যারা কবিতা পছন্দ করেন, সেই কাব্যরসিক-দের জন্য আমার কিছু কবিতা
লিখেছেন লিখেছেন মুজতাহিদ বাপ্পী ১৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:১১:১৮ রাত
আগে যখন সোনার বাংলাদেশ ব্লগে ছিলাম তখন আমরা প্রতি শুক্রবার কবিতার আসর করতাম । এখন আর কবিতার আসর তো দূরের কথা, ব্লগেই আসা হয়না তেমন একটা । মাঝে মাঝে রাজনীতি, বিজ্ঞান, গণিত নিয়ে কিছু পোষ্ট দেই । তবে কবিতা পোষ্ট করে কাউকে দেখাতে পারলে যেমন সার্থক মনে হয় নিজেকে, তেমন আর অন্য ব্লগিং এ মনে হয়না । আমার লেখা কিছু কবিতা আজ একসাথে পোষ্ট করলাম । যারা কবিতাপাগল মানুষ আছেন, আশা করি এই কবিতা বিলানোর মাধ্যমে তাদের কাছাকাছি পৌঁছতে পারব ।
এখনো জানতে পারিনি
আমি জীবনের গল্প বলি
মনুষ্য জীবনের গল্প ।
অতীতের শিক্ষা বলি
প্রচলিত আচার বলি
সাফল্যের শর্ত বলি
প্রকৃতির বিচার বলি
এভাবে এগিয়ে যায় আমার গল্প ।
আমি অপ্রিয় সত্য বলি
পছন্দসই মিথ্যা বলি
যুদ্ধ জয়ের স্বাদ বলি
পরাজয়ের মাতম বলি
শুধু মানুষের গল্প বলি আমি
দুপেয়ে দুচোখি মানুষের গল্প ।
আমি দুর্ভাগ্যের সংজ্ঞা বলি
সুদিনের স্বপ্ন বলি
অপরাধের মাত্রা বলি
অপমানের রং বলি
অনুশোচনার ভাষা বলি
প্রায়শ্চিত্তের পথ বলি
চলতেই থাকে আমার গল্প ।
কেউ শুনুক বা না শুনুক
মানুক আর নাই মানুক
আমার গল্পের শেষ নেই ।
আমি সুখের অভিপ্রায় বলি
প্রাপ্তির উচ্ছ্বাস বলি
নিরবতার অর্থ বলি
অশ্রুপাতের তৃপ্তি বলি
একটা গল্প জুটেই যায় ।
মানুষ থেকে মানুষের গল্প ।
আমি ভেঙ্গে পড়ার যন্ত্রণা বলি
হতাশার বিষাদ বলি
দুর্বলতার সুযোগ বলি
অস্থিরতার সাজা বলি
প্রতিশোধের স্পৃহা বলি
প্রতিক্রিয়ার মাশুল বলি
গল্প যেনো ফুরোতেই চায় না ।
নেশা আর পেশার গল্প,
আঘাত আর মৃত্যুর গল্প,
সৃষ্টি ও বিনাশের গল্প,
সময় আর গতির গল্প ।
মানুষের জীবনে এতো গল্প কেনো ?
মানুষ কি কোন মহাগল্পের চরিত্র ?
কেউ কি এমন আছে যার জীবনে কোন গল্প নেই ?
লুকোনো ব্যথা নেই -না বলা কথা নেই ?
কোন মানুষ এমন নেই ।
সকল মানুষ একই মহাগল্পের অংশ ।
আমি সেই গল্পটি এখনো বলতে পারিনি ।
আমি সেই গল্পটি এখনো জানতে পারিনি ।
শোক-কবিতা
একটা মানুষ যখন বিপদে পড়ে
সমাজবদ্ধ, শ্রেণীবদ্ধ, বৃত্তাবদ্ধ মানুষেরা ভীড় জমায়
দর্শক সেজে দেখতে থাকে মানুষের অপমান
কাতার থেকে একটি পা কেউ সামনে বাড়াবে না
যদি তার প্রতি হায়েনাদের দৃষ্টি পড়ে
যদি তার ভারসাম্য হয়ে পড়ে সংকুচিত
সচেতন মানুষেরা হয়ে যায় আরো সতর্ক
হায়েনারা হুংকার ছাড়ে বিজয়ের উল্লাসে ।
আমি জানি এই নিষ্ঠুরতার ইতিবৃত্ত
আমি জানি তোমার প্রতি যে আঘাত হয়েছে
তার কোন প্রতিক্রিয়া মানুষ দেখাবে না
মানুষ তোমাকে শকুনের হাতে তুলে নির্বিকার বসে থাকবে
মানুষ তোমাকে অজগরের গর্তে ঠেলে ফেলে দেবে
আমিও দায়ী, আমিও অত্যাচারী, নৃশংস
আমি কাপুরুষের চেয়েও ক্ষুদ্র হয়ে
তোমার আর্তচিৎকার শুনে যাচ্ছি নিশ্চল, নিশ্চুপ
আমায় যদি পারো, ক্ষমা করো
আমার মনুষ্য জন্ম তোমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
যে লোক মরে বেঁচেছে- তাঁকে যদি শহিদ বলি,
বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যাকে মাশুল দিতে হয়
তাঁকে আমি শহিদের প্রবাহিত রক্ত বলবো ।
তোমাকে অভিবাদন হে যোদ্ধাহত সৈনিক ।
তোমাকে সশ্রদ্ধ সালাম ।
নববর্ষ প্রহরে
কিছুটা সময় পার হলেই ভোর হবে
বৈশাখের প্রথম প্রহরে হাসবে পূর্বকোণ,
একটি নতুন বছর শুরু হতে চললো,
আমি অবশ্য হিসেব রাখিনি কোনদিন ।
শুধু পুরাতন কে নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবি
আমার জন্য নতুন বলে কিছু নেই ।
আমি সমাজ চিন্তক নই, স্বপ্নচারী নই ।
আগামীর সন্ধান এখন আর করি না ।
পৃথিবী যখন ঘুরে আসে তার একটি চক্র,
জানি অনেকেই আশায় বুক বাঁধে ।
দোকানী তার হালখাতা খুলে আর ভাবে
নতুন বছরে দিনগুলো সব সুদিন হবে ।
কিষানী তার ফসলের মাঠে তাকায় আর ভাবে
নতুন ফসল মুছে দেবে সকল জীর্ণতা ।
কয়েদী তার জেলের গরাদ আঁকড়ে ধরে ভাবে
নিকট প্রভাতেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি ।
সবাই নতুনের মাঝে নিশ্চয়তা চায় ।
কতো বিচিত্র এই নিশ্চয়তা শব্দটি !
সবাই যাকে পেতে চায় নিঃশর্তে ।
বিধাতা একটা ভালো বুদ্ধি করে রেখেছেন ।
মানুষের মনে আশার বীজ রেখে দিয়েছেন ।
আশা ভেঙ্গে গেলে আমরা আবারো জোড়া দিতে থাকি
বারবার একই আশা নিয়ে চলতে থাকি অচেনা পথ ।
যদি সব মানুষ আশাকে মিথ্যে কুহকিনী জানতো !
যদি সব মানুষ একত্রে নিজেদের ধ্বংস করে দিতো !
বিধাতার সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতো ।
বছরের পর বছর শুধু যেতেই থাকতো,
কেউ তার সংখ্যা জানতে চাইতো না ।
দিন-মাস মিলিয়ে রাশিফল জানতে চাইতো না ।
সময়ের বৃত্তে বন্দী হতো না কোন মানুষ ।
নতুন বছরে আমার কি কোন প্রত্যাশা আছে ?
পুরাতন বছরে আমার কোন প্রাপ্তি কি আছে ?
থাক, থাক- আর হিসেব করবো না ।
অন্তত আমি তো বেঁচে আছি ।
একটু সময় তো বিধাতা দিলেন আমাকে !
কটা আশ্রয় তো আমার আছে !
কিছু মানুষ তো আমার ভালো চায় !
এটুকু পূঁজি নিয়ে বছর শুরু হলে মন্দ কি?
দেখি কতোটা এগোতে পারি এই নষ্ট সময়ে ।।
যবনিকাপাত
রেল গাড়ির জানালা থেকে একটি গ্রাম,
মসজিদের মিনার, গাছপালা আর টিনের চাল,
আলুথালু দৃষ্টিতে উৎসুক কিছু ছেলেমেয়ে ।
ডিঙ্গি দিয়ে পারাপার শান্ত একটি নদী,
নৌকা থেকে উপুড় হয়ে শাপলা-শালুক,
কারেন্ট জালে আটকে থাকা সরপুঁটি ।
ভাটি পথে একা পথিক কাশবন ছুঁয়ে হাটা
মেঠো পথে অবসাদে বয়সী বটের ছায়া ।
সাঁঝের লাল আকাশে দাঁড়িয়েছি ঊঠোনে ।
ঠিক যে বাড়িতে কেটেছে শৈশব,
আতুঁড় ঘরের মুখোমুখি বিভ্রান্ত যৌবন ।
আমাকে দেখে ছেলেবুড়ো সবার চোখে বিস্ময়,
কতো বড়ো হয়ে গেছো !
এতোদিন পর এলে ! শহরে সবাই ভালো তো !
এমনি কতো কৌতুহলে গভীর মমতা,
হৃদয় থেকে হৃদয় বুঝি ধমনীতে গাঁথা !
কোলাহল-হাসি শেষে নিরব পুকুর পাড়,
পাশে রেখে নতুন কবর কাঁপছে বাঁশঝাড় ।
কয়েকটি শুকনো পাতা আর টুকরো পাথর ।
পিতার জননী, আমার দাদীর কবর ।
মৃত্যুর ভোরে থাকতে পারিনি পাশে,
শেষ কথাটুকু শোনার হলোনা অবকাশ,
নিথর মাটি লুকিয়েছে সবুজ দুর্বাঘাসে,
নিজ রক্তের প্রতি যেনো আত্মার অবিশ্বাস ।
তারপর-
একদিন আবার এলাম ফিরে
ইট-কংক্রীটের তপ্ত শহরে
জীর্ণ জীবনের চেনা মরীচিকায় ।
আপন-আত্মীয়, বংশ-রক্ত,
সুধী-পরিজন, বন্ধু-ভক্ত,
স্বজন-স্বীকৃতি শুধুই যবনিকায় ।
Musing in Hope
I only say, suppose this supposition !
On Nature, Human action-reaction;
From all we hear and all we see,
Remain the records of breathing free,
The good and evil of mortal state
Musing in Hope or Truth ultimate;
What we feel of sorrow and despair
Never faded our passion to dare !
যে সময়ে তোমাকে ছিলো প্রয়োজন
মৃদুলক্ষণা,
তোমাকে ডাকবো ভাবিনি কখনো,
কিছুটা লজ্জা, কিছুটা জড়তা,
এখনো আড়ষ্ট রেখেছে আমাকে ।
এখনো ভাবি, ঠিক হবে কিনা !
তারপর- জড়তা হয় পরাজিত ।
লজ্জাকে দিই নির্বাসন ।
এই সময়ে তোমাকে ছিলো প্রয়োজন ।
হয়ত তুমি মুচকি হেসে উড়াবে ।
বলবে- এ তো নতুন কিছু নয় ।
পুরুষ মাত্রই এ প্রতীক্ষায় ।
স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকের অপেক্ষায় ।
দেহের তাড়না মনের বাসনা
কতই না আদিম এ প্রার্থনা !
আমি হয়ত চুপ করে থাকব ।
মুখ লুকিয়ে প্রস্থানপদ হব ।
ফেরার পথে কি তীব্র যন্ত্রণা !
সে আঘাতের তুমিই ছিলে উপশম ।
ঢেউ থামাতে বহুদূর গিয়েছিলাম
কত জল হারিয়েছি বিপরীত স্রোতে
মেঘ সরাতে বনহুর সেজেছিলাম
কত ছল মাড়িয়েছি পলায়ন পথে
এতোটা ভীরু নিজেকে কখনো মনে হয়নি !
কেনো এতো নিথর হয়ে পড়েছি আজ !
কি চাই আমি তোমার কাছে ?
কি এমন নির্লজ্জ প্রলোভনে পড়েছি আমি ?
আমারও কি কল্পনা হয় না !
আমারও কি কোন জগত নেই !
আমি তো আমার জগতে ভালোই ছিলাম,
হঠাৎ কি জানি কোন খেয়াল-
আমাকে পাশ ফিরিয়ে দিলো ।
আমার পাশে তো কেউই নেই !
কেউ কি ছিলই না কখনো ?
আমার জগত কি আর কেউ লক্ষ্য করেনি ?
আমার কবিতা আর কেউ তাহলে পড়েনি ?
আমার কৌতুক আর কাউকে হাসায়নি ?
আমি আর ভাবতে পারিনি,
নিজেকে স্থির রাখতেও পারিনি আমি ।
জীবনের সকল প্রসঙ্গ নোনা হয়ে আসছে ।
এ কান্না কোন অভাব থেকে নয় !
অপূর্ণতার আক্ষেপ থেকে নয় !
আর্তচিৎকার চেপে থাকার মিথ্যা প্রহসন ।
মৃদুলক্ষণা, আমি আজ বলেই দেবো-
এটা এক কঠিন সময়-
এ সময়ে তোমাকে বড় বেশি প্রয়োজন ।
তথাপি পূর্ণতা প্রাপ্তি
একটি গাছ খুঁজে ফিরছি বহুদিন থেকে
যার ফুল পাতা চিবিয়ে খেলে
সর্ব রোগের বিনাশ হবে-
যে গাছের বাকল বেঁটে পানিতে মিশিয়ে
সর্ব অঙ্গে মাখাতে হবে ।
শিকড় ডুবিয়ে রস খেলে পরে
দীর্ঘ জীবন পাওয়া যাবে ।
সাদাকালো এক চশমা খুঁজছি
যেখানে দেখাবে মানবাত্মা ।
অভিনয় থেকে মিথ্যা থেকে
ছেঁকে দেবে সব সত্য বিম্ব ।
কষ্টের জল- মমতার জল
আলাদা করেই বুঝব আমি ।
একটি পাখি খুঁজে বেড়াচ্ছি-
যার মুখ থেকে আমার ভাষা
শুনব দিনরাত ।
সর্বক্ষণ যে আমার পাশে পাশে থাকবে
শিকল না পরে বন্ধনে রবে
মুক্ত ডানা মেলে
এগিয়ে থাকবে- পিছিয়ে পড়বে
কক্ষণো আর ছেড়ে যাবেনা ।
একটি তরীর সন্ধানে আছি-
যাতে ছিড়বে না পাল- ভাঙ্গবে না বৈঠা
যে তরী ডুববে না কখনো ।
জলে-স্থলে-মোহনায় চলবে
কোথাও যাবে না থেমে ।
একটি বীণা পেতে চাইছি-
যার সুর কখনো পুরনো হবে না
তারগুলো রবে মরীচা বিহীন
হোক না বয়স একশ বছর,
তর্জনী, মধ্যমা আর অনামিকায়
সময় হারাবে গতির খেয়াল ।
একজন মানুষের সংস্পর্শ চাইছি
যার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ব
চুলগুলোতে আঙুলের লুকোচুরি পেয়ে
আবার চোখ মেলে তাকাব ।
মেঘের আড়ালে চাঁদটাকে আর
মনে হবে না অনেক দূরে ।
অক্ষমতার অপরাধবোধে
ফিকে হবে না স্বপ্নের রঙ ।
আর লাগবে না কিছুই আমার
বুঝব এবার পূর্ণতা পেয়েছি ।
(মুজতাহিদ বাপ্পী, ২০১৩)
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন