকে সেটা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেনঃ "মাথায় টাক দেখা দিলে নাকি পকেটে টাকা আসে। তবে আমাদের পকেটে টাকা আসার আগেই মাথার এই যন্ত্রণাদায়ক টাকটি দেখা দিয়েছে। পশ্চিমা সমাজের মতো উন্নতি আসার আগেই ওদের সমাজের দুর্গতিগুলো পানির ঢলের মতো এ সমাজে চলে এসেছে। বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া সুখগুলো রফতানি এবং বিদেশী কষ্টগুলো আমদানির এজেন্সি নিয়েছেন এই বেতেঁতুল ঠাকুরগণ। এদের চিনে রাখা অতীব জরুরি।"
অপর যে কারণটি তাঁর লিখার প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করে তা হলো, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আদর্শ ও জীবনবোধের প্রতি তাঁর আপোষহীন বলিষ্ঠ বক্তব্য এবং বিশাল সচেতনতা। এদিক দিয়ে আমার অপর শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক ও সম্পাদক কারাবন্দী জনাব মাহমুদুর রহমানের সাথে তাঁর আদর্শ, চিন্তা ও কর্মধারার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাই। ইসলামী জীবনবোধের প্রতি মিনার রশীদের অবিচল আস্থার এক ঝলক তাঁর আজকের লিখা কলাম থেকেই এখানে কোট করছিঃ "আমাদের পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধটি যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে। হিজাব, দাড়ি, টুপি ধর্মের মাত্র এক ভাগ। এর বাইরে আরো নিরানব্বই ভাগ রয়েছে যা পালন করলে আধুনিক জীবন থেকে বাইরে যাওয়ার দরকার পড়বে না। পরকালে পুরস্কারের জন্য যেসব কর্মকাণ্ডকে আবশ্যক শর্ত করা হয়েছে, সেগুলো করলে এই দুনিয়ায়ও সেই ব্যক্তি বর্তমান পৃথিবীর যেকোনো দেশের উত্তম নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন। বেহেশতের টিকিটধারী মানুষটি যেকোনো সমাজে উত্তম মানুষ হিসেবে হবেন বিবেচিত। আল্লাহর কাছে প্রিয় মানুষটি পৃথিবীর যেকোনো নারীর কাছে উত্তম স্বামী হিসেবে আর যেকোনো মা-বাবার কাছে উত্তম সন্তান হিসেবে গণ্য হবেন। পৃথিবীর যেকোনো জনতার কাছে উত্তম নেতা হিসেবে গণ্য হবেন। ‘আল্লাহর মাইর’ বা প্রকৃতির প্রতিশোধের বাইরে আমরা কেউ নই। যে অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাটি সমাজটিকে অনাবাসযোগ্য রাখতে ভূমিকা রেখেছে, এ সমাজের অংশ হিসেবে তার ফল তাকেও একদিন-না-একদিন কোনো না কোনোভাবে ভোগ করতে হবে। এ ভয় ও ভাবনাটি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার মনে ঢুকলে সেই পুলিশবাহিনী মৌলবাদী হয়ে পড়বে না। এমন একটি পুলিশবাহিনী সৃষ্টি করতে পারলে মাদরাসা নিয়ে আতঙ্কিত সজীব ওয়াজেদ জয়েরও লোভ জাগবে এই সোনার দেশটিতে এসে স্থায়ীভাবে থাকার।"
জনাব মাহমুদুর রহমান যেমন সরকারী চাকুরী হতে অবসর নিয়ে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করে রাতারাতি লাইমলাইটে চলে আসেন, তেমনি মিনার রশীদ ও তাঁর চাকুরী হতে অবসরে গিয়ে কোন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন কিংবা নিজেই একটি পত্রিকা প্রকাশ করে তাকে স্বল্প সময়ে জনমানুষের হৃদয়ের কাছে নিয়ে আসবেন, এমনটি আশা আমরা করতে পারি। আল্লাহর নিকট সবসময় এমন প্রার্থনাই করি।
এ কথায় সবাই একমত হবেন যে, একটি সরকারকে স্বল্প সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিতে এবং একইভাবে একটি অজনপ্রিয় সরকারকে সাপোর্ট দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় দাপটের সাথে অবস্থান করতে মিডিয়া বিশাল ভূমিকা রাখে। এই যে, বর্তমান আওয়ামী সরকার, বলা যায় তার বিভিন্ন সেক্টরে ভূমিধ্বস ব্যর্থতা, রাজনৈতিক গুম, হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের মাঝেও যেমন করে পূর্ণ ৫ বছর নির্বিঘ্নে দাপটের সাথেই ক্ষমতার লাঠি ঘুরিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনে সরকারপন্থী (বলা হয় ৮০ ভাগই সরকারী সাপোর্টার) মিড়িয়ার ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আমার মনে আছে, আজ হতে প্রায় ৩৫ বছর আগে যৌবনের শুরুতে যখন আদর্শবাদী ছাত্রসংগঠনের একটি ঘরোয়া সভায় অংশ নিচ্ছিলাম, সেদিনও মাননীয় সভাপতি তাঁর বক্তব্যে আমাদেরকে ভবিষ্যতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতেও বিভিন্ন সভায় এমন আহ্বান প্রায়ই শুনেছি। কিন্তু, আজ ৩৫ বছরেও কেন যে, এ ক্ষেত্রে আদর্শবাদীরা এখনো পিছিয়ে আছে, তা বুঝতে এ অধম অক্ষম।
তো যা বলছিলাম, জনাব মিনার রশীদ সাহেবকে কাছে থেকে দেখার কোন সুযোগ হয়নি, ভবিষ্যতে কখনো হবে কিনা তাও জানিনা। জীবিকার তাগিতে তাঁকে জাহাজে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াতে হয় বলে দেশে ফিরে কখন তিনি সার্বক্ষণিক ভাবে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিবেন, কিংবা সে ব্যাপারে আদৌ কোন পরিকল্পনা তাঁর আছে কিনা সে ব্যাপারে পূর্বাভাস দেয়ার কোন অবস্থানেও আমি নেই। সংক্ষেপে তাঁর ব্যাপারে এখানে শুধু এটুকুই বলতে চাই, যখনই আমি ব্লগের ম্যাগাজিন পাতাটি খুলি তখন যে গুটি তিন/চার কলামিষ্টের কলাম পাবার আশা করে দুচোখ সমগ্র কলামিষ্টের লিস্টএ চোখ বুলিয়ে নেয় তাদের মধ্যে উনি প্রথম কয়েকজনের একজন। আগে মাহমুদুর রহমান সাহেবের কলাম পেতাম নিয়মিত। কিন্তু বর্তমানে তাঁর করুণ পরিণতিতে তাঁর কলাম এর জন্য যে তৃষ্ঞা, তা নিবারণের ক্ষমতা এই নবীন(?) কলামিষ্টের আছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশে অনেক প্রতিষ্ঠিত লিখকই আগের মতো কলাম লিখছেন না, যাদের কলাম পাঠ করে দেশের অবস্থার সাথে বিদেশে বসেও একটা নাড়ীর সংযোগ রক্ষা করতে পারতাম। তাই, মিনার রশীদ ভাইয়ের প্রতি, সুদুর ম্যানিলা হতে আপনার এই ভক্ত শুধু এটুকুই অনুরোধ রাখবো, ভাই, আপনার কলাম পাঠের জন্য আমাদরে মতো ভক্তদের যেন দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় না রাখেন, আল্লাহ আপনাকে সর্বত্র, সর্বাবস্থায় সুস্থ ও সবল রাখুন, আপনাকে আল্লাহ দীর্ঘ হায়াত দিন এ কামনা।
আজকে সকালেই নিয়মিত অভ্যাস বশে ব্লগে এসে প্রথমেই আপনার দেয়া লিখাটি পেয়ে, পাঠের পর তা আমাদের প্রিয় ব্লগে (বিডিটুডে) সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে না পেরে, তাই করে ফেললাম। পেস্ট করার পর লিখাটির প্রারম্ভে আপনার দেয়া বার্তা - ফেসবুক, ব্লগ সবখানে শেয়ার করার সাধারণ অনুমতিটি দেখে আরো আশ্বস্ত হলাম যে, কাজটি করে আমি কোন অন্যায় করিনি।
শেষ করার আগে আবারো, মিনার রশীদ এবং তাঁর পরিবারের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ কামনা করে শেষ করছি।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন