অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের "পদ্মভূষণ" খেতাব পাওয়া এবং আরেকটি সত্য ঘটনা
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৩১:৫৬ বিকাল
বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যবইতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের লেখা একটি গল্প আছে । নাম- "কতকাল ধরে" । সেখানে তিনি বলেছেন, তেইশ চব্বিশ শো বছর আগে রাজারা এলেন এদেশে । তার সাথে এলেন সব সামন্ত । সাধারণ মানুষকে তারা বানালেন প্রজা । সেখান থেকে শুরু হলো মানুষের শোষণ আর অপমানের ইতিহাস । কিন্তু আড়াই হাজার বছর আগে যে বাঙালি জাতি বাস করতো তাদের মধ্যে ছিলোনা কোন রাষ্ট্র-ধর্মের বাধ্যবাধকতা । ছিলো শধুই শান্তি আর শান্তি । তারপর তারা কি খেতো, কি পরতো, কি কি খেলাধুলা করতো, তাদের অনুষ্ঠান কেমন হতো ইত্যাদি বর্ণনা । অর্থাৎ গল্পটি যে পরবে তারই কল্পনায় আড়াই হাজার বছর আগের সেই স্বর্গীয় বাঙালী জাতির একটা ফিলিংস চলে আসবে । সে চাইবে বর্তমানের এতো বিধিনিষেধের উৎপীড়ন থেকে সেই আদিম সংস্কৃতিতে ফিরে যেতে । এটাকেই সে ভাবতে শুরু করবে স্বাধীনতা হিসেবে । এভাবেই অধ্যাপক আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বুঝিয়ে এসেছেন । এভাবেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস সম্মাননা পেয়েছেন । এভাবেই তিনি আজ দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর ইন্টেলেকচুয়াল ।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে গতকাল ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি ভূষিত করেছেন "পদ্মভূষণ" খেতাবে । তার আগে আরো পঁচিশ জন একই খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন । ভারতের হাইকমিশনার অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রসঙ্গে বলেন, “He is one of the Bangladesh’s foremost intellectuals and thinker who had earned respect all over the world.”
অর্থাৎ আমরা আনিসুজ্জামান সাহেবের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাতে ভারত খুবই আনন্দিত এবং বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদেরকে সম্মানিত করা ইদানিং ভারত তার নিজ দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে । তাহলে এই আনন্দে একটু থংকুবাদ তো ভারতকে আমরা দিতেই পারি কি বলেন ?
এবার আসুন সত্য ঘটনাটি জেনে নিই । একজন খ্যাতনামা জাপানী বক্সার ছিলেন ইয়াও হাকামাডা । তিনি একদিন দেখলেন তার বসের বাড়িতে কারা যেনো ডাকাতি করেছে এবং আগুন লাগিয়ে দিয়েছে । দৌড়ে গেলেন বসের ছেলেমেয়ে কে উদ্ধার করতে । সবাই ইতোমধ্যে ছুরিকাঘাতে মারা গিয়েছিলো । পুলিশ এসে দেখলো তার শরীরে রক্ত লেগে আছে । গ্রেফতার হলেন হাকামাডা । আদালত ফাঁসির আদেশ দিলেন তাকে । তাকে নিয়ে যাওয়া হলো ফাঁসির সেল "ডেথ রো" তে । সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসির আদেশ সাময়িক স্থগিত করা হলো । কিন্তু হাকামাডা কারো সাথে দেখা করতে পারতেন না । এমনকি প্রিজন গার্ডদের সাথেও না । তিনি জানতেন, যে কোন মুহুর্তে দেয়া হবে ফাঁসি । এভাবে কেটে গেলো কতদিন ? দীর্ঘ আটচল্লিশ বছর !! ২০১৪ সালের মার্চ মাসে হাকামাডার ৭৫ তম জন্মদিনে গিনেস রেকর্ড কমিটি স্বীকৃতি দিয়েছে তিনি হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিদিন ফাঁসির সেলে থাকা কয়েদী । গত মাসে আদালতও স্বীকার করেছেন ট্রায়ালটি ফেয়ার ছিলোনা । এখন আবার রিট্রায়ালের কাজ শুরু হয়েছে । ১৯৮০ সালে নিজের ছেলেকে লেখা একটি চিঠিতে হাকামাডা লিখেছিলেন, "I will prove to you that your dad never killed anybody, and it is the police who know it best and it is the judges who feel sorry. I will break this iron chain and return to you."
এখন প্রশ্ন হলো উপরের দুটি ঘটনার মধ্যে মিল কোথায় ?
মিল হচ্ছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো অবাস্তব কল্পনাবিলাসী কিছু মানুষ যখন আদালতে উল্টাপাল্টা সাক্ষ্য দিয়ে কিছু নির্দোষ মানুষকে বছরের পর বছর জেলের ঘানি টানায়, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়, তখন পদ্মভূষণ ধীরে ধীরে ফণীভূষণ হয়ে একটি জাতিকে নিঃশেষ করে দেয় । এটাই রুঢ় বাস্তবতা ।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৯৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিমরা আসার আগে নিম্নজাতের লোকদের গলায় হাড়ি বেঁধে নগরে প্রবেশ করতে হতো, যাতে তাদের থুতু নগরের মাটিতে না পড়ে। মুসলিমরা সতীদাহ প্রথাকে বন্ধ ও নিয়ন্ত্রনের চেস্টা করে সম্পূর্ণ সফল না হলেও এই জাতীয় কিছু কুপ্রথা চিরতরে দূর করতে পেরেছে।
সুতরাং ২৫০০ বছর আগে মানুষের কি স্বর্গরাজ্য ছিল, তা সহজেই অনুমেয়।
কোলকাতা জাদুঘরে একটি গ্যালারী আছে, যেখানে খ্রিষ্টপূর্ব থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পাওয়া পাথরে খোদাই করা বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি শতাব্দী অনুযায়ী সাজিয়ে রেখেছে। দেখা যাচ্ছে যে, দ্বাদশ শতাব্দী থেকে মূর্তি গুলোতে ক্রমান্বয়ে জামা-কাপড় পরানো শুরু হয়েছে। মোঘল আমল ও তার পরবর্তী মূর্তিগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, পুরোপুরি কাপড় পরানো হয়েছে। -এই উদাহারনটি থেকেই বুঝা যায় কেমন ছিল ২৫০০ বছর আগের অবস্থা?
মন্তব্য করতে লগইন করুন