এক মোদী এক ভারত কৌশলের বিজয় !
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৬ মে, ২০১৪, ০২:২৩:১১ দুপুর
নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে অভিনন্দন । শত্রুকেও বিজয়ে অভিনন্দন জানাতে হয় । তবে এ বিজয়কে শুধু মোদীর বিজয় হিসেবে দেখলে চলবেনা । এটি ভারতের প্রতিটি মানুষের বিজয় যারা মোদীর জোটকে একটি করে ভোট দিয়েছেন । তারা প্রমাণ করেছেন বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থা কতো বেশি । ধর্মনিরপেক্ষতা নামক সাংবিধানিক-সভ্যতার বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িকতা এখন ভারতবাসীর আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে । এটাকে পশ্চাদপদতা ভাবা যাবেনা । এটাই সত্যিকারের প্রগতিশীলতা । মানুষের বিবেচনা এবং রায় পরিবর্তন হচ্ছে । মানুষ যদি সকল পর্যায়ের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, শিক্ষাবিদ-চিন্তাবিদ-সাংবাদিক-পেশাজীবিদের উদাত্ত আহবানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, মোদীর মতো একজন আমেরিকান ভিসাবিহীন লোক-কে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসায়, এটাকে গণতন্ত্রের অবমাননা ভাবার কোনই সুযোগ নেই । বরং কংগ্রেসের মতো প্রতিষ্ঠিত এবং আধুনিক দলের পকেটভর্তি প্রতিষ্ঠিত তারকা-নির্মাতা-বুদ্ধিজীবিদের প্রতি এই ফলাফলকে জনগণের পৌরাণিক চপেটাঘাত ধরে নেয়া যায় । এটি অসাধারণ এক রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত, যা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান দশকের পর দশক পার হলেও দেখাতে পারেনি ।
এবার আসুন নির্বাচনের হালচিত্র এক ঝলক দেখে নেয়া যাক । ক্ষমতাসীন কংগ্রেস শুধু মাত্র মুসলমান প্রধান কিছু আসন দখল করতে পেরেছে । রাজ্যপ্রধান দলগুলোর অধিকাংশই কেন্দ্রীয় জোয়ারে হারিয়ে গেছে । এছাড়া আম-আদমী পার্টি কংগ্রেসের ভোটে নিঃসন্দেহে ভাগ বসিয়েছে । সেই সাথে মোদীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গ জনগণের মধ্যে সাড়া ফেলেছে । বিশেষ করে গুজরাটের সাথে সাথে অপেক্ষাকৃত কম সমৃদ্ধ রাজ্যগুলোতেও মোদীর প্রতি মানুষের আকর্ষণ প্রমাণ করে- মানুষ সামাজিক স্থিতিশীলতার বুলি অপেক্ষা অর্থনৈতিক সুবিধার নিশ্চয়তা চায় । তারুণ্যের শ্লোগান প্রচার করেও রাহুল-প্রিয়াংকা পারেননি ৬৪ বছর বয়স্ক মোদীকে থামিয়ে দিতে । সেই সাথে আরএসএস এর মতো সংগঠিত গোষ্ঠি এই নির্বাচনে মোদীকে প্রাইমাস ইন্টারপারিজ হিসেবে কাঁধে চড়িয়েছে । মোদীর পরাজয় হবে কি করে ?
অপ্রত্যাশিত না হলেও অদ্ভুত খবর হচ্ছে- আমেরিকা ইতোমধ্যেই মোদীর প্রতি আগ্রহ ব্যক্ত করেছে । ভিসাবিহীন মোদী হয়তো বিশেষ বিমানে প্রথম সফরটি হোয়াইট হাউজেও পেতে পারেন । ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্যিক স্বার্থে মোদীর প্রতি সন্তুষ্ট রয়েছে । চীনের সাথে মোদীর সম্পর্ক বরাবরই ভালো । গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী থাকাকালেও অন্তত চারবার রাষ্ট্রীয় ভাবে চীন সফর করেছেন নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিবারই সফলভাবে চীনা বিনিয়োগ নিয়ে এসেছিলেন তার রাজ্যে ।
কিন্তু মানুষ কি আসলেই এসব অর্থনৈতিক সুবিধা চিন্তা করে ভোট দিয়েছে ? বাংলাদেশী বা পাকিস্তানীদের প্রতি মোদীর মানসিকতা কি নির্বাচনে কোনই প্রভাব ফেলেনি ? দাঙ্গার আশংকা কি ভোটারদের মনে মোটেই ছিলোনা ? আমরা সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে হয়তো আরো আশাহত হবো । কারণ দাঙ্গা দেখার এবং বিধর্মীয় নরহত্যার যে পৈশাচিক আনন্দ আছে সেটা ভারতীয় শিখ এবং হিন্দুবাদীদেরকে আলোড়িত করেছিলো কিনা কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে । মিডিয়াগুলোর প্রলেতারিয়েত স্বার্থ সংরক্ষণের প্রসঙ্গ নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে এবং নির্বাচন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মিডিয়াতে নরেন্দ্র মোদীর পূজা কিভাবে শুরু হয় সেটাও দেখার বিষয় । বুদ্ধিজীবিরা প্রায় এক দশক ধরে কংগ্রেসের রসগোল্লা খেয়ে খেয়ে এখন কিভাবে মোদীর কাছে সন্দেশ নিতে আসেন সেটাও দেখা যাবে ।
সবশেষে বলা যায়, মোদীর এই বিজয় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশকে নতুন এক রাজনৈতিক ক্যালকুলেশন এনে দিলো । পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফ সরকারের প্রতি মোদীর আচরণ, চীনের সীমান্ত বিরোধ নিয়ে শি জিনপিং সরকারের সাথে মোদীর সম্পর্ক, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি মোদীর অনুকম্পা- ইত্যাদি বিষয়গুলো হয়তো আগামী কয়েকদিনের সংবাদ শিরোনাম হবার জন্য যথেষ্ট হবে । বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে নরেন্দ্র মোদীকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন । সম্ভবত এর একটা ভালো প্রভাব আমরা দেখতে পাবো ভারতের বাংলাদেশনীতি-তে । তবে ইতিহাসের শিক্ষা বলেও একটা কথা আছে । সেটা হলো- অতি জনপ্রিয়তা থেকে অতি পরিত্যাজ্য হতে বেশি সময় লাগেনা । আমরা নরেন্দ্র মোদীর উত্থান দেখা প্রজন্ম । চলুন দেখতে থাকি নরেন্দ্র মোদীর ভবিষ্যৎ কেমন হয় !
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১২২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে ।
ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।
মন্তব্য করতে লগইন করুন