পুলিশের চাকুরী=ঘুষ=আগামীর সরকারের জন্য ক্যান্সারসম এক মহাব্যাধি
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২১ জুলাই, ২০১৩, ১২:১২:৩৪ দুপুর
প্রায় বছর ছয়েক পূর্বে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম যে আমাদের দেশের সাধারণ এক পুলিশের চাকুরী নিতে হলে, চাকুরীপ্রার্থীকে সেই চাকুরী পাওয়ার জন্য চাকুরীদাতাদের ৪/৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়, সেদিন যেমন চমকে উঠেছিলাম, একই ভাবে অথবা তার চাইতেও কয়েক ডিগ্রি বেশী চমকে উঠেছিলাম সেইদিন, যেদিন দেশ হতে আসা কোন এক প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট শুনলাম পুলিশের ঘুষ বানিজ্যের এক নূতন ইতিহাস!! মনে মনে শুধু নিজেকে শুনিয়ে বলেছিলাম, সত্যিই কি সেলুকাস আমার এই বাংলাদেশ।
তো আজকে সেই ইউ,এন,ও এর নিকট শুনা পুলিশ বিভাগের ঘুষ বানিজ্যের সেই ইতিকথা নিয়েই বসলাম সম্মানিত ব্লগারদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আশা করি সবাই ধৈর্য্য ধরে শেষাবধি পাঠ করবেন। কথাটুকু বললাম এজন্য যে, লিখায় আমি তেমন পটু নই, সাজিয়ে গুছিয়ে রসকস মেখে বলায় একদম অপটু, যেমনটি পারেন আমাদের টিপু ভাই, আবু জারীর ভাই, রে.বিনতে আনিস আপাসহ অনেকে। যাক, ভণিতা না করে মূল কাহিনীটাই শুরু করছি।
সম্ভবতঃ আজ হতে প্রায় ৪/৫ বছর পূর্বেকার ঘটনা এটি। বলা যায় বর্তমান সরকারের মেয়াদ শুরুর প্রথম দিকের কাহিনী। ঘ্টনার বর্ণনাকারী ইউ.এন.ও সাহেব তখন কোন এক (নামটি মনে নেই) উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর আন্ডারের থানাগুলোর মধ্যকার একজন পুলিশের বয়স্ক ওসি সাহেব তাঁকে বেশ সমীহ করে চলতেন, প্রায় প্রতিদিন রাত্রিবেলা ডিউটি শেষে বাড়ি যাবার আগে ইউএনও সাহেবকে ফোন করে সেদিনকার থানার ঘটনাবলীর একটি শর্ট ব্রিফিঙ দিয়ে তবে তিনি বাসায় যেতেন। এভাবে দু'জনের মধ্যকার সম্পর্কটি ধীরে ধীরে অনেকটা হৃদ্যতার ছোঁয়া পেয়ে যায়। এমনি করেই দিন যায়, রাত আসে, তাঁরা ফোনের মাধ্যমেই নিজেদের সম্পর্ক পাকা করে নেন। একদিন ওসি সাহেব ফোন করে জানালেন, তিনি একটি বিশেষ ব্যাপারে পরামর্শের জন্য কাহিনীকারের(ইউএনও) সাথে দেখা করতে চান। এবং অনুরোধের ভাষায় বললেন, তিনি যেন তাঁকে বেশ একটা লম্বা সময় দেন, কারণ ব্যাপারটি নাকি আসলেই তার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। কাহিনীকার, দ্বিধা না করে ওসি সাহেবকে পরবর্তী সপ্তাহের কোন একদিন তার অফিসে গিয়ে সাক্ষাতের অনুমতি দেন।
যথাসময়ে ওসি সাহেব এলেন কাহিনীকারের অফিসে। সালাম দোয়া বিনিময় ও চা-নাস্তা শেষে, ওসি সাহেব তাঁকে জানালেন তিনি ঢাকাতে বদলী নিতে চান, এ ব্যাপারেই তাঁর পরামর্শ প্রয়োজন। ইউএনও মশাই কথাটি শুনে একটু দমে গেলেন, ভেবেছিলেন বুঝি না জানি এলাকার কোন গুন্ডা বদমাইশের পাল্লায় পড়ে হেস্তনেস্ত হয়ে কি ভাবে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, সেব্যাপারেই বুঝি কোন কথা ছিল। সামান্য বদলীর ব্যাপারে পরামর্শ করতে একেবারে এপয়েন্টম্যান্ট নিয়ে যেতে হবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি। যাহোক, ব্যাপারটা খুলে বলার জন্য তিনি ওসিকে অনুরোধ জানালেন।
তিনি বললেন, স্যার, চাকুরীও আমার শেষ, মাত্র বছরখানেক আছি আর চাকুরীতে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গিয়েছে, কলেজ ভার্সিটিতে পড়ছে, মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে প্রস্তাবও আসছে। কিন্তু এ শেষ জীবনে এসে যখন জমার খাতা খুলে দেখি তখন তেমন ভরসা পাইনা। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক বছরের জন্য হলেও ঢাকায় একটি পোস্টিং নিয়ে যাই। আপনি কি বলেন?
আমার বলার কি আছে? সেখানে গেলে কি আয় ইনকাম বেড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে নাকি?
একটু মুচকি হেসে ওসি বললো, কি যে বলেন স্যার, ঢাকার ঐ বিশেষ থানায় ওসি হয়ে যাবার জন্য উপজেলা থানা এমনকি ঢাকার অন্যান্য এলাকার ওসিরা একপায়ে খাড়া।
তাহলেতো প্রশ্নের উত্তর মিলে গেলো। ভালো মনে করলে যান ওখানে বদলী হয়ে।
কিন্তু স্যার, ওখানে বদলী নিতে হলে নগদ বিশ লাখ টাকা দিতে হবে, কোন কনসেশান নেই।
শুনে ইউএনও সাহেব নাকি ভিরমী খান। মাত্র এক বছরের জন্য ওসি বদলী হয়ে যেতে চায়, তাও বিশ লাখ টাকা খরচ করে। অথচ এই সুন্দর উপজেলা শহরের শান্তিময় পরিবেশ ছেড়ে যেতেও মনে হয় মনটা চাইছেনা। তাইতো উপদেশ নিতে আসা। বললেন -
বলেন কি? বিশ লাখ টাকা? এতো টাকা দিবেন কোথা থেকে? আর যদি ব্যবস্থা করেনও তাহলে এই এক বছরে তা পুশিয়ে নিতে পারবেন?
ওসি: স্যার ঐ বিশেষ থানায় যেতে এমন অনেক ওসি আছে যারা ২৫ লাখ টাকা দিতেও প্রস্তুত এমন সংবাদও আছে। তবে আমি ওখানকার নিয়োগ কর্মকর্তার সাথে ম্যানেজ করেছি, তিনি বিশ লাখ টাকাতেই রাজী হয়েছেন। আর বলেছেন যদি যেতে চাই তাড়াতাড়ি জানাতে। নাহলে অন্যরা সেটা হাতিয়ে নিতে পারে।
ইউএনও মশাই অনেকক্ষণ ভাবলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছিলেন না। অনেক্ক্ষন পরে বললেন, তা আপনার পরিবার পরিজন কি বলে, ভাবী কি রাজী আছেন এই সুন্দর পরিবেশ ছেড়ে যেতে?
ওসি: কিযে বলেন স্যার। মেয়েমানুষ তো টাকার গোলাম। টাকা পেলে ওদের আর কোন ব্যাপারে মাথা ব্যাথা নেই।
ইউএনও: ঠিক আছে, যদি সেটাই সবার ইচ্ছে তাহলে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
ওসি : কিন্তু স্যার, কিন্তু স্যার একটা ব্যাপারে বেশ চিন্তায় আছি।
ইউএনও: কি ব্যাপার সেটা?
ওসি : মনে করেন আমি, বিশ লাখ টাকা দিয়ে বদলী টা নিয়ে গেলাম। কিন্তু যদি অন্য কোন প্রভাবশালীকে ধরে অন্য কেউ আবার বেশী টাকা দিয়ে ওখানে পোস্টিং নেয় ২/৩ মাস না যেতেই তাহলে তো মাঠে মারা পড়তে হবে। কি যে করি, কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
ইউএনও সাহেব বুঝলেন, ওসি ব্যাটার বৃদ্ধ বয়সে ভীমরতি ধরেছে। টাকা কামানোর লোভ ও সামলাতে পারছেন না আবার ভয় ও হচ্ছে শেষ কালে না আবার আম আর ছালা দুটোই হারাতে হয়। তিনি তাকে ছাঁচাছোলা কথায় সাজেশান দিলেন:
যদি ব্যাপারটি তাই হয়, তাহলে বদলী নিয়ে কাজ নেই। এখানেই থেকে যান চাকুরী জীবনের শেষ বছরটি নিরিবিলি নির্বিবাদে।
ওসি: স্যার, সমস্যা তো সেখানেই।
আবার কি সমস্যা?? ইউএনও সাহেব বললেন।
সমস্যা হলো, স্যার, বাইরে থেকে আপনারা মনে করেন এখানে আমরা বেশ শান্তিতে আছি, নিরিবিলিতে আছি, তেমন কোন কেইছ নাই, বড় কোন হাঙ্গামা নেই। বাহ্যিক দিক দিয়ে সেটা একপ্রকার সঠিক হলেও আসলে কিন্তু ভিতরের ব্যাপারটা বড়ই কঠিন।
সেটা কি? ইউএনও সাহেব চোখ বড় করে প্রশ্ন করেন।
স্যার, এখানে আমার উপরে এসপি, এএসপি ২ জন আরো আছে সাধারণ পুলিশ ......জন। সবার প্রতি মাসের যে চাহিদা, যেমন এসপির বিশ হাজার টাকা, প্রতিজন এএসপির পনের হাজার টাকা, অন্যদের সবাইর জন্য ২০/৩০ হাজার টাকা এগুলোর জোগাড়যন্ত্র এই আমাকেই করতে হয়। কেইস না থাকলে, ভূয়া কেইস বানাতে হয়, নিরীহদের গ্রেফতার করে এনে জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে, প্রয়োজনে পিটিয়ে হলেও ওদের থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে হয়। এসব করতে করতে আমি এখন ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে গেছি। তাই ভেবেছিলাম ঢাকার বিখ্যাত সেই থানায় বদলী নিয়ে গেলে আমাকে আর কেইস নিয়ে ভাবতে হতোনা। সাধারণ পুলিশ সেপাইরাই দিনে কয়েক গন্ডা কেইস হাজির করতো, টাকার ব্যাপারটাও ওরাই দেখতো, আমি শুধু মাসে মাসে আমার ভাগেরটা ইনভেলাপের মাঝে পেয়ে যেতাম। কিন্তু বদলী নিয়ে গিয়ে যদি আবার ২/৩ মাস পরে আউট হযে যেতে হয়, সেটা ভেবেই এক পা আগাই তো দু পা পেছাই। বলেন স্যার কি সামাধান?
ইউএন ও সাহেব আর কথা বাড়ান না। একপ্রকার জোর করেই তাকে তার চাকুরীর এই শেষ বছরটি নিজ চাকুরীস্থলে কাটিয়ে দেবার পরামর্শ দিয়ে তাকে বিদায় করেন।
(এই যদি হয় আমাদের পুলিশ বিভাগের অবস্থা, তাহলে আগামী সরকার এলে কি করে দেশকে দূর্নীতি মুক্ত করবে? তার জন্য এর চাইতেও বড় চ্যালেঞ্জ হবে গোপালগঞ্জ এর তথা বর্তমান সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সামলানো। আহা, ভাবছি সরকার পরিবর্তন হলেই কি দেশে শান্তি আসবে?কি ভাবে? ভেবেই আকুল হচ্ছি ঐ পুলিশ ওসি সাহেবের মতোই)
বিষয়: বিবিধ
২৪০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন