গুডবাই টু অ্যান এলিফ্যান্ট
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ০১:৫৮:০৩ দুপুর
প্রতি বছরই কিছু হাতি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের শেরপুর-জামালপুর-ময়মনসিংহ জেলায় প্রবেশ করে। এটি হাতির স্বাভাবিক জিবনাচরন। হাতি মানুষ নয় যে রাজনৈতিক সীমান্ত এর বিষয়টা বুঝবে! শুধু বাংলাদেশেই ঢুকে পরে তা নয়। নিজেদের জঙ্গল এর মধ্যেও হাতি মেীসুম ও পরিবেশ অনুযায়ি জায়গা বদল করে। এর কারন খাদ্য। সব মেীসুমে সবখানে হাতির প্রয়োজনিয় খাদ্য পাওয়া যায়না। তাই খাবার এর সন্ধানে হাতি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ায়।
বিশ শতক এর প্রথম পর্যায় পর্যন্ত বাংলাদেশের মধুপুর ও ভাওয়াল গড় অঞ্চল এ বুনো হাতি ছিল। সিলেটেও ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম ও পার্বত্যচট্টগ্রাম এলাকায় ১০০-১৫০ টি বুনো হাতি আছে। সিলেট ও ময়মনসিংহে বছরের কিছু সময় হাতি আসে। অন্য সময় এই হাতিরা থাকে ভারতিয় বনাঞ্চলে।
মাস খানিক আগে একটি ভারতিয়(!) হাতি বাংলাদেশের লালমনিরহাট অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। এটা সাধারনভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও বন্যার কারনে হাতিটি তার নিয়মিত পথ হারিয়ে চলে আসে লোকালয়ে। আর এরপরই শুরু হয় হাতিটি নিয়ে মিডিয়ার হাস্যকর আচরন। হাতিটি যেন অতিথি! প্রতিবছরই অতিথি পাখি নাম দিয়ে শিতকালিন পরিযায়ি পাখি নিয়ে যে হাস্যকর কান্ড মিডিয়াতে শুরু হয় তেমনই উদ্ভট কান্ড ঘটতে থাকে হাতি নিয়ে।
দেশিয় এই সব মিডিয়া এবং এর সাংবাদিকদের অতি উৎসাহে হাতিটি ধরার জন্য শুরু হয় বিভিন্ন পদক্ষেপ। ভারতিয় বিশেষজ্ঞ দল ও আসে যারা এই কাজে অভিজ্ঞ। ভারতে প্রায় সময়ই এই ধরনের লোকালয়ে ঢুকে পড়া হাতিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠান হয়। এই দল কিছু দিন চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়ে ফিরে যায়। তারপর বাংলাদেশে অতি উৎসাহি মানুষদের চেষ্টায় প্রথমবার হাতিটিকে চেতনানাশক ডার্ট দিয়ে অচেতন করে ধরা হয়। হুশ ও শক্তি ফিরে পেলে সেই হাতি স্বাভাবিক ভাবেই শেকল এর বাধন ছিড়ে পালিয়ে যায়। পুনরায় ধরার জন্য আবার চেতনানাশক প্রয়োগ এর কারনে হাতিটি আজকে মারা গেছে।
হাতি সাধারনত দলবদ্ধ জিব। এভাবে একলা হাতি সাধারনত পাগলা হাতি হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর থেকে এই হাতির আচরনে এটা স্পষ্ট যে এই হাতিটি পাগলা হাতি ছিলনা। সম্ভবত আকস্মিক পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কারনে এটি পথ হারিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছিল। হাতিটি যে নির্জন চরে অবস্থান নিয়েছিল তাকে বিরক্ত না করলে এটি সুযোগ মত বনে ফিরে যেত। প্রয়োজনে হাতিটির জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু অতি উৎসাহি মিডিয়ার চাপে হাতিটিকে নিয়ে শুরু হলো নাটক। যার ফলে নিরিহ হাতিটি এখন মৃত।
বিখ্যাত সাংবাদিক ফার্লে মোয়াট এর লিখা "তিমির প্রেম" ( এ হোয়েল ফর কিলিং এর অনুবাদ সেবা প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত) বইতে এমন এক পথহারা তিমির কাহিনি আছে। পথ হারিয়ে উত্তর কানাডার এক অগভির হ্রদ এ আটকা পরে এক তিমি। সেই হ্রদের পাশের অশিক্ষিত(!) জেলেরা যখন তিমিটিকে নিজের মত ছেড়ে দিচ্ছেন তখন তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠির কেউ তিমিটাকে মারতে চাইছেন কেউ বা সেটাকে পুঁজি করে করতে চাইছেন ব্যাবসা। সেই তিমির নাম দেওয়া হয়েছিল "মবি জো"। হারমান মেলভিল এর বিখ্যাত উপন্যাস এর কাল্পনিক সাদা স্পার্ম তিমি "মবি ডিক" এর নাম অনুসারে। তেমনি আমাদের মিডিয়া "বঙ্গ বাহাদুর" নাম দিয়ে এই হাতিটাকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দেয়। আজকে তারা আবার এই নিউজ করছে যে হাতিটার জন্য নাকি সারা দেশ কাঁদছে! অথচ মাস তিনেক আগে চুনতি অভয়ারন্যে একটি হাতি মারা গিয়েছে কোন কারনে। তার কোন সংবাদ ই এই মিডিয়া গুলি দেয়নি।
আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের মানবতা অনেক আগেই। এই হাতিটি তার জিবন দিয়ে সেটাই দেখিয়ে দিল।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এতে ভারত বিরোধী চক্রের হাত ছিল
হাতিটা কিন্তু নিয়মিতই এই দেশে আসত। সুতারাং সে অতিথি নয়!
হাতি মরে নাকি প্রথম আলো আর বিবিসি বাংলাকে বিধবা করে দিল।
বিধবা হলেও এখন তারা নিরামিষ খাবেনা!
রেবের জঙ্গী পুলিশ, মুসলীম মহিলা জজ্ঞীদের গ্রেপ্তার।
গতকাল যখন ফোন করলাম, চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে আমাকে বললো, দোস্ত বাংলাদেশের নাগরিক না হয়ে যদি ভারতের হাতি হয়েও জন্ম নিতাম, তাহলে অন্তত আমার জন্মটা সার্থক হতো। জিজ্ঞেস করলাম, বন্ধু এত হতাশ কেন? তখন সে বললো, আজ দুইবছর যাবত আমি বেকার! পরিবার থেকে পকেট খরচ নিয়ে চলতেছি...
শুধু সে একা নয়, আমার বন্ধুদের মধ্যে মাস্টার্স উত্তীর্ণ আরোও ৩ জনের একই অবস্থা!!! অনেক রাত পর্যন্ত চিন্তা করেও সমাধান পেলাম না, আওয়ামী পরিবারের মাস্টার্স উত্তীর্ণ এক মেধাবী ছাত্রের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ লোকদের কী অবস্থা!!! এসব নিয়ে মিডিয়াতে কোনো নিউজ হয়না। বন্যা নিয়েও নিউজ হয়না...সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের খানকির পোলা বলে মোটেও ভুল করেনি মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে, সুন্দর লিখাটির জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন