হায়! রাজনৈতিক ডামাডোলে আমাদের নারীজাতির একি দশা?
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২৬ মে, ২০১৩, ০৭:৫১:৫৯ সকাল
গত বৃহস্পতিবার ইত্তেফাকের প্রথম পাতার নিচে বেগুনি জমিনের ওপর বক্স করে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। শিরোনাম করা হয়েছে,"গাড়িতে লিফট নিবেন, সাবধান জীবন হারাতে পারেন।" পত্রিকাটি লিখেছে, অপরিচিত কারো গাড়িতে লিফট নিবেন সাবধান! প্রাণ হারাতে পারেন। ভদ্রবেশি ঠান্ডা মাথার একটি খুনি চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজধানীতে। তাদের টার্গেট সুন্দরি নারী। রাস্তার পাশে কিংবা বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের জন্য অপেক্ষারত নারীদের লিফট দেয়ার নামে তারা গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর টাকা পয়সা স্বর্ণালঙ্কার ক্রেডিটকার্ড এবং মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়। তারপর চক্রের সদস্যরা পালাক্রমে করে ধর্ষণ। গত তিন সপ্তাহে রাজধানীতে এ রকম ১০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দুইজন খুন হয়েছে।
সংবাদটি পাঠ করে আমি যতো না মর্মাহত ও আতঙ্কিত হয়েছি আমার দেশের নারীজাতির এ হেন দুর্গতি ও অবমূল্যায়ন দেখে তার চাইতে বেশী শঙ্কিত এবং স্তম্ভিত হয়েছি, সংবাদটি অন্য কোন গণমাধ্যমে কিংবা টিভির টকশোতে আলোচিত কিংবা সমালোচিত না হওয়ায় অথবা রাজনৈতিক নেতাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করতে না পারায়। আরো বেশী করে মুষড়ে পড়েছি দেশের তথাকথিত নারীবাদী সংগঠনগুলোর এ ব্যাপারে একদম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালনে। অবশ্য বিদেশে থেকে দেশের সব সংবাদ এবং তৎপরবর্তী সংবাদ জানার যেমন ১০০% ভাগ সুযোগ নেই তেমনি একথাও বলা যাবে না যে আমি দেশের সংবাদ হতে একেবারেই বেখবর কিংবা দূরে আছি।
কেবলই ভাবছি, কোন মহা প্রলয়ের দিকে এগিয়ে চলছে আমার মাতৃভূমি। যে মায়ের কোলে জন্মে আজ আমার মা-বোন কন্যারা নিজের মান ইজ্জত নিয়ে বাঁচার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, সেই মাতৃভূমিকে কি করে আর আমি নিজে সম্মান দিতে শিখবো। কি করে আমি নিশ্চিত থাকবো যে যেই নরক যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে উপরোক্ত দশ/বারোজন নারী গমন করেছেন, সেই নরকযন্ত্রণার মাঝে আজ অথবা কাল আমারই বোন, ভাগ্নী কিংবা শালীকেও গমন করতে হবে না? দেশের কর্ণধারদের প্রতি এটি এই হতভাগার একটি হাজার কোটি টাকার প্রশ্ন। কিন্তু আমি কাকে প্রশ্ন করছি, ঐ সরকারের প্রতি যে সরকার, নারীর মান-ইজ্জত সম্ভ্রম রক্ষার দাবীতে মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্রদের রাস্তায় নেমে আসায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওদেরকে রাতের আঁধারে পুলিশ/বিজিবি দিয়ে গুলি করে পিশাচের মতো হত্যা করেছে, আর হত্যা নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে লাঠি দিয়ে ঐ পতিত গুলিতে আহত মানুষটিকে পিটিয়ে সাপের মতো মেরেছে? যে সরকার সেই অপরাধে হেফাজতে ইসলামের মতো একটি অরাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় প্রধানকে একই অপরাধে দিনের পর দিন কারাগারে রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে? যারা বলে ওদের এ দাবী মানা মানে বাংলাদেশকে ১৩০০ বছর পিছিয়ে দেয়া!!
হায়রে ১৩০০ বছর পিছনে যেতে নারাজ গর্দভরা। তখনকার ইসলামী সমাজে আমার মা-বোনদের যেই সম্মান, ইজ্জত আর আধিপত্য ছিল, তার এক দশমাংশ সম্মান ও তোদের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ আমার মা-বোনদের দিতে পারিস নি। বরং যতোই দিন যাচ্ছে ততোই আমার দেশের অবলা নারীদেরকে ঘরের বাইরে এনে, পর্দাহীন করে, কমলার খোসা ছিলে খাবার মতো করে ওদেরকে ভোগ করার সব আয়োজন তোরা সম্পন্ন করছিস। অমুক বিউটি কনটেস্ট, তমুক তারকা কনটেস্ট ইত্যাদির নামে ওদের দেহের ন্যুনতম আবরণটিকেও খসিয়ে ফেলে ওদেরকে পুরুষ মানুষের কামণার বস্তু বানাতে বড় বড় হোটেলের ঝলমল করা আলোতে পরখ করে দেখা আর বাদ্য বাজিয়ে নারী-পুরুষ সবাইকে আরো উম্মাদ করে দিয়ে পরবর্তীতে অন্ধকারের আডালে ওদেরকে খাবলে খুঁচিয়ে উপভোগের পাঁয়তারা করছিস। যারই ফলশ্রুতিতে আজ ওদেরই জাতিভাই আমার মায়ের জাতেরা আজ ঘরে বাইরে কোথায়ও নিশ্চিন্তে চলাফেরা করারও অধিকার হারিয়ে ফেলেছে।
যা হতো স্বাভাবিকঃ এই যে তিন সপ্তাহের ভিতর রাজধানীতে গাড়ীতে লিফট দেয়ার নামে (সম্ভবতঃ ধর্ষণ মানিকের সাঙ্গপাঙ্গরা) দশজন নারীকে নিয়ে শুধু ধর্ষন নয় গণধর্ষন করল আর দুইজনকে উপভোগের পর হত্যাই করে ফেললো, আজ যদি দেশের অবস্থা সুস্থ স্বাভাবিক থাকতো, তাহলে আর কিছু না হলেও, অন্ততঃ আমরা পত্র-পত্রিকায় এর বিরুদ্ধে সচেতন মহলের বিবৃতি দেখতে পেতাম, সত্যিকারের নারীবাদী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ কর্মসূচী দেখতে পেতাম, মানববন্ধন দেখতে পেতাম, ছাত্র সংগঠনগুলোর মিটিং মিছিল দেখতে পেতাম, রাজনৈতিক নেতাদের তীব্র সমালোচনা এবং দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তিদানের দাবী দেখতে পেতাম......। আমার দেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্মকান্ড এতোটাই দুর্দান্ত এবং প্রচন্ড হয়েছে যে, নির্ভীক আর সাহসী টিভি টক-শোয়ের তারকাদের গলা দিয়েও এখন আর সত্য কথা বেরুচ্ছে না।
হায়! পার্শ্ববর্তী ভারতে কিছুদিন আগে শুধুমাত্র একটি মেডিকেল ছাত্রীকে গণধর্ষণের দায়ে সেদেশে যে বিশাল প্রতিবাদ এবং গণজাগরণ উঠেছিল ঐ অপকর্মের বিরুদ্ধে, আমার দেশের রাজধানী শহরে ১৩টি দিনের ব্যবধানে ১২ জন কর্মজীবী/ছাত্রীর উপর সেই একই ধরণের পাশবিক নির্যাতন হলেও, তা দেশের গণমাধ্যমের লীড সংবাদ তো হয়ই না, আর কোনরকমে পত্রিকার কোনে স্থান পেলেও তা যেন সবার দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়। সমাজ ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কি ভয়ঙ্কর অধঃপতন এবং গণমানুষের চেতনা ও বিবেকের দুয়ার কতটা শৃঙ্খলায়িত এবং অচেতন হয়ে গেলে নারীজাতির প্রতি পশুত্ব ও হিংস্রতার চরম প্রদর্শনী সত্ত্বেও তা আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়, বর্তমান অবস্থাটি তা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তা দেখিয়ে দিচ্ছে।
তাই এখন স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে মনে, আমরা এখন কোন অবস্থানে আছি, আমাদের দেশের পরবর্তী গন্তব্যই বা কোথায়, আমাদের দেশের বিবেক বলে কথিত সাংবাদিক, সম্পাদক, টিভি-পত্রিকার কন্ঠরোধ হতে মুক্তিলাভ আর কতদূর? আমরা কি আবার নূতন করে আমাদের মাতৃভূমিকে গড়ায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবো, নাকি বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের সূদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের কাছে (যে ষড়যন্ত্র দেশের তাবৎ মানুষকে দুটি শিবিরে স্পষ্ট বিভক্ত করে দিয়েছে- একটি হলো, ভারতের তাঁবেদার আর অন্যটি হলো স্বাধীন বাংলাদেশী) একদিন আমাদের পরাজয় বরণ করে দেশটাকে ওদের দাদা ভারতের হাতে বন্ধক দিয়ে সিকিমের ভাগ্য বরণ করে নিতে হবে???
সময়ই বলে দেবে আমরা কোন পথের যাত্রী। তবে সত্যপন্থী, বিবেকবানরা তাঁদের বিবেকের শেষটুকু অবশিষ্ট থাকতেও সরকারের অন্যায়, জুলুম আর ভারতের তাঁবেদারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম হতে বিরত থাকবেন না,এটাই কামনা।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন