জামায়াত বিরোধিতার রাজনৈতিক পরিণাম
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:৫২:০১ দুপুর
১৯৯১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশী রাজনীতির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ছিলেন আলেম সমাজ । শায়খুল হাদীস-মুফতি আমিনী-মাওলানা আশরাফের মতো আলেমদের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিলো বেশি । বামপন্থী দলগুলোর চাইতে ইসলাম পন্থী দলগুলোকে জোটে টানার প্রবণতা দুই পক্ষেই লক্ষ্য করা যেতো । খেলাফত মজলিস-ইসলামী ঐক্যজোট-খেলাফত আন্দোলন প্রভৃতি দলগুলো তাদের অতীত ঐতিহ্যের ভাঙ্গা দাঁড় বেয়ে কিছুটা হলেও সশব্দে চলাচল করতো । বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের অভিযোগ যখন ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো তখনো বাংলাদেশের ইসলামী শক্তিকে একধরণের সমীহ করে চলতো সাধারণ মানুষ । কিন্তু হেফাজতের উত্থানের পর আলেম সমাজ যখন কৌশলে জামায়াত ট্যাগের বিকল্প হিসেবে হেফাজত ট্যাগ ধারণে আগ্রহী হয়ে উঠলেন, আচমকা সবগুলো মধ্যপন্থী ইসলামী দলের রাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে গেলো । এমনকি প্রতি রমজানে ইফতার মাহফিলের যে সংস্কৃতি ইসলামী দলগুলো এদেশে চালু রেখেছিলো- গত রমজানে তাদের ইফতার মাহফিল নজরেই পড়েনি খুব একটা । এবার কোরবানীর ঈদেও তাদের কর্মকান্ড দুম্বার গোশত বিতরণের পরিবর্তে চামড়া সংগ্রহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে বোঝা যাচ্ছে । অন্যদলের নেতাকর্মীরা যেখানে ঈদ উপলক্ষে উট কুরবানী দিয়ে প্রীতিভোজ আয়োজন করে এলাকাবাসীকে খাওয়াবে, প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে যুবসমাজকে নিয়ন্ত্রন করবে, কনসার্ট আয়োজন করে নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা উপস্থাপন করবে, সেখানে ইসলামী দলগুলো কাদামাটির মতো নিষ্প্রভ থাকবে । কারণ কি ?
আমার ধারণা হঠাৎ করে হেফাজতে মিলে যাওয়ার ঝটিকা নীতিটাই তাদের এই পরিণতির জন্য দায়ী । জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও এসব দলের সাথে কার্যকর ঐক্য গড়তে পারেনি । কারণ জামায়াতের সাথে কিছুটা আদর্শিক পার্থক্য ছিলো এবং রাজাকার উপাধি থেকে বেঁচে থাকার জিহাদ তাদেরকে জামায়াতের সাথে মিলতে দেয়নি । তারা হয়তো আশায় ছিলো জামায়াতের একটা বিকল্প দাঁড়িয়ে যাক- তখন সবাই একসাথে ইসলামী হুকুমাতের নামে উম্মাতুন ওয়াহিদা প্রতিষ্ঠা করা যাবে । হেফাজতের ৬ এপ্রিল ২০১৩ সমাবেশ ছিলো তাদের জন্য প্রত্যাশিত মোমেনতো পেরফেকতো । এসময় নিজেদের স্বকীয়তা ভুলে, কৌশল ভুলে, মাযহাব ভুলে- স্বেচ্ছায় সব ইসলামী দল মঞ্চে উঠে গেলো । এমন নয় যে- হেফাজতের সাথে তাদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব ছিলোনা বা হেফাজতের অরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য তাদের অজানা ছিলো; তবুও রাতারাতি হেফাজতের বাইয়াত নিতে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়লো কারণ দীর্ঘদিনের জামায়াতবিহীন ইসলামী নেতৃত্বের আকাংখা বাস্তবতায় রুপ পেয়েছিলো । রাজনৈতিক মাঠে নিরুপায় বিএনপির জন্যে নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার একটা সুযোগ তৈরি হলো, শত্রুপক্ষকে একমঞ্চে পেয়ে আওয়ামী লীগেরও আঘাত করতে সুবিধা হলো । সবচেয়ে বিপদে পড়লো জামায়াতে ইসলামী । তারা ইসলাম বিরোধী শক্তির টার্গেট তো সবসময় ছিলোই- এবার হয়ে পড়লো ইসলামপন্থী শক্তির কাছে একঘরে । উপরওয়ালা বোধহয় জামায়াতের বিপদে পাশে দাঁড়ালেন । হেফাজতের চমক দেখানো আন্দোলন যদি আওয়ামী লীগকে অপসারণ বা দমন করতে সফল হতো, তবে সংসদীয় রাজনীতি থেকে জামায়াত হারাতো কিনা জানিনা, তবে ইসলামের রাজনীতি থেকে নির্ঘাৎ বিলীন হতো । যাইহোক- শেষপর্যন্ত হেফাজতের নির্বাসন জনিত সুযোগে জামায়াত আগের চাইতে বড় আকারে নিজেদের প্যাটেন্ট নিয়ে ইসলামী রাজনীতির পাখা মেলতে সুযোগ পেলো । এভাবে অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো জামায়াতে ইসলামী মুক্ত ইসলামী আলেয়ার অালোতে নিজেরাই তিমির হলো ।
বিষয়: রাজনীতি
১৬৫০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"সব কিছুতেই আল্লাহ তায়ালার রহমত আছে। আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না।"
এমন টাইপ মনে হল লেখা পড়ে.......।
মন্তব্য করতে লগইন করুন