রোজনামচা-৩, ২৭ আগস্ট, ২০১৩
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৬:১৭:১৩ সকাল
সকল প্রশংসা পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালার জন্য।
টানা তিনদিন ছুটি ভোগের পর আজ আবার অফিস শুরু। অনেক কাজ জমে আছে অফিসে। শুরু হবে হাঁকডাক। ভয়ে তটস্থ থাকবে সবাই কখন কার কাজ নিয়ে বিগ বস্ অফিস গরম করে তোলেন। এ ভয় থেকে কেউই মুক্ত নয়। প্রধানতঃ দুই ধরণের বস্ থাকেন। কেউ ভালোবাসা দিয়ে কাজ আদায় করে নেন, আর কেউ হুমকি ধামকি দিয়ে কাজ আদায় করেন। আমাদের বস্ শেষোক্ত দলের লোক।
আজকের পর আবার কখন একটু সময় নিয়ে ল্যাপিতে বসতে পারবো, তার ঠিক নেই। তাই আগেই সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অনিচ্ছাকৃত দেরীতে পরবর্তী পর্ব দিতে হবে বলে।
সুপ্রিয় ব্লগার ডঃ ভিশুর অপারেশন ব্লগার হান্ট সিরিজ দিয়েও যখন বিডি টুডেতে অনিয়মিত ব্লগারদের নিয়মিত করা গেল না, তখন আমার আশাটুকুও ক্ষীণ হয়ে এলো। এককালে, তুখোড়, জ্ঞানী ও বিজ্ঞ ব্লগারদের এমন এমন পোস্ট পাঠের সুযোগ হতো যে, একটি মাত্র পোস্ট দিয়ে সেদিনের যাত্রাটির শুভ সূচনা হতো, দিনটা খুব ভালো কাটতো। মনে হতো সারাদিনের পথচলার একটা নির্দেশিকা হাতে পেয়েছি। তাঁদের লিখাগুলোতে তাঁদের পান্ডিত্যপূর্ণ উপস্থাপনায় ঐশীগ্রন্থ এবং আমাদের প্রিয় রাসূলের(সাঃ) বাণী দ্বারা সিক্ত থাকতো যে। কিন্তু বর্তমানে বিডি টুডেতে এমন লিখার সংখ্যা নেই বললেই চলে। সুপ্রিয় ব্লগার অনুজপ্রতিম ইসমাঈল একেবি-র নাম এ প্রসঙ্গে চলে আসে। ভাইটির শুভ বিবাহের পর, সহধর্মীনিকে সময় দিতে গিয়ে আমাদের কথা একদম ভূলে গেছেন। আর কতোদিন আমাদেরকে এমনভাবে বঞ্চিত করবেন, তা তিনি জানেন, তাঁর আল্লাহ জানেন। তবে এটা করে তিনি আমাদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণের জন্য যে দায়িত্ব হাতে নিয়েছিলেন, সে দায়িত্বকে যে ঝাঁপিবদ্ধ করে রেখেছেন, এটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে তাঁর। আয়েশা আপা, নূসরাত আপাদেরও একই অবস্থা। মেধাবিকাশ ভাই তো শুধু মন্তব্য করেই দায়িত্ব পালন করছেন, তাও না করার মত। রেহনুমা আপাকে মাঝে মাঝে দেখা যায় বটে, তবে তিনিও খুব কম আসছেন। সে যাক, ভাগ্য তো আর সব সময় একই ভাবে সঙ্গ দিবে না, এটাও স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার।
ম্যানিলায় এলাম ২০ মাস হতে চললো। এই স্বল্প সময়েই বেশ কয়েকটা বদ অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেছি। সবই পরিবেশ। পরিবেশ যে মানুষকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে, আমি নিজেই তার জ্বলন্ত স্বাক্ষী। তার মধ্যে এক নম্বর হলো সময়ের সদ্ব্যবহার না করা। আসলে আগে যেখানে যেখানে গিয়েছি, নিজস্ব চিন্তাধারার অনেকরে সাথে উঠাবসা করেছি, সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করেছি পরিবেশ উন্নয়নে, সত্য-ন্যায়ের পথে আহবানে। কিন্তু ম্যানিলায় তো দেশীয় জনও হাতে গোনা, আর পরিবেশও বিপরীতমূখী। দেশীয় যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত, আশেপাশে যাঁরা আছেন, তাঁরা কেউ হয়তঃ সাময়িক কাজ নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য আছেন, নয়তো পড়তে এসে এদেশীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে, বিয়ে করে এখানেই সংসার পেতেছেন। অনেকটা এদেশের সংস্কৃতিরই তাঁরা ধারক হয়ে পড়েছেন। তাই সময়টাকে গঠনমূলক কাজে লাগানোর তেমন পরিবেশ পাচ্ছি না। আমরা হলাম গিয়ে আবার মেজরিটি পক্ষের, নেতৃত্ব দেয়ার মতো গুনের অভাব। কেউ নেতৃত্ব দিলে তাঁর সাথে আছি, থাকবো। বেশ।
এখানে এসে পাঠ্য বইর সাথেও সংযোগ কমে গেছে। পূর্বে ধর্মীয় পুস্তকের পাশাপাশি পত্রিকা ম্যাগাজিন ইত্যাদির পাতায় বিচরণের একটি বাতিক ছিল। কিন্তু এখন যেন সবকিছুতেই অরুচি। নেট, ওয়েবসাইট ইত্যাদির আগমনই কিন্তু এসব ব্যাপারগুলোর জন্য দায়ী।
ব্লগের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করতে চাইলাম, তাও কারো কারো সহ্য হলোনা। দিল এসবি বন্ধ করে। ব্রাউজিং এ সময় দেব, তাও আত্মজার কল্যাণে হয়ে ওঠেনা, কার্যালয়ে তো কাজ করেই কূল পাইনা। ফেবু-র একাউন্ট নিষ্ক্রিয় অনেকদিন, কারণটা উহ্যই থাক। সময় কাটাতে তাই হাতে চলে আসে টিভি-র রিমোট কন্ট্রোল। যে টিভি হলো, আল্লাহর নির্ধারিত হালাল কাজ (তালাক) এর মতোই সবচাইতে নিম্নস্তরের কাজ আমার কাছে।
সে এক যাদুর বাক্স। এ যাদুর বাক্স ঘরে থাকা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে উঠতি বয়েসী তরুন তরুণী যাদের ঘরে আছে তাদের জন্য। অবশ্য মোবাইল, ইন্টারনেট কোনটাই বা নিরাপদ? সবগুলোতেই তো জোরেশোরে তরুন তরুনীদেরই মূলতঃ টার্গেট করে তাদের কিভাবে ভোগবাদীতার সর্বশেষ স্তরে স্বল্প সময়ে নিয়ে চলে যাওয়া যায় তার প্রশিক্ষণ চলছে রাত্রদিন। আমাদের আল্লামা শফি সাহেব যে ১৩ দফা দাবী পেশ করেছেন, তা কি আর এম্নি এম্নি করেছেন? তবে, তাঁদের সে দাবীটা পেশ করছেন কার কাছে? যারা এ দাবীর বিপক্ষে আগাগোড়া তাদের কাছে, যাদের ম্যানিফেস্টোই হলো দেশকে ধর্মবিমূখ করে ধর্মনিরপেক্ষতার জোয়াল পরানো। তাই এ দাবী তাদের কাছে পেশ করা কি মূর্খতা নয়? এটাকে বরং দাবী না বলে ১৩ দফা'-তেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে এবং এ দফাগুলো যাতে সমাজে বাস্তবায়ন করা যায় সেজন্য নিজেরাই হাফেজ্জী হুজুরের মতো রাজনীতি না করার ধনূকভাঙ্গা পণ হতে বেরিয়ে এসে তওবা করে রাজনীতিতে নামতে হবে। আর যারা আগে থেকেই এ ময়দানে আছেন, তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। না হয় কত তের দফা আসবে যাবে, কাজের কাজ কিছুই হবেনা।
পরিবেশ!! পরিবেশ দূষণ নিয়ে সারা বিশ্বে কত হৈচৈ। প্রায় সব দেশেই আছে পরিবেশ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। কিভাবে বিশ্বকে পরিবেশ দূষণ হতে মুক্ত রাখা যায় সে ব্যাপারে সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপের অন্ত নেই দেশ বিদেশে, লক্ষ কোটি টাকা পানির মতো ব্যয় হচ্ছে এই লক্ষ্যে। কিন্তু সেটা হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। আর যেই পরিবেশের দূষনের কারণে আপনার আমার সন্তানরা, আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্ম আজ দ্বীনের পথে ছেড়ে ইমরান সরকার, রাজীবদের মতো নাস্তিকে পরিণত হতে চলেছে, মুসলমানের ঘরে জম্ম নিয়েও সেই সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ উন্নয়নে কারো মাথাব্যাথা তো নেই-ই বরং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই সেই পরিবেশ ধ্বংসে খরচ হচ্ছে আরো কোটি কোটি টাকা সাড়ম্বরে। ওরা দেশটাকে পূরো ধর্মনিরপেক্ষ তথা ভোগবাদী বানিয়ে ছাড়লো বলে।
যাদুর বাক্সের কথা বলছিলাম। রিমোট টিপতে টিপতে স্পোর্টস চ্যানেলে একটি ফুটবল খেলার দৃশ্যে দৃষ্টি আটকালো। দেখে তো চক্ষু চড়কগাছ। সম্পূর্ণ বিকিনি পরিহিতাদের দিয়ে ফুটবলের ম্যাচ খেলানো হচ্ছে। পার্থক্য শুধু এটুকু যে বিকিনির নগ্নাদের বডিজের উপরিভাগে কোন কাপড় থাকেনা, এদের বডিজের উপরিভাগে সামান্য একটুকরো কাপড়ও আছে। আর খেলার নাম দিয়েছে 'লিঙ্গারীজ ফুটবল' মানে অন্তর্বাস পরিহিতাদের ফুটবল। রাগে মাথা টঙ। বললাম বাকিটুকু রাখার কি দরকার ছিল। বুঝলেন তো? কেন যাদুর বাক্সকে দুচোখে দেখতে পারিনা। ভালো কোন অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন, করুন, তবে এদেরকে ডিঙ্গিয়ে সেই ভালো অনুষ্ঠানে যাবার উপায় বন্ধ। যাদুর বাক্সটিকে তাই এড়িয়ে চলতে চাই। যদিও কম সময়েই তা সম্ভব হয়। এ বাক্সকে ছাড়াও আমি চলতে পারতাম। কেন আনলাম? সে প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবে কবি এখানে নীরব।
এটম বোমার ধ্বংসকারীতার কথা ইতিহাসে পড়েছি। কিন্তু যখন একান্তে বসে আমাদের পরিবার ও সমাজের মানুষের নীতি নৈতিকতার ক্রম অধোগতির কথা ভাবি তখন ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠি। কোথায় চলেছি আমরা। কি দ্রুতগতিতে নীতি নৈতিকতার সব শৃঙ্খলকে একে একে ভেঙ্গে আমার সমাজ ও রাষ্ট্র দ্রুত হযরত লুত (আঃ) এর জাতির ভাগ্য বরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে তা ভাবি আর আশ্চর্য্য হই। সমাজের এই অধোগমনে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ যোগাচ্ছে তারা আমাদেরই সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ, যারা ধর্মকে তাকে তুলে রেখে, বা শুধু মসজিদের গন্ডীতে আবদ্ধ রেখে, জীবনের বাকী সবখানে মানুষের তৈরী মতবাদ দিয়ে ধর্মনিরপক্ষেতার বুলি কপচিয়ে সমাজটাকে ধ্বংসের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
নাহ্, লিখছি আর ল্যাপির টাইমারের উপর নজর রাখছি। সময় শেষ, এখুনি প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করতে হবে অফিসে যাবার। আজকের মতো তাই এখানেই ইতি। আবার দেখা হবে...
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৫২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন