ডেডলাইন তিরিশ এপ্রিল এবং তার রাজনৈতিক অবদান
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৯ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৫১:২৩ সকাল
তিরিশ এপ্রিল এলেই আমার মনে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সাহেবের বিখ্যাত ট্রাম্পকার্ডের কথা । এই ট্রাম্পকার্ডের মাধ্যমে অত্যন্ত চমৎকার একটি পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ২০০৪ সালে তৎকালীন চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারের পতনের চেষ্টা চালিয়েছিলো । যদিও পরিকল্পনাটি ভেস্তে গিয়েছিলো । কিন্তু এটি একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে পতন করার জন্য মিশরের চাইতেও অনেক ডেফিনিটিভ একটা প্লট ছিলো তাতে সন্দেহ নেই । বিশেষ করে বাংলাদেশের গত পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে হলে এই একটি ঘটনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিখ্যাত আলটিমেটামের নেপথ্য ঘটনা বেরিয়ে এসেছিলো । কিন্তু এরকম একটি সাংঘাতিক পরিকল্পনা নিয়ে বোদ্ধামহলে খুব বেশি আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়েনা । তুরস্কে এর চাইতে দুর্বল প্লট করে এরগেনেকনরা এরদোগানের জালে আটকা পড়েছে । বাংলাদেশে যদি এটা নিয়ে ভালোমতো বিশ্লেষণ করা হতো তবে চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দুই বছরেই তারা আওয়ামী লীগের সকল স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দিতে পারতো । তাহলে হয়তো বিগত দশ বছরের ধারা পরিক্রমায় এই অবস্থানে বাংলাদেশকে আসতে হতোনা । যাইহোক, তিরিশ এপ্রিল ডেডলাইনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দিক ফুটে উঠেছিলো । তিনটি ধাপে এই সরকার পতন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার কথা ছিলো ।
এক- আর্থিক চাঁদাবাজি । বিরোধী দলে থেকেও শেখ হাসিনা তার বিশেষ বাহিনী দ্বারা বসুন্ধরা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ সহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে জোট সরকার পতনের ফান্ডের নামে চাঁদাবাজি করেছিলেন । এছাড়া তৎকালীন এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান, লোটাস কামাল, ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুণ এই ফান্ডে কোটি কোটি টাকা ম্যানেজ করে দেন । এসব ঘটনার একটিও জোট সরকার জানতোনা এটা ভাবার কোনই কারণ নেই । কিন্তু তার প্রতিকার কেন করেনি সেটা হয়তো তাদেরকেই প্রশ্ন করা যেতে পারে ।
দুই- লোকসমাগম । প্রশিকার মাধ্যমে সাধারণ কর্মীদের দিয়ে প্রায় দশ লক্ষ লোক ঢাকা শহরে সমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয় । এছাড়া তৎকালীন ঢাকা সিটি মেয়র মোহাম্মদ হানিফ আরো প্রায় পাঁচ লক্ষ দলীয় কর্মী সমাগম করার ব্যাবস্থা করেন । যেখানে মাত্র কয়েক হাজার আওয়ামী লীগ কর্মী আঠাশে অক্টোবর প্রায় দশ হাজার জামায়াত কর্মীকে পিটিয়েছে, বিএনপির মতো দলের নেতাদেরকে পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য করতে পারে, সেখানে কয়েক লক্ষ যুবলীগ-ছাত্রলীগ জড়ো হলে কি ঘটতে পারতো এবার অনুমান করেন ।
তিন- ঘরের শত্রু বিভীষন তৈরী । বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রায় ৭০ জন নির্বাচিত এমপি নিয়ে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা করেন বিএনপির এমপি আবু হেনা । এছাড়া মাহি বি চৌধুরী আরো পঁচিশ জনকে ভাগিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে কোয়ালিশন করার প্রতিশ্রুতি দেন । এর জন্য তারা শেখ হাসিনার সাথে প্রায় আশি কোটি টাকার ডিল করে । এভাবে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার যুগান্তকারী পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ । এমন নিখূঁত পরিকল্পনা যারা করতে পারে, তাদের হাতে দেশ থাকবেনা তো কাদের হাতে থাকবে ? বিএনপি সারাজীবন বিভিন্ন দলের আগাছাদের জড়ো করে রাজনীতি করার যে পরিণাম- তাই এখন ভোগ করছে ।
কিছুদিন আগে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির কোন গোপন সমঝোতা বৈঠক হয়নি । খালেদা জিয়ার বিখ্যাত সাপতত্ত্ব প্রায় সবার জানা । এরপর তারা জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের গোপন সমঝোতার আভাস দিলেন এবং সতর্ক করলেন । এরপর দেখলাম মির্জা ফখরুল নিজেই স্বীকার করেছেন, আওয়ামী লীগের নির্দেশেই তারা আওয়ামী লীগের সাথে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর তাগিদে গোপন সমঝোতা বৈঠকের কথা গোপন রেখেছিলেন । এখন আবার ফখরুল সাহেব প্রমাণ করতে চাইছেন যে গোপন বৈঠকের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে আওয়ামী লীগ বিশ্বাসঘাতক হয়েছে । এই হলো দেশের সবচেয়ে বড়ো রাজনৈতিক দলের অবস্থা । নিজেদের দুর্বলতাই যারা ধরতে পারেনা তারা সংশোধন হবে কিভাবে ?
যাইহোক, তিরিশ এপ্রিল ট্রাম্পকার্ডে সেনাবাহিনীর সাথে শেখ হাসিনার কোন ডিল হয়েছিলো কিনা, সেটা এক এগারোর মাধ্যমে মোটামুটি স্পষ্ট । অতএব এই নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই । তবে ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদদের জন্য হয়তো তিরিশ এপ্রিলের আলটিমেটাম একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইটহাউস হয়ে দেশের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি চেনাতে সহায়তা করবে । এটাই বা কম কি !
বিষয়: রাজনীতি
১০৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার মনে হয় - সামহাউ বাংলাদেশীরা দিন দিন কম এ্যানালাইটিকাল হচ্ছে, কম চিন্তা করতে চাইছে, সবকিছুকে ডাইরেক্ট দেখতে চাইছে, কনফ্লিক্টিং থট প্রসেস এড়াতে চাইছে, সুবিধাবাদীতা, ইজি টু গ্রাব এর আওতায় থাকতে চাইছে।
আপনার লিখার বিষয়বস্তুটি আসলেই অনেক অনেক আলোচনার দাবী রাখে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, রাজনীতির নিয়ন্তা ও দেশ ও জাতির ভবিষ্যত - সামনা সামনি যুদ্ধের চেয়ে ও ব্যাক ইন্ডে বেশী নির্ধারিত হয় - স্বভাবতঃই বাংলাদেশীদের ক্রিটিক্যাল চোখে বিচার বিশ্লেষন করার শক্তি যেমন বাড়ানো দরকার তেমন ই এ্যাভয়েড না করে এ্যাংগেজ হবার শক্তি ও বাড়ানো দরকার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন