জাল্লিকাট্টু!!!!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:১৩:০৪ দুপুর
জাল্লিকাট্টু সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানতাম না। হঠাত করেই মিডিয়াতে এই শব্দটা দেখে একটু জানার চেষ্টা করলাম। এটা মুলত ভারতের তামিলনাড়ু এলাকায় প্রচলিত একটি উৎসব বা খেলায়। ”জাল্লিকাট্টু” শব্দটির সাধারন অর্থ পয়সার থলে! তামিলনাড়ুতে “পঙ্গল” বা নতুন ফসল তোলার পরের উৎসব এর অঙ্গ হিসেবে এই খেলার আয়োজন করা হয়। এই ভয়ংকর খেলাটির প্রধান উপকরন হল একটি সুপুষ্ট ষাঁড় ! এটাকে ছেড়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। রাগান্বিত ষাঁড়টি যখন রাস্তা ধরে দেীড়াতে থাকে তখন সেই খেলার অংশগ্রহন কারীরা চেষ্টা করে ষাঁড়টির কুঁজ কে জড়িয়ে ধরে এর পিঠে চরতে। ঝাঁকুনি থেকে বেঁচে যে সবচেয়ে বেশি সময় ষাঁড়টির পিঠে বসে থাকতে পারে সেই হয় বিজয়ি। কখনও একক কখনও দলবদ্ধভাবে প্রতিযোগিরা এই খেলায় অংশগ্রহন করে থাকে। একক এর ক্ষেত্রে ষাঁড় টিকে প্রায় ১৫ মিটার লম্বা একটি রাস্তায় ছাড়া হয়। দলবদ্ধ খেলায় ৭ থেকে ৯ জন অংশ নেয়। যেখানে একটি বড় আবদ্ধ মাঠে এই প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতার অন্যতম নিয়ম হচ্ছে কেবলমাত্র ষাঁড়ের কুঁজ কে জড়িয়ে ধরেই পিঠে উঠতে হবে। অন্য কোন অংশ ধরে উঠলে হবেনা। এই খেলায় অনেক সময় ই ষাঁড়টির উপর থেকে পরে গিয়ে কিংবা শিং এর গুতোয় অনেকে আহত হয়। স্পেন এর প্যাম্পালোনার বুল রেসিং এর সাথে এর মিল রয়েছে।
এই খেলাটি এখন মিডিয়ার আলোচনায় আসার কারন হলো গত বছর এই প্রতিযোগিতার পর ভারতিয় সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়। এই রায়ে এই খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। পৃথিবির সব দেশেই পশু-পাখিদের প্রতি অত্যাচার এর বিরুদ্ধে আইন আছে। কিন্তু ভারতে এই আইনটি বেশ কঠোর করা হয়েছে ২০০৫ ও ২০১২ সালে। এই আইন এর অধিনে সার্কাস এর মত খেলা দেখানর জন্যও কোন প্রানীকে ব্যবহার নিষিদ্ধ। এমনকি মুভি তৈরিতেও কোন প্রানী ব্যবহার করা যাবেনা। দেখান যাবেনা কোন চিড়িয়াখানা। যে কারনে সন্দিপ রায় এর তৈরি ফেলুদার প্রথম উপন্যাস “ বাদশাহি আংটি” এর চিড়িয়াখানা ও দেখান হয়নি ছায়াছবিতে। এই আইন এর অধিনেই ”জাল্লিকাট্টু” কে পুরাপুরি নিষিদ্ধ করে সুপ্রিম কোট।
কিন্তু এই বছর পাঙ্গন উৎসব এর প্রাক্কালে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারতের তামিলনাড়ুতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক গনবিক্ষোভের। এই খেলার পক্ষে দেখা যাচ্ছে বিশাল জনসমর্থন। রাজনৈতিক মত বিরোধ সরিয়ে সকল দলই এই বিষয়ে একমত যে এটি তামিলনাড়ুর ঐতিহ্য এবং এই খেলা চলতে দেওয়া উচিত। সঙ্গিতজ্ঞ এ আর রহমান এবং বিশ্বনাথন আনন্দ এর মত খেলোয়াড় রাও এই খেলার সমর্থনে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত যতটুক বুঝা যাচ্ছে গন আন্দোলন এর মুখে বিশেষ অর্ডিন্যান্স জারি করে এই খেলাটিকে সংশ্লিষ্ট আইন থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে তামিলনাড়ুরর প্রাদেশিক সরকার এবং ভারতের কেন্দ্রিয় সরকার এর ও সমর্থন আছে তাতে।
সাধারভাবে পশুপাখি দের প্রতি নির্মমতা প্রদর্শন কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। কিন্তু এই বিষয়টি যদি এমন হয়ে যায় যে খাদ্যের জন্য পশু হত্যা কিংবা আক্রমনকারী পশুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও বেআইনি করা হয় তখন বিষয়টি ভিন্নরুপ নেয়। বিশ্বব্যাপি পেটা (PETA- People for Ethical Treatment of Animal) নামের একটি সংগঠন এই নিয়ে কাজ করছে। সংস্থাটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় আমেরিকার নিউইয়র্ক এ এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ইনগ্রিড নিউকার্ক নামের এক মহিলা। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি এখন একটি বিশ্বব্যাপি প্রসারিত সংগঠন। এই সংস্থার উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপি পশুদের প্রতি কঠোর আচরন রোধ করা এবং খাদ্য হিসেবে মাংস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। এই সংস্থাটি পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোষাক এর বিরুদ্ধেও কাজ করে। এই সংস্থাটির সাথে বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রি সহ তারকা জড়িত। পেটা তাদের কার্যক্রম এর জন্য অত্যন্ত বিতর্কিত একটি সংস্থা। চামড়া জাতিয় পোষাক এর বিরোধিতার নামে তারা সম্পুর্ন নগ্ন মডেল ব্যবহার করে প্রচারনা চালায়। তাদের একটি স্লোগান ই হচ্ছে ”র্যাদার গো নেকেড টু ওয়্যার ফার”। এই ভাবে তারা নগ্নতাকে প্রমোট করে যাচ্ছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষনা কাজে বাধা দেওয়া এমনকি সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরির জন্য ঘোড়া ব্যবহার কিংবা পশু থেকে ডায়াবেটিস রোগির প্রয়োজনিয় ইনসুলিন সংগ্রহে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আছে। পেটা প্রায়ই শিশুদের উদ্দেশ্য করে নগ্ন এবং কঠোর স্লোগান যুক্ত পোষ্টার তৈরি করে এবং প্রচারনা চালায়। পশুর দুধ ব্যবহার এর বিরুদ্ধেও এই প্রচারনা চালান হয়। পেটা স্টিভ আরউইন এর মত পরিবেশ সংরক্ষন বিদদেরও বিরোধি কারন তারা প্রয়োজনে শিকার এবং চিড়িয়াখানা কে সমর্থন করেন। ভারতে২০০০ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। ইতমধ্যে ভারতের বেশ কয়েকজন চিত্রাভিনেত্রি ও খেলোয়াড় এই সংস্থার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে প্রায় নগ্ন বিজ্ঞাপন ও রয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখন ভারতে বেশ গতি পেয়েছে। অনেকেই অহিংসা বা এই ধরনের ভারতিয় আদর্শের কথা বলে তাদের সমর্থন করছেন। সঞ্জয় গান্ধির বিধবা এবং বর্তমান ভারতের কেন্দ্রিয় মন্ত্রি মেনকা গান্ধি এইসংস্থার অন্যতম সমর্থক।
মুলত এই সংস্থার উদ্যোগেই পশুবলি ও কুরবানির বিরুদ্ধে ভারতব্যাপি একটি প্রচারনা চলছে। বছরখানিক আগে ভারতের হিমাচলপ্রদেশ এর হাইকোর্ট একটি আইনে সকল ধরনের পশুহত্যা নিষিদ্ধ করেছিল এই সংস্থার করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে যা এখন ভারতিয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধিন আছে। পেটার কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু করার প্রয়াস পাচ্ছে। গত কয়েকবছর ধরেই প্রতি বছর কুরবানি ঈদের আগে বিবৃতি বা লিখার মাধ্যমে কুরবানির বিরোধিতা করার চেষ্টা করে এই সংস্থার আদর্শের কিছু মানুষ। গত কুরবানির ঈদে গরু জবাই না করে ছেড়েদেওয়ার মাধ্যমে কুরবানির আদর্শ বাস্তবায়ন এর একটা হাস্যকর প্রচারতা চালানর চেষ্টা হয়েছিল।
পেটার মত সংস্থাগুলি যে আদর্শ নিযে কাজ করার চেষ্টা করছে সেটা কোনভাবেই স্বাভাবিক নয়। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নষ্ট করবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। আমাদের উচিত এখনই এগুলিকে প্রতিরোধ করা।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কুরবানী আসলে পশুপ্রেম জেগে উঠে। ফাটা বলিতে কী পশুপ্রেম কোথায় যায়?
সুন্দর আর্টিক্যালটির জন্য ধন্যবাদ।
কিছুই জানতান এ সম্পর্কে!
জানিয়ে দেয়ায় ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইর!!
এদেরকে যেখানে পাওয়া যায়, সেখানো ধোলাই দেওয়া দরকার।
সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই্য়া।
আমি দেশ থেকে আসার ৭ দিন আগ থেকে মোটামুটি ঘরবন্দি ছিলাম। কুত্তালীগ আমার পিছনে কঠিন ভাবে লেগেছিল। তাই শেষের দিকে আর টাউনে আসা হয়নি। ইনশাআল্লাহ আগামীতে যখনই দেশে আসি আপনার বাসায় দাওয়াত না দিলেও আসবো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন