এভাবেই চলছে সংবিধান এক্সপ্রেস ট্রেন
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:৪৩:৫২ রাত
বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন । ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর দেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান প্রণীত হয়, এবং একই সালের ১৬ই ডিসেম্বর হতে এটি কার্যকর হয় । সংবিধান পরিবর্তনের জন্য কিংবা সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের দুই তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয় । ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীর পর বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা পেল জাতীয় সংসদ । আসুন এক নজরে দেখে নিই কি কি কারণে আমাদের সংবিধান ৪৪ বছরে ১৬ বার সংশোধিত হলো । এসব সংশোধনীতে দেশের নাগরিক হিসেবে আপনাদের কি কি আশা পূরণ হয়েছে তার হিসাব নিজেরাই করে নেবেন ।
সংবিধান সংশোধনীর বিষয়বস্তুঃ
১। প্রথম সংশোধনী ১৫ই জুলাই, ১৯৭৩-> যুদ্ধাপরাধীসহ অন্যান্য গনবিরোধীদের বিচার নিশ্চিত করা ।
২। দ্বিতীয় সংশোধনী ২০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩-> অভ্যন্তরীণ বা বহিঃ আক্রমণে সৃষ্ট গোলযোগে দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন হলে “জরুরি অবস্থা” ঘোষণার বিধান ।
৩। তৃতীয় সংশোধনী ২৩শে নভেম্বর, ১৯৭৪-> বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী বেরুবারিকে ভারতের নিকট হস্তান্তরের বিধান ।
৪। চতুর্থ সংশোধনী ২৫শে জানুয়ারি, ১৯৭৫-> সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় বাকশাল রাজনীতি প্রবর্তন ।
৫। পঞ্চম সংশোধনী ৬ই এপ্রিল, ১৯৭৯-> ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৭৯ সালের ৫ই এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় কর্মকান্ডকে বৈধতা দান ।
৬। ষষ্ঠ সংশোধনী ৮ই জুলাই, ১৯৮১-> উপ-রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরন ।
৭। সপ্তম সংশোধনী ১০ই নভেম্বর, ১৯৮৬-> ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ই নভেম্বর পর্যন্ত সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে প্রণীত সকল ফরমান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, নির্দেশ ও অধ্যাদেশ-সহ অন্যান্য আইন অনুমোদন ।
৮। অষ্টম সংশোধনী ৭ই জুন, ১৯৮৮-> রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান ও ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন । Dacca-এর নাম Dhaka এবং Bengali-এর নাম Bangla-তে পরিবর্তন করা ।
৯। নবম সংশোধনী ১০ই জুলাই, ১৯৮৯-> রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাথে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোন ব্যক্তিকে পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখা ।
১০। দশম সংশোধনী ১২ই জুন, ১৯৯০-> রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরো ১০ বছরকালের জন্য সংরক্ষণ ।
১১। একাদশ সংশোধনী ৬ই আগস্ট, ১৯৯১-> অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্বপদে ফিরে যাবার বিধান ।
১২। দ্বাদশ সংশোধনী ৬ই আগস্ট, ১৯৯১-> সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পূনপ্রবর্তন ও উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্তি ।
১৩। ত্রয়োদশ সংশোধনী ২৭শে মার্চ, ১৯৯৬-> অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ।
১৪। চতুর্দশ সংশোধনী ১৬ই মে, ২০০৪-> নারীদের জন্য ৪৫টি আসন সংরক্ষণ, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংরক্ষণ, অর্থ বিল, সংসদ সদস্যদের শপথ, সাংবিধানিক বিভিন্ন পদের বয়স বৃদ্ধি ।
১৫। পঞ্চদশ সংশোধনী ৩০শে জুন, ২০১১-> ১৯৭২-এর মূলনীতি পূনর্বহাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, ১/১১ পরবর্তী দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৯০ দিনের অধিক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি প্রমার্জ্জনা ও বৈধতা দান, নারীদের জন্য ৫০ আসন সংরক্ষণ ।
১৬। ষোড়শ সংশোধনী ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪-> বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে ন্যস্ত করা ।
বি.দ্রঃ বাংলাদেশের সংবিধানে আপনার, অর্থাৎ জনগণের অধিকার হিসেবে কি বলা আছে সেটা একবার স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন- "দেশটি হবে গণপ্রজাতান্ত্রিক, গণতন্ত্র হবে এদেশের প্রশাসনিক ভিত্তি, জনগণ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন" । আর আপনি, অর্থাৎ জনগণ যে শপথ দ্বারা আবদ্ধ তা হলো- "আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে; আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, আমরা যাহাতে স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি লাভ করিতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্খার সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারি, সেইজন্য বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তিস্বরূপ এই সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুণ্ন রাখা এবং ইহার রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য ।
এভাবেই চলছে সংবিধান এক্সপ্রেস ট্রেন । এটাকেই সংরক্ষণের শপথ আপনার আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া আছে । একবার যেটা আইন হয়, পরের সংশোধনীতে সেটা ছাটাই হয় । একবার যাকে অবৈধ ডাকা হয়, পরেরবার তাকে বৈধতা দেয়া হয় । সংবিধানকে যে রাজনীতির মাঠে ফুটবল বানিয়ে রাখা হয়েছে- এই আয়রনিটা শুধু লোকমুখে শুনেছি, সংশোধনী গুলা জানার পর বাস্তব উপলব্ধি করা সহজ হয় । তবুও না দেখার ভান করতে হবে- এটাই সাসপেন্স ।
বিষয়: রাজনীতি
১৪১৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন