ঈদের পরে চার দলীয় জোটের অপকর্মের রেকর্ড নূতন করে বাজবে- ডঃ দীপুমনি

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২১ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৪৫:৪১ রাত

সংবাদে দেখতে পেলাম আমাদের স্বনামধন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন এক বৈঠকে ঘোষনা দিয়েছেন, তিনি ঈদের পরে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত বিগত জোট সরকারের অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে জনগনের নিকট নূতন করে হাজির হবেন। অর্থাৎ সেই বিশেষ প্রবাদ বাক্যের আদলে বলতে হয়, তিনি নুতন বোতলে পূরনো মদ পরিবেশন করবেন বলে দেশের জনগনকে আগাম খবর দিয়ে রাখলেন। শূনে আমি বেশ আমোদিত হলাম।

চারদলীয় জোট সরকারের সেই ২০০১-২০০৬ মেয়াদের সরকার তার মেয়াদে কি কি অপকর্ম করেছিল, কি কি ব্যর্থতা তাদের ছিল, কি কি অন্যায়ের জন্য ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচন প্রাক্কালে আওয়ামী লীগাররা জোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযানে বাজিমাৎ করে সে নির্বাচনে চারদলীয় জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেরা ক্ষমতাসীন হয়েছিল, এসব ব্যাপার যে এতোদিনে বাসী হয়ে গেছে, আওয়ামী আমলের বিগত প্রায় পাঁচ বছরের কুশাসন, অপশাসন, দূর্নীতি, চৌর্যবৃত্তি, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষন, গুম নিপীড়ন, নির্যাতন, ধর্মের অবমাননা ও ধর্মবিরোধী এবং জনগনের প্রাণপ্রিয় রাসূলের চরিত্রে কালিমা লেপনকারীদের তোষন, আলেম ওলামাদের চরিত্র হনন, এমন কি বিগত সিটি নির্বাচনে গো হারা হেরে গিয়ে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জনগনের উপর নাখোশ হয়ে, জনগনকে বিদ্যুৎ হতে মাহরুম করার ঘোষনা দেয়া, সেই ঈদের পরবর্তী কোন এক সময়ে, ইত্যাকার নানা কারণে যে, চারদলীয় জোট সরকারের সাত বছর আগেকার করা অপকর্ম ও দুঃশাসনের স্মৃতি এখন জনগন একেবারেই ভূলে গিয়েছে, সেই কথা মনে হয় আমাদের প্রজাপতি মন্ত্রীর মনের কোঠায় একটুও ঠাঁয় পায় নি। ওঃ স্যরি, তিনি সেকথা জানেন বলেই, দেশের মানুষের নিকট বিএনপি নিয়ন্ত্রিত চার দলীয় জোট সরকারের আমলের কৃতকর্মগুলো নিয়ে আবার জনগনের নিকট হাজির হবার খায়েশ ব্যক্ত করেছেন, সেই সাত বছর আগেকার ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে আবারো আওয়ামী সরকারের প্রতি জনগনের আস্থা ফিরিয়ে এনে আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের প্রতি ভোট দানের আহবান জানাবেন।

জানিনা, তাঁর কাছে কি যাদুমন্ত্র আছে যে তিনি তাঁর সরকারের হাল আমলের করা অন্যায়, অবিচার, দূর্নীতি, দুঃশাসন, অপশাসন, ইত্যাদি হতে জনগনের মূখ ফিরিয়ে নিয়ে সেই সাত বছর আগের সরকারের করা অন্যায় অবিচারের প্রতি জনগনের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, তাদেরকে ঐ সরকারের প্রতি ক্ষেপিয়ে তুলবেন এবং তাদের মন মানসিকতাকে পুনঃ আওয়ামী লীগের প্রতি, তাদের প্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলবেন, তা তিনিই ভালো জানেন। অবশ্য ইতোমধ্যে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিদেশ ভ্রমনের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করা একজন বিশেষ মন্ত্রীর ক্রেডিট লাভ করেছেন। তাই তিনি যদি তাঁর সেই রেকর্ডের বদৌলতে পৃথিবীময় বিমান নিয়ে উড়তে উড়তে কখনো, কোথায়ও স্বর্গের দূতদের সাক্ষাতলাভ করে তাদের নিকট হতে কোন যাদুমন্ত্র লাভ করে থাকেন, দেশের জনগনের মন মানসিকতাকে আওয়ামী দুঃশাসনের অপছায়া হতে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে থাকেন, তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। সেটা যদি তাঁর করায়ত্ত হয়ে থাকে, তাহলে তিনি সেই ঘোষনা দিবেন, তাতে বিষ্মিত হবার কোন কারণ নেই।

তবে আমাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে। আমার দেশের মানুষ খুবই নরম দিলের মানুষ, সাথে সাথে আত্মভোলাও। তারা মানুষের দোষত্রুটির কথা বেশী দিন মনে রাখতে পারেনা। তাই সাত বছর আগের চার দলীয় জোট সরকার কি করেছিল, সে কথা তারা ভূলে তো গেছেই, তার উপরে আওয়ামীদের বর্তমান সরকারের বিশাল বিশাল ব্যর্থতা, দূর্নীতি আর দুঃশাসনের যাঁতাকলও তাদেরকে সাত বছর পূর্বেকার ঘটনাসমূহের স্মৃতি ভ্রষ্টে সাহায্য করেছে। তাই দীপুমনির এই নুতন মিশনে তিনি আওয়ামীদের প্রতি জনগনের মনকে আবার নমনীয় করতে পারবেন, সে আশার গুড়ে বালি। যার প্রমান আমরা ইতোমধ্যে পাঁচ সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাচনে পেয়েও গেছি। খোদ আওয়ামী রাজনীতিক, সাহিত্যিক ও কলাম লিখকরাই স্বীকার করছেন যে, তাদের সিটি মেয়ররা এলাকার জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেও এবারে হেরে গেছে, কারণ তারা 'আওয়ামী লীগ' করে। অর্থাৎ জনগনের ভোটের হিসেব এখন পুরো উল্টে গেছে। আগে প্রার্থী সৎ বলে, সে নির্বাচিত হতো, সে কোন দল করে সেটা বিবেচ্য হতো না, বর্তমানে, আওয়ামী সরকারের এত বিশাল বিশাল অপকর্ম আর দূর্নীতি যে, এখন প্রার্থী সৎ হলেও রেহাই নেই, সে কোন দল করে সেটাই ভোটাররা আগে দেখে নেয়। ফলে জনগণ আওয়ামী লীগকে যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে, তেমনি প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের প্রার্থীদের। জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে অন্যায় ও অন্যায্য শাসনকে। জুলুম ও নির্যাতনকে। মিথ্যাচারকে। সন্ত্রাসকে। দুর্নীতিকে। জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের হোতাদের। জনগণ ‘না’ বলেছে কুশাসনকে, দুর্নীতিকে। ‘না’ বলেছে সন্ত্রাসকে, জুলুমকে। ‘না’ বলেছে প্রতিহিংসাকে, জিঘাংসাকে, বিভেদ ও হানাহানিকে। ‘না’ বলেছে আধিপত্যবাদের দালালিকে। তারা ‘না’ বলেছে মাদককে। খুন ও ধর্ষণকে। ‘না’ বলেছে দাম্ভিকতা ও পাগলামিকে। ‘না’ বলেছে অন্ধত্ব ও চোয়ালবাজিকে। ‘না’ বলেছে ধর্মবিদ্বেষকে। ধর্মের অবমাননাকারীদের। ‘না’ বলেছে রসুল (স)-এর বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্যকারীদের শাস্তি না দেয়াকে। না বলেছে ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি জঘন্য মন্তব্যকারীদের। ‘না’ বলেছে শাহবাগের বখাটেদের। তাদের পৃষ্ঠপোষকদের।

অতএব সাধু সাবধান। সাত বছর আগের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে আর কোন লাভ হবেনা। বিগত পাঁচ বছরের আমলনামা এখন জনগনের হাতে হাতে ঘুরছে, মূখে মূখে ঘুরছে, হৃদয়ে হৃদয়ে বাজছে, হাটে বাটে, বাজারে বন্দরে, ঘরে বাইরে সর্বত্রই এখন আপনাদের বিগত পাঁচ বছরের আমলনামা, যে আমলনামার চেহারা সুরত এতো কুৎসিত এতো জঘন্য যে তা বিএনপি আমলের চাইতে এতো ভয়াবহ যে সেটা আপনারা আগামী নির্বাচনেই বুঝবেন। সুতরাং সাত বছর আগের ঐ ভাঙ্গা রেকর্ড না বাজানোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, হে আমাদের প্রজাপতি মন্ত্রী।

বিষয়: বিবিধ

১৯১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File