বিশ্ব অর্থনীতির সঞ্চারপথ এবং বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৩৯:৫১ রাত
যারা অর্থনীতি ভালো জানেন তাদের প্রতি আমার একটা বিস্ময়যুক্ত শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে । কারণ রাজনীতি এবং অর্থনীতি পরস্পর পরিপূরক । আমাদের দেশে রাজনীতি নিয়ে বেশ ভালো আলোচনা হয় এবং জাতি হিসেবে আমরা যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন । কিন্তু সে তুলনায় অর্থনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়না । অথচ সকল যুগের মতোই বর্তমান বিশ্বরাজনীতির মূলে হচ্ছে অর্থনীতি ।
যাইহোক, ইনডিয়া এবং চায়নার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র কেনো এক ভল্টে টাকা রাখতে আগ্রহী হলো সেটাই ইদানিং ভাবছিলাম । BRICS bank এর রিজার্ভ ইস্যুতে ইনডিয়া, চায়না, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দশ বিলিয়ন ডলার করে ইনভেস্ট করবে । মোট রিজার্ভ একশো বিলিয়ন হবার কথা । বাকি ৫০ বিলিয়ন নেয়া হবে অন্যান্য ডেভেলপিং ইকোনমির দেশগুলো থেকে । এতটুকু ঘোষণার পরই বাংলাদেশ সরকার বেশ শিহরিত । তারা New Development Bank (NDB) এর শেয়ারহোল্ডার হবার জন্য মুখিয়ে আছে । অথচ আমাদের অর্থনীতি মোটেও বাকি দেশগুলোর অবস্থানে নেই । এমনকি অপেক্ষাকৃত সচল অর্থনীতির মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, কেউ এনডিবির শেয়ার কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও শুনিনি । ইনডিয়া, ব্রাজিল এবং রাশিয়ার মিত্র ইরান পর্যন্ত এ ব্যাপারে এখনো মুখ খুলেনি ।
BRICS গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো মার্কিন এবং পশ্চিমা প্রভাব বলয় থেকে বিশ্ব অর্থনীতির মুখ ফেরানো । বিশেষ করে চায়না এবং রাশিয়া যেখানে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছে, সেখানে উদ্দেশ্য গোপন থাকেনা । বিশ্ববাজারে চায়নার অবস্থান ধরে রাখা, ইনডিয়াকে শাইনিং রাখা, রাশিয়াকে পরাশক্তির অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া, ব্রাজিলের রায়ট সামলানো এবং সর্বোপরি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়োজনেই তাদেরকে এমন কিছু করতে হয় যাতে অন্য জাতি শোষণ করে নিজেদের উদর পূর্তি হতে পারে । এতোদিন বিশ্ব চলেছে ব্রেটন উডস পদ্ধতিতে । দুটি বিশ্বযুদ্ধ এবং গ্রেট ডিপ্রেশন উত্তর মার্কিন অর্থনীতিকে সচল করার জন্য ব্রেটন উডস সিস্টেম বেশ কাজে লেগেছে তাতে সন্দেহ নেই । এই পদ্ধতির International Monetary Fund (IMF) এবং World Bank Group (WBG) কিভাবে বিশ্বকে লুটপাট করে পশ্চিমাদের জীবনমান সমৃদ্ধ করেছে সেটা প্রায় সবার জানা । মুখে যতো কথাই বলুক Asian Development Bank (ADB) জাপানীদের যতোটা সমৃদ্ধ করেছে, অন্য কাউকে অতোটা করেনি । আবার মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আরব দেশগুলোই Islamic Development Bank (IDB) কে সবচেয়ে ভালোমতো ব্যবহার করতে পেরেছে- যেটা অনারব দেশগুলো পারেনি । এবার New Development Bank (NDB) নিশ্চয়ই Brazil, Russia, India, China, South Africa (BRICS) রাষ্ট্রগুলোর সেরকম কোন মাস্টারপ্ল্যানে তৈরি হয়েছে । অতএব বাংলাদেশের মতো তলানীর দেশ যখন এতোটা বড়সড় সিদ্ধান্ত নিতে যাবে তখন অনেক ক্যালকুলেশন করতে হয় ।
আমাদের দেশীয় পত্রিকাগুলোতে অর্থনীতিবিদগণ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নিয়ে এমনভাবে মন্তব্য করছেন যেনো এটা এক বেহেশতি মেওয়া, পেটে পড়লেই নরকের স্মৃতি সব ভুলে যাবো আমরা । দুইমাস আগে যখন চীনা রাষ্ট্রদূত এনডিবিতে যোগদানের বিষয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন অর্থমন্ত্রী কোন পাত্তাই দেননি । কয়েকদিন আগে ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরণের সাথে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী হঠাৎ ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ এনডিবিতে যোগ দেবে । পত্রিকার অর্থনীতি পাতায় শুরু হয়ে গেলো এনডিবি বন্দনা । কেউ স্বীকার করলোনা যে বাঘে-মোষে-কুমিরে কোথাও লড়াই বা সন্ধি যেটাই হোক, বিড়ালের অস্তিত্ব কিন্তু সর্বদাই হুমকির মুখে থাকে ।
বাংলাদেশকে এখনো প্রতি বছর বাজেট করতে হয় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে । কিন্তু ঋণ বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেবার কোন ক্ষমতা নাই । আন্তর্জাতিক ব্যাংকে যে দেশের শেয়ার যতো বেশি থাকবে সেই দেশ ততো গুরুত্বপূর্ণ । তাদের সিদ্ধান্তই শিরোধার্য । ১৮৮ সদস্যের বিশ্বব্যাংকে আমাদের শেয়ার হলো ০.০২২%, এশিয়াতে ৬৭ সদস্যের এডিবিতে ১%, মুসলিম বিশ্বে ৫৬ সদস্যের আইডিবিতে ১.০১% শেয়ারহোল্ডার হলো বাংলাদেশ । এখন নতুন করে যদি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭৬৭৫ কোটি টাকা) দিয়ে এনডিবির ১% শেয়ারও কেনা হয়, রাশিয়া, ইনডিয়া বা চায়না আমাদেরকে কতটুকু মূল্যায়ন করবে তার কোনো প্রতিবেদন নাগরিকদের হাতে নেই । এটা ভালো হবে নাকি আগের কোন ব্যাংকের শেয়ার বাড়ানো ভালো হবে তা নিয়েও অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য নেই । দেশে কেমন সরকার বিদ্যমান থাকবে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে হয়তো আমরা এমন একটা ট্র্যাপে পড়ে যাবো, যেটা থেকে আগামী পঞ্চাশ বছরেও বাংলাদেশ বের হতে পারবেনা ।
এ পর্যন্ত ADB, IDB, WB, IMF আমাদের সাথে কেমন আচরণ করেছে বা আমরা তাদের প্রতি কতটুকু বিশ্বস্ত ছিলাম, সেটাও রহস্যাবৃত । আমরা তাদের কাছ থেকে কতটুুকুু সুবিধা আদায় করতে পেরেছি তাও ভালো অনুসন্ধানের প্রয়োজন । নতুন একটি ব্যাংকের শেয়ার কেনা হলে পূর্বের ঋণসম্পর্কে সেটা কেমন প্রভাব ফেলবে এটিও স্পষ্ট নয় । আর অর্থনীতির বিষয় মোটেও বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয় । এর সাথে আগামী তিন-চার দশকের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সামরিক চুক্তি, বাণিজ্যনীতি ইত্যাদি জড়িত । তারপরেও বিরোধী দলগুলো সরকারকে এ বিষয়ে কোন পরামর্শ বা প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা যায়নি । জার্মান ভাষায় একটা প্রবাদ আছে, আশা মরে সবার শেষে (“hope dies last”) । আমাদের অর্থনীতির এই উচ্চাশা কতোদিন বাঁচে দেখা যাক । অবশেষে, আমি নিজে যেহেতু অর্থনীতির কিছুই জানিনা, তাই চুপ হয়ে থাকার সিদ্ধান্তই নিলাম ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৬ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই পোস্টটি স্টিকি করা হবে । অপেক্ষা করুন ।
লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৩৯ রাত
পড়া শুরু করলাম এক শিরোনামে,
আর শেষ করে মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি অন্য শিরোনাম
যাহোক, যতটুকু বলছেন তা বুঝেছি বটে,
কিন্তু এ বিষয়ে আমারও তেমন জ্ঞান নেই!
আমার মনে হয়-
BRICS-এ যোগ দেয়ার ঘোষণার পিছে মোদী-সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং চীন-রাশিয়ার চাপ যুগপত কাজ করে থাকতে পারে, তবে এটার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে ইঙ্গ-মার্কিন প্রতিক্রিয়ার উপর!
এসব নিয়ে আপনার কোন চিন্তা বা কোন তথ্য জানা থাকলে আশা করি আমাদের সাথে শেয়ার করবেন।
বিজয় ইউনিজয় ফোনেটিক ইংরেজি
....,.........................
এর পোষ্ট ৪ সেপ্টেম্বরে এসে স্টিকি হল...!!
সম্পাদক মনে হয় ঘুম ছেড়ে দিয়েছে! ব্লগার কথার খইয়ের কথার তেজে.....।
ধন্যবাদ ভাল লিখেছেন।
লন মিষ্টি খান যত ইচ্ছে...
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9615/nor15/50872#.VAkrYMuoVAg
আপনি কষ্ট করে লিখেছেন,একটা ধন্যবাদ দেওয়া যায় অবশ্য।
দুইমাস আগে যখন চীনা রাষ্ট্রদূত এনডিবিতে যোগদানের বিষয়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তখন অর্থমন্ত্রী কোন পাত্তাই দেননি । কয়েকদিন আগে ভারতীয় হাইকমিশনার পংকজ শরণের সাথে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী হঠাৎ ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশ এনডিবিতে যোগ দেবে । পত্রিকার অর্থনীতি পাতায় শুরু হয়ে গেলো এনডিবি বন্দনা । কেউ স্বীকার করলোনা যে বাঘে-মোষে-কুমিরে কোথাও লড়াই বা সন্ধি যেটাই হোক, বিড়ালের অস্তিত্ব কিন্তু সর্বদাই হুমকির মুখে থাকে।
তো আমাদের অর্থমন্ত্রী অট্টহাসির গালভরে ভট্ট হাসি দিয়ে, বলে দেন নি তো বোগাস! ননসেন্স! তাঁর মত এক বিশাল পেটধারী জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তি জাতির জন্য বড়র গর্ভের! অহঙ্কারের! অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন