ক্রমাগত ছাত্রী ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশ- দায়বদ্ধতা কার ?
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:১১:২০ রাত
একটা হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে আমি একসময় বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম । হাদীসটি হলো- দাইয়ূস কখনো বেহেশতে যেতে পারবেনা । কি ভয়ংকর কথা ! দাইয়ূস কোন অমুসলিমকে বলা হয়না । সে অবশ্যই মুসলিমদের সমাজভুক্ত থাকে দুনিয়াতে । কিন্তু যতো ভালো আমলনামা-ই থাকুক, সেই ব্যাক্তি কখনো বেহেশতে যেতে পারবেনা । কখনো বলতে ইনফিনিটাম আসপেক্ট । কোনদিনই পারবেনা বেহেশতে ঢুকতে ! আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, কেবল একটা ফরজ বিধানের ক্ষেত্রে এমন অস্বাভাবিক কঠোরতা কেন ? ঘরের মেয়েদেরকে পর্দার বিধান পালনে বাধ্য করার জন্য পরকালে শাস্তির কথা বলা যেতো । আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলা যেতো । কিন্তু সরাসরি এমন নিষেধাজ্ঞার নিশ্চয়তা কেন ? চিরদিনের জন্য বেহেশতে যাওয়া বন্ধ ! এটা একটু বেশি হয়ে গেলো না !
এই ভাবনা নিরসন হলো এতোদিনে । এখন বুঝতে পারছি এই চরম শাস্তির মূল গ্রাউন্ড কোথায় । ২০১১ সালে ভিকারুননিসা স্কুলের এক শিক্ষক পরিমল তার ছাত্রীর সাথে মেলামেশার ভিডিও করে যখন আলোচনায় আসে, আমি তখনো বিষয়টা নিয়ে বেশি চিন্তা করিনি । মনে হতো- ধুর ! এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ! এমন দুই একটা কুলাঙ্গার তো মানব সমাজে থাকতেই পারে । কতো নায়ক নায়িকার ভিডিও বের হলো, আর এটা তো অবুঝ ছাত্রী ! তাই হয়তো পরিমল সফল হয়েছে ।
এরপর ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ার পান্না মাষ্টার যখন প্রায় দেড়শো ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নেতা মানিক কে হারায়া দিলো তখন আমি নতুন করে হাদীসের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম । আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে পান্না মাষ্টার বেশিদিন বাঁচবেনা । কারণ আমাদের স্কুল-কলেজ জীবনে দেখেছি, মানুষ তার বাপ-মা-ভাইকে নিয়ে গালি হজম করতে পারে, কিন্তু বোনকে নিয়ে কেউ অশালীন মন্তব্য করলে আর চুপ থাকেনা । পিটাইতে পারুক আর না পারুক, কটুক্তিকারীর সাথে মারামারি বাঁধিয়ে দেবে নির্ঘাত । আমরাও এজন্যে বোন প্রসঙ্গ এড়িয়ে কথাবার্তা বলতাম । কুষ্টিয়াতে দেড়শো ছাত্রীর কোন ভাই নেই এটা হতেই পারেনা । পিতা-মামা-কাকা-খালু-ফুপা নেই এটা হতে পারেনা । আর পুলিশের হাতে দিয়ে বর্তমানে কোন বিচার হয়না এটা প্রায় সবাই জানে । এমনকি যুবলীগের নেতাকেও মানুষ ভয় পায় বলে সাময়িক ইভটিজিং এর প্রতিবাদ না করতে পারে, তবে ধর্ষণ পর্যন্ত চলে গেলে আর কোন পরোয়া করবে না কেউ । এটাই ছিলো আমার ধারণা । পরে যখন দেখলাম পান্না মাষ্টার ধরা পড়ে পুলিশের আশ্রয়ে চলে গিয়েছে, তখন ভাবলাম অন্ততপক্ষে তার বসতবাড়িতে আগুন জ্বলবে যে কোন মুহুর্তে । কিন্তু সেরকম কিছুই হলোনা ।
আজকে দেখলাম চট্টগ্রামের রাউজানে এমনই এক শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনীর নাম করে অসংখ্য ছাত্রী-ধর্ষণের ভিডিও বানিয়েছে । ছাত্রী বা শিক্ষকের ব্যাপারে আমি কিছু বলছিনা এখানে । কারণ ফেসবুকে এ নিয়ে সরেস-তেতুল-চটুল আলোচনার জন্যে অনেক বিদগ্ধজন কীবোর্ড নিয়ে বসে গেছেন নিশ্চয় । আমার কথা হলো- এরকম একজন ধর্ষক সব প্রকাশিত হবার পরেও এলাকাবাসির হাতে উত্তমমধ্যম খেয়ে জুতার মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি চলে গেলো, ছাত্রীদের পিতা-ভ্রাতাদের কি বিন্দুমাত্র ক্রোধ তৈরি হলোনা ??? কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম, নিজের মেয়ে নির্যাতিতা হয়েছে বলে এক গ্রাম্য মহিলা কয়েকজন মাস্তান ভাড়া করে ধর্ষকের স্ত্রী-কে গণধর্ষন করিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে । আমি এটা ফেসবুকে লিংক দিয়ে বলেছিলাম এটার নাম প্রতিশোধ । এর যৌক্তিকতা বা আইনগত ভিত্তিবিচার পরের কথা, কিন্তু সেই মহিলার মতো এতটুকু প্রতিশোধপরায়নতা এবং পৌরুষ যেই বাবাদের বা ভাইদের মধ্যে থাকেনা তাদেরকে কিভাবে বেহেশতে জায়গা দেয়া যায় ! বরং এদেরকে তো কঠিনতম শাস্তি দেয়া উচিত ! এখন বুঝতে পারছি । এসব অপরাধ বন্ধ না হওয়ার পেছনে শুধু মেয়েটি একা দায়ী নয়, ধর্ষক ব্যাটাও একা দোষী নয়, এর পেছনে রয়েছে বহু পুরুষের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় ! এরাই হয়তো দাইয়ূস !
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার কাছে এ লিখার যে বিষয়টি ভাল লেগেছে - তা হল আপনি সমস্যার গৎবাঁধা স্যেকুলার বিচার বিশ্লেষনের বাহিরে গিয়ে ইসলামের লেন্স এর আলোকে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন - বাংলা ভাষায় এ প্রাকটিসটার যার বড় অভাব ও আকাল চলছে।
ধরে গোড়া কেটে দিতে হবে
চালিয়ে যান। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন