রগকাটা বাহিনী বনাম সাপ মারার লাঠি বাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ২২ মে, ২০১৩, ০৫:১৮:০০ সকাল
ছাত্র জীবনে যখন রাজনীতি করতাম, তখন বাংলাদেশে একটা কথা খুব জোরেশোরে প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল, আর তা ছিল ছাত্রশিবির নাকি রগকাটা বাহিনী। ওরা নাকি বিরোধী দলের ছাত্রদের বাগে পেলেই ধরে ওদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। উদ্দেশ্য ওরা যেন বেঁচে থাকলেও সারা জীবন পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকে।
ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে এমন একটি অপবাদ মিডিয়ার কল্যাণে এমন ভাবে প্রচারিত হয়ে গিয়েছিল যে, সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতির ধারেকাছেও ছিল না কখনো, তারাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিল। আমার অনেক আত্মীয়ও এমন ছিলেন, যাঁরা সরাসরি রাজনীতি না করলেও আওয়ামীদের প্রতি দুর্বল ছিলেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কারণে, তাদেরকেও দেখেছি, এমন ভাবে উক্তি করতে, "শিবিরের ছেলেরাতো ভালোই কাজ করছে, তবে ওরা বিরোধীদের রগ কেটে যা করছে তাতে তাদের ভালোগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে"। বুঝুন ব্যাপারটা। ক্ষমা করবেন তবলীগি ভাইয়েরা, আমাদের পাড়ায় দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে এমন একজন তাবলীগীর বাসায় যখন ধর্ণা দিলাম, বাসার মহিলা সদস্য দরজা খুলে আড়াল থেকে যখন আমাদের আসার উদ্দেশ্য জানলেন, দেরী না করে আমাদের মূখের উপর সশব্দে এমন ভাবে দরজাটি বন্ধ করে দিলেন এ উক্তি সহকারে, "জামায়াত শিবির রা তো শুধু মানুষ মারে, ওরা রাজনীতি করে গদীর জন্য"। তখনো কিন্তু আমি ভেবেছি যে বিরোধীদের ঐ অপপ্রচারের কারণেই সাধারণ অবলা নারীও যিনি ইসলামকে ভালোবাসেন কেমন ভাবে জামায়াত শিবিরকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিল।
শুধুমাত্র প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে একটা মিথ্যেকে কত যোগ্যতার সাথে প্রচার করলে একটা সর্বৈব মিথ্যা অপবাদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এভাবে ঢুকে যেতে পারে শিবিরের বিরুদ্ধে এই একটি অপবাদই তার প্রমাণ।
এটা তো শুধু একটা এমন অপবাদ, যা মানুষ তাদের কানে শুনতে শুনতে বিশ্বাস করা শুরু করে, কেউ জীবনে কখনো নিজ চোখে এমন একটি ঘটনা দেখেছে কিনা তা গবেষণার বিষয়।
তবে, এই যে, আওয়ামী লীগের ষন্ডাপান্ডারা গত সাড়ে চার বছরে দেশে সন্ত্রাস, হত্যা, গুম আর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে যে হারে দেশময় মানুষের পর মানুষ হত্যা করেছে, এবং দেশের মানুষ সহ সারা বিশ্বের মানুষ ভিডিও-র মাধ্যমে তা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছে এবং হররোজ ভিডিও ক্লিপ অন করে তা দেখার সুযোগ পাচ্ছে, আশা করি ছাত্র শিবিরের প্রতি যে মিথ্যা অপবাদ এতদিন তারা দিয়ে এসেছে, ধীরে ধীরে, সেই অপবাদের রেশ জনগনের মন থেকে মুছে গিয়ে সেখানে আওয়ামী গুন্ডা লীগের ভয়াল সন্ত্রাসী রূপটি তাদের মনের গভীরে প্রোথিত হয়ে যাবে। উফ্ কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য, একটা ১৮/২০ বছরের যুবক, পড়ে আছে গুলি খেয়ে রাস্তায়, আর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাতের আঁধারে পুলিশের ইউনিফর্মে নেমে আসা আওয়ামী হায়েনার দল কিভাবে আহত যুবকদের সাপের মত লাঠিপেটা করছে তা যারা ভিডিও দেখেছেন, তারাই বুঝবেন কেমন জঘন্য মানুষরূপী শয়তান তারা। মৃত্যু পথযাত্রী এসব নিরীহ ছাত্রদের ওরা সারারাত (৫ই মে ২০১৩) ধরে এম্নি ভাবে একের পর এক লাঠিপেটা করে ওদের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে, আর সে দৃশ্য যারা দেখেছেন তাঁরা সারারাত বিছানায় কেবল ছটফট করেছেন। ৭১ এর পাকিদের গণহত্যার রূপ কি এই রাতের গণহত্যার চাইতে জঘন্য ছিল? এ প্রশ্নটি এখন সবার মূখে মূখে। ওরা তো তবু ছিল ভিনদেশী। আর আমার দেশের এই নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্রদের যারা রাতের আঁধারে গুলি ও লাঠি দিয়ে হত্যা করেছে তারা তো একই মায়ের সন্তান। তাহলে কিভাবে এটা সম্ভব হয়? প্রশ্ন তাই এখন এটাও উঠেছে, আসলেই কি এরা এদেশী লোক, নাকি বর্ডার থেকে বি.এস.এফ এনে ওদের গায়ে র্র্যাব পুলিশের ইউনিফর্ম তুলে দিয়ে ওদের দ্বারা এই ম্যাসাকার চালানো হয়েছে?
এসব ভিডিও যাঁরা হায়েনাদের কাছে থেকে মৃত্যুভয়কে পায়ে দলে নিজেদের ক্যামেরায় ধারণ করেছেন, তাঁদেরকে আমি জানাই সংগ্রামী সালাম এবং তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, আল্লাহ তুমি তাঁদের সবাইকে ঈমান সহকারে এ দুনিয়া হতে উঠাইও। তাঁদরে ইহ পরকালের কল্যাণ কামনাই হবে আমার ব্রত।
যাঁরা ইসলামের জন্য সংগ্রাম করছেন, সেই সত্যপন্থীদের প্রতি এই অধমের অনুরোধ, সত্যবিরোধী বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রচুর মাল মসলা এখন আপনাদের হাতে আছে, ইন্টারনেট হতে বোতাম টিপে শুধু খুঁজে নেবার কষ্ট ঘরে বসে। হাদীস শাস্ত্র মতে, 'ঈমানের সর্বনিম্নস্তরের পর্যায় হলো, হাতে ও মূখে না পারলে বাতিলকে মনে মনে ঘৃণা করা। তবে এখন ভিডিও ও ইন্টারনেটের কল্যাণে এই নিম্ন পর্যায়ের ঈমানদারদের ঈমানের পরীক্ষা ঘরে বসে দেবার সুযোগ এসে গেছে। অতএব হেলা না করে ইন্টারনেট, ফেসবুক হতে প্রাপ্ত এসব গণহত্যার ভিডিও গুলো প্রচার করতে থাকুন, ছড়িয়ে দিন সারা বিশ্বময়। বাতিলরা যেখানে শুধুমাত্র একটি মিথ্যাকে তাদের গোয়েবলসীয় প্রচারের কল্যাণে দেশের ৫০/৬০ ভাগ মানুষের মনে প্রোথিত করে দিয়েছে, এই আই-টি-র যুগে বাতিলের এসব হিংস্র সত্য কর্মকান্ডগুলোকে অস্ত্র করে, তাদের অস্ত্র দিয়েই তাদেরকে পরাজিত করতে হবে, এই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সত্যপন্থীদের নব উদ্যমে মাঠে নেমে যেতে হবে।
যুদ্ধ কিন্তু শুরু হয়ে গেছে, এবং যুদ্ধে ব্যবহারের অস্ত্র কিন্তু আপনার আমার হাতে বাতিলরাই তুলে দিয়েছে। সুতরাং এবার আর পিছনে ফিরে দেখার সময় নেই। এগিয়ে যেতে হবে সম্মুখ পানে, শুধুই সম্মুখে।
আই-টির যুগে আপনার হাতের প্রধান অস্ত্র হলো, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, আর সামান্য কিছু আই-টির জ্ঞান, যা আপনি আপনার স্কুল পড়ুয়া ছেলে বা মেয়ের কাছ হতেই পেতে পারেন।
তাই আর দেরী নয়, যুদ্ধে যাবার এখনই সময়।
আল্লাহ তুমি আমাদের সহায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন