এনকাউন্টার ইন্ডিয়ান ষ্টাইল!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:০৭:৩২ রাত
৩১ এ অক্টোবর রবিবার। ভারত যখন দিওয়ালি বা দিপাবলির উৎসবে মত্ত তখনই হঠাত ভারতিয় নিউজ চ্যানেল গুলির স্ক্রলে ভেসে উঠল এক ভয়ংকর(!) সংবাদ। ভূপাল এর হাই সিকিউরিটি প্রিজন থেকে আটজন জঙ্গি যুবক এক জন কারারক্ষি কে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। এই সংবাদ চলতে চলতে পরদিন দুপুরে এল নতুন সংবাদ। এই আট পলাতক বন্দি নিহত হয়েছে পুলিশের সাথে এনকাউন্টারে। ভারতিয় মিডিয়া এই জঙ্গি দের পলায়ন আর পুলিশ কর্তৃক তাদের সফল হত্যায় যখন প্রসংশার বন্যায় ভাসছে তখনই কিছু সরকারি ভাবে প্রকাশিত জঙ্গিদের হত্যার ঘটনার ভিডিও এবং সোস্যাল মিডিয়াতে আসা ঘটনার কিছু ভিডিও নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।
নিহত যুবকরা ছিলেন ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ষ্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া এর সদস্য বলে কথিত। ১৯৭৭ সালে মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মুসলিম ছাত্র দের নিয়ে গঠিত ছিল। সংগঠন টি ভারত সরকার ২০০১ সালে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এর অভিযোগে। ২০০৮ সালে দিল্লি হাইকোর্ট এই নিষেধাজ্ঞা বেআইনি বলে রায় দেয়। কিন্তু এই রায় এর উপর ভারতিয় সুপ্রিম কোর্ট এর স্থগিতাদেশ দেয় এবং এখনও বিষয়টি আদালত কোন চুড়ান্ত রায় দেয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই ভারত সরকার এই সংগঠন এর সাথে জড়িত অভিযোগে অসংখ্য মুসলিম শিক্ষিত যুবক কে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসেও এভাবে ৫ মুসলিম যুবক কে এনকাউন্টার এর নামে হত্যা করা হয় অন্ধ্র প্রদেশ এ। সেই ঘটনাও সাজান বলে অভিযোগ আছে।
এই হত্যাকান্ডের দুই দিন পর যখন এই ঘটনার ভিডিও সরকারি ভাবেই প্রকাশ করা হয় তখনই সমালোচনা শুরু হয় মিডিয়া ও মানবাধিকার কর্মিদের মধ্যে। ভিডিও তে স্পষ্ট দেখা যায় নিহত যুবকরা একটি পাথুরে টিলার উপর দাড়িয়ে আছে এবং পুলিশ মেগাফোনে তাদের ঘিরে ফেলার ঘোষনা দিচ্ছে। এই সময় সেই যুবকরা চিৎকার করে আত্মসমর্পন বা আলোচনার কথা বলছিল বলে ভিডিও দেখে লিপ রিডার দের অভিমত। কিন্তু এরপর তাদের কে হত্যা করা হয়। তাদের পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ যখন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় তখন বলা হয়েছিল যে তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। কিন্তু হত্যার পর দেখা যায় তাদের কাছে কোন অস্ত্রই ছিলনা। এই বিষয়টা ও পরিস্কার নয় যে মাত্র একজন কারারক্ষি কে হত্যা করে কি করে একটি হাই সিকিউরিটি জেলখানা থেকে বন্দিরা পালিয়ে গেল!
সাজান নাটক এর এনকাউন্টার দিয়ে এই বিচারাধিন মুসলিম যুবক দের হত্যা করার মাধ্যমে ভারত কি বার্তা দিচ্ছে মুসলিমদের জন্য? বিষয়টি এতই হাস্যকর ভাবে সাজান হয়েছে যে বিজেপি বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলি এর প্রতিবাদ করেছে। ভারতিয় মানবাধিকার কমিশন ইতমধ্যে এই বিষয়ে রাজ্য সরকার এর কাছে পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছে। ভারতিয় মিডিয়া ও তাদের প্রাথমিক অতি প্রশংসা এখন পরিবর্তন করেছে। নিহত যুবকরা কেউই শাস্তি প্রাপ্ত বন্দি ছিলেন না। বিচারাধিন ছিলেন। এদের জেল থেকে পালানর বিষয়ে ও কোন শক্ত মোটিভ নেই। নিহতদের লাশের পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট এ পরিষ্কার বলা হয়েছে এদের অনেক নিকট থেকে একাধিক গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এবং সকলকেই আঘাত করা হয়েছে কোমড় এর উপর এর অংশে। পলাতক কয়েদিদের হত্যা নয় বরং ধরাই হওয়ার কথা প্রাথমিক উদ্দেশ্য। সেক্ষেত্রে প্রথমে পায়ের দিকে গুলি চালানর কথা। আর নিহতদের কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্রও পাওয়া যায়নি যে তারা কোন হুমকি ছিল আক্রমন কারি পুলিশ দের জন্য।
মুসলিম এর প্রান এর কোন মুল্যই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে নেই!
তবু বলতে হবে ভারতিয় মিডিয়া এখনও অনেকটাই নিরপেক্ষ আছে অন্তত যে বিষয়ে পাকিস্তান এর উপস্থিতি নেই।
পাদটিকা: এই বিষয়ে বাংলাদেশি কোন মিডিয়াতে বিশেষ খবর দেখিনি। তবে আমাদের জন্য শাপেবর হয়েছে এই ঘটনা! এই নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় ব্রাম্মনবাড়িয়ার ঘটনা ভারতিয় মিডিয়াতে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি!
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুঃখ হচ্ছে ভারতে মিডিয়াতে বিষয়টা এলেও আমাদের দেশে এমন প্রতিদিন হত্যার খবর কেউ বলে না।
রিদওয়ান কবির সবুজ,লেখাটার জন্য ধন্যবাদ | ভালো লাগলো |
অমা-নাক্বমূ মিন্হুম্ ইল্লা য় আইঁ ইয়ুমিনূ বিল্লা-হিল্ ‘আযীযিল্ হামীদ।
"আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।" (সূরা বুরুজ-৮)
জাযাকাল্লাহ খায়রান।....
নির্বিচারে মুসলমান হত্যার এটাই মোক্ষম নির্লজ্জ পথ। খুবই পরিতাপের বিষয় এরপরও বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ঘুম ভাঙ্গে না।
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাযাকাল্লাহু খাইরান।
মুসলিম এর প্রান এর কোন মুল্যই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে নেই!
শুধু ভারত কেন মুসলিম দেশেও মুসলিমরা অবহেলিত।
গত কিছু দিন আগে কুমিল্লাতে মসজিদের ভেতর কুরআন ছিড়ে ফেলা হল, মসজিদ নাপাক করা হল, তাতে কোন মিড়িয়ার এত লাফালাফি দেখি নাই, কোন বাল(?) নেতাও ঢাকা থেকে আসে নাই, মন্দিরের বেলায়ই যত কান্ড।
দুচারজন লোক জেল থেকে পালাতে পারেনা! অনেক কয়েদী সংঘবদ্ধভাবে কারারক্ষীদের উপর আকস্মিক আক্রমণ না করলে কোনোভাবেই পালানো সম্ভব নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা এমনটাই বলছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন