চারমিনার।
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ২৯ মে, ২০১৬, ১০:৫১:০০ রাত
২০০৫ সালে একটি সল্প মেয়াদি ট্রেনিং এর জন্য ভারতের ঐতিহাসিক নগরী হায়দারাবাদ এ গিয়েছিলাম। প্রথম দিন প্রশিক্ষন শেষে আমাদের ইন্সট্রাকটর অশোক এর সাথে পরামর্শ করে ঠিক করলাম আজকে সোজা হায়দারাবাদ এর প্রানকেন্দ্র চারমিনার এ যাব। অশোক একটি বেবিট্যাক্সি ঠিক করে দিল। ভারতে এটাকে বলা হয় অটো। মিটার থাকলেও চুক্তিতেও যায়। অশোক চুক্তিতে ঠিক করেদিল যাতে অনেক রাস্তা ঘুড়িয়ে বেশি টাকা না চায়। অটো আমাদের নামিয়ে দিল চারমিনার এর একটু আগে। রাস্তায় দাড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম সেই ছোটবেলা থেকে পরিচিত চারমিনার এর দিকে। সত্যজিত রায় এর ফেলুদার প্রিয় সিগারেট এর ব্র্যান্ড ছিল চারমিনার। কিংবা মান্না দের কন্ঠে ”কফি হাউজের সেই আড্ডার” লাইন। ”একটা টেবিলে সেই তিন-চার ঘন্টা চারমিনার ঠোঁটে জ্বলত”। ছোটবেলা থেকেই যেই নাম টা পড়ে ও শুনে আসছি সেটাকে চোখের সামনে দেখে সত্যিই এক অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে চারমিনার এর দিতে রওনা দিলাম। মিনার এর পাশে একটা মিষ্টির দোকানে নাস্তা করতে করতে ভাবছিলাম ইতিহাস এর কত সাক্ষি হয়ে এই ভবনটা দাড়িয়ে আছে। গোলকুন্ডার সুলতান মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ ১৫৯১ সালে এই ভবন নির্মান করেন। তখন হায়দারাবাদ ছিল একটি উপশহর। মূল শহর গোলকুন্ডা তে প্লেগ এর মহামারি দেখা দিলে সাময়িক ভাবে সুলতান তার পরিবার ও দপ্তর এখানে স্থানান্তর করেন তখনই এটি নির্মিত হয়।
এটি একই সঙ্গে চক বা স্কোয়ার এবং মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয়। চারকোনায় চারটি মিনার এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৬০ ফুট। ইরানি ও ভারতিয় আর্কিটেকচার এর ইসলামি রুপ এর সমন্বয় দেখা যায় এই স্থাপনার ডিজাইন এ। নিচতলা প্রায় ৪০ ফুট উঁচু খোলা জায়গা। এটা হায়দারাবাদ এর অধিবাসিদের জন্য বৈকালিক ভ্রমন ও আড্ডার জায়গা প্রায় ৪০০ বছর এর বেশি সময় ধরে। দ্বিতিয় ও তৃতিয় তলা জুড়ে মসজিদ। তবে এখন মনে হয় নামাজ হয়না। চারদিকে চমৎকার খিলান যুক্ত বারান্দা। এখান থেকে উপভোগ করা যায় নগরীর দৃশ্য ও মুসি নদি। চারমিনার এর উপর থেকে দেখলাম হায়দারাবাদ নগরিকে। চারমিনার এর পুর্বেই মুসি নদি। পুরান হায়দারাবাদকে যা দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে। চার মিনার এর উপর বসে ভাবছিলাম এই চারমিনার এর আশেপাশের প্রাচিন ভবন গুলি তে একসময় বসবাস করতেন উপমহাদেশ এর প্রখ্যাত মনিষিরা। চারমিনার কে কেন্দ্র করে পরে হায়দারাবাদের প্রধান বানিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠে। এখনও তার গুরুত্ব বজায় আছে। চারমিনার থেকে একটু দুরেই ঐতিহাসিক মক্কামসজিদ অবস্থিত। এই এলাকা হায়দারাবাদ এর ঐতিহ্যবাহি গালার তৈরি হাতের বালা ও মুক্তার অলংকার এর প্রধান বাজার।
হায়দারাবাদ তার স্বাধিনতা হারিয়েছে। চারমিনার শুধু তার সাক্ষি হয়ে আছে। নিচে নামতেই খেয়াল করলাম পূর্বদিকের প্রাচির এর লাগোয়া একটি মন্দির। ভারতে অনেক মুসলিম স্থাপনাতেই দেখা যায় এমন মন্দির। কিন্তু চারমিনার এর মত মসজিদ এর নিচে এমন মন্দির থাকা অস্বাভাবিক ই বটে। অনেক দিন পর ২০১২ সালে ভারতিয় মিডিয়াতেই এই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারন চারমিনার এর যে সব পুরোন ছবি পাওয়া যায় সেখানে এই মন্দির এর অস্তিত্ব নাই। ভারতিয় নিয়ন্ত্রনে যাওয়ার পরই এই মন্দির তৈরি হয়েছে। পুরাকির্তি আইন অনুসারে যা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। কিন্তু এখনও ২০১৬ সালেও এই মন্দির এর অস্তিত্ব আছে এবং পূজা হয়ে থাকে।
বিষয়: বিবিধ
৩২২৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন