ফারুকের বাবা রা আমার বাবা রা
লিখেছেন লিখেছেন রিফায়েত বিন কবির ১৫ জুন, ২০১৪, ১০:৩৮:২৬ রাত
স্লামাইলাকুম স্যার ।
ওয়ালাইকুম সালাম ।
স্যার আমারে ছিনছেন ? আমি ফারুকের বাবা ।
চলতি পথে অনেকের সাথেই দেখা হয় । সালাম দেয় । জানতে চায় কেমন আছি । বলা বাহুল্য এদের ৯৯ পারসেন্টের নাম পরিচয় আমার মনে থাকে না । হয়ত কখনো কোন অনুষ্ঠানে পরিচয় কিংবা চিকিৎসা নিয়েছেন । এত মানুষের নাম পরিচয় মনে রাখা সম্ভব নয় । তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমন ভাব ধরতে হয় যে আমি উনাকে চিনি । কিন্তু এই ব্যাক্তি র সাথে তা খাটছে না । তাই জিজ্ঞেস করলাম
কোন ফারুক ?
স্যার সন্দ্বীপ এর ফারুক । ঐ যে পায়ে একসিডেন্ট করেছিলো । ২৬ নাম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল আপনি রক্ত আর ঔষুধ জোগাড় করে দিছেলেন ।
হ্যা মনে পড়লো ফারুক কে । ১০ বছরের বাচ্ছা । খেলতে খেলতে কিভাবে যেন একসিডেন্ট করে পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলে যায় । ভর্তি করে চমেক হাসপাতালে । কিভাবে কিভাবে সন্দীপে আমার পরিচিত কোন একজনের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমার কাছে আসে । তাকে আমি উপেক্ষা করতে পারি নি । ছেলের অপারেশন করার জন্য তিন ব্যাগ রক্ত যোগাড় করতে হলো । প্রতিদিন তিন তিনটা করে সেফূরক্সিম ইঞ্জেকশন ঔষুধ কোম্পানির লোকজন ধরে ম্যানেজ করতে হত ।
অনেক দিন ধরে হাসপাতালে ছিল ছেলেটা । পায়ে শেষ পর্যন্ত গ্যাংরিন হয়ে যায় ।
একদিন ফারুকের বাপ হাজির স্যার কি করব ?
কেন কি হয়েছে ?
স্যার স্যারেরা বলেছে পা নাকি কেটে ফেলতে হবে । না হয় ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে । এখন স্যার আমি কি করব ? সারাদিন হসপিটালে থেকে সন্ধ্যা থেকে সারা রাত রিকশা চালাই । যা পায় তা দিয়ে এতদিন ছেলের ঔষুধ কিনেছি । আপনার হোস্টেল থেকে খাবার নিয়েছি । এখন কি করব স্যার ? আপনি যা বলবেল তাই করব । পা কাটতে বললে কেটে ফেলব ঢাকায় যেতে বললে ঢাকায় যাব ।
অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়লাম কি করব ? সারা রাত সেদিন ঘুমাতে পারিনি । কেবলই চোখে ভাসছিল ফারুকের বাপের ছবি সারা দিন হাসপাতালে ছেলের পাশে থাকার পর ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগাতে এক বাপ ক্লান্তি ভুলে রাতের আধার ভেদ করে রিকশা নিয়ে ছুটে চলছে ।
খুব মনে পড়ে গেলো আমার বাবার কথা । সেদিন হোস্টেলে নতুন উঠার পরদিন সন্ধ্যায় বাবা হাজির লেপ তোশক নিয়ে । বৃষ্টি স্নাত সেই রাতে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে এসেছে । বাবা বলল হোস্টেল থেকে মাইল দেড়েক দুরে গাড়ি থেমে যায় । রাস্তা খারাপ তাই আর আসতে পারবে না । রামচন্দ্রপুরের এই প্রত্যন্ত এলাকায় কাজের লোক পাওয়া যায় না । তাই অগ্যতা তিনি নিজেই কাঁধে করে লেপ তোশক নিয়ে এসেছেন । মুহুর্তেই সেদিন আমার কি যে কান্না পেয়েছিল । অবাক আজও আমার কান্না পাচ্ছে । বাবা দের কাধ এত বড় কেন ????
ভালো থাকুক পৃথিবীর ফারুকের বাবা রা ভালো থাকুক আমার বাবা ।
ফুট নোট : ফারুক কে ঢাকায় পাঠানো হয় আমার সিদ্ধান্তে । প্রায় পতিদিনই ফারুকের বাবা তার ছেলের চিকিৎসা র আপডেট জানাতেন । একসময় যোগাযোগ হারিয়ে ফেলি । আজ তার বাবা জানালো তার পা টা বাঁচানো যায় নি। আমাকে ধন্যাবাদ জানালো । হাসি
মুখে বলল ছেলেটা তার ভালো আছে । দোয়া চাইল।
ফারুকের বাবা হেঁটে চলল । আমি ফারুকের বাবার নাম জানি না । শুধু জানি হেঁটে যাচ্ছে ফারুকের বাবা হেঁটে যাচ্ছে এক বাবা । বাবা রা এমনি করে হেঁটে যায় অনন্তকাল ।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন