মহা ধোঁকাবাজ ও ধূর্ত এই সরকার
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে হাসেম ০৩ মে, ২০১৩, ১০:২৫:০৪ রাত
গত কয়েকদিন ধরে শেখ হাসিনা একটা বিবৃতি বেশ জোর গলায় দিয়ে বেড়াচ্ছেন সভা সমিতি কিংবা আলোচনার টেবিলে, আর তা হলোঃ সাভারের ধ্বংসস্তুপ হতে আহত নিহতদের এত অল্প সময়ে এত অধিক হারে উদ্ধারের ঘটনা নাকি নজীরবিহীন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ছাড়া এমন অলৌকিক কান্ড(!) ঘটানোর ক্ষমতা পৃথিবীর অন্য কোন খানে কিংবা অন্য কোন সময়ে কেউ ঘটাতে পারে নি বলে তার দম্ভোক্তি শুনে নিজেকেই ধিক্কার দেয়া শুরু করি কেন এই অভাগা দেশে জম্ম নিয়েছিলাম।
তারপরে হঠাৎ সংবাদে দেখতে পেলাম, বৃটেন ও থাইল্যান্ড সহ আরো অনেক দেশ নাকি সাভারের দুর্ঘটনা কবলিত ভবন হতে মানুষ উদ্ধারে তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী ও আধুনিক যন্ত্রসামগ্রী নিয়ে বাংলাদেশে আসতে দিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই প্রস্তাবে কোন সাড়া দেয় নি। তখনই বুঝতে পারলাম শেখ হাসিনার হেঁড়ে গলায় মৃতদের উদ্ধার কাহিনী প্রচারের মাহাত্ম। বুঝলাম, কেন সরকার বিদেশী সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছিল এবং কেনই বা হঠাৎ করে আহত নিহতদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের ত্বরিৎকর্মা হবার সার্টিফিকেট বিলাতে শুরু করলো। প্রথমতঃ তারা বিদেশী সাহায্য নেয় নি এ ভেবে যে ওরা এখানে এলে এই অভিশপ্ত ভবনের অনেক গোপন রহস্য জানাজানি হয়ে যাবে, যার ফলে জনতার রোষানলে পড়তে হবে সরকারকে। আরো কারণ হলো, সরকার যে জনরোষ হতে মুক্তি পেতে অনেক লাশ গুম করে ফেলার ধান্ধায় আছে, বিদেশীরা এলে তা আর করতে পারবেনা এবং মৃত লাশের সংখ্যা খুব কম করে দেখানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা যখন তার হেঁড়ে গলায় ডাক ছেড়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে দেশ বাসীকে জানায় যে এত অল্প সময়ে এত অধিক সংখ্যক মানুষকে উদ্ধারের ইতিহাস তার সরকারই সৃষ্টি করেছে, তখন তিনি জনগনের দৃষ্টি আর যে যে পয়েন্টগুলো হতে সরিয়ে রাখতে চান তা হলোঃ
১) অর্থলোভী, অমানুষ লীগ দলীয় মানুষ দ্বারা এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেবল বাংলাদেশেই ঘটে, অন্য কোন দেশে ঘটে না, বা ঘটলেও সেই সরকারের ক্ষমতার পাশা ৩/৪ দিনেই উল্টে যায়।
২) মৃতের সংখ্যা যতো বেশীই হোক, তা তো হাজার ছাড়ায়নি, কিন্তু তার দলীয় উদ্ধারকর্মীরা ২/৩ হাজার জীবিত মানুষকে উদ্ধার করেছে, এটাই বা কম কিসে।
৩) ঘটনার পরপর এই শেখ হাসিনাই বলেছিল, তারা আগেই এ ভবন সম্পর্কে জানতেন এবং সেজন্য ভবন খালি ও করা হয়েছিল, কিন্তু ঐসব নির্বোধরা তাদের জিনিষপত্র আনতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পতিত হয়েছে। এখন যখন ঘটনার সিসিম ফাঁক হয়ে জানা গেল, তার দলীয় লোকদের অযোগ্যতা, অতিলোভ এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পাকাতে গিয়েই এতো বড় বিপর্যয় ঘটেছে, তখন গা বাঁচানোর আর অন্য কোন উপায় না দেখে তিনি মাইকে ঘোষনা দিচ্ছেন, তাঁর ও তাঁর সরকারের ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহন ও সার্বক্ষণিক নজরদারীর জন্য ক্ষয়ক্ষতি কম(?) হয়েছে, নতুবা (বি এনপির সরকার (অনুচ্চারিত) হলে এর দু ভাগের এক ভাগ সফলতাও তারা দেখাতে পারতো না।
৪) প্রথমে তো এই দুর্ঘটনার দায় পরোক্ষে গরীব শ্রমিকদের উপরই তিনি দিয়ে দিলেন, এখন যখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তার আন্দাজের তুলনায় অনেক বেশী হয়ে গেল তখন তার চাপার জোর দিয়ে এ কথা প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন যে, তিনি ও তার সরকার রাত্রদিন খেটে, না শুয়ে না খেয়ে ঐ হতভাগাদের উদ্ধারে প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৫) একমাত্র আওয়ামী মন্ত্রীরাই বলে, বিরোধীদের ককটেল ফাটানোয় বা পিলার ধরে নাড়া দেয়াতেই নয়তলা ভবন ধসে পড়েছে, অন্য কোন দেশের মন্ত্রীরা এমন কথা বলতে পারে না, বললে পরদিনই তাকে গদির মায়া ত্যাগ করতে হতো।
৬) অন্য কোন দেশে যেহেতু এমন ভয়াবহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেনা, সেহেতু এমন বিরাট সংখ্যক মানুষ আহত বা নিহত ও হয় না।
তার আরো এক বিরাট চাপাবাজি হলো পবিত্র সংসদে গিয়েও তিনি চাপা ঝাড়লেন এই বলে যে রানাপ্লাজার মালিক রানার সাথে আওয়ামী লীগের দূরতম কোন সম্পর্ক নাই, কথাটি আরো বিশ্বাস যোগ্য করাতে তিনি বললেন, তিনি ঐ এলাকার যুবলীগের লিস্টি এনেছেন, যাতে রানা নামের কেউ নাকি নাই।
এত বড় মিথ্যাবাদী শাসক বাংলার বা পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ এই নব্য ফেরাউন থেকে আমাদের বাংলাদেশকে মুক্তি দাও, হে আল্লাহ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে, তুমি চোখ তুলে তাকাও হতভাগা এসব বণি আদমের প্রতি।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন