রোজনামচা-২ঃ ২৬ আগস্ট, ২০১৩

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৬ আগস্ট, ২০১৩, ০৫:৪৯:২৩ সকাল

আগের পর্ব এখানেঃClick this link

পরম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আজকাল পিসি, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, স্কাইপি ইত্যাদির কল্যাণে হাতে কলমের সংযোগ প্রায় হয় না বললেই চলে। এটা আমার, তিনার সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। তবে রোজনামচা শুরু করার পর দেখা যাচ্ছে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও কাগজ কলমের সংযোগ ঘটাতে হচ্ছে। কারণ, ল্যাপিটা থাকে কন্যার দখলে। যাক, একদিকে ভালোই হলো। হাতের সাথে কলমের বন্ধুত্বকে ঝালাই করে নেয়া হলো। আমার গিন্নি, পূর্বে যিনি চিঠি লিখতেন, বর্তমানে ঐসব ডিজিটাল বস্তুর কল্যাণে চিঠি লিখা ভূলেই গেছেন, তথা ঠিকমতো কলমটি ধরতে পারবেন কিনা তাও সন্দেহ। ঠিক কবে কাকে শেষ পত্রটি লিখেছিলেন, তা এখন মনেও আসছেনা।

বয়েস হয়েছে। রিডিং গ্লাস ছাড়া পড়তে পারিনা। আমার মরহুম বাবা কিন্তু চশমা নিয়েছিলেন অনেক বয়সে, প্রায় সত্তর এ গিয়ে। আমাকে পঞ্চাশ এর ঘরেই কেন নিতে হলো? চিন্তা করে একটা কথাই মাথায় আসে বারবার। উনারা তো দেশের সীমিত গন্ডীর বাইরে যান নাই। তাই বিদেশের রাস্তাঘাটে, মলে ঘুরতে গিয়ে চক্ষুর জ্যোতি হরণকারী নানাবিধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টি যায়নি। যা আমাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। ইশ্, ঘর থেকে রাস্তায় বেরুলেই বাদাইম্মা সব অর্ধ নগ্নদের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে গিয়ে কত কিছুই যে এই পোড়াকপালী চোখে পড়ে তার হিসাব কষা মুশকিল। কেন যে, আমাদের রাসূল (সাঃ) বেগানা নারীদের উপর প্রথম দৃষ্টি পড়া মাত্রই দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবার পরামর্শ দিয়েছেন, তার মাজেজা পূর্বে তেমন না বুঝলেও এখন বুঝতে কষ্ট হয় না। তবে কার্যক্ষেত্রে তা কতটা মানতে পারি, সেটাই হলো কথা।

ম্যানিলায় তো মনে হয় রাস্তাঘাটে এবং কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চাইতে নারীদেরই সংখ্যা বেশী। মলগুলোতে তো মনে হয় ৮০ ভাগই নারীদের রাজত্ব। সেলস্ গার্ল, একাউন্টস ক্লার্ক সব জায়গায় তাদের দিয়ে ঠাসা। আপনি কোন ক্রয়কৃত বস্তু নিয়ে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছেন, সামনের ১৫/২০ জন পার হয়ে আপনার পালা। হয়তঃ সময় লাগবে ২০/২৫ মিনিট, তো এই সময়টাতে আপনার দৃষ্টিকে আপনি কতটুকু সংযত রাখতে পারবেন তা না বললেও বুঝে নিতে কষ্ট হয়না। আপনার ঠিক বুকের সামনে আপনার উচ্চতার চাইতেও উঁচু কোন দীর্ঘাঙ্গী নামকা ওয়াস্তে গায়ে তেনা জড়ানো নারী কাস্টমার যদি দাঁড়িয়ে কানে সেলফোন দিয়ে বকর বকর করতে থাকে তার কোন ফ্রেন্ড এর সাথে, তখন আপনি আপনার দৃষ্টি কোনদিকে রাখবেন? এদের কোন কোন নারীর পোষাক যেন বীচের বিকিনি পরিহিতাদের চাইতেও বাড়া।

একটা জিনিষ নিয়ে চিন্তা করি প্রায়ই। এই দেশে আমাদের দেশের মতো নারী ধর্ষনের ঘটনা ঘটে না? ইভ টিজিং হয় না? গণধর্ষন হয় না? কই নিউজে তো তেমন কিছু দেখি না। আবার রাস্তাঘাটে কোন খারাপ পুরুষ কোন অর্ধনগ্নাকে নিয়ে কিছু করছে, টিজ করছে এমনো তো দেখি না। যা দেখি তা হলো, কিছু আপোষের সাথে চুম্বন, গায়ে গা জড়িয়ে হাঁটা এগুলো। তাহলে এদের পুরুষদের মাঝে কি হিজড়া বেশী, নপুংসক বেশী? না তা নয়। তবে কেন নারী নির্যাতনের তেমন ঘটনা চোখে পড়ে না, তার গভীর রহস্য আছে। সে রহস্যের কথা অন্য সময় লিখা যাবে। কারণ বিষয়টা অল্প কথায় ব্যক্ত করা যাবেনা। তবে অনেক কারণের মাঝে যে, আইনের প্রতি এদের শ্রদ্ধা আছে বা ভয় আছে, এ কারণটিও কিন্তু এখানে ক্রিয়াশীল। পুলিশকে ঘুষ দিয়ে পার পাবার সুযোগ এখানে কম।

কম্প্যুটার এর কল্যাণে বেশ কিছু বদ অভ্যাসের জম্ম হয়েছে আমার মাঝে। আগের মতো অবসরে বসে বই পাঠে মনোনিবেশ করতে পারি না। কখনো বই নিয়ে বসলেও দেখা যায় ১৫/২০ মিনিটের মাথায় চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে। যেজন্য ঘুমকাতুরে (-টিভ) ইমেজ এর মানুষরূপে ইতোমধ্যে গিন্নির কাছে সুপরিচিত হয়ে গেছি। তা হয়েছে হোক, তেমন গুরুত্ব দেই না। উনি যেহেতু দিনে তিন চার ঘন্টার বেশী ঘুমুতে পারেন না, শত চেষ্টা করেও, তাই আমারটা উনার কাছে বেশী মনে হবেই। হিসেব করলে দেখা যাবে আমারও কিন্তু ছয়/সাত ঘন্টার বেশী ঘুমাবার সুযোগ নেই। কিন্তু সে হিসেব উনি করবেন না, হুঁহ।

রমজান মাসে শহীদে মেহরাব হজরত উমর (রাঃ) এই শিরোনামে একটি বই ডাউনলোড করেছিলাম ল্যাপিতে, মিশরীয় এক লিখক, ইখওয়ান কর্মী। বইটা দারুন মজার এবং শিক্ষনীয়। আপনারাও অবশ্যই পাঠ করবেন। চেয়েছিলাম রমজানেই শেষ করবো। কিন্তু নানা কারণে এখনো শেষ করতে পারিনি। ২৮০ পৃষ্ঠার মতো সাইজ। মনে হয় এখনো ১০০ পাতা বাকী। আগের যেই প্রসঙ্গ- কাগজে লিখা বই পাঠে অরুচি - এখন ল্যাপটপেই পাঠ যেন ভালো লাগে। এবারের রমজানে পুরো কোরআন খতম দিয়েছি ল্যাপিতে। ল্যাপিতে পাঠের কিছু সুবিধাও আছে, আবার অসুবিধাও আছে। সুবিধা হলোঃ সাময়িক বিরতিতে উঠে যাবার প্রয়োজন হলে কিতাব বন্ধ করে তাকে রাখার প্রয়োজন নেই। জাস্ট বাটন টিপে অফ করে যাবেন, কাজ সেরে আবার এসে টেবিলে বসে যাবেন। কোন বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন হচ্ছেনা। ইত্যাদি। তবে ঝক্কিও কম না। এক পেজ পাঠ শেষে পরবর্তী পেজের জন্য যেই না ডাউন বাটন টিপ দিতে গিয়ে ভূল কোন বাটনে টিপ দিলেন, ব্যাস হারিয়ে ফেললেন আপনার ফেলে আসা পেজের ঠিকানা, সব ওলট পালট হয়ে যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সাবধানতা আবশ্যক। প্রথমে দু একবার এমন হওয়াতে পরবর্তীতে আমাকে সতর্কতার মাত্রা বাড়াতে হয়। সুবিধার মাঝে আর একটি জিনিষ, রাত গভীরে কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে আপনাকে বাতি জ্বালানোর প্রয়োজন নেই, ল্যাপির আলোই পাঠের জন্য যথেষ্ট। পবিত্র গ্রন্থ রাখতে আলাদা বালিশ কিংবা রেল-এর প্রয়োজন নেই ল্যাপির বেলায়, তার গঠনের কারণেই অটো-হাই হয়ে থাকে প্রয়োজনীয় কোরআনের পাতাটি।

আবার বৃষ্টির মাঝে ফিরে আসি। আজ সকালেও আকাশ মেঘলা, ওয়েদার ফোরকাস্ট অনুযায়ী, বৃষ্টিও হবার কথা, বাইরের বাতাসটিও ঠান্ডা। দিনটি কেমন যাবে? ভালোই বলা যায়, কারণ অফিস নেই, 'জাতীয় বীর দিবসের' ছুটি। পুরো দিনটি ঘরেই কাটাতে হবে মনে হয়। ৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ঘরে, কিভাবে পুরো দিন কাটবে, ভাবতে কষ্ট হয়? না, অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এদেশের জায়গা জমির মূল্য কিন্তু আমাদের দেশের চাইতেও বেশী মনে হয়। তাই ফ্ল্যাট বাড়ির ভাড়াও আকাশচুম্বী। ৬০০ স্কয়ার ফিটের যে বাসায় আমি আছি, তার ভাড়া বাংলা টাকায় মাসিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয় প্রতি মাসে প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা। তবে লোড শেডিং এর ঝক্কি তেমন নেই। কখনো বিদ্যুৎ চলে গেলে বলতেও পারিনা। অটো জেনারেটর দ্বারা ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুতের সেবা পাওয়া যায়। রিয়েল স্টেট বিজনেসে আমাদের দেশীয় এগিয়ে আছে, কিন্তু এদেশেও এখন এ ব্যাবসা গতি পেয়েছে। তবে উচ্চমূল্যের কারণে জনগনের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখতে ফ্ল্যাটগুলোর সাইজ যতো ছোট করা যায় তার চেষ্টা চলে। স্টুডিও রুম এর কথা বেশ চালু এখানে, অর্থাৎ একজন বা দুজনের উপযোগী একটি রুমের মাঝেই কিচেন, সিটিং, বেড সব কিছু ঢুকিয়ে ২৫০/৩০০ স্কয়ার ফিট সাইজের রুম বানিয়ে দেয়, ওটাই স্টুডিও এপার্টমেন্ট।

এদেশে চীনাবাদামের বেশ কাটতি আছে। এখানে, ওখানে, সেখানে চীনাবাদামঅলার দেখা পাওয়া যায়। নানারকমের মসলা, রসুন ইত্যাদি দিয়ে তেলে ভেজে আলাদা, আলাদা খোপে রেখে বেচে ওরা। বৃষ্টির দিনে চীনাবাদামের আলাদা কদর। তবে দামটা খুব চড়া। আমার দেশের দশ টাকায় যা পাই, তা এখানে ৫০ টাকার কম না। তাই বৃষ্টির দিনের দেশীয় স্বাদ নিতে মনে চাইলেও, সাধ আর সাধ্যের ব্যবধান ঘুচিয়ে অনেক সময় তা হয়ে ওঠেনা। আমার ফ্ল্যাট এর সামনে রাস্তার ওপাশের দালানের সামনে রোজ বিকেলে এক বুড়ো দম্পতি নিয়ে বসে তার ঠেলা গাড়িতে করে শিক কাবাব দোকানের পশরা নিয়ে। এটারও এদেশে খুব চল। কয়লার আগুনে ছোট লোহার চুলোর উপরে শিক কাবাবের শিকগুলো বিছিয়ে দিয়ে হাতপাখার দ্বারা বাতাস করেই কাবাব বানানো হচ্ছে আর বিক্রি চলছে, আবার সাথে সফট ড্রিংকস এর ব্যবস্থা। ভালোই বিক্রি করেন তারা। রাত দশটা অবধি চলে তাদের এ ব্যবসা। আমার ফ্ল্যাট এর জানালা দিয়ে ওদের এ বেচাকেনা মাঝে মাঝে উপভোগ করি। আমার গিন্নি এদের খুব ভক্ত। যদিও আমরা হালাল, হারামের বিচারে তা কিনে খেতে পারিনা, কিন্তু ঐ বুড়ো দম্পতির ব্যবসা করা দেখে উনার মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস আর স্বগতোক্তি, 'ইস, আমিও যদি এমন ব্যবসা করতে পারতাম'? (জনান্তিকে বলে রাখি, উনি কিন্তু বেকারী জাতীয় বস্তু এমন কি কাবাব ইত্যাদিতে বেশ দক্ষ)।

শেষাবধি গৃহমন্ত্রী নিরাশ করেননি। গতরাতে খাবারের মেনুতে ছিল চাপাতি, সাথে চিকেন ফ্রাই(চাইনিজ), 'হিনজ' এর টক-ঝাল সস্, সাথে এপেটাইজার হিসেবে পুঁই পাতা+বেসনের পাকোড়া। আর পুঁই যদি হয় নিজের হাতে গড়া, ঝুলানো বারান্দার খুদে বাগানের প্রডাক্ট তাহলে তার স্বাদই আলাদা। অবশেষে, ডেজার্ট হিসেবে দিলেন গরম গরম লাচ্ছা সেমাই। আলহামদুলিল্লাহ। গিন্নি নিজেই চিন্তায় পড়েছিলেন, রাতে খাবারে কি পরিবেশন করবেন তা নিয়ে, অথচ দেখা যায়, আল্লাহর হুকুমে কি সুন্দর ডিনার হয়ে গেল, গিন্নি বললেন। আসলে ফ্রিজে যে ঈদের আয়োজনের পরেও এক প্যাক চিকেন তখনো অবশিষ্ট ছিল তা তিনি ভূলেই গিয়েছিলেন।

চলবে.....

বিষয়: বিবিধ

১৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File