উম্মাহ এর ধারনা ও জাতিয়তাবাদ
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৪:১৪:৩৪ বিকাল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পুর্ব পর্যন্ত মুসলিম জাহানে একটি নামমাত্র খিলাফত ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এর কেন্দ্র ছিল বর্তমান তুরুস্কের ইস্তাম্বুলে। ক্ষয়িষ্ঞু এই খিলাফত ১৯২৪ সালে শেষ হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই এই খিলাফত হারিয়ে ফেলে মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিম জাতির পবিত্র দুই শহর এর নিয়ন্ত্রন। পাশাপাশি জেরুসালেম সহ ফিলিস্তিন এর নিয়ন্ত্রন ও হারায় মুসলিমরা। মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রন হারানর পিছনে তুর্কি খিলফত এর বিরোধি শক্তি ছিল মুলত আরব জাতিয়তাবাদ। এই আরব জাতিয়তাবাদ এখন আরো শতধা বিভক্ত হয়ে আরব উপদ্বিপ কেই একাধিক রাষ্ট্রে বিভক্ত করে রেখেছে। আর সেই বিভক্ত রাষ্ট্রগুলি ঘিরে এখন চলছে রক্তাক্ত সংঘাত।
যখন মুসলিম রাষ্ট্রগুলি ইউরোপিয় উপনিবেশবাদি শক্তিগুলির করতলগত তখনই জামালউদ্দিন আফগানির মত চিন্তা নায়ক এরা প্যানইসলামিক মতবাদ এর প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু যে কারনেই হোক সেই মতবাদ সফল হয়নি পুরাপুরি। তবে সেই আন্দোলন এর উপর ভিত্তি করেই উপমহাদেশ, মিসর সহ আফ্রিকার উত্তরাঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থানিয় মুসলিম জাতিয়তাবাদ এর উন্মেষ ঘটে। এই আন্দোলনগুলিও কোন একক মুসলিম উম্মাহ প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি কিন্তু স্থানিয় ভাবে মুসলিম জাতির মধ্যে শিক্ষা ও ইসলাম উভয় এর বিকাশ ঘটাতে পেরেছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের বাংলাদেশের কথা চিন্তা করুন। ১৯৪৭ সালের আগে এই অঞ্চল এর মুসলিম দের শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অবস্থান যা ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এর মধ্যে তার বিশাল পরিবর্তন হয়। একই ভাবে ১৯৭১ সালের পরে এই বিকাশ আরো দ্রুত ও সংহত হয় যে কোন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ সেটা অবশ্যই স্বিকার করবেন।
ইসলাম কি এই জাতিয়তাবাদ সমর্থন করে? এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি বলছে সকল মুসলিম দেশই এই জাতিয়তাবাদ এর বাইরে নয়। আল্লামা ইকবাল জিনি লিখেছিলেন “ মুসলিম হ্যায় হাম, সারা জাঁহা হামারা” তিনিও কিন্তু উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তাই করেছিলেন। এমনকি নিকট মুসলিম প্রতিবেশি রাষ্ট্র আফগানিস্তান কেও তিনি তার চিন্তার অন্তর্ভুক্ত রাখেন নি।
আজকের সিরিয়াতে চলমান সংঘাত এ দেখা যাচ্ছে কেউ দোষারোপ করছে ইরান কে কেউবা অতি অশালিন ভাবে তুরুস্কের এরদুগান সরকার এর সমালোচনায় মুখর। এমনকি জাতিয়তাবাদ এর জন্য আমরাও প্রতিবেশি অত্যাচারিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরনার্থিদের প্রতি কোন সহায়তা করছি না বা করতে পারছিনা। অথচ এভাবে বিভক্ত হয়েও ঐক্য বজায় রাখা অসম্ভব কিছু নয়। ইউরোপিয় দেশগুলি সবাই একক মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়েও ভাষা, পোষাক এমনকি খাদ্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়েও একক অর্থনৈতিক জোট গঠন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবেও কি উম্মাহ গঠন করা যায়না?
আজকে যারা বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপন কে ইসলাম বিরোধি বলতে চাচ্ছেন আমার প্রশ্ন তাদের কাছে যে উম্মাহ আমরা গঠন করতে পারিনি সেই উম্মাহর দোহাই দিয়ে কেন আমরা নিজেদের স্বকিয়তাকে ভুলে যাব। একটি উদাহরন দিতে পারি এই জন্য। গত শতাব্দির শুরুর দিকে লিবিয়াতে চলছিল ইতালিয়ান উপনিবেশবাদিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তথা সেনেীসি আন্দোলন। লিবিয়ার পূর্বে মিসর তখন অনেকটাই বৃটিশ নিয়ন্ত্রনে। ইতালি বিরোধি বৃটিশরা সেনেীসি আন্দোলন এর প্রতি নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে বৃটিশ-তুরুস্ক সংঘাত শুরু হলে খলিফার অনুরোথে সেনেীসি নেতা সাইয়িদ আহমদ বৃটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। এক সঙ্গে দুই ফ্রন্ট এ লড়তে গিয়ে ব্যর্থ হয় সেনেীসি আন্দোলন। উম্মাহ প্রতি আনুগত্য রাখতে গিয়ে এভাবেই একটা বিরাট মুসলিম জনগোষ্ঠি এভাবেই দির্ঘদিন অত্যাচারিত হয়।
উম্মাহ এখন বাস্তব কিছু নয়। একটি ধারনাগত দর্শন মাত্র। অন্যদিকে আঞ্চলিক জাতিয়তাবাদ একটি বাস্তব। একে অস্বিকার করে নয় বরং এর উপর নির্ভর করে এবং এর অতি জাতিয়তাবাদি বিচ্যুতিগুলিকে প্রতিরোধ করেই গঠন করা যাবে প্রকৃত উম্মাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেশে দেশে অধিকাংশ মুসলমান ধর্ম ও কর্মের ব্যাপারে এতোটাই অসংযম প্রদর্শন করেন যে, ঐক্যের পরিবর্তে বড় ফাটল এবং ক্রমেই তা বৃদ্ধি পেয়ে দুশমনে পরিগ্রহ হচ্ছে।
জাতীয়বাদ বিষয়টিও তাদেরই একটি উদাহরণ।
আপনার সুবিজ্ঞ চিন্তা ও মতামতসহ বিষয়টির উপর আলোকপাত করার জন্য আন্তরিক মুরাকবাদ।
আমার কাছে কেমনযেন মনে হয়, তুরষ্ক সুলতানি শাসন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন