এ লড়াই মোটাদের বেঁচে থাকার লড়াই!!!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৬ জুন, ২০১৬, ০৫:০৭:৩৭ বিকাল
একটা ভারতিয় বাংলা ছবির কাহিনি!
জয় একজন পাঁচতারা হোটেল এর শেফ বা বাবুর্চি। রঞ্জনা একটি মেয়ে যে খেতে বিশেষ ভালবাসে। তাদের প্রেম ও বিয়ে হলো। জয় ভাল রাঁধুনি তাই তার সুস্বাদু রান্না খেতে খেতে রঞ্জনার ওজন বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে একদিন রঞ্জনা বিভিন্ন জায়গায় দেখা শুরু করে এক মুখোশপরা মানুষ কে। আর তার কাছে আসতে থাকে ভুতুরে টেলিফোন। যে কল করেছে সে তার পরিচয় দেয় কোলষ্টেরল বলে! ভিত রঞ্জনা কে জয় নিয়ে যায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর কাছে। তার মতে রঞ্জনা মোটা হওয়ার ভয়ে অবচেতন মন থেকে এসব করছে। ডাক্তার এর উপদেশ মত দুই সপ্তাহে ওজন কমানর বিশেষ কোর্সে ভর্তি হয়। রঞ্জনা ভর্তি হওয়ার পরই জয় দেশের বাইরে যায়। ফিরে এসে দেখে তার স্ত্রী রঞ্জনা এখন পরিবর্তিত হয়ে গেছে! কিন্তু স্লিম ফিগার এর রঞ্জনা কে মেনে নিতে পারেনা জয়। তার দৃঢ় বিশ্বাস এ আসল রঞ্জনা নয়। সে অাসল রঞ্জনা কে খুঁজে বের করতে বিভিন্ন চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত আসল রঞ্জনা কে খুঁজে পেলে প্রকাশ হয় যে রঞ্জনা কে ফোনে হুমকি ও মুখোশ পরে ভয় দেখিয়েছিল জয় নিজেই কারন সে চাচ্ছিল রঞ্জনা যেন ওজন কমায়। অন্যদিকে জয় এর এই কাজ ধরতে পেরে রঞ্জনা নিজেই লুকিয়ে থেকে জয় কে বিপদে ফেলে। আর রঞ্জনা কে এই কাজে সহায়তা করেছে একটি সংগঠন যেটা মোটাদের নিয়ে গঠিত!!
চমৎকার হাস্যরস পূর্ন মুভিটিতে একটি বিষয় নিয়ে যে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে সেটা সকল দর্শক ই বুঝবেন। সেটা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে কিশোরি ও তরুনি মেয়েদের মধ্যে অত্যধিক স্লিম হওয়ার প্রবনতা। অনেক ছেলেও এই প্রবনতায় ভুগছে। এটা ঠিক যে অতিরিক্ত ওজন শরিরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু অতি কম ওজন ও একই রকম ক্ষতিকর। বর্তমানে মিডিয়ার অত্যধিক প্রভাবে মিডিয়ার লাস্যময়ি নারিদের তথাকথিত সাইজ জিরো ফিগার দেখে শুকনা হতে গিয়ে অনেক নারিই নষ্ট করছেন তাদের স্বাস্থ এবং মন। অন্যদিকে স্ত্রীকে মুভির নায়িকাদের স্লিম শরির এর সাথে তুলনা করতে গিয়ে মনোকষ্টে ভুগছেন অনেক পুরুষও। শুকনা হতে গিয়ে অনেক মেয়েই এখন আক্রান্ত হচ্ছে এনারোক্সিয়া নার্ভোসা নামক রোগে। যা থেকে মৃত্যু ও হতে পারে। এটি একই সঙ্গে শারিরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন করে। একাধিক বিখ্যাত মডেল ও অভিনেত্রির এই রোগে অল্প বয়সেই মৃত্যু হওয়ার ঘটনা আছে।
একসময় বাংলাদেশিয় মুভির নায়িকাদের চালের বস্তার সাথে তুলনা করা হতো! কারন হলিউড এবং ভারতিয় মুভির তুলনায় তাদের বিরাটকায় শরির। এই বিষয়ে একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জনাব ফরহাদ মাজহার। পাশ্চাত্যে গড় মানুষের ওজন অনেক বেশি। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন এর জন্য তাদের শারিরিক গঠন প্রায় সময় মোটা হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে দেশিয় মুভির প্রধান দর্শকরা মুলত নিন্মবিত্ত শ্রেনির। এদের প্রায় সবাইই পুষ্টির অভাবে ভুগে। এই কারনে পাশ্চাত্যের দর্শকরা মুভি জগতে স্লিম ফিগার কে পছন্দ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশে একটু স্বাস্থবান(!) নায়িকাদের কদর।
মোটা হওয়া যেমন ঠিক নয় তেমনি তিনগোয়েন্দার শুটঁকি টেরির মত কাঠি হওয়া্র ও প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দেহ গঠন কে বজায় রাখা। রোগা হওয়ার জন্য এখন বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে একাধিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে। যারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে যার অনেক গুলিই দির্ঘমেয়াদি স্বাস্থসমস্যার সৃষ্টি করে ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ে মানুষকে শুকনা করে দেয়। অনেকে রোগা হওয়ার জন্য অতিরিক্ত ব্যয়াম ও ইন্সট্রুমেন্ট জিম ও করে থাকেন। রোগা বা মোটা হওয়ার সঙ্গে দম বা পরিশ্রম এর ক্ষমতার কোন সম্পর্ক নেই। ক্রিকেটার ইনজামামাুল হক কিংবা আকরাম খান কে দেখুন। বিরাট শরির নিয়েও যারা দিনের পর দিন নিজেদের দেশের সেরা খেলোয়ার ছিলেন। আপনি যদি সুষম খাদ্য গ্রহন ও প্রয়োজনিয় পরিশ্রম করেন তবে আপনিও সুস্বাস্থ নিয়ে জিবনযাপন করবেন। রোগা হওয়ার সহজ উপায় না খুঁজে নিজের আত্মবিশ্বাস কে বৃদ্ধি করুন।
পাদটিকাঃ অসুস্থ হয়ে মাত্র দেড় মাস সময়ে ১৬ কেজি ওজন হারাবার পর এই মুভি টা দেখলাম। এখন আমার ফিগার স্লিম। কিন্তু পরিশ্রম করার ক্ষমতা শুন্য। তাই আমার স্লোগান এখন
"এ লড়াই মোটাদের বেঁচে থাকার লড়াই"।
বিষয়: বিবিধ
১১৯৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হা! হা!! তা হলে এখন স্লিম হয়েছেন, এবার বিএফডিসিতে চলে যান।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন