বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে চলচ্চিত্র ক্যাটাগরি হলো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:০৮:২১ সকাল
নিপুণ নামে এক অভিনেত্রী আছে বাংলাদেশে । আমি যদিও তার অভিনীত কোন সিনেমা-নাটক এ পর্যন্ত দেখিনি, তবু তাকে চিনি কারণ একবার এনটিভিতে একটা কৌতুকের অনুষ্ঠানে তাকে বিচারক দেখেছিলাম । মীরাক্কেলের আদলে দেবাশীষ বিশ্বাসের উপস্থাপনায় সেখানে হতো কৌতুকের প্রতিযোগিতা । মাঝে মাঝে এমন কিছু অ্যাডাল্ট কনটেন্ট নিয়ে কৌতুক পরিবেশন করা হতো যেগুলো আমার পক্ষেই শোনা কষ্টকর ছিলো । অথচ নিপুণকে দেখতাম সেই কৌতুকগুলো যেনো প্রাণভরে উপভোগ করছে !
যাইহোক, এই অভিনেত্রীর প্রসঙ্গ এনেছি মূলত অন্য একটি কারণে । তিনি ইদানীং মুক্তিযুদ্ধ-ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রে বেশ খোলামেলা ধর্ষণ দৃশ্যে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন । তার কথায় এটা "কাহিনীর প্রয়োজনে" করতে হয়েছে । এভাবে তিনি গভীর দেশপ্রেম ফুটিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে একলাফে চার-পাঁচ ধাপ এগিয়ে গেলেন ।
আমাদের দেশে যে কোন সচেতন মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়- মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র বলতে আপনি কি বোঝেন, তাহলে আমার মনে হয় দেশের প্রায় আশি ভাগ লোক (যারা দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র সম্পর্কে ধারণা রাখেন) স্বীকার করবে যে- দেশের সবচেয়ে ফালতু ক্যাটাগরির চলচ্চিত্র হলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র । এই ক্যাটাগরিতে মুক্তিযুদ্ধের কোন ঐতিহাসিক সত্য ফুটিয়ে তোলার চাইতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় কিভাবে একজন মাদ্রাসার শিক্ষক বা মসজিদের ইমামকে রাজাকার হিসেবে চিত্রায়ন করা যাবে, কিভাবে পাকিস্তানীদের দ্বারা ধর্ষণ দেখানোর নামে একটি সফটকোর পর্ণো সিন চালিয়ে দেয়া যাবে, কিভাবে পুরাতন কিছু থ্রি নট থ্রি বা পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেল দিয়ে অটোমান যুগের যুদ্ধদৃশ্যের মতো বস্তাপঁচা গোলাগুলি দেখিয়ে সিনেমা লম্বা করা যাবে । সেখানে রিয়াজ থেকে শুরু করে মোশাররফ করিম পর্যন্ত সব অভিনেতার একই কান্ড । পূর্নিমা-জয়া আহসান থেকে শুরু করে নিপুন পর্যন্ত নায়িকাদের একই কান্ড । তৌকির-তারেক মাসুদ থেকে শুরু করে সকল পরিচালকেরও ঠিক একই অবস্থা । আর এই ফাঁকে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্র গুন্ডের মতো কিছু বিকৃত ইতিহাস নির্ভর ছবি ।
এসব চলচ্চিত্র না আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাচ্ছে, না শিন্ডলার্স লিস্টের মতো কোন পুরস্কার ছিনিয়ে আনতে পেরেছে, না পারছে দেশের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহী করতে । এরা শুধুই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টাকে দিন দিন কলুষিত করে মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি করে দিচ্ছে । নিপুন-জয়া আহসানের মতো নায়িকা- যারা পর্ণোগ্রাফিতে অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে থাকে বলে আমার ধারণা, তাদেরকে "কাহিনীর প্রয়োজন" নামক একটা সস্তা এক্সকিউজ বানিয়ে দিচ্ছে এসব মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র । আর পর্ণো দৃশ্য যদি যুদ্ধকালীন অবস্থার আড়ালেও প্রচার করা হয়, তার ভয়াবহতা সমাজে কতটুকু হতে পারে- সেটা যদি কেউ এড়িয়ে যেতে চান, আমার বলার কিছু নেই ।
অতএব- আমার একটা সরল বক্তব্য হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক যে কোন বিষয় উপস্থাপনের জন্য চিত্র-পরিচালকদেরকে একটা মিনিমাম যোগ্যতার মাপকাঠি ধরিয়ে দেয়া উচিত । সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা এবং চলচ্চিত্র কুশলীদের এ ব্যাপারে একটি সেন্সর বোর্ড থাকা উচিত । ইহুদী হলেই আপনি যেমন ইসরাঈলীদের হলোকাস্ট নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে পারবেন না, তেমনি বাংলাদেশী হলেই আপনি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র বানাতে পারবেন এটা যেনো না হয় । এ ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধা-প্রজ্ঞা আছে কিনা সেটা প্রমাণ করতে হবে । ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক কোন বিষয় অথবা মাত্রাতিরিক্ত আবেগময় কিছু আপনি মুক্তিযুদ্ধের নামে চালিয়ে দিয়ে দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে গুন্ডেমুখী বানিয়ে ফেলছেন কিনা সেটা যাচাই করার ব্যাবস্থা থাকতে হবে । কাহিনীর প্রয়োজনে ধর্ষনমুখী না হয়ে চলচ্চিত্রটি যেনো রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণমুখী হয় সেই সদিচ্ছার প্রকাশ থাকতে হবে । তাহলে অন্তত বিদেশী পুরষ্কারের আশায় সাদাকালো চিত্রায়ণ বা দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ-বিদ্বেষ প্রতিফলিত করে কেউ মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিষয়টাকে খেলো করে দিতে পারবেনা ।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৪ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন