বাংলাদেশে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম(?) দমনে সরকারের সফলতায় প্রশংসায় পঞ্চমূখ যুক্তরাষ্ট্র সরকার!!
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০২ জুন, ২০১৩, ০৪:৪৫:২৬ রাত
ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তথা দেশের তৌহিদী জনতার ইসলামপ্রিয়তাকে সন্ত্রাসী রূপ আখ্যা দিয়ে দেশের জনগনের ঈমান আকিদাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত জনতার উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাজারে হাজার আল্লাহ ও রাসূলপ্রেমিকদের হত্যা করার সাহস আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা কোথা থেকে পায়, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাম্প্রতিক এমন মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অবশ্য আড়ালে আবড়ালে এমনকি প্রকাশ্যেও জনমানুষের মুখ থেকে এসব কথা এতোদিন বলাবলি হচ্ছিল যে, সরকার পাশের দেশের দাদাদের এবং পরাশক্তি আমেরিকার দেয়া ফর্মূলা অনুযায়ী তাদেরই ইন্ধনে বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে। পার্থক্য হলো, এতোদিন এসব শুধু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অনুমানের উপর বলা হয়েছে, যার উপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু এখন সীলমোহর মেরে দিয়েছে।
তা না হলে যে শেখ হাসিনা তার পূর্ববর্তী মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তার লীগারদের উদ্দেশ্য করে বলেছিল," ওরা আমাদের একটা লাশ ফেললে তাদের দশটা লাশ ফেলব, হাতে চুড়ি পরে মেয়েদের মতো বসে থাকার সময় নেই", যে হাসিনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাবিতে ওদের ছাত্ররা নিজেদের কোন্দলে হানাহানিতে প্রাণ দিলেও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে চিরুনী অভিযান চালিয়ে তাদের উপর অন্যায় অত্যাচারের স্টীম রোলার চালায়, যে হাসিনা দেশবরেণ্য সব আলেম ওলামাদের মিথ্যা অভিযোগে বছরের পর বছর জেলখানায় রেখে মিথ্যা বিচার দিয়ে ফাঁসির হুকুম দয়ে, যে হাসিনার মন্ত্রী উপদেষ্টারা অহরহ বলে বেড়ায় জামায়াত শিবিরকে দেশ থেকে উৎখাত করে জনমের মতো তাড়াতে হবে.....এবং যে হাসিনা এই ৫ই মে গভীর রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মম গনহত্যা চালিয়ে ঘুমন্ত ও তাহাজ্জুদ নামাজে রত রাসূলপ্রেমিকদের ২/৩ হাজারকে সাবাড় করে দিতে কসুর করেনি, তাকে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেজন্য পুরুষ্কৃত করে সন্ত্রাস দমনে সফলতার নাম দিয়ে, তাহলে ব্যাপারটা সিম্পলি কা দাঁড়ায় তা আর কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে বলে মনে হয় না। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এ মূহুর্তে তার অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়ে বাংলাদেশের তৌহিদী জনতার উপকার করেছে। তারা এখন স্পষ্টই বুঝে যাবে যে --
* ইসলামপন্থীদের জন্য ব্যাপারটা অশনি সংকেত। বুঝতে হবে যে ওদের সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে আসছে। আরো বুঝতে হবে যুক্তরাষ্ট্র বা খৃষ্টানরা কখনোই মুসলমানদের বন্ধু হতে পারে না। মহান আল্লাহ আল কোরআনে একথা স্পষ্ট করে বলে দেয়ার পরেও অনেক বড় বড় আলেম ওলামারা সহ স্বয়ং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমপ্রধান সরকারগুলো কেন যে মার্কিনীদের বন্ধু মনে করে তা আমার বুঝে আসেনা।
* বুঝতে হবে যে, ইসলামপন্থীদের আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি বিবেচনা খরচ করে সব ভেদাভেদ ভূলে সব দলগুলো একমঞ্চে এসে একটি মাত্র লক্ষ্য স্থির করে ইসলামের জন্য কাজ করে যেতে হবে। আর সে লক্ষ্যটি হলো, যদি ঈমান নিয়ে বাঁচতে চাও তাহলে এদেশ থেকে ইসলাম বিদ্বেষী হায়েনাদের সমূলে উৎপাটন করতে হবে।
* বুঝতে হবে আওয়ামী লীগ বা ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা কখনোই ইসলামের প্রসার চায় না, ওরা মূখে বলে এক কথা কিন্তু কাজে কর্মে ঠিক তার উল্টোটা করে। এজন্য ভোটের রাজনীতিতে আর কখনোই ওদেরকে ভোট দেয়া যাবে না, ওদের ভোট দেয়া মানে মুনাফিকের খাতায় নিজের নাম লেখানো। (তাবলীগ ও হেফাজতী ভায়েরা লক্ষ্য করুন)।
* বুঝতে হবে শুধু মাত্র ইসলাম ও রাসূলে ভক্তি দিয়ে কখনো দেশে ইসলাম কায়েম রাখা যাবে না। বরং ইসলাম কায়েম রাখতে হলে, ইসলামের জন্য দরদ থাকার পাশাপাশি এ জমিনে ইসলামী হুকুমাত কায়েমের লক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ও করে যেতে হবে। আর সে সংগ্রাম করতে হলে অরাজনৈতিক লেবেল গায়ে এঁটে রাখা যাবে না।
* বুঝতে হবে কিসের বলে আওয়ামীরা দেশে খুন, গুম, নারকীয় হত্যাযজ্ঞ এবং তাদের ক্যাডারবাহিনী দিয়ে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোতে দিনকে দিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে গিয়ে ও কেন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের প্রিয়পাত্র হয়ে থাকে। কেন তাদেরকে ওরা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত না করে বরং যারা মজলুম হয়ে ওদের দ্বারা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে চলেছে, ওদেরকেই ঐ খৃষ্টান সম্প্রদায় সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছে।
* আরো বুঝতে হবে, ওরা ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানে এবং পাকিস্তানে মুসলিম জনতার উপর যেই বিশ্বসন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে, এরপরেও নিজেদের সন্ত্রাসের বিপক্ষের লোক বলে জাহির করে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণহত্যার পরে দেশের জালিম সরকারের পক্ষে কথা বলা, সবই একই সূত্রে গাঁথা, এবং তা হলো, ইসলাম ও অনৈসলামের চিরন্তন দ্বন্ধ। ওরা ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বদাই অঘোষিত ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ চালিয়ে আসছে, কিন্তু তাকে নাম দেয়া হচ্ছে 'সন্ত্রাস দমন'। কখনো তা নিজে করছে আর কখনো দেশের প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের দ্বারা।
অতএব, আর ঘুমিয়ে থাকা নয়, আর অচেতন থাকা নয়, আর নিজেকে অরাজনৈতিক চরিত্রের জাহির করে সরকারের রোষানল হতে নিরাপদ থাকার বাহানা খোঁজা নয়, আর ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি নয়, বরং যারাই এই বাংলার জমিনে আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডা ওড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সবাইকে একই মঞ্চে একত্রিত হয়ে, একটি বজ্রকঠিন শপথ নিয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতে হবে সবাই। আর করুণাময় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে থাকুন সকাল সন্ধ্যায়।
জানি আমাদেরকে আরো রক্ত দিতে হবে, আরো অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। এটাই ইতিহাস। জালিম সহজে হার মানতে চাইবেনা, যেমন হার মানে নাই নমরুদ, শাদ্দাদ ফেরাউনরা, যতক্ষণ না মহান আল্লাহর সাহায্যে আসমানী সাহায্য দ্বারা ওদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ধ্বংস বর্তমানের লেডী হিটলার রূপী ফেরাউনের জন্য ও অপেক্ষা করছে। তবে তার জন্য প্রথম এবং শেষ শর্ত হলো, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া।
আল্লাহ আমাদের সহায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন