চরম মিথ্যাচার সমাজকে পতনের কোন অতলে নিয়ে যায়

লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ১১ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৫৮:৫৪ রাত

অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজে আজ মিথ্যার জয় জয়কার চলছে। সমাজের কোন অংশটি মিথ্যার করাল থাবা হতে মুক্ত তা চিহ্নিত করতে হলে অতি পাওয়ারফুল দূরবীনযন্ত্র ব্যবহার করলেও বোধহয় একটি স্থান এমন পাওয়া যাবে না, যা কিনা মিথ্যার সংস্কৃতি হতে মুক্ত। দু একটি উদাহরণ দিলেই মনে হয় পাঠকবর্গ আমার বক্তব্য সম্পর্কে সহমত হবেন।

সেদিন বেশ বড়মাপের এক সরকারী ডেলিগেশন এলো এদেশ সফরে। সে ডেলিগেশনে সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার দুইজন কর্মচারীও ছিলেন। এদেশে বেশ কিছুদিন যাবৎ বসবাস করছি বিধায়, তাদের থাকা ও যাতায়াতের সুবিধার্থে হোটেল রুম ভাড়া এবং গাড়ি ভাড়া করার বিষয়টি কেমনে জানি আমার স্কন্ধে এসে পড়লো। যাহোক, দায়িত্ব কাঁধে এলে তা থেকে তো নিস্তার নেই, বিশেষতঃ বিদেশ হলে তা আরো জেঁকে বসে। সবকিছু করা হলো, তাঁদের সাথে পরামর্শক্রমেই। কিন্তু যখন তাঁরা ফেরত যাবেন, তখন এলো আর এক আব্দার, হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলে তাদের হোটেল এর বিল বড় করে দেখাতে হবে আর ট্রান্সপোর্ট কোম্পানীকেও বলতে হবে ভাই, তোমাদের বিলটাতে একদিন বেশী দেখিয়ে বিলটার পরিধি বাড়িয়ে দিও। কি আশ্চর্য্য, এমন দাবীগুলো করা হলো বড় বড় সেসব কর্মকর্তাদের গোচরেই, অর্থাৎ তাঁরা সরাসরি না করলেও, তাঁদের জ্ঞাতসারেই করা হয়েছে।

আমার এমন অভিজ্ঞতা নেই বলে কোনরকমে নিস্তার পেলাম। কিন্তু তারপরেও কি ছাড়াছাড়ি আছে? ওনাদের পরিচিত আর একজন, যিনি হোটেল ভাড়ার সাথে যুক্ত ছিলেন, উনার কাছেই আবার সে আব্দার নিয়ে হাজির। পরে কিভাবে কি হলো আর খোঁজ নেয়া হয়নি।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে যদি মিথ্যাচারে ডক্টরেট দেয়ার দাবী ওঠে তাহলে আমার বলার কিছু থাকবেনা। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারীতে তাঁর বড় গলায় সাফাই দেয়া, বিশ্ব ব্যাংকেই দোষারোপ করা এবং এই কেলেংকারীর প্রধান নায়ক মন্ত্রী আবুল হোসেনকে লন্ডনে বসে দেশপ্রেমিকের বিশাল সার্টিফিকেট প্রদান, এসবই কেবলমাত্র দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই সম্ভব। শুধু কি তাই? বিশ্ব ব্যাংক যখন ঘোষনা দিল, ঐ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা কিছুতেই লোনের টাকা ছাড় দিবেন না, তখন এই প্রধানমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দেশবাসীকে ধোকা দেবার নূতন এক চাল চাললেন, বললেন, বিশ্বব্যাংক এর টাকায় নয়, দেশের আভ্যন্তরীন সম্পদ দিয়েই এ সেতু করা হবে....। দেশের বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এই পরিকল্পনার মাঝে কোন সততা নেই, আছে ধাপ্পাবাজি, এমন সব বক্তব্য আসতে থাকলেও, ওনারা দেশবাসীকে ধোঁকা দেবার এই কারসাজিতে দিনরাত মগ্ন হয়ে আছেন।

একটি মনুষ্য দেহের মাথায় যদি পচন ধরে তাহলে যেমন সে মানুষটির বাঁচার কোন সম্ভাবনা থাকেনা, তেমনি সমাজের মাথায় (প্রধানমন্ত্রী) যদি পচন ধরে, তাহলে সে সমাজের পতন হয় দ্রুত। আর এদেশবাসী অতি অসহায়ভাবে সেই পতনের দিকেই দ্রুত ধাবিত হচ্ছে বলে দেশের সিংহভাগ মানুষের বিশ্বাস। সে বিশ্বাস হতেই তারা দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি নির্বাচনে সরকারকে ৫টি লাল কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। যদিও এই মিথ্যাচারের কারণে ইতোমধ্যে দেশ ও সমাজের যে সমূহ ক্ষতি হয়ে গেছে তা থেকে উত্তরণের পথ সহজ নয় এবং তা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

এবার আসি মিথ্যাচারে সমাজে ক্ষতির অন্য একটি দিক নিয়ে। কোন একটি জিনিষকে যদি অতি ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেই জিনিষটির যেমন সমাজ বা মানুষের কাছে আর কদর থাকে না, তেমনি সেই বস্তুটি সমাজে বা সংস্কৃতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদী নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলে যায়। আমি "ধর্ষণ" শব্দটিকেই আমার আজকের আলোচনার বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করছি।

আমরা যখন ছোট ছিলাম, ধরুন, ক্লাস এইট এর ছাত্র, তখন একদিন আমাদের ক্লাশের বয়সে বড় ভাইদের মূখে প্রথম এই শব্দটি শুনেছিলাম, যা ছিল সে সময়কার কোন একটি ধর্ষণের ঘটনার পত্রিকায় আসা খবরের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া। যদিও শব্দটি তখন প্রথম কর্ণগোচর হয়, কিন্তু সে শব্দটির সঠিক অর্থ জানতে পারি আরো অনেক অনেক পরে। কিন্তু সেই অতি অপরিচিত শব্দটি যে আজ সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে আজকের সমাজে একটি বহুল উচ্চারিত শব্দ, তা বলাই বাহুল্য। আমার মনে হয়, ক্লাশ থ্রি-তে অধ্যয়নরত ছাত্র ছাত্রীরাও অনায়াসেই এ শব্দের অর্থ বলে দিতে পারবে।

বলা বাহুল্য এ অতি বিশেষায়িত শব্দটিকে আজকের সমাজে এবং রাষ্ট্রে বহুল ব্যবহার করে তার গায়ের খোলসটি ফেলে দিয়ে সমাজে দুর্গন্ধ ছড়াতে ও পরবর্তীতে সেই দুর্গন্ধে সমাজকে গা সওয়া করে দিতে যারা বেশী অবদান রাখছে তারা হলো আমাদের দেশের নৈতিক শিক্ষাবিহীন ধর্মহীন রাজনীতিবিদগন। শব্দটিকে বহুল প্রচারিত করে, একদিকে তারা এ শব্দটিকে যেমন মূ্ল্যহীন করে দিয়েছে তথা গা-সওয়া করে দিয়েছে, অন্যদিকে তারই ফলশ্রুতিতে আজ সমাজের অন্ধগলির মানুষেরা এই দুর্গন্ধযুক্ত শব্দটিকে লুফে নিয়ে তার দ্বারা সমাজে অনৈতিকতা আর বে'শরা কাজের সয়লাব এনে দিয়েছে।

তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাদের দেশের বড় বড় আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার যেসব মিথ্যা অপবাদ এবং অভিযোগ এনে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করছে, সেই অপবাদসমূহের একটি হলো, এই ধর্মভীরু, বিশ্বনন্দিত আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে 'ধর্ষণের' মতো জঘন্য অপবাদ আনা। যদিও সরকারের কোন আদালতেই এই জঘন্য অপবাদ প্রমানে গত দুই বছরেও সফলতার কোন আলামত দেখাতে পারে নাই (না পারারই তো কথা), তথাপি সরকারের তাবৎ পদলেহী মিড়িয়া আজো তারস্বরে এই অপবাদের কথা বারংবার প্রচার করে চলেছে। একটু চিন্তা করুন, একেতো ধর্ষন এর মতো জঘন্য ব্যাপার, তারপরে তা দ্বারা আঘাত করা হচ্ছে এমন সব ব্যক্তিবর্গকে যাদের জীবনই উৎসর্গকৃত সমাজ সংসার হতে এই বিষবৎ রোগের অপসারণে সর্বশক্তি নিয়োগ করা, এমন অপবাদ আর অপপ্রচার যদি সকাল সন্ধ্যা মিডিয়াতে চলতে থাকে, তাহলে, এই ব্যাপারটি যে সমাজ সংস্কৃতিতে ডাল-ভাতের মতোই গেঁড়ে বসবে, তাতে কি সন্দেহের কোন অবকাশ থাকতে পারে? সাধারণ অজ্ঞ মানুষরা মনের অজান্তেই ভাববে, জিনিষটা তো খারাপ কিছু নয়, সমাজের বড় বড় মোল্লা মৌলভী এবং আলেম ওলামারাও যদি ঐ কাজের সাথে জড়িত হতে পারেন, তাহলে আমরা যদি তা দু একবার ঘটিয়ে ফেলি তাহলে তাতে দোষের তো কিছু দেখিনা'। এমনি করেই, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার রাত্রদিন দেশে একদিকে ধর্মের সাথে শত্রুতা করে চলে এবং অন্যদিকে সমাজে নিয়ে আসে চরম বিশৃংখলা এবং অনৈতিকতার জোয়ার।

বস্তুত: আইন আদালতের মাধ্যমে ওরা দেশের আলেম ওলামাদের প্রতি যতোটুকু না বিষোদগার করতে পেরেছে কিংবা দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছে, তার চাইতে ওরা বেশী করেছে তাদের পদলেহী মিড়িয়া দ্বারা। আজ হতে প্রায় ৫/৬ বছর আগের কথা। তখন সবেমাত্র তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের নাটক শুরু করার পরিকল্পনা চলছে। একবার কোন এক চ্যানেলে সংবাদ পাঠক তার ৩০ মিনিটের সংবাদ পাঠকালে ৩৩ বার 'যুদ্ধাপরাধী' শব্দটি উচ্চারণ করেছিল। সেদিন আমি স্পষ্ট বুঝেছিলাম, ওরা কি জঘণ্য পরিকল্পনা নিয়ে দেশের মানুষকে ধর্মপন্থী ও ধর্মবিরোধী এই দুই শিবিরে বিভক্ত করতে চলেছে। ক্ষমতায় গিয়ে তারা তাদের সেই পরিকল্পনায় অনেক দূর এগিয়েও গেছে। কিন্তু, সব কিছুই এক সময় শেষ হয়। ষড়যন্ত্রেরও শেষ আছে। এবং আমার বিশ্বাস সেই সময় অতি নিকটে। দেশের সাধারণ জনগণ ধর্মনিরপেক্ষদের সেই ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নোয়াবে না এবং সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমার দেশের জ্ঞান গরিমার মহান দিকপালদের ওদের কালো থাবা হতে একদিন মুক্ত করে আনবেই।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File