তুরুস্কের ঘটনা এবং আমাদের মিডিয়া!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১১:১১:৩৫ সকাল
তুরুস্কে যখন অভ্যুত্থান চেষ্টা চলছে তখন বাংলাদেশ ও ভারতিয় কিছু মিডিয়ার আচরন দেখে এটাই মনে হচ্ছিল যেন এই অভ্যুত্থান এর উপর এই দেশগুলির অনেক কিছু নির্ভর করছে!
প্রথমে দেশিয় মিডিয়ার কথা বলি। বাংলাদেশ সময় বেলা বারোটার দিকে যখন এই অভ্যুত্থান এর বিরুদ্ধে মানুষ রাস্তায় নেমে গেছে এমনকি সিএনএন, বিবিসির মত পাশ্চাত্য মিডিয়াগুলিও এই কথা বলা শুরু করে দিয়েছে অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যার্থ তখন একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত এর মন্তব্য। তিনি তখনও এই অভ্যুত্থান তুর্কি সরকার কে উৎখাত করবে বলে অনুমান করে যাচ্ছেন। তার আগে জনৈক মুরগী ব্যবসায়ি বুদ্ধিজিবি নাকি টিভিতে তুর্কি বুদ্ধিজিবিদের সাথে তার আলাপ এর কথা বলেছিলেন তারা নাকি অভ্যুত্থান সমর্থন করছে!! আমি দেখিনি তবে বন্ধুদের কাছে শুনেছি। বাংলাদেশ সময় দুপুর তিনটার দিকে যখন এই বিদ্রোহ পুরাপুরি দমন করা হয়ে গেছে তখনও একটি দেশিয় টিভি চ্যানেল প্রচার করছে বিদ্রোহিরা বসফরাস প্রনালির ব্রিজগুলি দখল করে রেখেছে।
টিভি মিডিয়ার মতই আচরন করেছে কিছু অনলাইন মিডিয়াও। বিদ্রোহ দমনে যখন সফল তুর্কি সরকার তখন এই অনলাইন মিডিয়াগুলি এমন সব উদ্ভট তত্ব নিয়ে হাজির হলো যেটা পড়ে হাসি ও আসেনা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলিও তখনও যে বিষয়ে মন্তব্য করেনি বিদ্রোহের কারন বিষয়ে তারাও দায়ি করে তুর্কি সরকার এর নিতি কে। এই গল্পও তখন বানান হয়ে গেছে যে তুর্কি রাষ্ট্রপতি এরদুগান নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছেন! এই তথাকথিত সাংবাদিক রা তুরুস্কের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান ও যে রাখেননা সেটাই বুঝা যায় এই সব দেখে। তুরুস্কে প্রধানমন্ত্রিই মুলত সরকার প্রধান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে কিছু বিশেষ ক্ষমতা থাকলেও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব প্রধান মন্ত্রিরই হাতে। বিদ্রোহ দমনে প্রধান ভূমিকা নিলেও ঘটনার পরের রাষ্ট্রিয় বক্তব্য কিন্তু তুর্কি প্রধানমন্ত্রিই দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নন।
দেশিয় মিডিয়াগুলির সাথে ভারতিয় দুই প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকা টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং আনন্দবাজার এর ওয়েব সাইটে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া মুলত বিবিসির উদ্ধৃতি দিয়ে শুধু খবর দিচ্ছিল। তারা বিশেষ বিশ্লেষনে যায়নি। যতটুক বিশ্লেষন করেছিল তা পাশ্চাত্য মিডিয়ার মত মধ্যমপন্থি ভাবে। অন্যদিকে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার এর প্রধান তাৎক্ষনিক সংবাদ ছিল তুরুস্কে শুটিং করতে গিয়ে কোন নায়িকা আটকা পড়েছেন সেটা! সন্ধ্যার দিকে সেই একই শুটিং এ থাকা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর মন্ত্রি এবং অভিনেতা ব্রাত্যবসুর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখাও আপলোড করা হয়। একই সঙ্গে জনৈক বিশ্লেষক(!) এর লিখাও প্রকাশ করা হয়। যেখানে সেই বিশ্লেষক এই বিদ্রোহ দমন করায় তুরুস্কে জঙ্গিবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন। লিখার সুরটা এমনি যে এই বিদ্রোহ সফল হলেই তুরুস্ক এবং বিশ্বের জন্য উপকার হতো! যদিও ততক্ষনে ভারতিয় সরকার ও তুর্কি সরকার এর পদক্ষেপ কে সমর্থন জানিয়ে ফেলেছে।
এই মিডিয়াগুলির অদ্ভুত আচরন থেকে এরা যে আসলে কতটা গনবিচ্ছিন্ন সেটা প্রমানিত হয়ে গেছে। তুরুস্কেও প্রথম সকল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় বিদ্রোহিরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদুগান এবং প্রধানমন্ত্রি বিকল্প মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এই বিদ্রোহ দমনে জনগনের সাহাজ্য কামনা করেন। তথাকথিত মেইনষ্ট্রিম মিডিয়ার বিরোধিতার মুখেও তারা সফল হন। এমনকি সিএনএন এর মত পাশ্চাত্য মিডিয়াও প্রথমে এমন সংবাদ ও দেয় যে এরদুগান পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে তারা সুর পরিবর্তন করে ফেলে। কিন্তু আমাদের দেশিয় মিডিয়াগুলি তাদের চেয়েও বেশি বিদ্রোহিদের সমর্থন করতে গিয়ে নিজেদেরকেই হাস্যকর বস্তুতে পরিনিত করেছে।
সাম্প্রতিক গুলশান এর ঘটনার পরেও দেখা গেছে টিভি ও অন্য মিডিয়া যে সব সত্য চাপা দিতে চেয়েছে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেগুলি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে। এই মিডিয়া কর্তৃপক্ষের তাতেও বোধদয় হয়নি। বরং দেশের সাধারন স্বার্থের সাথে সম্পর্কহীন একটি বিষয়ে তাদের আচরন এটাই প্রমান করছে যে এই মিডিয়াগুলি কেবল দালাল ই নয় বোধশক্তিহীন ও বটে। ঘরের বিষয় নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য ও বিশ্লেষন প্রচার করতে করতে একটি আর্ন্তজাতিক বিষয় নিয়ে এমনই মিথ্যা প্রচার করে ফেলেছে। কিন্তু তার জন্য তাদের কোন লজ্জা নেই!
সবশেষে তুর্কি জনতার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সফল হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। সঠিক নেতৃত্ব ও সচেতন জনতার সামনে কোন ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারেনা। তুর্কি জনতার সাহস তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কোন বাহিনি নয়। এই তুর্কি জাতি সম্পর্কে নেপোলিয়ান একটি উক্তি করেছিলেন।
"Turks can be killed, But they can never be conquered "
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে মুসলমানদের এখন থেকে আর এদের পরিবেশন করা খাবার চোখ বন্ধ করে খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দেশটার করুণ চিত্রের পেছনে এই কুখ্যাত মিডিয়াগুলোর মিথ্যা প্ররোচণা বহুলাংশে দায়ী। এসব নির্লজ্জ অসৎ সাংবাদিকতা থেকে তুরুস্ক তথা কোন দেশই নিরাপদ নয়।
গুরুত্বপূর্ণ লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
এই মিডিয়াগুলি মিথ্যা বলতে বলতে সত্য আর মিথ্যার পার্থক্যও ভুলে গেছে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
স্রেফ একজন ফলোয়ার তাই পিস টিভি বন্ধ। আর তুরুস্কে বিদ্রোহিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নাকি উচিত হচ্ছেনা!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন