'রাজাকার' একটি শব্দের নাম
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৩৯:৪৭ সন্ধ্যা
আমরা বাংলাদেশী লিবারেল-ডেমোক্রেটিক-ননসেক্যুলার-এন্টিনিওকন-এন্টিএক্সিসটেনশিয়ালিস্ট ইসলামপন্থীরা "রাজাকার" ট্যাগ নিয়ে প্রায় অর্ধশতক পার করে দিলাম । মুখে যতোই হাসি থাকুক, কেউ যখন এই শব্দটা দিয়ে ডাক দেয়, কিছুটা হলেও খোঁচা অনুভব করি । এটা যতই নিরীহ স্বেচ্ছাসেবক মিন করুক না কেনো, বিশেষ গালিবাচক তাৎপর্য শব্দটিকে এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে । আপনি একটা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ধনীর দুলালী পর্যন্ত সবাইকে এই একটা শব্দ দিয়ে পুরো একটা সাইকোলজি ডিফাইন করে দিতে পারবেন । "রাজাকার" শব্দে আপনাকে আখ্যায়িত করামাত্রই আপনি ডিফেন্সীভ পজিশনে চলে যেতে ইমোশনালী বাধ্য হবেন । এক্ষেত্রে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বা সেনাকর্মকর্তা অথবা সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে কওমী মাদ্রাসার এতিম ছাত্র পর্যন্ত সবাই একটা শব্দের কাছে অসহায় । সম্ভবত এটাকেই বলা হয় ভাষার শক্তি ।
আমরা দীর্ঘদিন অনলাইনে নাস্তিকদের সমালোচনা করেছি, শাহবাগী গণজাগরন মঞ্চের সমালোচনা করেছি । অত্যাচারী জালিমদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বের এক নম্বর স্বৈরশাসক রুপে বিশ্বদরবারে চিণ্হিত করেছি । রাস্তায় মিছিল করেছি, পুলিশের টিয়ারসেল কুড়িয়ে উল্টো নিক্ষেপ করেছি । কিন্তু যখনই ড্রয়িংরুমে আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা জিজ্ঞেস করে ওরা কারা, আমরা বলি ওরা সুশীল সমাজ, প্রগতিবাদী, নারীবাদী, ধর্ম নিরপেক্ষ, আধুনিকা, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী প্রজন্ম ইত্যাদি । শব্দগুলো লক্ষ্য করুন । এগুলো বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সুন্দর কিছু শব্দ । আপনি যতই গালি বোঝাতে চেষ্টা করেন, এসব শব্দ দিয়ে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবেনা । তখন আপনাকে বিশাল ব্যাখ্যা দিতে হয় । সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর এবং তারপরের ইতিহাস বুঝিয়ে আপনার ভাই-বোনের কাছে প্রমাণ করতে হয়- ওরা আমাদের লোক নয় ।
এক্ষেত্রে তুরস্কের একটি উদাহরণ আমার কাছে ভালো লেগেছে । ওখানে "এরগেনেকন" শব্দটি জুড়ে দিয়ে আপনি যেকোন সেনা কর্মকর্তা বা বিজনেস ম্যাগনেট কে সহজেই ফাসিয়ে দিতে পারবেন । যদিও এটি একটি প্রতিষ্ঠানের নাম, কিন্তু এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে চিণ্হিত হয়ে যাবে যে আলোচ্য ব্যাক্তি একজন দেশদ্রোহী, ধর্মবিদ্বেষী বা ভিনদেশের গুপ্তচর । আমাদের দেশে যে ছেলেটি ধর্ষনের সাথে জড়িত, যে মেয়েটি 'পাখি জামা' না পেয়ে সুইসাইড করলো, যে ব্রিগেডিয়ার রানা প্লাজায় রেশমা নাটক সাজালো, যে সম্পাদক পর্ণোতারকাদেরকে মডেলিং করিয়ে অশ্লীলতা উসকে দিলো, যে মন্ত্রী দুর্নীতি-খুনের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত, তারা সবাই একই ক্যাটাগরির লোক হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখন পর্যন্ত তাদের পরিচয় নির্দেশক একটা সঠিক শব্দচয়ন করতে পারলাম না । তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে হয়তো আমরা ধর্মীয় টার্ম (জালিম, নাস্তিক, কুফফার) ব্যবহার করি, অথবা 'আওয়ামী লীগ' বলেই থেমে যাই, নয়তো আমরা বলতে বাধ্য হই, ওরা নারী স্বাধীনতার পক্ষে, ওরা প্রাচীন বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে । এভাবে আর যাই হোক, সঠিক বিরোধিতা হয় না । ওরাও তখন ডিফেন্সীভ পজিশনে যেতে বাধ্য হয়না । সেদিক থেকে আমার মনে হয়, অনলাইনে এখনো মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি ।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৩৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একশব্দে ব্যবহার করুন – ‘দালাল’
মন্তব্য করতে লগইন করুন