রমাদান চলে গেলো- শিক্ষাগ্রহণ কি হলো ! (অরাজনৈতিক নাবালকদের জন্য নয়)

লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৮ জুলাই, ২০১৪, ১২:০১:২৪ দুপুর

চার আঙ্গুলের রাবেয়া স্কয়ার কি স্মরণে আছে ? হুমম, মুসলিম ব্রাদারহুডের সেই বিশাআআল বিপ্লবের কথাই বলছি ! ক্ষমতায় আসার পর পরই মুহাম্মদ মুরসী যেভাবে শরীয়ত তরীকত হাকীকত মারেফত সব উল্টে পাল্টে মিশরে ইমাম মাহদীর শাসন নিয়ে আসতে শুরু করেছিলেন, তখন অনেকেই তাকে মহামানবের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন । তারপর যখন মুরসী ক্ষমতাচ্যুত হলেন এবং সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে ব্রাদারহুড নেতারা রাবেয়া স্কয়ারে দাঁড়িয়ে হম্বিতম্বি করছিলেন, তখনও অনেক জ্ঞানীলোকের বাণী দেখেছি ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক কৌশলের সাফাই গেয়ে । তখনো রমাদান ছিলো । তখনো উম্মাহ শাহাদাতের ফিলোসফি দেখাতো । কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা । ব্রাদারহুডের চার আঙ্গুল রক্ষা করতে গিয়ে দশ আঙ্গুলই কাটা পড়লো ।

এখন গাজায় যে গণহত্যা হচ্ছে, তার জন্য নেতানিয়াহুকে দোষ দেয়া সহজ, সিসির মা-কে দোষ দেয়া সহজ, কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডকে কেউ কি দোষ দেয় ? মুহাম্মদ মুরসীকে কেউ কি দোষ দেয় ? দেয় না কেনো ? তারিক রমাদান এ নিয়ে কোন কলাম লেখেন নি বলে ? আলজাজিরা ব্রাদারহুডকে দায়ী করে কোন এমপায়ার দেখায়নি এ জন্যে ? সম্ভবত তাই হবে ! ফেসবুকে ইসলামী রাজনীতি শেখার চেইনটা খুব ইনতেরেসানতে ! এখানে প্রবাসী একজন হয়তো ডকুমেন্টারী দেখে বা অনলাইন আর্টিক্যাল পড়ে একটা অনুবাদ পোস্ট করলো স্ট্যাটাস হিসেবে, আমরা দেশীয় ইসলামিস্ট বাহিনী কনটিনিউ রিডিং করে করে ব্যাপক জ্ঞানী হয়ে যাই । নিজেদের মাথায় যে কোন প্রোডাকটিভিটি হলো না, সেটা বোঝার আগেই রাজনীতি বিশ্লেষক হিসেবে সামাজিক প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাই । ঠিক এই কারণেই মুসলিম ব্রাদারহুড নিজেদের মাঠে গোল খেয়ে ডুবেছে । তাদেরও হয়তো রাজনীতি বিশ্লেষকের অভাব ছিলোনা । অভাব ছিলো রাজনৈতিক কৌশল ও দূরদর্শীতার ।

এখন হামাস পড়েছে চরম বিপদে । ব্রাদারহুডের পরাজয়ে তাদের পায়ের মাটি সরে গিয়েছে । তাদের বিপদ যেনো আঁচ করতে না হয়, তাদের বিপদের কথা স্মরণ করে যেনো আমাদের ঈদটা মাটি না হয়, সেজন্যে আমরা দ্রুততম বুদ্ধি বের করে ফেলেছি । আমরা অনলাইন উজবুকের দল প্রচার করা শুরু করেছি- "ঠিক এভাবেই জিতে গেলো হামাস" অথবা "দেখুন কোথায় পালালো আইডিএফ" ইত্যাদি রসালো বক্তব্য । হামাসের কিন্তু ঈদ নেই । গাজা অবরোধেরও কোন সুরাহা হয়নি । অথচ আমরা বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত । যেই কাজটা গত রমজানে ব্রাদারহুডের পরাজয় নিয়ে আমরা করেছিলাম । মুসলিম ব্রাদারহুডের পরাজয়কে ওভারলুক করার জন্য আমরা বেহেশতি হুরের কল্পনা দিয়ে বাস্তবতা এড়িয়েছিলাম । এভাবে মধ্যপন্থী ইসলামী দলগুলো ভুলের মাশুল দিতেই থাকে । পরিবর্তন আর হয়না ।

আজ দেখলাম সিরিয়াতে বাশার বাহিনী যে ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে সিরিয়ার মুসলিমদেরকে হত্যা করছে, সেগুলো মিশর কর্তৃক সরবরাহ করা হয়েছে । কি করবেন এবার ? সিসিকে বেজন্মা বলে গালি দেবেন ? সৌদী রাজপুত্রকে মুনাফিক বলে মজা নেবেন ? কোনই লাভ হবেনা । বরং এখনো নিজেদের দিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় শেষ হয়ে যায়নি । আরব বসন্তকে আবার প্রথম থেকে বিশ্লেষণ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের উচিত হবে নিজেদের প্রতিটি ভুল স্বীকারোক্তি সহ মুসলিম উম্মাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা । আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাছে মেসির দল ক্ষমা চেয়েছে কেনো ? মালয়েশিয়ান বিমানের যাত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক কেনো ক্ষমা চেয়েছেন ? ঠিক একই কারণে মুসলিম ব্রাদারহুড মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত ব্যর্থ করার জন্য দায়ী । গাজা-সিরিয়া থেকে আইসিসের উত্থান পর্যন্ত সবগুলো ঘটনার জন্য মুসলিম ব্রাদারহুডকে অবশ্যই দায় নিতে হবে । আপনি যদি দায়িত্ব স্বীকারই না করেন, দায়িত্ব পালন করা শিখবেন কিভাবে ! আর আমাদের উপমহাদেশ থেকে যারা ব্রাদারহুডের গর্ত গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন, যে যে গর্তে ব্রাদারহুড হোচট খেয়েছে সেগুলোতে তারাও হোচট খাবেন বলে মনস্থির করে রাখেন, তাদের জন্য শিক্ষাগ্রহণের এখনি সময় । রমাদানে যে রক্ত ঝরেছে, তা বৃথা যাবেনা যদি ঈদের পর অতীত ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয় । আর রাজনৈতিক সফলতা ছাড়া কোন ঈদ, ঈদ নয় ।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১১৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File