পুলিশী নির্যাতনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখা !!!
লিখেছেন লিখেছেন রিফায়েত বিন কবির ২৩ মার্চ, ২০১৩, ১০:১৫:৪৫ সকাল
সাম্প্রতিক সময়ে কিংবা যে কোন সময়ে দেখা যায় পুলিশ বিরোধী দল কিংবা আটক নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন করতে । আর সেটা আমাদের দেশে যেমন আছে তেমনি আছে উন্নত বিশ্বে । আমাদের ঢাকা থেকে সুদূর আবু গারিব কারাগার তার অকাট্য প্রমাণ । কেন এমন হচ্ছে ? বিষয়টি বুঝার জন্য আপনাদের নিয়ে যাব স্ট্যানলি মিলগ্রামের একটি বিখ্যাত পরীক্ষায় । অনুমান করা হয় আজকাল এরকম পরীক্ষা আইনসংগত মনে করা হবে না এবং কাউকে করতে দেওয়া হবে না ।তবে সত্তের দশকে (১৯৬৩ ) মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলী মিলগ্রামের কোন সমস্যা হইনি ।
পরীক্ষাটি করা হয়েছে যেভাবে ঃ খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেয়া হল ছাত্র এবং শিক্ষক সংক্রান্ত একটা পরীক্ষা জন্য কিছু স্বেচ্চাসেবক দরকার । বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন । মনোবিজ্ঞানীরা প্রথমে তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন । এ পরীক্ষাটা করার জন্য দুজন স্বেচ্চাসেবক দরকার । একজন শিক্ষক হবে অন্যজন ছাত্র । লটারীর মাধ্যমে একজনকে শিক্ষক অন্যজন কে ছাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হলো । ছাত্রকে বলা হলো প্রথমে কিছু জোড়া শব্দ মুখস্ত করতে এবং শিক্ষক জোড়া শব্দের প্রথম শব্দটি বললে তাকে দ্বিতীয় শব্দটি বলতে হবে । সে যদি সঠিক ভাবে বলতে না পারে তাকে শাস্তি হিসেবে ইলেকট্রিক শক দেয়া হবে । পরীক্ষার উদ্দেশ্য শাস্তি দিয়ে দ্রুত শেখানো যায় কিনা তা পরীক্ষা করা ।
শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়া স্বেচ্চাসেবকে বলা হলো ছাত্র যতটা ভূল করবে তাকে ততটা ইলেকট্রিক শক দিতে হবে । শুধু তায় নয় প্রত্যকবার ভুল করার পর শকের মাত্রা ১৫ ভোল্ট করে বাড়াতে হবে । একবার পরীক্ষা শুরু হলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ উঠে যেতে পারবে না । একটা যন্ত্রও বানানো হলো এটা শুরু হয় ৪৫ ভোল্ট দিয়ে যা ১৫,১৫ করে বাড়াতে বাড়াতে ৪৫০ পর্যন্ত বাড়ানো যায় । ৪৫ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক সাধারনত বোঝাই যায় না কিন্তু ৪৫০ ভোল্ট রীতিমত ভয়াবহ ব্যাপার মরে যাওয়ার অবস্থা ! কিন্তু ছাত্র শিক্ষক দুজনেই রাজি হলেন ।
ছাত্রটিকে একটা চেয়ারে বেঁধে ফেলা হলো । ইলেকট্রিক তার জড়ানো হলো তার গায়ে ।অন্য একটা ঘরে নিয়ে শিক্ষককে শেখানো হলো কিভাবে যন্ত্রটি কাজ করে ,৪৫ ভোল্টের একটা শকও দেয়া হলো ,শক খাওয়ার অনুভুতি কেমন বুঝার জন্য ।পরীক্ষা শুরুর আগে আবারো মনে করিয়ে দেয়া হলো পরীক্ষা শুরু করার পর শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ উঠে যেতে পারবে না ।
পরীক্ষা শুরু হলো । শিক্ষক জোড়া শব্দের প্রথমটি বলেন ছাত্র বলেন তার জোড়টি । ছাত্রের উত্তর সঠিক হলে তো বেঁচে গেল কিন্তু ভুল করলে একটা শক দিয়ে ১৫ ভোল্ট বাড়িয়ে দেয়া হলো । প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু বিপত্তি বাঁধল যেই না ছাত্রের একটা একটা করে ভুল করা আরম্ভ হলো আর ভোল্টেজের মাত্রা বাড়তে লাগলো আর শক খেয়ে জন্ত্রনায় গগন বিদারী চিৎকার করা আরম্ভ হলো । শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়া স্বেচ্চাসেবক এই ভংকর অমানবিক অমানুষিক পরীক্ষা বন্ধ করতে অনুমতি চাইল কিন্তু রাজি হলেন না মনোবিজ্ঞানীরা । পরীক্ষা চলতে থাকল, ছাত্র ভুল করতে থাকলো আর শিক্ষক বাড়াতেই থাকলেন শকের মাত্রা আর সেই সাথে বেড়েই চলল ছাত্রের গগন বিদারী চিৎকার ।ভোল্টেজের মাত্রা শেষে এতই বাড়ল যে বেচারা ছাত্র জ্ঞান হারিয়ে ফেলল কিন্তু তবুও মুক্তি নেই তার । জ্ঞান ফেরার পর আবার শুরু হলো । শুরু হলো জোড়া শব্দের প্রথমটি বলা শুরু হল ভুল ,শুরু হলো ভোল্টেজ বাড়ানো , শুরু হলো ফের গগন বিদারী বিভৎস চিৎকার । সে চিৎকার অবশেষে শেষ হলো ৪৫০ ভোল্টে !
এই ছিল সেই বিখ্যাত পরীক্ষা । কি মনে হচ্ছে অমানবিক ,প্রমাণ হলো পিঠিয়ে ছাত্রদের শেখানো যায় না । তাই না ? না আসলে এটি ছাত্র শিক্ষকের কোন পরীক্ষা ছিল না এটি ছিল ক্ষমতাবান একজন মানুষ কোন সাধারন মানুষকে আদেশ দিলে সে তা কতুটুকু পালন করে তা দেখা । এমনকি নির্মম অত্যাচার করার আদেশ দেয়া হলে সে তা মানতে তা চায় কিনা ? মিলগ্রাম দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষকে একটা অন্যায় আদেশ দেয়া হলে ,সেটা সে না মানার মনোবল বা দৃঢ়তা দেখাতে পারে না । আর এজন্যই দেখা যায় নেতা নেত্রীদের আদেশে সাধারন কর্মীরা অবলীলায় রাস্তায় মানুষ পিঠিয়ে মেরে ফেলে । অধিনায়কের নির্দেশে সেনাবাহিনী যুদ্ধে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারে । পুলিশ বেধড়ক পিঠিয়ে লাশ বানিয়ে পানিতে ফেলে দেয় কিংবা টেনে হিচড়েঁ নিয়ে যায় বিরোধী দলের কর্মীদের কিংবা সাধারন কোন পথচারীকে কিংবা কোন অপরাধীকে। কারন নির্দেশ অমান্য করার ক্ষমতা তাদের নেই ।
বর্তমানে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে পুলিশ আন্দোলনকারিদের মধ্যে হচ্ছে সংঘর্ষ । পুলিশ বেধড়ক পিঠিয়ে লাশ বানাচ্ছে বিরোধীদের, উল্টো প্যাঁদানিও খাচ্ছে ।পুলিশ, আন্দোলনকারি ও বিরোধীদের বলব আপনারা বাড়াবাড়ি করবেন না । বিশেষ করে আন্দোলনকারিদের বলল আপনাদের হাতে যেন ২৮ অক্টোবরের মত ঘটনা না ঘটে । তাই বলে পুলিশ মারতে আসলে মার খাবেন সেটিও যেন না ঘটে ।
ফুট নোট ঃ ছাত্রটির জন্য আপনাদের খুব খারাপ লেগেছে তাই না । না খারাপ লাগার কিছুই নেই আসলে পুরো পরীক্ষায় ছাত্রটি কেবল অভিনয় করে গেছে । তাকে শকও দেয়া হয়নি ,বেচারা স্বেচ্চাসেবক শিক্ষক বুঝতেই পারেনি যে এটা ছিল সাজানো নাটক । লটারির সাহায্যে তাকে যে শিক্ষক হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে সেটাও ছিল সাজানো ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন