রাজনীতি এবং রম্যরসের পার্থক্য

লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৬ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৩৭:২৩ রাত

একটি কঠিন প্রসঙ্গের অবতারণা করতে যাচ্ছি বলে আগেই বিনয় জ্ঞাপন করে নিচ্ছি । গত কিছুদিন থেকে এই প্রসঙ্গটি আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । আমি এই ব্যাপারে বেশি কিছু জানিনা । হয়তো কারো সচেতন ভাবনা থেকে আমার দ্বন্দ্বটি উপশমের একটা সুযোগ পাবো । সেই চিন্তা থেকেই শেয়ার করা ।

আমরা যারা রাজনীতি নিয়ে কিছুটা শখচর্চা হলেও করি, তারা জানি যে প্রতারণা এবং মিথ্যা ইস্যুবৃত্তি রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, তবে আমার মনে হয় রাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় যে গুণটি থাকতে হয় তা হচ্ছে ব্যাক্তিগত এবং সামষ্টিক আত্মমর্যাদাবোধ ।

কোন ইস্যুটিকে হাসি-তামাশার মাধ্যমে খেলো করে দিয়ে জাতির সাথে প্রতারণা করা হবে আর কোন ইস্যুটিতে চায়ের কাপে ঝড় তুলে দায় এড়াতে হবে অথবা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, এই বিষয়গুলোর স্পষ্ট সংজ্ঞায়ন না থাকলে গঠনমূলক রাজনীতি বিকশিত হতে পারেনা । এখন ইন্টারনেট-ফেসবুকের যুগে কোন রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ইস্যুর গুরুত্ব বোঝা খুব মুশকিল হয়ে পড়েছে । যে কোন ইস্যুতে সবচেয়ে সহজ প্রতিবাদের উপায় হলো বিষয়টি নিয়ে হাসি-তামাশা করা । এটি শতকরা একশ ভাগ নিরাপদও বটে । কারণ হাসি-তামাশাকে সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষ কোন পক্ষই আক্রমণাত্মক মনে করে না । এর ফলাফলও খুব তাড়াতাড়ি সয়ে যায় । জনগণ ইস্যুটিকে তেমন পাত্তা দেয়না তখন ।

ফেসবুকে প্রথমদিকে স্কুল-কলেজের তরুণ প্রজন্ম এই বুদ্ধিটার চর্চা শুরু করে । বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যারা ফেসবুক ব্যবহার করে, তারাও সামাজিক বা রাজনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে প্রতিবাদ করে- এটাই এযাবৎ কালে দেখে এসেছি ।

এর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে জানেন ? বড়রাও দিনে দিনে এটা শিখে ফেলেছে । শুধু শিখে ফেলেছে বললেই যথাযথ হবেনা ইদানিং তারাই এটাকে বেশি ব্যবহার করছে । উদাহরণস্বরুপ বর্তমানে সংবাদপত্রগুলোর কলাম দেখুন অথবা নামিদামী একটিভিস্টদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার প্রতিযোগিতা দেখুন । অধিকাংশ রাজনৈতিক ইস্যুই তারা উপহাসের মাধ্যমে জাতির কাছে খাটো বানিয়ে উপস্থাপন করেন । ফলে তারেক শামসুর রেহমান বা পিয়াস করীমদের মতো সমস্যার গভীরে চিন্তা না করে আমরা শফিক রেহমান বা ফরহাদ মজহারের মতো উপহাসমূলক ভাসাভাসা রাজনীতি চর্চাই শিখছি বেশি । এই কারণে যে শুধু প্রকৃত রাজনীতিবিদ তৈরি হচ্ছেনা তা নয় । রাষ্ট্রের প্রতিটা অঙ্গে এর প্রভাব পড়ছে । হয়তো দেখা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার সংকোচনের ইস্যুতে অর্থনৈতিক হর্তাকর্তারা হাস্যরসে মেতে আছেন, রেলবগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় রেলকর্মকর্তারা আনন্দের দিকটা খুঁজে বের করতে লাগলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে হাইকমিশনার পরিবর্তনের প্রসঙ্গ নিয়ে কোন প্র্যাগমেটিক আলোচনায় না গিয়ে কূটনীতি-বিশ্লেষকেরা তামাশার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলেন, এমনো হতে পারে বিমানবন্দরে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কর্মকান্ড নিয়ে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট গুলোতেও ঠাট্টা মশকরা চলছে । এভাবে গুরুত্বের জায়গাগুলো প্রতিনিয়ত ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হতে থাকে । আমরা হারিয়ে ফেলি বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সৌন্দর্য্য । দেশ যেতে থাকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিদের খোঁয়াড়ে ।

আমি বলছিনা যে, আমরা বেশ গম্ভীর গম্ভীর কথা বললেই দেশের সকল জীর্ণতা মুছে যাবে । অথবা মানুষের মন থেকে হতাশা সব কেটে যাবে তাও আমি বলছিনা । আমার বক্তব্য হচ্ছে, বিভিন্ন ইস্যুতে একটা স্পষ্ট দূরদর্শিতা এবং বাস্তবমুখী সমীকরণের জায়গা যদি তৈরি করা যায়, অন্তত দেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই মেসেজটুকু পৌঁছানো যাবে যে রাজনীতির বাইরে গিয়ে জীবনের কোন সমাধান ধর্মও দেখাতে পারেনি, বিজ্ঞানও দেখাতে পারেনি, দর্শনও দেখাতে পারেনি । অতএব তোমরাও কিছুটা রাজনীতি শেখো ।

জীবনের কিছু মুহুর্ত থাকে, যখন মানুষ সান্ত্বনার জন্যে ডিজুস ফ্রেন্ডদের পার্টিতে না গিয়ে সবচেয়ে গম্ভীর এবং চিন্তাশীল বন্ধুটির নিকট যায় । নিরবে কিছুক্ষণ তার পাশে বসে থাকে । আমার ধারণা রাজনীতিতেও এই স্থানটি প্রয়োজন । এমন কিছু মানুষ প্রয়োজন যাদের কাছে সত্যিকার দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে । বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুর গুরুত্ব সুষ্ঠুভাবে যাদের কথাবার্তায় বোঝা যাবে । কিন্তু ইদানিংকালে রাজনীতিবিদ হবার প্রত্যাশা রাখেন এমন লোকেরাও যেভাবে ঠাট্টা মশকরায় মশগুল হয়ে পড়েছেন ফেসবুক বা ব্লগগুলোতে, আমার সন্দেহ হয় সেইমাপের প্রজ্ঞার স্বাদ আর পাওয়া সম্ভব হবে কিনা ।

যাইহোক, আমি একবার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পর্যায় বা সমবয়সের নয় এমন কাউকে আমি ফেসবুকে ফ্রেন্ড বানাবোনা বা তাদের কোন স্ট্যাটাস ভালো লাগলেও লাইক-কমেন্ট দেবো না । তাদেরকে ব্লগিং এর প্রতিও আমি ডাকিনা কখনো । এভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে অনলাইনের আকর্ষণ থেকে নিরুৎসাহিত করার এটা ছিলো আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস । এখনো আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বন্ধু আমার জানামতে নেই । সেটা যতোই ইসলামপন্থী বা যতোই আপন ছোট ভাইবোন হোক না কেন । এখন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যারা দেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি হিসেবে মোটামুটি পরিচিতি পেয়েছেন, তাদেরকেও লাইক-কমেন্ট নির্ভরতা থেকে নিরুৎসাহিত করবো । আমি চাইনা কোন রম্যরসিক ভাঁড়ামো অথবা চাকচিক্যময় চটুল-বুদ্ধিপূজারী সমাজ । বরং একটি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক আবহ দেখতে চাই । তারা যে বিজয়ী এবং সফল থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই । অন্তত তারা হবেন সকল শ্রেণী পেশার মানুষের রাজনৈতিক দর্শনের আশ্রয়স্থল ।

পরিশেষে, যারা এতোক্ষণ কষ্ট করে লেখাটি পড়লেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই ।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৫২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

208632
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৩
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : এখানে রাজনীতি ও রম্যরস দুটোই পাবেন।
Angel Angel Angel

বলদে বলদামি করে, পাবলিক এর বিনোদন বাড়ে।
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৩৫
157304
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : Happy Happy আমি অবশ্য দুইটার মধ্যে একটা সীমারেখা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি । হে হে Good Luck Good Luck
208634
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৯
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : কথায় যুক্তি আছে, সহমত।
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
157305
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ মহামান্য প্রেসিডেন্ট সাহেব । শইলডা তো ভালাই বানাইসেন দেহি Happy Happy
208947
১৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৪
ইক্লিপ্স লিখেছেন : চমৎকার লিখেছেন। আপনার লেখা চিন্তার খোরাক যোগাল। আপনি জ্ঞানী মানুষ। ভাবতে জানেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
১৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:০৪
157829
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : হে হে হে । ভালো লাগলো আপনার আন্তরিকতা । আমি নিজেই ভুলে গিয়েছিলাম যে আমি কিছু লিখেছি এখানে । কমেন্টের অবস্থা দেখে হয়তো আপনিও বুঝতে পারছেন হা হা হা । উপরের দুইটি কমেন্টও ধার করে এনেছি এক ভাইয়ের কাছ থেকে । খেকজ । তাহলে এবার বলুন দেখি, জ্ঞানের কথা বলার ফায়দা কি এখানে !!! <:-P <:-P <:-P
209481
১৮ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৪
ইক্লিপ্স লিখেছেন : It Wasn't Me! It Wasn't Me! It Wasn't Me! It Wasn't Me!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File