কিছু রাজনৈতিক উপলব্ধি শেয়ার করলাম । কিন্ডার গার্টেন লেভেল পাঠকদের না দেখাই ভালো !
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ৩১ মে, ২০১৪, ১২:৫০:১৫ দুপুর
রাজনীতির একটি সাধারণ নিয়ম হলো যতোটা সম্ভব অনর্থক দ্বন্দ্ব থেকে দূরত্বে অবস্থান করা । আবার রাজনীতির প্রয়োজনেই অনেক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব তৈরি করে চমক দিতে হয় । যখন আপনার প্রতিপক্ষ নিজেরা নিজেরা কোন বিষয়ে দ্বন্দ্বে জড়াবে তখন তাদের কাউকে সমর্থন যেহেতু করতে পারবেন না- আড়ালে থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ । কাউকে তিরস্কারের দরকার নেই, কাঁধে তুলে নাচারও দরকার নেই । যেমন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে নিহত নেতাকর্মীর জন্য আওয়ামী-বিরোধী কেউ শোক প্রকাশ করবে এটা আমি সমর্থন করি না । লোটাস কামাল- মাল মুহিতের দ্বন্দ্বে কাউকে সমর্থন করাও আমার মতে ঠিক নয় । গো মা রনির আচমকা হক মাওলার দৌড়ে তাকে দরবেশ ভাবার নীতিও ভুল । শত্রুজ্ঞান করার পরে আবার আওয়ামী লীগকে বন্ধু হিসেবে সমাদর করার হেফাজতী নীতিরও আমি বিরোধী । এই ধরণের রাজনীতি ঊনবিংশ শতকে প্রচলিত ছিলো । ল্যাটিন আমেরিকার একজন রাজনীতিক নাকি তার শত্রুর মৃত্যুর পরে অঝোরে কেঁদেছিলেন কফিনের পাশে । এখন একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতি হচ্ছে হেড অর টেল রাজনীতি । কোন আবেগ-আবেদন দিয়ে এই যুগের মিউচুয়েলী এক্সক্লুসিভ কূটনীতি চলে না । আপনি যদি মানবিকতা নামক সস্তা আবেগের আনাড়ী রাজনীতিক হয়ে থাকেন তবে মোদী-নেতানিয়াহু-পুতিন-জিনপিং যুগে আপনি অবশ্যই বেমানান । সেক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে ফেসবুকে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট স্ট্যাটাস না দিয়ে বিশ্বকাপ খেলা অথবা পাউডার-লিপস্টিক সংক্রান্ত স্ট্যাটাস দেয়া । কারণ যে দলের পক্ষে আপনি শিশুসুলভ রাজনৈতিক পাকামো দেখাতে চাইবেন, সেই দলের ভাবমূর্তি উল্টো হুমকির মুখে পড়বে । ফেসবুকে যারা নিয়মিত রাজনীতি বিষয়ক লেখালেখির সাথে জড়িত তারা সহজেই বুঝবেন বিষয়টা ।
যাইহোক, পত্রিকায় দেখেছিলাম মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটি কলামে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের মৃদু সমালোচনা করেছেন গত পরশুদিন । তিনি আগের বিভিন্ন লেখায় প্রশ্ন ফাঁসের যে অভিযোগ করেছিলেন তা নাকি মন্ত্রী মহোদয় স্রেফ এড়িয়ে গেছেন । এই কারণে জাফর ইকবাল সাহেব কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে শহীদ মিনারে প্ল্যাকার্ড হাতে কিছুক্ষণ বসে ছিলেন গতকাল । বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি, কারণ বিকেলে তার একটা পুরস্কার নেবার কথা ছিলো কোন এক অডিটরিয়ামে । নিয়েছেন পুরস্কার তাও শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে । সেই সাথে তিনি বৃষ্টি কামনা করেছিলেন যেনো শহীদ মিনারে বসে থাকার সময়টা তিনি উপভোগ করতে পারেন । ফেসবুকে অনেক মেধাবী লেখক আছে যারা জাফর ইকবাল সাহেবের কলাম পেলে সেটার অনুচ্ছেদ-পরিচ্ছেদ ব্যবচ্ছেদ করে ঘন্টাখানেকের মধ্যে মোটামুটি হাজার খানেক লাইক কামিয়ে নিতে পারে । আমি তাদের প্রতি কোন অভিযোগ করতে যাচ্ছি না । জাফর ইকবালের কথাবার্তায় বা কাজেকর্মে তার বিপক্ষে তুলে ধরার মতো অনেক উপাত্ত থাকে সত্য । তাকে একজন সৎ বুদ্ধিজীবিও মনে করিনা আমি । কিন্তু দেশে যে হারে প্রশ্ন ফাঁসের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে, তা যদি এখনি লাগাম টেনে ধরা না হয়, তবে বাংলাদেশের অন্তত দশটি প্রজন্ম এই স্রোতে হারিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশকে অন্তত বিশ বছর পেছনে নিয়ে যাবে । সরকার বিরোধী মহলের যেই ঘরকুনো এবং দলকানা স্বভাব আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি তাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন একটা দুর্যোগ নিয়ে তাদের কিছু করণীয় যেমন অসম্ভব তেমনই কোন মাথাব্যথাও দেখা যাচ্ছেনা । বুদ্ধিজীবি মহলেও এ নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য নেই । বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই হয়তো জাফর ইকবালের মতো কিছু মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকছে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য । জাফর ইকবালদের কথায় আর কিছু হোক বা না হোক, অন্তত মন্ত্রী মহোদয় জবাব দিতে বাধ্য থাকেন এটা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি । অতএব প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে দেশের মেরুদন্ড সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়ার যে প্রকাশ্য প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশে আর কারো ক্ষমতা নেই আপাতত এই প্রচেষ্টাকে রুখে দেয়ার । যদি কেউ পারেন তবে জাফর ইকবাল সাহেবরাই পারবেন । অনেকে হয়তো বলবেন জাফর ইকবাল নিজেও এই ক্ষেত্রে জড়িত হতে পারেন । হয়তো কিছুটা জনপ্রিয়তা পূনর্দখলের আশায় তিনি এই নাটকে নিজেকে অভিনয় করাচ্ছেন । আমি বলবো- আপাতত জাতির সামনে আর কোন পথ খোলা নেই । দ্রুততম সময়ে এই ধরণের প্রশ্ন ফাঁসের ট্র্যাডিশন রুখতে হলে আমাদেরকে জাফর ইকবালের সমালোচনা কয়েকদিনের জন্য হলেও বন্ধ রাখতে হবে । আপনার মাথায় যদি কর্ণেল অলির মতো টাকলা বুদ্ধি থাকে, তাহলেই কেবল আপনি বলতে পারবেন- দুই এক মাসের মধ্যে আওয়ামী সরকার বিদায় হবে আর তখন সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । অথচ একটু ঠান্ডা মাথায় যদি চিন্তা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মুরোদ এই মুহূর্তে আল্লাহ ছাড়া কারো নেই । অতএব তাদের আমলে যদি এই ধরণের ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হয়, আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবিদেরকে ব্যবহার করেই সেটা করতে হবে । আপনার ঘরে ডাকাতি হলে এখনো আপনি আওয়ামী প্রশাসনের শরণাপন্ন হোন কেন ? আপনার সন্তানকে কেউ আঘাত করলে আওয়ামী পুলিশের কাছে মামলা করতে যান কেনো ? একই কারণে আপনার সন্তানতুল্য দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই দুর্যোগে জাফর ইকবালদের কাছে হলেও যেতে হবে বলে আমি মনে করি । এ জন্যেই জাফর ইকবাল বনাম নুরুল ইসলাম নাহিদের দ্বন্দ্বে আপাতত জাফর ইকবালের প্রতি মৌন সমর্থন দেয়ার নীতি বাধ্য হয়েই গ্রহণ করতে হবে । তবু যদি প্রশ্ন ফাঁসের কবল থেকে জাতি রক্ষা পায় । কারণ- আপনি কারাবন্দী মাহমুদুর রহমানের স্মৃতিচারণ করে শোক-নিন্দা করতে করতে এদিকে দেশের তরুণ প্রজন্ম সব আগামী দিনের ইনু-মখা হয়ে যাবে প্রশ্ন পেয়ে পেয়ে । তাই কৌশলগত দিক থেকে নিছক ব্যাক্তি জাফর ইকবালের সমালোচনার অভ্যাসে তার বর্তমান অবস্থানটাকে খাটো করে দেয়া ঠিক হবেনা । যারা এইবার দেশের স্বার্থে জাফর ইকবালের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানকে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছেন, তারা জেনে রাখুন- বেগম খালেদা জিয়ার একশোবার মাজার জিয়ারত বা উদ্যান সভার নামে আউটিং এর চাইতে মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই সাধারণ কাজটি দেশের জন্য-জাতির জন্য একটি ভালো কাজ ।
জানিনা ব্লগের বা ফেসবুকের প্রতিষ্ঠিত/পরিচিতমুখ লোকজনের সাথে অধিকাংশ রাজনৈতিক প্রসঙ্গেই কেনো আমার মতপার্থক্য হয় । সম্ভবত রাজনীতি বিদ্যার দৌড় এখনো অনেক সীমিত রয়ে গিয়েছে । আমি শুধু শিখে যাচ্ছি । বয়স তো আর থেমে নেই । কবে যে শিক্ষার প্রয়োগ হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই । তবু শিখতে ভালো লাগে রাজনীতি । পোস্টে লাইক-কমেন্টের বন্যা দেখার জন্য যদিও অনেক মজাদার টপিকের প্রলোভন মাথায় ঘুরে, কিন্তু রাজনীতি ছাড়া আর কোন দিকে মনোনিবেশ করে আত্মার প্রশান্তি পাইনা । যখন ফুটবল-ক্রিকেট নিয়ে বাকযুদ্ধ দেখি তখনো মনে হয় রাজনীতির জন্যই পিছিয়ে আছি, যখন ফতোয়া-ফিতনা তর্কাতর্কি দেখি তখনো মনে হয় রাজনীতি ঠিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, পারিবারিক-সামাজিক-রোমান্টিক-প্যাথেটিক সকল সমস্যা-সমাধান-সম্ভাবনা দেখেও না দেখার ভান করি শুধুই রাজনীতির প্রতি গভীর আকর্ষণ থেকে । হযরত ওসমান (রাঃ) এর একটি উক্তি মনে পড়ে গেলো । তিনি বলতেন, কুরআনের চেয়ে বড় একটি বিষয় আছে পৃথিবীতে- তা হলো ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা । রাজনীতির পক্ষে এর চেয়ে বড় কথা আর আমার জানা নেই । বরাবরের মতোই একটি রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আজকে কিছু লিখব ঠিক করেছি । জিয়ার মৃত্যুদিবসকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে যে হারে জাতিয়তাবাদ উথলে উঠতেসে তাতে বিরোধী জোটের সমালোচনা করা খুব আতংকের ব্যাপার হয়ে দেখা দিয়েছে । তবুও সময়ের কিছু উপলব্ধি সময় চলে যাবার আগেই বলতে হয় ।
আওয়ামী লীগ সরকারের একতরফা নির্বাচনের পরে জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত আমরা দেখলাম বিরোধী দলগুলো সাত বছর আগেকার উদ্ভট হুমকি-ধামকি আর ফাঁকা বুলি ছাড়া দেশকে আর কিছুই উপহার দিতে পারলোনা । এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনগুলোতেও দেশের মানুষ কিছুটা আশা নিয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলো যে নির্বাচনে বিজয়ী হলে বিরোধী নেতানেত্রীগণ তাদের প্রতিশ্রুত ভেলকিবাজি দেখিয়ে আওয়ামী সরকারকে বিদায় করে দেবেন । কিন্তু তারপর দেখা গেলো ভিন্ন খেলা । বিএনপি সতর্ক করতে শুরু করলো জামায়াতকে, আওয়ামী লীগ সতর্ক করতে লাগলো বিএনপিকে, এরশাদ বন্ধু বানাতে গেলো হেফাজতকে, হেফাজত বন্ধু বানাতে লাগলো আওয়ামী লীগকে, ইত্যাদি নানান ভেলকিবাজি । টেলিভিশন টকশো গুলোতে কিছু আঁতা খা-হিরণবালা হাবিজাবি কথা দিয়ে মানুষের মনোরঞ্জন করে গেলো এ পর্যন্ত । কেউ যদি ইউটিউব থেকে গত ৫ মাসের টকশো গুলোতে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবির উদ্ভট ভবিষ্যৎবাণী অথবা বিরোধী নেতাদের দ্বারা আওয়ামী সরকার পতনের ঘন্টাধ্বনি এখন শুনতে যান, হাসতে হাসতে কথা হারিয়ে ফেলতে পারেন । এভাবেই আমাদের চোখের সামনে আওয়ামী সরকারকে দেশের বুকে স্থায়ী আসন দিয়ে দেয়া হলো । শেখ হাসিনা যখন জাপান থেকে বাজেটের অনুদান নিয়ে সহাস্য বদনে দেশে ফেরেন এবং শিরীন শারমিন যখন মোদীর দাওয়াত খেয়ে উল্টো দাওয়াত করে আসেন, তখন বুঝতে অসুবিধা হয়না বিএনপি নেতানেত্রীদের অবাস্তব মসনদী কল্পনা আর কেউ আমলে নিচ্ছেনা । শুধু ফেসবুকের জাতিয়তাবাদী যোদ্ধাফোর্স বাদে পৃথিবীর সকল কূটনৈতিক শক্তি বিশ্বাস করে নিয়েছে আওয়ামী লীগকে সরানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের আর কোন রাজনৈতিক দলের নেই । চীন থেকে আসতেছে রোমিও ক্লাস সাবমেরিন, রাশিয়া থেকে আসতেছে ট্যাংকের বহর । কে সরাবে এই সরকারকে !
এরমধ্যে বিরোধী দল নতুন কিছু অবস্থান নিলো যা পুরোপুরি আনাড়ি রাজনীতির পরিচায়ক বলে মনে হয়েছে । আওয়ামী লীগের নিজস্ব লোকজন র্যাবের গুলিতে কেনো নিহত হয় তার জন্য র্যাব বিলুপ্ত করতে হবে । আওয়ামী লীগের কাছে কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিলুপ্ত করার আবেদন জানানো যায় সেটাই আমার মাথায় আসেনা । তাহলে আর সরকারকে অবৈধ বলার মানে কি ! যে অপরাধে র্যাব বিলুপ্তির প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি অভিযোগ ছিলো সাতক্ষীরা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ এবং বিজিবির বিরুদ্ধে । এভাবে বাহিনী বিলুপ্ত করার ট্র্যাডিশন শুরু হলে আখেরে লাভ কাদের হবে ! উপজেলা নির্বাচনে প্রথম কয়েকটি ধাপে দেখা গেছে সেনাবাহিনী বিশেষ ক্ষমতাসহ মাঠে থাকলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও বিরোধী দল জয়ী হতে পারে । এক্ষেত্রে দরকার তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক শক্তি, কৌশল ও যোগ্যতা । যার কারণে জামায়াত বিপুল সংখ্যক আসনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থিকে বিজয়ী করে আনতে পেরেছে । কিন্তু বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিষ্প্রাণ দাবি থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে না পারায় লাভ শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগের পক্ষেই গিয়েছে । অনেকে হয়তো বলবেন, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয় । আমি মনে করি সাংগঠনিক প্রজ্ঞা এবং শক্তিশালী তৃণমূল থাকলে দুটিকেই সমান যোগ্যতায় মোকাবেলা করা সম্ভব ।
বিএনপি জোট এই মুহুর্তে আন্দোলনে অযাচিত বিরতি দেয়া- তাদের আরেকটা ভুল বলে মনে হয় । এর জন্য বিএনপির নেতারাই যে বেশি দায়ী সেটা সাইবার গ্রুপ এর বিশিষ্ট যোদ্ধাগণ স্বীকার না করলেও মির্জা আব্বাস আর গয়েশ্বরের বাকবিতন্ডায় অনেকটা ধরা পড়ে গিয়েছে । ইতোমধ্যে ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায়নকে একটা সুযোগ হিসেবে নেয়া যেতো । বিজেপি সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে দহরম মহরম কোন পর্যায়ে রাখবে বা আদৌ রাখবে কিনা এটা এখনো স্পষ্ট নয় । এই রকম একটা দোদুল্যমানতার সুযোগ নিতে পারতো বিএনপি । তারা কেবল তারেক রহমানের শুভেচ্ছা-জ্ঞাপনের বিনিময়ে মোদীর সৌজন্যমূলক আমন্ত্রণকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নিজেদের সফলতা হিসেবে প্রচার না করে যদি রমজানের আগেই একটি শক্তিশালী আন্দোলন তৈরী করতে পারতো, বিজেপির পররাষ্ট্রবিভাগ হয়তো নিজেদের প্রয়োজনেই বিএনপি জোটকে ক্যালকুলেশনে রাখতে বাধ্য হতো । বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিজেরাও হয়তো কিছুটা আচঁ করতে পেরেছে এই বিষয়টি । তাই তারা তড়িঘড়ি করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তলব করে প্রতিরক্ষাবাহিনীকে কিছুটা নাসাকামুখি রাখতে চাইছে । অপরদিকে জামায়াতকে কিছুটা আইনগত অব্যাহতি দিতে চাইছে বলেও মনে হয় । কারণ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল যেই খুনোখুনির পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এই মুহুর্তে বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে সরকারের পক্ষে তা সামলানো কষ্টকর হবে । অথচ বিএনপির নেতাদের সম্পত্তি রক্ষার ভয়েই হোক আর সরকারি প্রলোভনেই হোক, অথবা আওয়ামী সরকারের অধিকতর পঁচনের উদ্ভট অপেক্ষা থেকেই হোক, যে পরিমাণ আন্দোলন বিমুখ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে দেশের জন্য খুব একটা আশার আলো যেমন নেই, জোটভুক্ত দলগুলোর উপর জনগণের আস্থা বেশিদিন থাকবে বলেও বিশ্বাস করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
অতএব- পরিত্রাণের উপায় এখন জিয়ার মাজার জিয়ারত বা অশ্রুসিক্ত স্মৃতিচারণের মাধ্যমে জিয়াকথন কিংবা নরেন্দ্র মোদীর সৌজন্যমূলক আমন্ত্রণ পত্রের মাধ্যমে খুঁজলে হবেনা । যেই রাজপথ দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরায়, সেই রাজপথে গিয়েই খুঁজতে হবে । বিদেশ কাউকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়না, ক্ষমতায় বসতে পারলে তখনই কেবল স্বাগত জানায় । আর যদি রাজনীতিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ একান্তই অন্ধকার দেখেন- তাহলে ঘোষণা দিয়ে অবসরে যান, সরে দাঁড়ান । কারণ আপনাদের দেখানো অলীক স্বপ্ন অনেক মেধাবী তরুণ তরুণীকে অন্ধ বানিয়ে দিচ্ছে । তারা আশা নিয়ে বসে আছে- অমুক ভাই দেশে আসবেন ইমাম মাহদীর মতো, অমুক ম্যাডাম মসনদে যাবেন কুইন ক্লিওপেট্রার মতো, ইত্যাদি ইত্যাদি । আজকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে । সাইবার যোদ্ধারা ভাবতেসে গুরুগণ যেহেতু শিখিয়ে গেছেন- তাই সবাই মিলে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে লাগিয়া লাইক কামাইতে হইবে । অথচ নিজের দলের কান্ডারীগণ যে একটা ইস্যুতেও কোন কার্যকরী প্রতিরোধ দেখাতে পারলোনা বা কেন পারতেসে না সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর লোক তেমন দেখি না । এভাবে দেশের মানুষকে বারবার আশার মরীচিকা দিয়ে ভুলানোর চেষ্টা- এটা আরো বড়ো প্রতারণা ।
বিষয়: রাজনীতি
১১৬৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আশির দশক আর বর্তমানের যুগ এক নয়। বর্তমানে অধিকার হারা মজলুম মানুষের জন্য বিএনপি তেমন কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিএনপিপন্থী কোন কোন মাঝারি গোছের বিদ্ধান সচেতন ব্যক্তির দৃষ্টিতে বর্তমান আওয়ামী সরকারকে হিংস্র বাঘের সাথে তুলনা করতে দেখা যাচ্ছে।
দেশের সচেতন মানুষের ধারণা তাদের এই অবজার্ভেশনটা সঠিক নয়। হিংস্র বাঘটাও এখন অনেক কৌশলী হয়ে গেছে। এখন সেই বাঘটার বাহুর নৈতিক বল যেমন নেই তেমনি দেশীয় মাটি ও মানুষের মেজাজের প্রতিফলন ঘটিয়ে সেই তেজোদ্ধীপ্ত শক্তিও নেই। নিজস্ব সাতন্ত্র ও সকীয়তা বলতে কিছুই বাকী নেই। হারিয়ে ফেলেছে সব। এই বাঘটাও এখন লেজকাটা শিয়ালের চেয়েও অনেক বেশী ধূতার্মী আয়ত্ব করেছে। সুন্দরী নারীর প্রতি লম্পট প্রতিবেশীর লোলপ দৃষ্টি শক্তিতে কিভাবে আগুন ধরানো যায় সে রকম বেইশ্যার দালালগিরিতে লিপ্ত রয়েছে বাঘটি। কিন্তু বিএনপি এক্ষেত্রে যেকোন ধরনের ভূমিকা রাখার যোগ্যতা ও অধিকার হারিয়েছে মীর জাফরের আদর্শিক আপন ভাইয়ের (জেনারেল মইন ইউ আহমদ) হাতে যখন নিজের ধারালো তলোয়ারটাই কোন কিছু যাচাই বাচাই না করে হাতে তুলে দিয়েছিল। এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও জাতিকে আশার আলোক বর্তিকা নিয়ে স্বগৌরবে মাঠে ময়দানে উদ্ব্যেত বুকে দাড়িয়ে যাচ্ছে একটি প্রবল সম্ভাবনাময়ী শক্তি। যাদেরকে আজ "ইসলাম" নাম থাকার কারণে মূখে ভেংচি কাটছে বাংলাদেশ বিরোধী সকল শক্তি। এমন কি কোন কোন বাংলাদেশপন্থী ইন্টেলেকচুয়ালরাও তাদের অস্থিত্ব স্বীকার করতে চান না। অথচ তাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের আসল শত্রুরা এদেরকে বুঝতে ভুল করলেও চিনতে ভুল করেনি।
মোদি আসাতে বাংলাদেশের জন্য ভয়ের হয়েছে বেশি আওয়ামী লীগের তুলনায় । ক্ষমতায় থাকতে চাইলে আওয়ামী বিমুখ মোদিকে কংগ্রেসের চেয়েও বেশী তুষ্ট করতে হবে । সেটা আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কে ভাল পারবে ?
শত্রু আখ্যা দেয়া কোন সমাধান হতে পারেনা ।
ধন্যবাদ রিসোর্স সম্পন্ন লিখাটি পাঠকদের উপহার দেবার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন