রোহিঙ্গা-বিহারী মুসলিমদের সোশ্যাল স্ট্যাটাস কি বন্যপ্রাণীর পর্যায়ে ?

লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:৫০:৫৪ রাত

'সেইভ গাজা' হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুধু গাজাবাসীর জীবন রক্ষা নয়, গাজা উপকূলে নাকি মৎস্যসম্পদের বিশাল আড়ত বানিয়ে দিয়েছে এই মুসলিম উম্মাহ ! এমনকি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গাজা পূনর্গঠনও অসম্ভব নয় । আমাদের দেশ থেকে যেহেতু সর্বাধিক হ্যাশট্যাগায়ন হয়েছে, অতএব মেশাল-হানিয়া আমাদের নামোল্লেখপূর্বক ধন্যবাদ না জানালেও আপনারা নিজেরা 'ইউ আর ওয়েলকাম' বলে নিজেদের অনলাইন সমর্থনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন গাজাবাসীকে । বাংলাদেশী টুইটার/ফেসবুকারদের এই কৃতিত্ব কোনভাবেই খাটো করে দেখা সম্ভব নয় । বিশেষ করে আমার মতো যারা হ্যাশট্যাগায়নকে বাঁকা চোখে দেখে ত্যাড়া মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছিলাম, আমরা যারপরনাই বিব্রত ।

এবার হ্যাশবীরদের প্রতি একটা বিনীত নিবেদন জানাই । নিজের দেশে দীর্ঘদিন নির্যাতিত হয়ে কিছু রোহিঙ্গা মুসলমান আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছিলো । আমরা তাদের প্রতি কেমন আচরণ করেছি সেটা হয়তো তারাই হাশরের ময়দানে সাক্ষ্য দেবে । কেবল গাজার লোকেরাই মানুষ আর মুসলিম রোহিঙ্গারা বন্যপ্রাণী এমনটা ভাবার কোনই সুযোগ নেই । প্রায় পাঁচলক্ষ রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশে । তারা কতোটা বিপদে পড়ে নিজের দেশ থেকে পালিয়ে সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমাদের দ্বারে আশ্রয় নিয়েছে সেটা হয়তো আমাদের শুনতেও ইচ্ছা হবেনা । তাদের ক্যাম্পগুলোতে জীবন যাপন চিত্র হয়তো আমরা দেখতেও চাইনা । কিন্তু মিয়ানমারের সচিব রাজি হয়েছে বলেই আমরা গণহত্যা এবং দাঙ্গার কোন সুরাহা না করে তাদেরকে ধরে ধরে পুরনো উনুনে ফেরত পাঠিয়ে দেবো- এটা আর যাই হোক মানবিক আচরণ হতে পারেনা । যদি এমন হতো যে- আমরা রোহিঙ্গাদেরকে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি বা সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করে টিকে থাকতে পারে, তাহলে তাদেরকে এখনই ফিরিয়ে দেয়া যেতো । কিন্তু তাদের মতামতকে পাত্তা না দিয়ে শুধু দায় এড়ানোর জন্যে হিংস্র খুনীদের হাতে তুলে দেয়া ঠিক 'সেইভ গাজা' হ্যাশট্যাগের সাথে মানায় না । উড়ে এসে জুড়ে বসা কিছু পাহাড়ী সন্ত্রাসীগোষ্ঠী যদি আদিবাসী মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশের বিশাল একটি এলাকা দখল করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, তো রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক একটু আবাসভূমি দিতে আমাদের এতো কার্পণ্য কেনো ! তাদের দেশে দাঙ্গা সমস্যার একটা সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে জীবিকা নির্বাহ করে বাঁচার সুযোগ দিলে কি এমন ক্ষতি !

যদি সম্ভব হয় আমাদের দেশে যেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অথবা বিহারী ক্যাম্প আছে সেখানে একবার ঘুরে আসুন । গাজার মানুষ যেমন চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে অবরুদ্ধ এবং দারিদ্র্যের অভিশাপ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, আটকে পড়া বিহারীদেরকে অথবা বর্ডার পার হয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে ঠিক একই ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে বাংলাদেশ । ওদের কোন নাগরিকত্ব নেই, পাসপোর্ট নেই, মানবাধিকার নেই । ওদের ছেলেরা গাজার মতো টানেল বানায় না ঠিক, তবে কোন সম্মানজনক পেশায়ও নিয়োগ পায়না । ওদের মেয়েরা দেশের অধিকাংশ পতিতালয়ে কাজ করতে বাধ্য হয় ।

প্রায় দুই লক্ষ বিহারী আছে বাংলাদেশে । তারাও জানে, আমরাও জানি, ইনডিয়া-পাকিস্তানও জানে যে- তাদের যাবার মতো জায়গা আদৌ হবেনা । এই সরকার কিছু বিহারীকে ভোটারও বানিয়েছিলো নৌকা মার্কায় ব্যালট বাড়ানোর জন্য । এছাড়া কয়েকদিন পরপর শিরোনাম পরিবর্তনের জন্য বিহারী ক্যাম্পে আগুন লাগানো যেনো বাংলাদেশী রাজনীতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিহারীদের মধ্যে শিক্ষার সুযোগ না থাকায় চরমভাবে অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠছে এরা । পরিণতি ভোগ করছে বাংলাদেশ । বিহারী ছেলেরা চেষ্টা করছে যে কোন ভাবে বাঙ্গালী মেয়ে বিয়ে করে ক্যাম্প জীবন থেকে মুক্তি পেতে । ফলস্বরুপ প্রচুর বিহারী মেয়ে অবিবাহিতা থাকতে বাধ্য হচ্ছে । এটা তাদের জনসংখ্যা হ্রাস করছেনা, উল্টো আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে । এইভাবে জাতিসংঘ স্বীকৃত শরণার্থী বানিয়ে রেখে আমাদের রেশন খাইয়ে তাদেরকে মানবেতর প্রতিপালনের চাইতে নতুন করে কি বিহারী এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভাবা যায়না ? আমাদের সবচেয়ে কাছের এই অসহায় লোকগুলোর বিষয়ে হ্যাশবীরদের চিন্তা ভাবনা কেমন তা জানার আগ্রহ বোধ করছি ।

যদি আশা করেন, আপাতত এই বিষয় এড়িয়ে গেলেই আপনার মুক্তি মিলবে, তবে জেনে রাখুন এই দুটো সমস্যা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন সমস্যাগুলোর অন্যতম । কেউ এটা এড়িয়ে গিয়ে মুক্তি পায়নি । বরং যুগে যুগে বিহারী এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে অপরাজনীতি করে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ । ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলাদেশ । এখনও যদি আমরা স্বরচর্চায় বিরতি দিয়ে চুপচাপ দেখে যাবার নীতি পুনরাবৃত্তি করি, তবে হ্যাশট্যাগায়নের গোপন রহস্য কিন্তু বেশিদিন গোপন থাকবে না মাইরি ! আমাদের চোখের সামনে নাকের ডগায় দানবেরা বারংবার উল্লাস করবে অসহায় মানুষগুলোর ভাগ্য বিড়ম্বিত রেখে ।

বিষয়: বিবিধ

২১৫০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

261011
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হ্যাশ এর রহস্য কি?
লেখার আগে হ্যাশযুক্ত করার তাৎপর্য কি?
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১৫
204908
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : হ্যাশবীরগণ হয়তো বলিতে পারবেন ভালো । আপনাকে ধন্যবাদ । Good Luck Good Luck
261055
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৫৭
কাহাফ লিখেছেন : আমাদের ভোতা হয়ে যাওয়া মানবতাহীন অনুভূতি একটু হলেও নাড়া দিবে আলোচ্য বিষয় টা।অনেক ধন্যবাদ লেখার জন্যে......
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১৬
204909
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
261824
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:০৩
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : পশ্চিমে যেসব রোহিঙ্গারা রিফিউজি হিসেবে আসে তারা তাদের ফেলে আসা জীবনকে নরকের সাথে তুলনা করে। পৃথিবীতে সবচেয়ে নিপীড়িত জাতি। ভোট দেয়ার অধিকার, শিক্ষা,ভাল চাকরী করার অধিকার তো নেই ই,শুনেছি বিয়ে করতে হলেও সরকারের অনুমতি লাগে। এভাবে নির্যাতিত হলে একদিন হয়ত পৃথিবী থেকে এই জাতির বিলুপ্তি ঘটবে। কানাডায় রোহিঙ্গারা স্কুল-কলেজে অন্য সবার মত সমান সুযোগ সুবিধা পায়। আমাদের দেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলো এদের মানুষ মনে করেনা। অন্তত আরব লীগভুক্ত দেশগুলো রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলে অন্তত মুসলিম বিশ্বে মানবাধিকারের কিছুটা চর্চা হত।

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে Good Luck Good Luck Good Luck
০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫৮
205804
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ । পাতা পাতা পাতা ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File