হারানো প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:৩৯:২২ সকাল
অবশ্যই এটা আনন্দের খবর যে একজন সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান তার স্বামীকে অপহরণের পরও আবার ফিরে পেয়েছেন । সম্ভবত গত দশ বছরের মধ্যে এই প্রথম একজন মহিলা তার অপহৃত স্বামীকে ফিরে পেলেন । আমার মনে আছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ ইলিয়াস আলীর কথা । মনে আছে রাজনৈতিক ইস্যুতে গুম-খুনের শিকার হাজার হাজার বাংলাদেশী নাগরিকের কথা । আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্ত্রী না থাকার কারণে অনেক স্বামী ফিরে আসেননি । ছোট ছোট শিশুদের এতিম করে অনেক বাবা পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন না ফেরার দেশে । কিন্তু কখনো দেখা যায়নি যে অপহরণকারীরা সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এতোটা ব্যস্ত ছিলো । ভিকটিমের প্রতি সুশীল সমাজের একাত্মতা প্রকাশের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই এভাবে একজন অপহৃত লোক ফিরে এলো, যাকে সম্ভবত খুন বা গুম করার উদ্দেশ্যে তুলে নেয়া হয়েছিলো, বিষয়টা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য হতে চায়না । এ প্রসঙ্গে যে কয়টি প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে তা হলো-
১। পত্র পত্রিকার বক্তব্য অনুযায়ী অপহরণকারীরা ছোট চুলের সুঠামদেহী যুবক । এ ধরণের শারীরিক বৈশিষ্ট্য কাদের থাকে বলে মনে করেন ?
২। কিছু পত্রিকায় বলেছে, অপহরণ করা হয়েছিলো টাকার জন্য । অথচ তার গাড়িটি ছিনতাই করা হয়নি । এমনকি আবুবকর সিদ্দীকের মোবাইল ফোন দুটিও গাড়িতে ফেলে যায় অপহরণকারীরা । তারা বাসার নাম্বারও চায়নি তার কাছে । আরোচমকপ্রদ হলো- তাকে বাসায় যাওয়ার ভাড়া হিসেবে ৩০০ টাকাও দিয়েছে অপহরণকারীরা !! ভেবে দেখুন অবস্থা !
৩। ফরহাদ মজহার-নুরুল কবীর থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা যখন রেজওয়ানা হাসানের সাথে কন্ঠ্য মিলিয়ে বলতে লাগলেন এ ঘটনায় রাজনীতি জড়িত, ঠিক তখনি সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে ফিরে এলেন আবু বকর সিদ্দীক । এমনকি তার ড্রাইভারকে পিপার স্প্রে খেতে হলেও, তার উপর কোন নিপীড়ন চালায়নি অপহরণকারীরা ।
৪। সুলতানা কামাল কোনদিন প্রেস কনফারেন্সে এতো জোরেশোরে অপহরণ ভিকটিমের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে পড়েনা আমার । কিন্তু বিমানবন্দরে যখন ভারতীয় গোয়েন্দারা ব্যাপক অভিযান চালিয়ে আলোচনায় এলো, তখনই দৃষ্টি ঘুরানোর একটা মাধ্যম প্রয়োজন হলো । আর সুলতানা কামালেরা এসে সরকারের ভাবমূর্তি এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিলেন । হাস্যকর নয় কি ?
অতএব হে বাংলাদেশী চিন্তাবিদেরা, একটু সময় নিয়ে ভাবুন । এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে একটা মাইলফলক হতে পারে ।
যদি হারিয়ে যাওয়া স্বামী-ভাই-বাবা-ছেলে-কে ফিরে পেতে চাও, দোয়া মাহফিল নয়, বরং প্রেস কনফারেন্স করো । অবশ্যই সুলতানা কামালের ধমক যে কোন গুমকারী বা খুনীর হৃদয় কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম । গতকাল যখন সুলতানা কামালের ধমক দেখলাম তখনই বুঝতে পেরেছি তাহসীনা রুশদী লুনা যে ভুল করেছেন, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সেটা করেননি । তিনি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন হারিয়ে যাওয়া মানুষ ফিরিয়ে আনতে পারেন একমাত্র মানবাধিকারের সুলতানা হিসেবে পরিচিত লাল টিপের এই ভারতকপালী । অভিনন্দন রেজওয়ানা ! আপনার স্বামী সুস্থভাবে ফিরে এলো । আমরাও সুলতানাদের ক্ষমতার প্রমাণ পেলাম আরেকবার !
যাদের এখনো বুদ্ধি সুদ্ধি হয়নি- শুধু তারাই আশা করে থাকবে যে- এবার আবু বকর সিদ্দীক সাহেবের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে RAW এর সকল ঘাঁটি আমাদের পুলিশ র্যাব দখল করে নেবে । হে হে হে । আসেন তবে লাইভ মজা লইতে থাকি )
বিষয়: বিবিধ
১২৫৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গিলে ফেলেছিল ,রেড সিগনাল পেয়ে উগড়ে দিয়েছে । হজম করতে তাই সময় পায় নি ।
যা হোক , আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শোকরিয়া যে এবি সিদ্দিকী ভালয় ভালয় ফিরে এসেছেন ।
সবার ভাগ্য রেজোয়ানার মত না । তাই ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমের স্ত্রীরা আজও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ।
আফসোস লাগে বাংলাদেশটা এখন আর বাংলাদেশীদের হাতে নেই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন