রমজান মাসে তারাবীহ সংক্রান্ত একটি মতামতঃ
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৭ জুলাই, ২০১৪, ১২:৫৫:১৯ দুপুর
খতমে তারাবীহ অনেকের কাছেই হয়তো পছন্দের একটি পদ্ধতি, কিন্তু আমার কাছে এই পদ্ধতিতে তারাবীহ পড়া তেমন একটা ভালো লাগেনা । কারণ এটি অতিমাত্রায় নিয়মানুবর্তিতা রক্ষায় বাধ্য করে । আমাদের যুগে মানুষের ব্যস্ততা থাকে বেশি । সারাদিন সিয়াম পালনের পর আবার দেড় ঘন্টা ধরে তারাবীহ পড়া বেশ কষ্টকর । এছাড়া এমন সালাতে কুরআনের প্রকৃত সুষমা খুব একটা বোঝা যায় বলেও মনে হয়না । ধীরে সুস্থে সালাত আদায়ের মজা এখানে আমি পাইনা । ফরজ নামাযের ক্ষেত্রে তাও কঠোর টাইমফ্রেম মেনে আদায় করা যায়, কারণ এটি অতো দীর্ঘসময় লাগে না । কিন্তু খতমে তারাবীহ আদায় করতে গেলে প্রতিদিন প্রতি রাকায়াত জামায়াতে আদায় করার একটা বাধ্যবাধকতা চলে আসে, যে কারণে আমাদের বয়সী অনেকেই খতমে তারাবীর বিড়ম্বনার কথা স্মরণ করে তারাবীহ পড়া-ই বাদ দিয়ে দেয় । এমনকি আমি নিজেও জীবনে বহু তারাবীহ বাদ দিয়েছি খতমে তারাবীহ এর ভয়ে । আর এখনকার যুগে মসজিদ গুলোতে যেনো খতমে তারাবীহ পড়ানো উম্মাহর উপর ওয়াজিব করে নেয়া হয়েছে । বিশেষ করে ঢাকায় এমন মসজিদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে সাধারণ তারাবীহ পড়ানো হয় ।
তবে খতমে তারাবীহ এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি আমাদেরকে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম ২৭ রমাদান কে লাইলাতুল কদর বলে মনে করার প্রধান কারণ হলো- মসজিদে খতমে তারাবীহ শেষ হয় এই দিনে । এভাবে ২১,২৩,২৫,২৯ তারিখের রজনীকে উপেক্ষা করে যায় । এমনো হতে পারে- খতমে তারাবীহকে আমাদের ট্রেন্ড বানিয়ে নেবার কারণে আমরা জীবনের অনেক লাইলাতুল কদরকেও মিস করে যাচ্ছি । এছাড়া ২৭ রমজানের পর থেকে (২৮ রমজান থেকে ৩০ রমজান) তারাবীহ সালাতে মুসল্লী হ্রাস পাবারও এটা প্রধান কারণ । অন্ধভাবে অর্থ না বুঝে কুরআন খতমের ঐতিহ্য সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে খতমে তারাবীহ এর স্পিরিটকে কেন্দ্র করে । আমি যতটুকু জানি, রাসূল (সঃ) এর যুগেও এভাবে খতমে তারাবীহ পড়তে সাধারণ মানুষ বাধ্য ছিলোনা । অপরদিকে সহজ এবং ছোট সূরা গুলো দিয়ে স্পষ্ট ক্বিরাতে যদি তারাবীহ পড়া হয়, তখন মানুষের ভেতর কুরআনের আবেদনটি আরো পরিষ্কার হতে পারে, অনেক মানুষ তাদের ক্বিরাতের ভুলগুলো সংশোধন করে নেবার একটা সুযোগ পায় ।
যদি এমন একটি বিধান করা যেতো- কোন নির্দিষ্ট এলাকায় বেশ কয়েকটি মসজিদের মধ্যে কমপক্ষে একটি মসজিদ থাকতেই হবে যেখানে স্বল্প আয়াসে সাধারণ তারাবীহ পড়ানো হবে, হয়তো রমাদান মাসে আমার মতো আমজনতা কিছুটা স্বস্তি পেতো । সওয়াবের দৌড় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে । সম্ভবত চাপিয়ে দেয়া ধর্মের প্রভাবেই সৌদি আরবের মতো ইসলামী সভ্যতার ধারক দেশগুলো বাস্তবমুখী আচরণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে । আমাদের সমাজে সকল মানুষের কাছে পূর্ণাঙ্গরুপে ইসলামকে পৌঁছাতে হলে প্রতিটি বিষয় বাস্তবতার নিরীখে ভেবে দেখা দরকার বলেই মনে করি ।
বি. দ্রঃ এটি একান্তই আমার ব্যাক্তিগত মতামত । মাসয়ালা-ফতোয়া আমি অতো ভালো জানি না । শুধু মসজিদে মসজিদে বাধ্যতামূলক খতমে তারাবীহ প্রসঙ্গে আমার একটি চিন্তা তুলে ধরলাম । আপনি হয়তো প্রথম দিকের বেহেশতে যাবার জন্য নিয়মিত খতমে তারাবীহ পড়ার পক্ষপাতী, কিন্তু আমার মতো সাধারণ পর্যায়ের দূর্বল মুসলিমও পৃথিবীতে আছে- এটা অস্বীকার করার উপায় নেই ।
বিষয়: বিবিধ
১৩০০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিছুটা দ্বিমত; কারণ যদি সেই দিন আসলেই লাইলাতুল ক্বদর পড়ে তথাপি আপনি বা আমি কিন্তু রাতের প্রথম অংশ অতিবাহীত করছি সলাতে, যা রাসূল (সাঃ)-এর আমল। তিনিও কিন্তু ক্বদর তালাশে মসজিদে এসে প্রথমে তারাবীহ আদায় করেছিলেন।
তারাবীহতে তাড়াতাড়ি করার কারণ কিন্তু আমরা নিজেরাই সৃষ্টি করি। বর্তমানে এত কম সময় লাগার পরও অনেককেই দেখা যায় প্রথম রাকাআতে ইমাম রুকুতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বসে থাকেন তারপর তাড়াহুরা করে জামাআতে শরীক হন। এখন যদি ধীরগতিতে কিরআত পড়া হয় তাহলে অনেকে তারাবিহতে যোগ দিতেই ভয় পাবেন। আরেকটা বিষয় থাকে অনেক সুতরাং অর্থ বিকৃতির সম্ভবনা না থাকে ও মুক্তাকিগনের মধ্যে যারা কুরআন জানেন তারা বুঝতে পারেন এতটুকু দ্রুত পড়ায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আর যাদের মধ্যে আসলেই ইবাদতের স্পৃহা আছে তারা ইচ্ছা করলেই নিজেদের মধ্যে দুইজন হাফিজ তালাশ করে পৃথক জামাআত করতে পারেন এবং ধীরস্থীরের সাথে তারাবীহ আদায়ের ইন্তিজাম করতে পারেন, যেমনটি আমাদের এখানে আমরা করে থাকি।
সর্বপোরি, আলেমদের মতে তারাবীহতে কুরআন খতম করা খুব জরুরী নয় বরং মুস্তাহাব, বড়জোড় সুন্নাতে যাঈদা। তাই ঘরে বসে একাকীও তারাবীহ পড়া যেতে পারে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন