মাহে রমাদান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০২ জুন, ২০১৬, ০৮:৪৩:৫৮ রাত
প্রতি বছর ই ফিরে আসে মাহে রমাদান বা রমজান মাস। একটি বৎসর এর বারোটি মাস এর মধ্যে এই মাসটি আল্লাহতায়লা তার বান্দাদের জন্য করেছেন বিশেষ ফজিলতপুর্র্ন। এই মাস এর অবশ্য করনিয় কর্তব্যটি হলো সিয়াম বা রোজা। এর অর্থ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত কিছু খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা এবং এই সময় দৈহিক কামনা থেকেও নিজেকে নিবৃত রাখা। এই মাসে আল্লাহতায়লা বিশেষ রহমত নাযিল করেন। আল-কুরআনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত এর উপর যেমন রোজা ফরয করা হয়েছে তেমনি পুর্ববর্তি নবীদের উম্মত এর উপরও রোজা ফরয করা হয়েছিল। রোজার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সূরা বাকারা এর ১৮৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে এই রোজা ফরয করা হয়েছে যেন আল্লাহর বান্দা রা তাকওয়া অর্জন করতে পারে । হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে রোজা হলো ঢাল এর মত। এটি মানুষকে মন্দ কাজ থেকে নিবৃত করে।
পবিত্র কুরআন এর নির্দেশ অনুসাওে রমজানে রোজা বা সিয়াম ফরজ করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। তাকওয়ার অর্থ ব্যাপক। আমরা এভাবে বলতে পারি যে রমজানে সিয়াম সাধনা মানুষের দেহ ও মন কে কলুষমুক্ত করে এবং তার মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে যার ফলে মানুষ সম্পুর্ন একাগ্র চিত্তে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পায়। এই সুযোগ একজন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করবে একই সাথে আল্লাহ ভিতি এবং পরম নির্ভরতা। রমজান শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয় বরং শরির ও মন কে পবিত্র করাই এর উদ্দেশ্য।
হাদিস বলছে সিয়াম মানুষ কে কলুষমুক্ত করে এবং একই সাথে জানা-অজানা গুনাহ এর কাফফারা সরূপ হয়। একজন রোজাদার শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকেন না তিনি বিরত থাকেন মিথ্যা বলা এবং ঝগড়া করা থেকে। একজন রোজাদার বৈশিষ্ট হবে শান্ত আচরন এবং বিনয়। যা সমাজে সৃষ্টি করবে ভাতৃত্ব এবং শান্তি। রমজান মানুষকে তার নফস এর কু-পবৃতি থেকে মুক্ত করে। এই জন্য ই রোজা কে ঢাল এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। রোজাদার এই একমাস যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা বাকি বছর তার নফস কে দমন এর জন্য ব্যবহার করতে পারে।
কেন নির্দৃষ্ট সময় পানাহার ও কামনা নিবৃতি থেকে বিরত থাকা? এই প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সহজ। মানুষের জিবনের প্রধান চাহিদা খাদ্য ও পানিয়। মানুষ না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেনা। নিদৃষ্ট সময় এর থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে মানুষ অর্জন করে সহ্যশক্তি। আর এই বিরত থাকা মানুষের অন্তরেও সঞ্চার করে আল্লাহভিতির। কেউ যদি গোপনে খাদ্য গ্রহন করে তবে কেউ জানবে না কিন্তু রোজাদার কেবল এই জন্যই খাদ্য গ্রহন করেনা কারন সে জানে যে আল্লহতায়লা সর্বজ্ঞ। যৌন কামনা থেকে বিরত থাকাও একইভাবে মানুষ কে তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে। একই সঙ্গে এই মাসে ইবাদত বন্দেগির বিশেষ সওয়াব এর সংবাদ মানুষকে উৎসাহিত করে আরো বেশি ইবাদত করতে। এই একমাস মানুষ যেভাবে জিবনযাপন করে বৎসরের বাকি এগারো মাস এর জন্য সেটা হয় একটি প্রশিক্ষন এর মত।
কেন রমজান প্রতি বছর ফিরে আসে? এটাও রমজানের একটি উদ্দেশ্য। যারা পাইলট বা সামরিক বাহিনিতে আছেন তারা নিদৃষ্ট সময় পরপর রিগ্রেসন কোর্স নামে পুনঃপ্রশিক্ষন এ অংশ নিয়ে থাকেন। এই প্রশিক্ষন কোর্সে তাদের পূর্বে দেওয়া প্রশিক্ষন এরই পুনরাবৃত্তি করা হয় সল্প পরিসরে। উন্নত বিশ্বে ডাক্তারি,ইঞ্জিনিয়ারিং সহ অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রেও এই পুনঃ প্রশিক্ষন এর নিয়ম প্রচলিত আছে। এই প্রশিক্ষন দেওয়া হয় যাতে করে একজন তার অধিত বিদ্যা ভুলে না যান। রমজান মাস আমাদের জন্য প্রতিবছর এই রিগ্রেশন কোর্স হয়ে আসে। এই মাস আমরা সিয়াম এর মাধ্যমে নিজেদের পবিত্র ও কলুষমুক্ত করে পুনরায় আল্লাহতায়ালার প্রতি নিজেদের সমর্পন করতে শিখি।
এভাবে আমরা রমজান মাসের সাধারন যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি বলতে পারি তা হচ্ছে।
# আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন।
# তাকওয়া অর্জন।
# আল্লাহর ইবাদত এর মাধ্যমে দৃঢ় বন্ধন তৈরি।
# জাহান্নাম থেকে নাযাত লাভ।
# গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
# নিজের শরির ও মন এর উপর নিয়ন্ত্রন এর যোগ্যতা অর্জন।
# সংযমি,বিনয়ি ও সুআচরন শিক্ষা।
রমজান মাস প্রতিবছর আমাদের জন্য রহমত,বরকত ও জাহান্নাম এর আগুন থেকে নাযাত এর বার্তা নিয়ে আসে। শেষ দশকে লাইলাতুল কদর এর রাত্রি আসে হাজার মাস এর চেয়ে উত্তম এক সময় নিয়ে। আল্লাহতায়লা আমাদের রমজানের উদ্দেশ্য পূরন করার ও হক আদায় করার তৌফিক দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৮৫১ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসছি পর ....।
রোজার প্রশিক্ষণ যতটা তাত্ত্বিক, তার চেয়ে বেশি প্রায়োগিক। যে এই প্রায়োগিক প্রশিক্ষণকে বাকি জীবনে জাগরুক রাখবে, সেই সফলকাম হবে।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।
যুদ্ধে যেমন সৈনিকেরা আত্বরক্ষার জন্য ঢাল ব্যবহার করে তেমনি প্রকত সিয়াম পালন কারীকে তার সিয়াম ঢাল হয়ে তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
বাস্তবতার সাথে প্রশিক্ষণের তুলনামূলক বিশ্লেষণসহ রোজার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য চমৎকার ও প্রাঞ্জল ভাবে উপস্থাপন ছাড়াও পরিশেষে লিখাটির সারগর্ভ টেনে সমাপ্তি রেখা মুগ্ধ করলো অনেক মাশাআল্লাহ।
অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান যা সকলেরই জানা অতীব জরুরী এমন একটি সুন্দর বিষয় মনোমুগ্ধকরভাবে তুলে ধরার জন্য জাযাকাল্লাহ।
হৃদয়গ্রাহী অনেক সুন্দর লিখাটির জন্য অনিঃশেষ ধন্যবাদ ও মাহে রামাদ্বানের শুভেচ্ছা।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
অ.ট.
ব্যাপার কী!! আপনার তো বানান-সমস্যা হওয়ার কথা নয়!! তাড়াহুড়ো করেছেন বুঝি??
আল্লাহতায়ালা তাঁকে দ্রুত পূর্ণ সুস্থতা এবং রোগ মুক্ত দীর্ঘ হায়াতে তা্য়্যেবা দান করুন, আমীন!
ধন্যবাদ আপনাকেও। লিখাটি বিজয় ফন্টে লিখা তারপর ইউনিকোড এ কনভার্ট করতে গিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
সোবেহ সাদিকের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় খানা, পিনা, স্ত্রী সহবাস,বেহুদা কথাবার্তা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, ঝগড়াবিবাদ ও যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো রোজা। আমরা রোজার মূল উদ্দেশ্য বুঝিনা বলেই এই রোজা আমাদের জীবনে পরিবর্তন আনেনা। রোজা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমরা পূর্বেকার মত সব নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে পড়ি।
রোজার উদ্দেশ্য নিয়ে আমি একটা লিখা বেশ কয়েকদিন ধরেই লিখতেছি। ইনশাআল্লাহ কিছুদিনের মধ্যেই ব্লগে ছাড়বো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
শারিরিক অবস্থা স্থিতিশিল।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য। পড়ার অপেক্ষায়
আল্লাহ আমাদের রমাদ্বানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে সাহায্য করুন। তাকওয়ার সৌন্দর্যে মন্ডিত করুন। আমিন।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মনে হচ্ছে, রমাদান আসতেছে দেখে, কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠতেছেন??
এটাই হলো আল্লাহর রহমত,
আর অসুস্থ থাকলে ও তো, গোনাহ মাফ হয়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টির পাল্লা ভারি হতে ই থাকবে,
ইন শাহ আল্লাহ
ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্য!!
প্রস্তুতি গ্রহণ করে মু'মিন মুসলমান।
তাকওয়া অর্জনই হোক মোদের মিশন।"
-সুন্দর ও সারগর্ভ আলোকপাত করার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন