বিএনপির মহা আদর্শবাদী রাজনৈতিক নিরবতা সংক্রান্ত একটি প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫৬:১৫ রাত

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দীকি নাজমুল আলম ছেলেটাকে আমার ভালোই লাগে । ওর মধ্যে অনেকটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি এবং বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন অর রশিদ ওরফে কালা হারুনের চরিত্রগত এবং চেহারাগত মিল পাওয়া যায় । আমরা যখন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির সুযোগ চেয়ে আন্দোলন করছিলাম, তখন কালা হারুন বলেছিলেন মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের অনেকেরই পিতা-মাতার পরিচয় থাকেনা বলে এতিমখানায় বড় হয় । এ ধরণের স্পষ্টবাদিতাকে আমি সবসময় সম্মান করি । জাস্ট স্পিক ইউর মাইন্ড উইদাউট ত্যানা প্যাঁচানি । এটা খুবই ভালো দিক ।

নাজমুল ছেলেটা এবার তারেক রহমান সম্পর্কে বলেছে, তারেক ফকিন্নীর পোলা যার জন্ম অবৈধ । অত্যন্ত স্পষ্ট বক্তব্য । যদি সে বলতো- "তারেক রহমান বড়লোকের দলে নন, নিতান্তই গরীব মানুষের দলে" অথবা যদি বলতো- "বাংলাদেশে তারেকের জন্ম এই জাতির জন্য অনেক গবেষণার দাবি রাখে" তাহলে নির্ঘাৎ সময়ের সাক্ষী জাতিয়তাবাদী টকশো দল এ নিয়ে নাজমুলের ভূয়সী প্রশংসা করতো । কারণ রুপকের আড়ালে জঘন্য খোঁচা তারা জিন্দেগীতেও ধরতে পারতো না । তারা ভাবতো নাজমুল এখন সত্যবাদিতায় মহাত্মা গান্ধী বা বিবেকানন্দ হয়ে উঠেছে (মুসলিম মণিষীদের নাম নেয়া যাবেনা কিন্তু, হুম ?)। এভাবে নাজমুল হয়ে যেতো জাতিয়তাবাদের হিরো ।

ঠিক একই কারণে আমি এ বি এম মূসাদের চাইতে আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে অধিক সম্মান করি । কারণ তারা বুদ্ধিমান লোক । তারা জানেন, ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক স্টাইলে মজিনা মার্কা হাসি দিয়ে বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বললে তারা একদম দৌড়ে বাসায় চলে আসবে ডিনার করতে । এমনকি কালের কণ্ঠ- প্রথম আলোর অফিসেও তারা শুভেচ্ছাবাণী নিয়ে চলে যেতে পারে । গান্ধীবাদী আদর্শ বলে কথা ! যদিও কেজরিওয়ালের মতো চড় খেতে তারা আগ্রহী নয় । এই দায়িত্বটা তারা জামায়াত-শিবিরকে সামনে ঠেলে পালন করায় ।

যাইহোক, ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগের সাথে একই হলে দীর্ঘদিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল এককালে । এখনো হয়তো দেখা হলে চিনে ফেলবে । তবে নাজমুল ছেলেটার এই স্পষ্টবাদীতা আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করে যে তাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না । ওরা যখন বিএনপি নেতাদের নিয়ে কথা বলে তখন এভাবেই বলে । অন্তরে এটাই বিশ্বাস করে । আর ছাত্রদল সভাপতি-সম্পাদকরা যখন সজীব ওয়াজেদ জয়- সায়মা পুতুল-অপু উকিল-শাহরিয়ার-জুনাইদ পলকদেরকে দেখে গদগদ হয়ে চোখ ছলছল করে কথা বলে তখনই পার্থক্যটা স্পষ্ট বোঝা যায় ।

অবশ্য তারেক রহমানের কথা আলোচনা করলেই বিএনপির বাকি নেতৃত্বের অবস্থা বোঝা যাবে । জেনারেল শফিউল্লাহ লিখে গেছেন জিয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট । এডমিরাল মাল মুহিত লিখে গেছেন জিয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট । এভাবে আওয়ামী লীগের মুখ থেকে জিয়াউর রহমানকে প্রথম প্রসিডেন্ট শুনিতে পারাই তারেক সাহেবের বিশেষ কামনা বাসনা বলিয়া জাতির নিকট প্রতীয়মান হইতেসে । তিনি কেজরিওয়ালের মতো জনতার কাতারে গিয়ে চড় খেতে আগ্রহী নন । পুতিনের মতো বাংলাদেশকে বঙ্গভঙ্গের সীমানায় নিয়ে যেতেও আগ্রহী নন । নেতানিয়াহুর জুইশ স্টেট থিওরীর মতো "বাংলাদেশ স্যুড বি এন ইসলামিক স্টেট" বলতে তো তার প্রাণটাই চলে যাবে বোধহয় । এমন নেতাই তো চাই !

আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে নিশ্চয়ই বই পুস্তক ঘাটাঘাটি শুরু হয়ে গেসে । জেনারেল মাহবুব বা মার্শাল মওদুদের লেখা কোন বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে দুই তিনদিনের মধ্যে হয়তো উদ্ধৃতি চলে আসবে " জিয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জনক শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে উই রিভোল্ট বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ।" আর তখন বিএনপি নেতারা বলিয়া খালাস পাইবেন যে- " এ কিতা কইরতাসেন বেয়াই ! আমরা কি আর গণভবনে রোড মার্চ দিসি নাকি ? নববর্ষের শুভেচ্ছা তো প্রাইম মিনিস্টার আফারে আমরাও দিতি ছাই । আমরা কোনদিন কি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছিলাম নাকি ? রোড মার্চ তো দিসি তিস্তা নদীর দিকে ! সবাই মিল্লা একলগে পিকনিক করুম আর কর্মীদেরকে বুঝামু ভারতের বিরুদ্ধে এই রোডমার্চ এতোটাই শক্তিশালী পদক্ষেপ যে এটা চলমান নির্বাচনে হেমা মালিনীকেও প্রধানমন্ত্রী বানায়া দিতে পারে !" এই বলিয়া বিএনপি নেতারা টক শো গুলাতে হাজির হওয়ার জন্য আবারো লাইন দিতে থাকিবেন ।

যাইহোক, আমার বক্তব্য হইতেসে- ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) যেমন বিলুপ্তি ঘোষণা করে জাদুঘরে গেসে, বিএনপিরও উচিত উপজেলায় ফর্ম থাকতে থাকতে অবসর গ্রহণ করিয়া ফেলা । এদেরকে দিয়ে আর আওয়ামী লীগের বিরোধিতা বা উৎখাত কোনটাই সম্ভব নয় সেটা স্থায়ী কমিটির পাকনা চুলের বুড়া গুলাও ভালোমতো জানে । কেন এই মিথ্যে ভন্ডামী দিয়ে রাজনীতির মাঠে ভিড় করে থাকা ? খেলা হইতেসে আওয়ামী বনাম জামায়াতী । বিএনপি এবার সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের পথ অবলম্বন করিলেই জাতি একটা বড় উপকার পাইবে । সেটা হলো বিএনপিকে বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা ভাবিয়া জনগণকে মিথ্যে আশার মরীচিকা নিয়ে থাকা লাগবে না তখন । আমার মনে হয় এই মহান কাজটা বিএনপি এবার করতে পারে ।

বিষয়: রাজনীতি

১১৮৩ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

205946
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:০৪
নূর আল আমিন লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষন
ভালো লাগলো আপনাকে
ধন্যবাদ
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:০৮
154769
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।=Happy =Happy =Happy <:-P <:-P <:-P <:-P <:-P
205950
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:১৭
154778
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
205956
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৪৪
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৫২
154784
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
205968
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:৪১
সাদাচোখে লিখেছেন : বিএনপি যদি দেশ ও জাতির সত্যিকার কল্যান চায় এবং সে সাথে নিজ দলের নেতাদের কল্যান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় - তবে নিঃসন্দেহে এটা একটা উত্তম প্রস্তাব।

আর যদি বিএনপি হাতি মরলেও দাম অনেক - এ তত্ত্বে বিশ্বাস করে দাম পাবার আশায় থাকে - তবে জাতি ডুববে এবং বিএনপি একটা ডুবন্ত জাতিকে নেতৃত্ব দেবে আরো তাড়াতাড়ি ডোবাতে।
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
154870
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : চমৎকার বলেছেন । ঠিক এ কথাটাই আমি বলতে চেয়েছি ।
205999
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:২২
রক্তলাল লিখেছেন : আপনি কি ইংগিত করছেন বিএনপি সশস্ত্র আন্দোলন বা যুদ্ধ করুক? আওয়ামী আর ইন্ডিয়া আর কোনো রাস্তা রাখেনি। বরং আওয়ামীকে দোষ দিন আর আমাদের সেনাবাহিনী চুড়ি পরে বসে আছে কি না খুজুন।

দেশের সীমানা রক্ষা সেনাবাহিনীর ফরয। কিন্তু সেটা পালন না করে ইন্ডিয়ার এজেন্টদের ক্ষমতায় থাকতে দিচ্ছে।
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:০০
154871
মুজতাহিদ বাপ্পী লিখেছেন : এজন্যেই বিএনপিকে অবসর নিতে বলেছি । ওরা সেনাবাহিনীকেও প্রভাবিত করতে পারেনি যেটা আওয়ামী লীগ পেরেছে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File