জামায়াত-আওয়ামী লীগ "গোপন সমঝোতা" নামক হাইপোথেটিক্যাল থিওরী প্রসঙ্গে একটি মতামত
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:১৭:৫৯ সকাল
খবরঃ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতার আভাস ।
খবরটি এই পর্যন্তই থাকে । কিন্তু এটি এমন এক মহা-অভিকর্ষী নিউজ যা ব্ল্যাকহোলের মতো অনলাইন জগতের ছাগল-পাগল-হগগলকে অনর্গল চিন্তাসিঞ্চিত করে রাখে । তারা তিল কে তাল বানিয়ে একজন আরেকজনের সাথে ক্যাচ ক্যাচ খেলে । তাল কে তেল বানিয়ে একজন আরেকজনের গায়ে মেখে দেয় । সবশেষে তেল কে তুলা বানিয়ে আকাশে উড়াতে থাকে ।
যাইহোক, আধুনিক চিন্তবাবিদদের ব্যাপারে সবাই কমবেশি জানেন । এটা নিয়ে জল ঘোলা করতে চাইনা । মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি ।
এ পর্যন্ত যতোবার জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে গোপন সমঝোতার আভাস প্রচারিত হয়েছে প্রত্যেকবার ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং ডক্টর গওহর রিজভী চরিত্র দুটি চিত্রায়ন করা হয়েছে । এটা একটা আশার দিক । যারাই চিত্র পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন, তারা দুই দলের অপেক্ষাকৃত মাস্টারমাইন্ড দুজনকে টেনে বেশ সাসপেন্স তৈরি করেন । বোঝা যাইতেসে দেশের মস্তিষ্কগুলো সস্তা প্রেম-রোমান্সকে পেছনে ফেলে অধিকতর ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর দিকে আগাইয়া যাইতেসে । সম্ভবত GRE বা GMAT অথবা MBA পরীক্ষার ক্রিটিক্যাল রিজোনিং পার্ট মোটামুটি সবাইকে হালকার উপ্রে ঝাপসা অ্যানালিস্ট বানাইতে সক্ষম হয়েছে ।
আমার পাটিগণিতীয় মাথায় এই প্রসঙ্গে যে উত্তরগুলো খোঁজার চেষ্টা চলে তা হলো-
১। জামায়াতে ইসলামী যখন আন্দোলনের মাঠে প্রতিদিন পাঁচ ছয়জন করে "দেখা মাত্র গুলির" থিওরীতে প্রাণ দিচ্ছিলো তখন এই বিশেষ অ্যানালিস্টরা কেন জামায়াতকে সমঝোতার বুদ্ধি দেয়নাই ? তারা শুধু মাত্র আন্দোলন কিছুটা শিথিল দেখলেই "গোপন সমঝোতা" থিওরীটা সামনে নিয়ে আসে কেন ? আন্দোলন কি জামায়াত শিথিল করেছে ? জোটের নেত্রী ম্যাডাম জিয়া বললেন তিনি আগে তার দল গুছিয়ে তারপর আন্দোলনে নামবেন, তিনি নিজ দলের চুড়িশাড়ি গুলোর উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে সাময়িক বিরতি দিলে এটা কি জামায়াতের দোষ ? নাকি জামায়াতের নেতারা আন্দোলনে বিরতি চেয়ে আবেদন করেছে ? নিশ্চয়ই সেটা করেনি । তাহলে তো অবশ্যই বোঝা যাচ্ছে- নিজেদের শাড়িচুড়ির লজ্জা ঢেকে জবাবদিহিতার হাত থেকে বাঁচার জন্য একটি চক্র নেত্রী ম্যাডামকে জামায়াতের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে নিজেদের পাতে দুধকলা নিতে চাইছে ! এরা নিজেরা কি আসলেই আন্দোলনের মাঠে এতোটা সক্রিয় ছিলো ? এদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কি আসলেই আওয়ামী পরিবারের লোক নেই ?
২। কিছুদিন আগেও ন্যাপ ভাসানীর একটি অংশ জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলো । সেই দলের অপর অংশ অভিযোগ করলো এটা আওয়ামী লীগের ছড়ানো টাকার সুবাদে হয়েছে । এমন একটা ঘটনা কি ম্যাডাম জিয়ার কানে আগেভাগে কেউ পৌঁছাতে পেরেছে ? আর যদি এমন হয় যে সবজান্তা ম্যাডাম জোটের সকল দলের নাড়ি নক্ষত্র ভালো মতোই জানেন, তবে তিনি ন্যাপ-দলটিকে কি কোন বৈঠকে সতর্ক করেছিলেন ? ন্যাপের মতো ক্ষুদ্র দলকে যে নেত্রী সতর্ক করতে পারেন না তিনি কোন মুখে জামায়াতের মতো বৃহত্তম ইসলামী রাজনৈতিক দলকে জোটের সভায় সতর্ক করার নামে অপমান করেন ?
৩। আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের যদি সমঝোতা করার প্রয়োজন হতো তবে সেটা একমাত্র ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন নেতাদেরকে বাঁচানোর জন্যই হতো- এটা যারা ভাবেন তারা জামায়াতের রাজনীতি কতটুকু বোঝেন সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের কাছে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রিয় সভাপতির মর্যাদা কতটুকু সেটা তারা আদৌ জানেন কিনা সেটাও দেখার বিষয় । একজন কেন্দ্রীয় সভাপতিকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হলো, আমীরে জামায়াতকে ফাঁসীর আদেশ দেয়া হলো, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাড়িতে বিএসএফ পাঠিয়ে বুলডোজারে সব ধ্বংস করা হলো, আগুনে পোড়ানো হলো, ধর্ষণ করা হলো, গুম-খুনের পরিমান মানবতার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেলো, কিন্তু কোনদিন কি সমঝোতা করিয়ে দিতে কেউ এগিয়ে এসেছে ? যারা সমঝোতা করিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দিতে পারলোনা, তারা এখন আন্দোলনে সাময়িক বিরতি দেখে "গোপন সমঝোতা" থিওরী দাঁড় করানোর চেষ্টা করে ! তাদের কি চক্ষুলজ্জা বলতে কিছুই নেই ?
৪। কেউ কেউ বলছেন উপজেলা নির্বাচনে সাফল্যের কারণে জামায়াত নাকি আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেনা । তবে কি উপজেলা নির্বাচনে বড় বড় দলের বিশ্বাসঘাতকতার দগদগে ক্ষত আপনারা আবারো জামায়াত সমর্থকদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছেন ? জামায়াত সমর্থকেরা আন্দোলনের কারণে প্রতিদিন পুলিশের লাঠিচার্জ কেন খায়না, টিয়ার গ্যাস কেন খায়না, কেন শিবিরের ছেলেরা নির্যাতিত হয়ে-জেল খেটে-সবকিছু হারিয়ে-অসহায় ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিতাড়িত হয়না, এসব দৃশ্য না দেখতে পেয়ে কি আপনাদের স্ত্রীরা গর্ভবতী হতে পারছেনা ? তাহলে অযথা কেন স্বদেশের মুসলমানদের উপর আওয়ামী বর্বরতা কম দেখে আফসোস করছেন ? শুনলাম রেজোয়ানার স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে পাওয়া না গেলে নাকি তারা সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিতেন ! তবে তাহসীনা রুশদীর স্বামী ইলিয়াস আলী কি দোষ করেছিলো ? তখন কি আন্দোলনের ডাক দেয়ার ডাক পাননি ?
৫। অনেকে বলছেন ১৯৮৬ সালের মতো জামায়াত আবারো আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে যাবার পরিকল্পনা করছে ? দেশে তখন ছিলো এরশাদের সামরিক সরকার । আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দুটোর মধ্যে তখন তেমন পার্থক্যও ছিলোনা । দুই দলেই কিছু সত্যিকার রাজনীতিবিদ ছিলো তখন । আর সেনাশাসকের অধীনে রাজনীতি থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে । আমরা দেখেছি এক এগারোর সামান্য ধাক্কাতেই খ্যাতিমান রাজনীতিকেরা নেত্রী ম্যাডামদেরকে কিভাবে কয়েদখানায় পাঠিয়ে জান বাঁচিয়েছে । অথচ তারাই এখন সেনাশাসনের সময়কে তুলনা দেখিয়ে "গোপন সমঝোতা" নামের রসালো তত্ত্বটি চেটে চেটে জনৈক ম্যাডামকে দেখাচ্ছেন এটি কতো শাইনি ! আবার এরাই গণভবন থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর হাতে সুরক্ষিত দেখে নিশ্চিন্তমনে এবং আনন্দচিত্তে তিস্তা-যমুনায় রোডমার্চ করে পিকনিক করতে যাবেন । এটা হলো তাদের সরকার পতন আন্দোলন !!
যাইহোক, এভাবে বলতে গেলে বিশাল উপাখ্যান হয়ে যাবে জানি । তবুও তাদের হুঁশ হবেনা । যারা কিছুটা হুঁশজ্ঞান পেয়েছেন, তাদেরকে বলবো- এ ধরণের চটকদার আভাস দেখে কখনো বিভ্রান্ত হবেন না । সম্ভবত বড় কোন দলের প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজনেই আওয়ামী লীগকে উপরওয়ালা এভাবে টিকিয়ে দিলেন । জামায়াত মরতে থাকবে আর তারা বাকি দলের নেতাদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উইকএন্ড এনজয় করবে । জামায়াত ঘুরে দাঁড়ালে তারা "গোপন-সমঝোতা" দেখতে পাবে । জামায়াত বিজয় পেলে তারা হা-হুতাশ করবে । কারণ বড় দুটি দলের লেজ একই গিটে বাঁধা এটা যেনো কোনমতেই জাতির সম্মুখে প্রকাশ না পায় । তারপরেও জামায়াতে ইসলামী থেমে থাকেনি । দেশের মানুষজন এখন ইসলামী নেতাদের নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে । বিজয় কেবল আসতে শুরু করেছে । অতএব, সময় এসেছে আজ এগিয়ে যাবার -আগামীর দিন শুধু সম্ভাবনার ।।
বিষয়: রাজনীতি
১০৯৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারন লিখছেন
ভাই
এরকম ছবি কি আবারও আসবে সামনে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন