হতে পারেন শিক্ষক, তবু রাজনীতির ময়দানে ব্যর্থ লোকের বেঁচে থাকা উচিত নয়
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৪০:৩১ সকাল
শিক্ষকদের উপর হামলা প্রসঙ্গে কিছু বলে লাভ নাই- এটা বুঝতে পারতেসি । ইতোমধ্যে সকল জ্ঞানী-গুণী-জন এই টপিকে যতো পিলাচ কামানো সম্ভব ছিলো, তাহা কামিয়ে নিয়েছেন । আমিও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল্যায়ন করার ক্ষমতা রাখিনা । তবে ড. মাহবুব উল্লাহকে এবং তার ভাই মাহফুজ উল্লাহকে টক শোর কল্যাণে বেশভালো চেনা হয়েছিলো । তার বার্ধক্যকালীন আহত নয়নের করুণ চাহনিতে একটু কষ্টই পেয়েছি । বেচারা বোধহয় ভাবতেই পারেননি ছাত্রলীগ কর্তৃক আক্রমনের পরেও জীবিত থাকবেন । অন্তত এখনকার যুগে এটা ঠিক মানানসই নয় । যাইহোক, প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য অভিনন্দন ।
আচ্ছা, যদি আক্রমনের আঘাতে তিনি মারা যেতেন তবে কি হতো ? গত দশ বছরের বাংলাদেশী রাজনীতির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়, কিছুই হতো না । তিনি তখন খালেদা জিয়ার বদলে স্বয়ং আল্লাহর কাছে বিচার চাইতেন । আপনারা হয়তো বলবেন, স্যার কিন্তু ম্যাডামের কাছে বিচার চাইতে যাননি !! তাহলে কেনো তিনি খালেদা জিয়ার সামনে ছেঁড়া শার্ট নিয়ে উপস্থিত হলেন ? যদি একটা যুবদল কর্মী ক্ষতচিণ্হ নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে আশ্রয়ের জন্য উপস্থিত হতো, সেটা মেনে নেয়া যেতো । মাহবুব উল্লাহর মতো প্রবীণ অধ্যাপক, যিনি ভালোমতোই জানেন বর্তমানে বেগম জিয়া একজন ভাগ্যবিড়ম্বিত নারী, তার কাছে অসহায়ত্ব দেখিয়ে লাভ নেই, তবু সেই অসহায় নারীর কাছে অসহায় অবস্থায় হাজির হয়ে মাহবুব উল্লাহ প্রমাণ করেছেন, খালেদা জিয়ার বাইরে চিন্তা করার ক্ষমতা বিএনপি পন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরও নেই । বিএনপির দুর্দশার জন্য তাদের এই উদ্ভট মাইন্ডসেট সবচেয়ে বেশি দায়ী । তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে শেখেনা । আজকে যদি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বা হারুনুর রশীদ কোন সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রমনের শিকার হতো, তারা কখনোই শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে নিজের অসহায়ত্ব প্রদর্শন করতোনা । হয়তো একা একা ছেঁড়া শার্ট নিয়ে শহিদ মিনারে বসে যেতো । তাকে সমর্থন করে কিছু শিক্ষক সংগঠন জুস নিয়ে হাজির হতো । কিছু ছাত্র সংগঠন হামলাকারী পক্ষের বহু প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে বিরাট খুনোখুনি লাগিয়ে দিতো । দলের নেতা/নেত্রী তখন শহিদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকের প্রতি সহানুভূতি জানাতেন । এভাবেই করতে হয় বিরোধী দলের রাজনীতি । একটা দৃষ্টান্ত দেখাতে পারি- জামায়াতের একজন কর্মী যতোই আহত অবস্থাতে থাকুক, তারা নিজের ভাঙ্গা হাটু নিয়ে কখনো নেতার ঘাড়ে চড়বেনা । কিন্তু বিএনপির ওয়াহিদুজ্জামান আপেল থেকে শামসুজ্জামান কদবেল পর্যন্ত প্রায় সবার মধ্যে বিপদে পড়লে নিজের ব্যাক্তিত্ব বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকতে দেখা যায়না । আঘাত এলেই নেত্রীর কেদারাপাশে আশ্রয় খুঁজতে থাকে । তখন স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি, রাজনৈতিক কৌশলগুলো পর্যন্ত তারা গুলিয়ে বসে । ডঃ মাহবুব উল্লাহ যদি তৎক্ষণাৎ ল্যাবএইডে চলে যেতেন তবে সমস্যা ছিলোনা । কিন্তু এই যে একটা স্বান্ত্বনাকামী দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করে দিলেন, এখন থেকে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তারক্ষীরাও মাঝেমধ্যে ম্যাডামের কাছে গিয়ে ভ্যা করে কেঁদে কেঁদে আওয়ামী লীগের অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর দিকে আঙ্গুল তাক করবে । মাহবুব উল্লাহর ছেঁড়া শার্ট আজকে বিএনপি কর্মীদের জন্য ফেসবুকে আপলোডেড আইটেম হওয়া ছাড়া আর কোনই কাজে লাগলোনা ।
আন্দোলন করবেন ? ম্যাডামকে আন্দোলনের জন্য চাপ দেবেন ? জামায়াত কে খাটো করে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের জাতিয়তাবাদ প্রদর্শন করবেন ? ব্যাড মুভ মাই ডিয়ার ! একজন হাইপ্রোফাইল থিংকট্যাংকের শার্ট ছিঁড়ে আওয়ামী লীগ যেনো পুরো বিরোধী জোটের পাঁজর বের করে দিলো ! এজন্যই বেগম খালেদা জিয়ার ঈদ কখনো আসেনা । একজন মহিলার পক্ষে কয়টাকে সাহস দেয়া সম্ভব বলুন ! কতোজনের অভিযোগ শোনা সম্ভব !! অতএব আন্দোলনও অসম্ভব ।
বিষয়: রাজনীতি
১৭৫৭ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার উপরের কথার সাথে আমি শতভাগ একমত। মাহবুব উল্লাহ স্যার আমারও প্রিয়। তবে তাঁর এই আচরণটি ঠিক হয়নি।
আমার মনে হয়, তিনি যেখানে আহত হয়েছেন, সেখানে বিএনপি ঘরানার মানুষই ছিল বেশী। তারা হয়ত এমন পরামর্শ দিয়েছেন, তিনি কিছু চিন্তা না করে কাজটা করে ফেলেছেন। আমরা অতীতে দেখেছি তাঁর দূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞা অনেক উচু মানের।
যাক, আপনার অভিব্যক্তিকে আমি সমর্থন করি। অনেক ধন্যবাদ
বিশ্লেষণ মুলক এমন অনুসন্ধানী পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাতেই হয়......।
স্যারকে এভাবে দেখে খুবই খারাপ লেগেছে।
আর বিএনপির কথা বলছেন -
মনে আছে আরেক মানুষের কথা - যিনি নিজ বাসায় নিহত হয়েছিলেন- বিএনপির সময়ে। মনে আছে- তার কথা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন