ফেইসবুক ব্যবহারে সবার সর্ব্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন অতি জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ১৬ জুন, ২০১৩, ০৯:৩৩:৪০ সকাল
আমাদের সুপ্রিয় ব্লগার সিটিজি৪বিডি এর একটি পোস্ট এ মন্তব্য করতে গিয়ে মনে হলো যে ব্যাপারটি যদি আলাদা করে পোস্ট আকারে দেয়া যায়, তাহলে হয়তঃ আমার উদ্দেশ্য পূরণে তা আরো বেশী সহায়ক হবে। সেই ভাবনা থেকেই তাঁর পোস্টে করা মন্তব্যটিকে সামান্য ঘষামাজা করে আবার নুতন করে পোস্ট আকারে পেশ করছি সবার দৃষ্টি আকর্ষণে। আশা করি অধমের এই প্রচষ্টাকে মহান আল্লাহ ক্ববুল করে নিবেন।
সিটিজি৪বিডি ভাই ফেইসবুকে কাজের বুয়ার স্টেটাস দেয়া নিয়ে যে পোস্টটি দিয়েছেন, যদিও তা তাঁর উর্বর কল্পণা শক্তির ফলশ্রুতি বলেই তিনি বলেছেন, তবে আমারও ধারণা, এমন আঙ্গিকে ফেইসবুকের প্রচলন অদূর ভবিষ্যতেই ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা শুরু করে দিবেন।
সেটা হলে ভালো হবে কি মন্দ হবে, সেটা এ মূহুর্তে যদিও আমার চিন্তাকে তেমন নাড়া দিতে পারে নি, তবে যে বিষয়টি নিয়ে আমি বহুদিন যাবৎ বেশ চিন্তিত, সেই ব্যাপারটিই মন্তব্য আকারে তাঁর পোস্টে দিয়ে ফেল্লাম, আর সেটিকেই সবার জানা প্রয়োজন মনে করে এখানে পোস্ট করছি।
আমার দৃষ্টিতে ফেইসবুক এর সবচাইতে খারাপ দিক হলো প্রধাণত: দু'টি। ১) ইয়ং জেনারেশান এর মধ্যে ইউরোপীয় কায়দায় ছেলে ও মেয়ের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টির মাধ্যম, যা পরবর্তীতে অতি কনজার্ভেটিভ পরিবারেও সমস্যার সৃষ্টি করে;
২) পারিবারিক ছবি নির্বিচারে শেয়ার করার প্রবণতা, যাতে করে একটি ধর্মভীরু পরিবারের পর্দানশীনদের ছবিও একই পরিবারের অপরিপক্ক সদস্যদের মাধ্যমে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাইভেসী নামক বস্তুটির এই দশ বছর আগেও যেমন প্রভাব ছিল সব পরিবারে, ফেইসবুকের কল্যাণে তার ৭০ ভাগই এর মধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। সমাজচিন্তকদের দ্বারা এখুনি এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান এবং প্রতিবিধানের ব্যবস্থা না হলে আগামী ৫ বছরে পরিবারের প্রাইভেসী নামক বস্তুটির কোন নাম নিশানা থাকবে বলে মনে হয় না।
বিবাহ বা অনুরূপ অনুষ্ঠানে এখন মোবাইল ক্যামেরার মাধ্যমে অনেক অনাকাঙ্খিত জনের ক্যামেরায়ও বর কনের ছবি চলে যায়। শুধু তাই নয়, ঐসকল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আরো অনেক যুবতী নারীর (বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নির্বিশেষে) ছবিও বিভিন্ন পোজে তারা তাদের ক্যামেরায় ধারণ করে ফেলে। আর তা তারা পরবর্তীতে ফেইসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন জনে শেয়ার করার কারণে, কোন এক কুক্ষণে তা অতি দূরের কোন এক বা একাধিক খারাপ চরিত্রের মানুষের নাগালে পড়ে। ঐসকল ছবি নিয়ে যখন তারা একান্তে বসে দেখে বা নাড়াচাড়া করে তখন তার মনের কোনে এক সময় ঐসব তরুনীদের ছবি নিয়ে নানারকম কুচিন্তার উদয় হতে থাকে। এসব কুচিন্তার মাঝে কখনো বা তারা ভাবে, 'আহা এমন সুন্দরী নারীর সান্নিধ্য যদি পেতাম, জীবনটা ধন্য হয়ে যেতো, আহা অমুক হরিনী চোখের মেয়েটিকে যদি একবার পটাতে পারতাম....।" তবে তারা ঐ সকল ধারণকৃত ছবি নিয়ে সবচাইতে খারাপ যে আচরণ করতে পারে তা হলো, তারা ভদ্রঘরের ঐসকল সুশ্রী নারীর মুখচ্ছবিকে কেটে নেট হতে সংগ্রহকৃত অন্য কোন নগ্ন নারী দেহের সাথে জুড়ে দিয়ে, সেই ছবিটাকে অসদ্যুদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। অনুমান করুন, কোন এক কুক্ষণে যদি এমন কোন ভদ্রনারীর নগ্নদেহ ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই পরিবারে কি ধরণের কিয়ামত নেমে আসতে পারে। অবিবাহিতা নারীদের এমন ছবি প্রকাশ করে তাকে বা তার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করার কিছু কিছু ঘটনা এরই মধ্যে অলরেডী প্রকাশও হয়ে পড়েছে।
তাই ব্লগের সব ভাইবোন, চাচা মামাদের আহ্বান করছি, প্লীজ, আপনারা আপানাদের বউ-ঝি, ভাজতি ভাগ্নী-দের ছবি কিছুতেই ফেইসবুকে যাতে না আসে সে ব্যাপারে সর্ববস্থায় সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। বয়স তো আর কম হয়নি। নিজের বৃহত্তর পরিবারে গন্ডীতেও যে উপরে বর্ণিত ফেইসবুকের প্রথম খারাপ নজীর স্থাপনের হিড়িক পড়ে গেছে, তা দেখে এবং তার ভবিষ্যৎ পরিণামের কথা ভেবে হৃৎপিন্ডটা যেন হঠাৎ করে গলার কাছে এসে আছড়ে পড়ে।
কোন একটি সামাজিক ব্যাপার বা ঘটনাচক্র যখন সমাজে ব্যাপক আকারে সংক্রমিত হয়, চিন্তাশীলদের নিকট তখনি ঐ বিশেষ ব্যাপারটি কেন মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষগণ সমাজের জন্য ক্ষতিকর বিধায় তা নিষিদ্ধ করেছেন, তার গূঢ় তত্ত্ব প্রতিভাত হতে থাকে। এ দৃষ্টিকোন থেকে কোন প্রাণীবস্তুর ছবি আঁকা বা ছবি তোলাকে কেন আমাদের ধর্মগ্রন্থে/হাদিসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ব্যাপারটির রহস্য এখন ধীরে ধীরে চিন্তাশীলদের নিকট প্রতিভাত হতে শুরু করেছে। প্রাণীর ছবি তোলা বা তা আঁকায় এ সমাজে পূর্বে যে ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করা হতো, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মার্চারে শিথিলতার কারণে তা অনেকাংশে এখন নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছে। সময় এসেছে আমাদের ধর্মগুরুরা, ছবি আাঁকা ও ছবি তোলার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপে আবারো যুক্তিতর্কসহ তাঁদের বাণী প্রদান করে সমাজ হতে তথা ফেইসবুকে ছবির যথেচ্ছা ব্যবহার হতে সমাজকে রক্ষায় এগিয়ে আসবেন।
হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে ফেইসবুকের এসব অকল্যাণ হতে হেফাজত করো, তাদেরকে বুদ্ধি বিবেচনার দিক দিয়ে সর্বদা অগ্র সারিতে রাখো, তাদের মাঝে ইসলামী অনুশাসনের শিক্ষা ও তা পালনের ব্যাপারে যত্নশীল হবার যোগ্যতা এবং আগ্রহ বাড়িয়ে দাও, আমিন।
বিষয়: বিবিধ
২২৫০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন