বিপ্লবি অথবা একনায়ক!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০৯:৫২:৪৭ রাত
কিউবা। আটলান্টিক মহাসাগর এর একটি দ্বিপ। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না জাতিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর লিখিত "দূর দ্বিপ বাসিনি চিনি তোমারে চিনি" গানটির সুর মুলত কিউবার আঞ্চলিক একটি সুর থেকে নেওয়া। অনেক দুরের এই দেশটি আমাদের দেশে অনেকেই বোধ হয় চিনেন শুধু তার একসময় এর রাষ্ট্রপতি ফিডেল ক্যাষ্ট্রো এর দেশ হিসাবে। একদিকে বিপ্লবি নেতা, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কঠোর বিরোধি এবং নিজের দেশকে এগিয়ে নেওয়ার নায়ক। অন্যদিকে স্বৈরাচারি একনায়ক এমন বিপরিত ব্যাক্তিত্বের সমন্বয় ক্যাষ্ট্রো গতকাল মৃত্যবরন করেছেন।
চল্লিশ হাজার বর্গমাইল আয়তন এর দ্বিপরাষ্ট্র কিউবা ছিল স্পেনিয় কলোনি। কলম্বাস তার প্রথম সমুদ্র যাত্রায় এই দ্বিপ এ পেীছেন। তারপর স্থানিয় বাসিন্দা আরাওয়াক দের উচ্ছেদ করে সেখানে কায়েম করেন ইউরোপিয় উপনিবেশ। পাঁচশত বছর পরে এই কিউবাতে এক সচ্ছল কৃষক পরিবারে জন্ম নেন ফিডেল আলেকজান্দ্র ক্যাষ্ট্রো রুজ। পিতা- মাতা দুজনেই ছিলেন স্পেনিয় বংশোদ্ভুত ক্যাথলিক খৃষ্টান। মোটামুটি মেধার অধিকারি ক্যাষ্ট্রো কিউবার হাভানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় জড়িয়ে পরেন বিপ্লবি আন্দোলনে। এই সময়ই তিনি প্রথম কিউবার প্রতিবেশি ডোমিনিকান রিপাবলিক এর সামরিক শাসক কে উচ্ছেদ করার সশস্ত্র অভিযান এ যোগ দেন। এই সময়ই তিনি দিক্ষিত হন মার্কসবাদ-লেলিনবাদ এ। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর তিনি আইন ব্যবসা এবং সরাসরি রাজনিতিতে জড়িয়ে পরেন।
কিউবা এবং তার প্রতিবেশি ল্যাটিন আমেরিকা তথা দক্ষিন- মধ্য আমেরিকার দেশগুলির বেশিরভাগ ই উপনিবেশবাদি ইউরোপিয় শক্তিগুলি থেকে স্বাধিনতা পেলেও প্রায় সবগুলি শাসিত হতো উপনিবেশগুলির প্রাক্তন কর্মচারি সামরিক শাসক দের একনায়কতন্ত্রে।সবসময় বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত এই দেশগুলিকে ব্যাঙ্গ করে বলা হতো "ব্যানানা রিপাবলিক"!
কিউবার তখনকার সামরিক শাসক ছিলেন মার্কিনপন্থি বাতিস্তা। ক্যাষ্ট্রো ও তার সহযোগিরা গঠন করেন বিরোধি কম্যুনিষ্ট পার্টি। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এ প্রচন্ড বাধার সম্মুখিন হন তারা। এক পর্যায়ে ক্যাষ্ট্রো গ্রেফতার হন। এমনকি তার প্রথম স্ত্রী ও প্রেমিকা মার্তার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ও হয়ে যায়।
১৯৫৫ সালে অসুস্থ ক্যাষ্ট্রো মুক্তিপান। এবার ক্যাষ্ট্রো ও তার সহযোগিরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন এর পরিবর্তে গেরিলা যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিউবার দুর্গম জলাভূমি এলাকায় আশ্রয় নেন। বাতিস্তা ক্যাষ্ট্রো ও গেরিলাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালান। এই অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে পূর্ন সহায়তা করে। কিন্তু বাতিস্তার সরকার কে বিশ্বাস করতে না পেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালের শেষে ক্যান্টিলো কে কিউবার দায়িত্ব দিতে চায়। কিন্তু ইতিমধ্যে ক্যাষ্ট্রো গেরিলারা সামরিক দিক দিয়ে সাফল্য অর্জন করেন। ক্যাষ্ট্রোর নেতৃত্বে গেরিলারা রাজধানি হাভানা দখল করে। ১৬ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৯ সালে ক্যাষ্ট্রো কিউবার প্রধানমন্ত্রি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ২০০৮ সালের ২৪ এ ফেব্রুয়ারি কিউবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়া পর্যন্ত একচ্ছত্র নেতা হিসাবে ছিলেন সেই দেশের।
অন্য কম্যুনিষ্ট নেতাদের মতই তিনি ছিলেন একনায়ক। কিন্তু তার বিপ্লবি যোদ্ধা হিসেবে সারা বিশ্বে ছিল জনপ্রিয়তা। হাভানা চুরুট মুখে সবুজ ইউনিফর্ম পরা ক্যাষ্ট্রো সারা বিশ্বেই তরুন সমাজের কাছে তার সহযোদ্ধা চে গুয়েভারার মত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৯০ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন এর পতন এর পরও নিজেকে সাহসের সাথে কম্যুনিষ্ট পরিচয় দিয়ে যেতেন এই গেরিলা নেতা। ষাট ও সত্তর এর দশকে বিশ্বের বিভিন্ন স্বাধিনতা আন্দোলন এ অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে তিনি বিশ্বের সকল প্রান্তেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ২০০৮ সালে রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব থেকে অবসর নিলেও তিনি আর্ন্তজাতিক বিষয়ে তার মতামত দিতেন এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছেন।
নিজ দেশে একনায়ক হলেও এই মানুষটি কিউবার উন্নয়ন এর জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। যার মধ্যে কিউবা তে উন্নত সাস্থ্ সেবা অন্যতম। এছাড়া কিউবার চিনি শিল্প সহ শিল্পায়ন এর দিক থেকে অন্য যে কোন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের থেকে উন্নত করেছিলেন কিউবাকে। ১৯৬২ সালের বিখ্যাত কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস এর সময় বিশাল শক্তিশালি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এর সামনে তার নির্ভিক ও কেীশলি আচরন সারাবিশ্বে প্রসংশা অর্জন করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি সবসময়ই ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তৃত্বিয় বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউ টি ওর দরিদ্রদেশগুলির বিপক্ষে পুঁজিবাদি আগ্রাসন বিষয়ে তিনি অনেক আগেই সতর্কবানী দিয়েছিলেন।
নিজেকে এথিষ্ট বা নাস্তিক হিসাবে পরিচয় দিলেও ধর্মবিরোধি তিনি ছিলেন না। তিনি একবার দাবি করেছিলেন যে যিশুখ্রিষ্টই প্রথম কম্যুনিষ্ট! অন্য কম্যুনিষ্ট দেশগুলির মত কিউবাতে ধর্ম বিরোধি কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। তবে ক্যাষ্ট্রো কেীশলে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ধর্মের গুরুত্ব কমিয়ে দেন। একনায়ক ক্যাষ্ট্রো তার দেশে সংবাদপত্র বা কথা বলার স্বাধিনতা তেমন দেননি। কিন্তু মানুষের কল্যান এর জন্য অনেক কাজ করেছেন। ইসরাইল রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান সমালোচক ছিলেন তিনি। ফিলিস্তিনি সরকার কে সবসময় বিভিন্ন রকম সহায়তা করে এসেছেন।
তার দর্শন এবং কাজ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে তবে পৃথিবির ইতিহাসে তার নাম ও অবদান কখনওই মুছে যাবেনা। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে তার অবদান যথেষ্ট। সম্ভবত ১৯৭৩ সালে একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাকের উপর সাহস এর সাথে কিউবার মত একটি ছোট্ট রাষ্ট্রকে তার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন তিনি।
বিষয়: বিবিধ
২২৩৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ।
রয়েছে। টার্কি এবং সোদী আরব মসজিদের
জন্য জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে।
তবে অনেকে না বুঝে আপনাকে বাম ট্যাগ দিতে পারে। হাহাহা।
সোভিয়েট ইউনিয়ন এর পতনে মুসলিমদের ও যে কিছু ক্ষতি হয়েছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে।
এর আগে ডৎ আবদুল কালাম খান সম্পর্কে পোষ্ট দিয়ে ও ট্যগ হয়ে গেছি!! অসলে আমরা এখন অত্যন্ত অসহিষ্ঞু হয়ে গেছি!
এটা নিয়ে আমার মামনির সাথে লেগে যায় খুব ।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
আবু তালেব রাসূল(স এর অনেক উপকার করেছিলেন, কিন্তু ইমান না আনার কারনে জাহান্নামি।
আর ফিডেল ক্যাষ্ট্রো তো স্বঘোষিত নাস্তিক! সে ইসলামের প্রসারে বাধাদান কারী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন